বিমানবন্দর পরিদর্শনে সালমান: ইডিএস মেশিন নষ্টে ক্ষোভ, দায়ী করলেন কর্তৃপক্ষকে

আকাশপথে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) বিকল থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকে দায়ী করলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
গতকাল বুধবার হঠাৎ এক ঝটিকা পরিদর্শনে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারটি ইডিএস মেশিন বিকল দেখতে পান।
তিনি জানান, প্রধান ইউরোপীয় ক্রেতারা, বিশেষ করে ইনডিটেক্স গ্রুপ, সিএন্ডএ এবং এইচএন্ডএম যথাসময়ে পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে।
এছাড়া দেশীয় ব্যবসায়ীরাও সমস্যার কথা জানিয়েছে, এজন্যেই তিনি এয়ারপোর্ট কার্গো ভিলেজ পরিদর্শনে যান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ'র নেতাদের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আনিসুর রহমান সিনহা, শহীদুল্লাহ আজীম ও নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনের পর সালমান সাংবাদিকদের জানান, "কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। তাদেরকে জবাবদিহি করার জন্য মন্ত্রণালয় ও সচিবের সঙ্গেও শিগগিরই বৈঠক হবে। রপ্তানি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন, এখানে ব্যত্যয় হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি"।
বেলা তিনটা ৩৬ মিনিটে কার্গো ভিলেজে ঢোকেন সালমান এফ রহমান ও বিজিএমইর নেতারা। সেখানে প্রায় আধাঘন্টা পরিদর্শনের পর বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

কার্গো ভিলেজের প্রবেশপথ সম্পর্কে সালমান এফ রহমান জানতে চান, সামনের রাস্তা এত সরু কেন!
এ সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান উপস্থিত ছিলেন। তারা এ বিষয়ে উত্তর দেন।
তারপর তিনি প্রবেশ করেন কার্গো ভিলেজের ভেতরে। সেখানে অগোছালোভাবে পণ্য পড়ে থাকা ও অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, "আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি, পণ্য রপ্তানির এয়ারপোর্টের অবস্থা এমন কেন? এটা বড় লজ্জার ব্যাপার। আপনারা নিজেরা এখানকার পরিবেশ উন্নত করবেন না, অন্যদেরও করতে দেবেন না।"
এরপর তিনি ইডিএস মেশিন এলাকা পরিদর্শন করেন। তবে জায়গাটি সংরক্ষিত হওয়ায় সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

বেলা পৌনে পাঁচটার দিকে ভিআইপি লাউঞ্জের পাশে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, "এয়ারপোর্টের কার্গো ভিলেজে চারটি মেশিনের সবগুলোই নষ্ট। দুটি সচল ছিল কিন্তু এখন নষ্ট। স্পেয়ার পার্টস প্রয়োজন কিন্তু সেটা এখন পাওয়া যায়নি।দুটি মেশিন ছয়মাস আগে স্থাপন করা হলেও ভ্যালিডেশন না হওয়ায় এখনো সচল করতে পারেনি"।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, "গত মার্চে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু এখনো কেন সচল হয়নি! তারা কোভিডের কারণ দেখিয়েছে। কিন্তু এটা গ্রহণযোগ্য না। খুবই দু:খজনক ঘটনা। আমি খুব হতাশ"।
"আগামী অক্টোবরে ভ্যালিডেশন করা গেলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন মেশিন চালু করা সম্ভব হবে। আর পুরনো মেশিন আগামী ৭ দিনের মধ্যে চালু হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সেই সময়ের মধ্যেই যেন হয়। আমি বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি।"
মেশিন নষ্টের কারণে পণ্য রপ্তানিতে দেরী হওয়ায় তিনি বলেন, "সুযোগ থাকার পরও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বেসরকারি খাতে এখন বড় সমস্যা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে রপ্তানির বিষয়টি।"
পণ্য রপ্তানির বাড়তি সুযোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, "এখন আমাদের বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাওয়ার শর্টেজের কারণে চীন টেক্সটাইল শিল্প বন্ধ করেছে। সেখানে ক্রিসমাস চলে এসেছে। দিস ইজ দ্য টাইম, ফর গেটিং লট অফ অর্ডার। ক্রিসমাস যত কাছে আসবে, ততই ক্রেতারা এয়ার কার্গোতে ডেলিভারি চাইবে। এয়ারপোর্ট ঠিক করতে না পারলে অতিরিক্ত ব্যবসার যে সুযোগ আছে, সেটাও হবে না। বিদ্যমান ব্যবসার সাথে সাথে বাড়তি ব্যবসার সুযোগও নষ্ট হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "মেশিন নষ্ট থাকায় কুকুর দিয়ে স্ক্যানিং করে পণ্য যাচ্ছে। কিন্তু এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতারা আমাদের উপর ভরসা রাখতে পারছে না"।