যে কারণে চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়ায় বারবার দুর্ঘটনা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি অভ্যয়ারণ্যের জাঙ্গালিয়ায় টানা তিনদিনে পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহতের পর সড়কটিতে ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, এখানে বারবার দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো সড়কটি আঁকাবাঁকা ও সরু। ঈদের ছুটির মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক নিয়ে আসা যানবাহনগুলোর চালকদের কাছে সাধারণত সড়কটি অচেনা। আর এ কারণেই তারা বারবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, গত সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতরের দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মিনিবাসের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। পরদিন ০১ এপ্রিল ভোর ৪টার দিকে দুটি মাইক্রোবাস খাদে পড়ে আহত হন সাতজন।
আর আজ বুধবার (২ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৭টার দিকে মাইক্রোবাস ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহতের কথা জানা গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরো দুজন।
সড়কের এই অংশে বারবার দুর্ঘটনা কেন- সে বিষয়ে দোহাজারী হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভরঞ্জন চাকমা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমুখী সড়কের জাঙ্গালিয়া তুলনামূলক ঢালু এবং ডান দিকে হালকা বাঁক আছে। এজন্য এখানে দ্রুত গতির যানবাহন বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখার পর আর আর গতি কমানোর সুযোগ পায় না। ফলে দুর্ঘটনা হয়।'
তিনি আরো বলেন, 'দোহাজারী থেকে একেবারে চুনতি পর্যন্ত অর্থাৎ কক্সবাজারের সড়ক শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো সড়কটি সরু। দুই লেনের মহাসড়কটি মাত্র ১৬ ফুট প্রশস্তের। এবারের ঈদের আগে দোহাজারী থেকে কেনারীহাট পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ৫ ফুট করে মোট ১০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু কেরানীহাট থেকে চুনতি পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার মহাসড়ক মাত্র ১৬ ফুট প্রশস্ত রয়ে গেছে।'
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী কায়সার হামিদ টিবিএসকে বলেন, "সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল চুনতি অভ্যয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে। পাহাড়ি সড়কটি ঢালু ও সরু হওয়ার পাশাপাশি আঁকাবাঁকও। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখা যায় না।
তিনি বলেন, এ সড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে ছুটির দিনগুলোতে। ওই সময় সড়ক তুলনামূলক ফাঁকা থাকলেও কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ থাকে। এই রুটে নিয়মিত চলাচল করেন না এমন চালকরা দ্রুতগতিতে যানবাহন চালান। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সামনে চলে আসার পর আর সময়মতো ব্রেক ধরতে পারেন না বা ধরলেও কাজ হয় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, প্রথম দিন দুর্ঘটনার শিকার মিনিবাসটি এই রুটের নয়। এটি ছিল উখিয়া-টেকনাফ রুটের। দ্বিতীয় দিনে খাদে পড়া মাইক্রোবাস দুটির একটি কুমিল্লার ও একটি ঢাকার। আর আজ দুর্ঘটনার শিকার মাইক্রোবাসটি ঝিনাইদহ থেকে এসেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহাইব টিবিএসকে বলেন, 'শুধু জাঙ্গালিয়া নয়, মিঠার দোকান ও আজিজনগর; এ তিনটি স্থান বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। এছাড়া এই সড়কে রাতের বেলায় লবণ পরিবহন করা হয়। লবণ পানি পড়ে সড়কটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকবাহী যানবাহনের চালকেরা এই সড়ক সম্পর্কে অবগত থাকেন না বলেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন না।'
তার ভাষ্যমতে- গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কটি চার লেন বা ছয় লেনে উন্নীত না করায় প্রাণহানির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে।