যাত্রীবাহী বাসে সংক্রমিত হতে দরকার মাত্র ২০ মিনিট! এমন কি মাস্ক পরা থাকলেও

সারা দেশেই লকডাউন পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শিথিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ চলছে অনেক অফিস-আদালতে। প্রতিদিনই যানবাহনে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছেন পেশাজীবীরা। আবার সামনেই আসছে পবিত্র ঈদুল আযহা। এই সময়ে অনেকেই বাড়ি ফিরবেন ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য মহানগর থেকে।
বিদ্যমান তথ্য-উপাত্ত ইঙ্গিত দেয়; গত ঈদুল ফিতরে মানুষ যেভাবে বাসে, ফেরি এবং লঞ্চসহ নানা যানবাহনে চেপে বাড়ি ফিরেছিলেন, তা দেশের সংক্রমণ বিস্তারে বড় প্রভাব ফেলে। করোনা পরীক্ষার সীমিত পরিসর ঘিরে সমালোচনা থাকলেও, দেখা যাচ্ছে ঈদুল ফিতরের পর থেকে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যাও বিপুল পরিমাণে বেড়েছে।
জীবিকার তাগিদে মধ্যবিত্ত এবং স্বল্প আয়ের মানুষের চলাচলের মাধ্যম গণ-পরিবহন হলেও, আসছে ঈদে ভিড় এড়িয়ে চলাটা দেশে করোনার বিস্তার রোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিশেষজ্ঞও গণ-পরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শও দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞের হুঁশিয়ারি:
দক্ষিণ আফ্রিকার এক শীর্ষ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এঞ্জেলিক কোটেজে এমনই একজন। তিনি দেশটির মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) তিনি জানান, শতভাগ যাত্রীপূর্ণ কোনো যানবাহনের ভেতরের আবদ্ধ পরিবেশে করোনার মতো সংক্রামক ভাইরাস মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই অনেকেকেই আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি মাস্ক পড়লেও এক্ষেত্রে বাড়তি সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।
ডা. এঞ্জেলিক এমন সময় এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, যখন স্থবির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগে দ. আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা দেশটিতে ট্যাক্সি চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। গত রোববার রামাফোসা এ নির্দেশ দেন। যার আওতায় দূরপাল্লার ট্যাক্সিগুলোকে ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু, তারপরও ২০ মিনিটের বেশি দূরত্বের আন্তঃনগর চলাচলে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সেই ঝুঁকিটির প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন ডা. এঞ্জেলিক।
টাইমস লাইভ গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে যাত্রী পরিবাহী যানবাহনগুলো স্বল্পদূরত্বে সব জানালা খুলে রাখতে পারে। কিন্তু, সাম্প্রতিক সকল গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোনোভাইবেই ২০ মিনিটের বেশি অন্যের সংস্পর্শে থাকা উচিৎ নয়।
''২০ মিনিটের কম সময় জানালা খোলা এবং কমপক্ষে ৭০ শতাংশ সিটখালি এমন যানবাহনে ভ্রমণ করলে আমার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে'' যোগ করেন তিনি।
ভিড় এড়িয়ে যাতায়াতের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এঞ্জেলিক বলেন ''সার্ডিন মাছের ঝাঁকের মতো গাদাগাদি করে লোকভর্তি যানবাহনে আমি ২০ মিনিটের মধ্যেই আক্রান্ত হতে পারি। বৈজ্ঞানিকভাবে বলা যায়; এক্ষেত্রে আমার সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে।''
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে নিরাপদ গণ-পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ''ভাইরাস কারো সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে না। সে যেন আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলছে; ২০ মিনিটের বেশি সময় আবদ্ধ আর ভিড়পূর্ণ স্থানে থাক, তারপর দেখ আমি তোমার সঙ্গে কী করি।''
সাবধানতা বাংলাদেশেও সমান গুরুত্বের:
ডা. এঞ্জেলিকের এই সতর্কবাণী বাংলাদেশের চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে আমাদেরও মেনে চলা উচিৎ। অন্যথায়, নিজেদের সাথে সাথে পরিবার-পরিজনের জীবনের ঝুঁকিও বাড়িয়ে চলব শুধু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, করোনাভাইরাসের বায়ুবাহিত বৈশিষ্ট্যের কথাটি ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে। জানিয়েছে, বাতাসে হাঁচি-কাশি বা মুখের লালার আণুবীক্ষণিক কণায় ভর করে ভেসে বেড়াতে পারে এটি। তাই আবদ্ধ পরিবেশে সুরক্ষার ক্ষেত্রে মাস্কও অকার্যকর হয়ে পড়বে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা এখন ভাইরাসের এ পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। ভয় করছেন আরও অজস্র মৃত্যুর।
দক্ষিণ আফ্রিকার আলোচ্য বিশেষজ্ঞ যে প্রেক্ষাপটে সাবধান করেছেন তার সঙ্গে কিন্তু আমাদের সাংঘাতিক কিছু মিল আছে। দারিদ্র্যপিরীত বহু কৃষ্ণাঙ্গের জন্য কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে বের হওয়াটা জরুরি। আমাদের দেশেও চলমান মহামারিতে দারিদ্র্যে পড়েছেন অজস্র মানুষ। তাদের নিরাপদে চলাচলের ব্যবস্থা করার দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া দরকার।
কুরবানির ঈদে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছুক সিংহভাগ মানুষের গন্তব্য বহুদূরের ও দীর্ঘ সময়ের যাত্রার ব্যাপার। তাই সামর্থ্যবানদের প্রয়োজন অহেতুক ঝুঁকি এড়িয়ে চলা।
বৈশ্বিক মহামারির এই তাণ্ডবের মাঝে জাতি হিসেবে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই আমাদের সাবধান হতে হবে।
- সূত্র: টাইমস লাইভ অবলম্বনে