লকডাউনে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৫৭৪ কোটি টাকা, নগদ সহায়তা পাবে ৩৫ লাখ পরিবার

করোনাভাইরাসের চলমান দ্বিতীয় ওয়েভে চলাচল সীমিত করার প্রেক্ষিতে কর্মহীন মানুষের মানবিক সহায়তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সরকার এ পর্যন্ত ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান।
তিনি আজ (রোববার) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব সিটি কর্পোরেশনে অর্থ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত এসব অর্থের মাধ্যমে শিশু খাদ্য ক্রয় করে বিতরণ করা হবে।
'জিআর নগদ দিয়েছি ১২১ কোটি টাকা, ভিজিএফ ৪৫২ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন- প্রতিটিকে ৫৭ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রতিটিকে ৩২ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে,' বলেন প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়া প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে আড়াই লাখ টাকা করে জিআর ক্যাশ দেওয়া হয়েছে। ৪৫২ কোটি টাকার যে ভিজিএফ দেওয়া হয়েছে, এতে ১ কোটি ৯ হাজার পরিবার সেখান থেকে অনুদান পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আপদকালীন ব্যবস্থার জন্য প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কাছে ২০-৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে যারা কর্মহীন হয়ে অর্থ সংকটে আছেন, এ অর্থ দিয়ে তাদের খাদ্য সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছেন।'
'প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণের জন্য আমরা সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্যাকেটজাত খাবার ক্রয় করেছি। আরও ১০ কোটি টাকার প্যাকেটজাত খাবার ক্রয় করার জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে আছে চাল ১০ কেজি; ডাল, তেল, লবণ ও চিনি এক কেজি করে, এবং নুডলস আছে। প্রতিটি প্যাকেটে প্রায় ১৭ কেজি ওজনের খাদ্য সামগ্রী থাকবে, যা দিয়ে একটি পরিবার ১৫ দিন খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারবে। মাসে দুইবার এ প্যাকেটটি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি,' বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ৪০ কোটি টাকার ঢেউটিন ক্রয় করা হয়েছে। আরও ৪০ কোটি টাকার ডেউটিন ক্রয় করার কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, 'টিআর কাবিখার টাকা দিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামোর কাজ করা হয়। প্রতি অর্থবছরে এটা ২ বার দেওয়া হয়। এবার ৯৭৩ কোটি টাকা তৃতীয় কিস্তি দিয়েছি বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে। এ টাকা মাঠে যাওয়ার ফলে কর্মসৃজন হয়েছে। কর্মহীন মানুষগুলো তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। ফলে দারিদ্র্যতা কমে যাওয়ার একটা সুযোগ তৈর হয়েছে।'
তিনি জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে ৩৫ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি বিতরণ করা হবে। দুয়েক দিনের মধ্যে তা বিতরন শুরু হবে।
'হিট শকের কারণে ১ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক লাখ কৃষককে প্রত্যেকেকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হবে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় থেকে,' উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
কালবৈশাখী, ঘুর্ণিঝড় ও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে দেশের ৬৪ জেলায় এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা আপদকালীন বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
'এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি চাল দেওয়ার যে কার্যক্রম তা চলমান আছে,' বলেন প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, 'মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার যে কর্মসূচী ভালনারেবল গ্রুপের মধ্যে, সে কার্যক্রম চলমান আছে। এবং টিসিবির সুলভমূল্যে খাদ্য বিক্রি কর্মসূচী চলমান আছে।'
মোঃ এনামুর রহমান আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লকডাউন শেষে হয়ে গেলে ঈদ উপলক্ষে একই পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি; তারাও নির্দেশনা পেয়েছে। ২ মের মধ্যে আমরা এ বরাদ্দ দেব। এখানেও ১০ কেজি চাল; ডাল, লবণ ও তেল এক কেজি করে; ৪ কেজি আলুর সাথে সিজনাল শাকসবজি থাকবে। এগুলো প্যাকেট করে দেব। এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারের কাছে এটি বিতরণ করব।'