সিলেটে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা

সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার মসজিদের সামনে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে আছেন তিনজন চিকিৎসক। আশাপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন এখানে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। একজন একজন করে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
নগরীর ২০ নং ওয়ার্ডের টিলাগড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। কেবল এই ওয়ার্ডেই নয়, আশপাশের ওয়ার্ডগুলোতেও ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে এই মেডিকেল টিম। শঙ্কটাপন্ন রোগীদের জন্য যাচ্ছেন বাসাবাড়িতেও।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে যখন সিলেটের চিকিৎসকরা বন্ধ রেখেছেন প্রাইভেট চেম্বার; বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও মিলছে না পর্যপ্ত সেবা, ঠিক তখনই ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবার এমন উদ্যোগ নিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর। তার নাম আজাদুর রহমান আজাদ। তিনি নগরীর ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার উদ্যোগ ইতোমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে নগরবাসীর।
শনিবার টিলাগড় এলাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বৃদ্ধা সবিতা দাশ (৭০) বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার ডায়াবেটিকস ও উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেছে। কিন্তু কোনো ডাক্তার পাচ্ছি না। আবার হাসপাতালে যেতেও ভয় করছে। এই অবস্থায় রাস্তায় পাশে চিকিৎসক পেয়ে ভালোই হলো। তারা আমাকে চেকআপ করে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন।
এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, করোনার কারণে এখন অনেকেই চিকিৎসাসেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষত যারা দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে ভুগছেন তাদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। এমন উদ্যোগের ফলে এই রোগীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।
জানা যায়, গত বুধবার থেকে এই ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নগরীর ২০ ও ২১ নং ওয়ার্ডে প্রায় ৬০০ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
রোববার নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। মেডিকেল টিমে রয়েছেন দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এর মধ্যে একজন মেডিসিন এবং অপরজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ। আরও রয়েছেন সদ্য এমবিবিএস পাশ করা কয়েকজন চিকিৎসক।

মেডিকেল টিমের উদ্যোক্তা কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে নগরীর বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সেবা দিচ্ছেন না। সাধারণ সর্দি, জ্বরের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকরা আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নিয়মিত ওষুধ সেবনকারী রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসকরাই আতঙ্কিত নন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আতঙ্ক রোগীদের মধ্যেও রয়েছে। তাই রোগীরাও হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। লকডাউনের কারণে সাধারণ যানবাহন বন্ধ তাই অনেকেই যানবাহনের অভাবে হাসপাতালে যেতে পারছেন না। তাই আমার মনে হয়েছে নগরবাসীর সেবার জন্য এই মুহূর্তে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম প্রয়োজন। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি। এই মেডিকেল টিম নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৫দিন সেবা প্রদান করবে।
কাউন্সিলর আজাদ বলেন, নগরীর ২২টি ওয়ার্ডে একটি মেডিকেল টিম পর্যাপ্ত নয়। তাই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চারটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করার জন্য আমি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মেডিকেল টিম গঠনসহ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করার ব্যাপারেও আমরা কাজ করছি।