সিরাজগঞ্জে ট্রেন লাইনচ্যুত, উত্তরের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আগুন লেগে পুড়ে গেছে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি।
বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের আগে লেভেল ক্রসিংয়ে রংপুর আন্তঃনগর এক্সপ্রেসটি লাইনচ্যুত হয়।
আগুন লাগার পর ট্রেনের দরজা জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। আহতের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর থেকে সারা দেশের সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঢাকা থেকে রংপুরগামী ট্রেনটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের ৫০ মিটার দূরে রেলপথ পরিবর্তনের স্থানে লাইনচ্যুত হয়। এতে লাইনচ্যুত ৬টি বগির মধ্যে দুটি বগি মূল রেলপথ থেকে অন্তত ১৫ মিটার দক্ষিণ দিকে চলে যায়। ট্রেনে মোট ১৪টি বগি ছিল।

ঘটনার পর পরই উল্লাপাড়াসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। উল্লাপাড়া থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যাত্রীদের মালামাল সংরক্ষণের জন্য ট্রেনটি ঘিরে ফেলে।
আহত যাত্রী রংপুর শহরের মিস্ত্রিপাড়া মহল্লার আদনান সিদ্দিকী বলেন, “ট্রেনটি স্টেশনে আসা মাত্রই বিকট শব্দ হয় এবং ভেতরে ঝাঁকুনি শুরু হয়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের দরজা-জানালা চাপ খেয়ে বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয়রা পাথর দিয়ে ট্রেনটির জানালার কাচ ভেঙে আমাদের উদ্ধার করে।”
সিরাজগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের উপপরিচালক মঞ্জিল হক বলেন, “দুর্ঘটনার পর আধা ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। কিছু যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় লোকজন চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেছে।”
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ট্রেনের চালকসহ ৫/৬ জন রেলকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রেলপথের ত্রুটির কারণে এবং সিগন্যাল ভুলের কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

তবে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “ট্রেন দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা (ডিটিও) আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
ট্রেনটি উদ্ধার করে রেল যোগাযোগ সচল করতে মধ্যরাত পেরিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ফিরোজ মাহমুদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।