মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে তাণ্ডব, ৬ পুলিশ সাসপেন্ড

একটি 'রহস্যময়' ভুলের অজুহাতে কক্সবাজারের চকরিয়ার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে হামলা, মারধর, লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মাঝিরঘাট পাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় তিন এসআইসহ ৬ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে আদেশটি দিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার।
এর আগে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় সাময়িক বরখাস্ত ৬ জনসহ ১০ পুলিশ সদস্যকে চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন, চকরিয়া থানার এসআই কামরুল ইসলাম ও তুষ্ট লাল বিশ্বাস এবং এএসআই জেড রহমান। কনস্টেবল তিনজনের নাম জানা যায়নি।

ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, স্বাধীনতার মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে পুলিশের অমানবিক ও রহস্যময় হামলার ঘটনা এলাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এলাকাবাসী জানান, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী একটি যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ছিলেন। ওই মামলায় স্থানীয় ৩৭ জন স্বাধীনতাবিরোধীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। তিন বছর আগে তিনি মারা যান। এর আগ পর্যন্ত আসামীদের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাধীনতাবিরোধীরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এ ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত থাকতে পারে। দু'সপ্তাহ আগে একই ইউনিয়নের প্রয়াত নুরুল আলম চেয়ারম্যানের ঘরের সীমানা দেয়াল ভাঙ্গার একটি ঘটনায়ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা কায়সারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার বড় সন্তান এবং লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম অভিযোগ করেন, গোলাম মোস্তফা কায়সারের সঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সখ্য রয়েছে। এমন সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন জামায়াত নেতা কায়সার।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কায়সার বলেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি জাফর আলমের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমার প্রতিপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোকজনের সন্দেহ, আমি যেকোনো সময় আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারি। তাই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ঘরে দিন দুপুরে পুলিশের হামলা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মারধরের ঘটনায় আমি লজ্জিত।

পুলিশ সুপার ঘটনার ব্যাপারে বলেন, সাগর নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে তার স্বজনরা মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি সংলগ্ন অপর এক বাড়িতে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কায়সার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তথ্য দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলে ১০ সদস্যের পুলিশ পাঠান।
পুলিশ সুপার প্রাথমিক অনুসন্ধান করে জানান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে যাওয়া পুলিশের দলটি ভুলক্রমে সন্ত্রাসী সাগরের বাড়ির পরিবর্তে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।
অন্যদিকে রেজাউল করিম সেলিম জানান, পুলিশের হামলায় তাদের বাড়ি থেকে ৩৫ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৪ লাখ টাকা খোয়া গেছে। মারধরে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম (৬২), ছেলের বউ চকরিয়া মহিলা কলেজের প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন (২৮), মোরশেদুল আলম শিফাত (২৮), তার স্ত্রী সাবানুর শাভা (১৯), ছেলে বউ শাহানা আক্তার শানু (৩২ ) ও ফাতেমা ইয়াসমিন, অতিথি হাসান আবুল কাশেম, নাতি আরশেনুল করিম সোহা (৯) এবং নাতনি আনোয়ার মোস্তাফিজ (১৪) আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় রোববার আদালতে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে আহতদের দেখতে গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি রেজাউল করিমসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ববৃন্দ।