১০ মাস পর কার্টুনিস্ট কিশোরের কারামুক্তি

১০ মাস পর অবশেষে কারামুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। জামিনে মুক্তি পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন তিনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় তিনি ২০২০ সালের মে মাস থেকে কারাগারে ছিলেন।
জেল সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল জলিল জানান, বেলা ১২টা ২০ মিনিটের দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে বেরিয়ে যান কিশোর।
বুধবার হাইকোর্ট ৬ মাসের জামিন দিলে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিল কর্তৃপক্ষ।
কিশোরের সঙ্গে একই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে একই সময় থেকে কারাবরণকালে লেখক মুশতাক আহমেদ সম্প্রতি মারা যান। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদে সরব হয় অনেকেই। মুশতাকের মৃত্যুর কয়েকদিন পরই জামিন পেলেন কিশোর।
বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট এই আদেশ দেন।
জামিন আদেশে বলা হয়েছে, 'কিশোর যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের এই বেঞ্চ থেকে জামিন পেয়েছেন, সেই বিবেচনায় আহমেদ কবির কিশোরকে ছয় মাসের জামিন দেওয়া হলো।'
হাইকোর্টে জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ১০ মাস ধরে কারাগারে আছেন। মূলত এই বিবেচনায় তাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন আদালত। মামলাটির যে পুনঃতদন্ত চলছে, আগামী ১৫ মার্চ তার প্রতিদেবন জমা দেওয়ার তারিখ রয়েছে।'
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে কিশোরের জামিনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল কি না এবং এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করবে কি না, জানতে চাইলে এ আইন কর্মকর্তা বলেছিলেন, 'রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সর্বশেষ অবস্থা আদালতে তুলে ধরেছে। আর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কি না, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
এ মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়। আহমেদ কবির কিশোরের পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের জন্যও হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হয়েছিল।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গত ১ মার্চ মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টি হলফনামা করে আদালতকে জানানোর পর তার জামিন আবেদনটি আদালতের দৈনন্দিন মামলা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এর আগে নিম্ন আদালতে ছয়বার এই মামলায় জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কিশোর হাইকোর্টে গত ২৩ ফেব্রুযারি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে গত ১ মার্চ জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই মামলায় চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহসীন সরদার।
চার্জশিটে তিনজনকে অভিযুক্ত ও আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার ঢাকা সমন্বয়ক দিদারুল ভুইয়া।
চার্জশিটে অব্যাহতি পাওয়া আসামিরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, নেত্র নিউজের তাসনীম খলিল, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
গত বছরের ৫ মে র্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে আটক করা হয় কিশোর ও মুশতাক আহমেদকে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা 'আই অ্যাম বাংলাদেশি' নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছেন- যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।