বছরজুড়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে এলো মহামারি

২০২০ সালে কোভিড -১৯ মহামারীতে সমগ্র বিশ্বই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশকে এ মহামারী বিদ্যালয়ের বাইরে ঠেলে দিয়েছে।
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেস্কো এর মতে, করোনা মহামারী বিশ্বজুড়ে ১.৬ বিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষ বহির্ভূত রেখেছে।
অন্তত ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। অনেক শিশুই এ বছর তাদের প্রথম স্কুল শুরু করতে পারেনি, ইউনিসেফের নতুন এক সমীক্ষায় এটি প্রকাশিত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়াতে প্রায় ৪৩০ মিলিয়ন শিশুর ওপর বিদ্যালয় বন্ধের প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া করোনার ফলে সার্বিকভাবে তাদের পারিবারিক আয়ের ওপর যে প্রভাব পড়েছে তার প্রতিফলন হিসেবে এদের অনেকেই আবার বিদ্যালয়ে ফিরতে পারবে কিনা সে সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশও এসব দেশের অন্তর্ভুক্ত; যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব ভয়াবহ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করার উদ্দেশ্যে এ বছরের ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হল ও ছাত্রাবাস এবং কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করে।
মানুষের উৎকণ্ঠার সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সময়কালও বাড়তে থাকে।
একাধিক দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়কাল বাড়িয়ে মন্ত্রণালয় একে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ এপ্রিল, ৫ মে, ৩০ মে, ৬ আগস্ট, ৩১ আগস্ট, ৩ অক্টোবর, ৩১ অক্টোবর, ১৪ নভেম্বর এবং ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়।
সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর ঘোষণা আসে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত থাকছে ২০২১ সালের ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত। সেইসাথে বাতিল হয়েছে পরীক্ষা এবং দেশবাসী নতুন করে পরিচিত হয়েছে 'অটো-পাসের' সঙ্গে।
করোনাভাইরাসের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। সরকার তাই এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের সকল পরীক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পিএসসি এবং জে এসসি পরীক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণের জন্য অটোমেটিক প্রমোশনের (অটো-পাস) ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ফলাফল নির্ধারিত হবে তাদের জেএসসি এবংএসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হবে।
অনলাইন ক্লাস
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও জ্ঞানচর্চা যেন থেমে না থাকে সে উদ্দ্যেশ্যে আমাদের দেশেও শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার প্রক্রিয়া চলমান রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
'সংসদ বাংলাদেশ' টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে সরকার বিশেষভাবে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
এপ্রিলের ৩০ তারিখে সকল সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম অনুসারে, বর্তমানে দেশের ৬৩টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ক্লাস ৪ঠা অক্টোবর হতে অনলাইনেই নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২১ সাল: শিক্ষাব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ
সরকার যদিও অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নেবার প্রচেষ্টা করে চলেছে, তবে দেশের একটা বড় অংশের কাছে এখনো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ অপ্রতুল।
ইতোমধ্যেই শিক্ষার মান, শিক্ষাবর্ষ, অর্থনৈতিক ক্ষতি, সমাবর্তনে বিলম্ব এবং দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিরূপ প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছে।
এখনো কেউই নিশ্চিত নন কবে নাগাদ আবার স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে।
আগামী বছর শিক্ষার জন্য বেশ কঠিন সময় অপেক্ষা করছে যা কাটাতে সরকার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাইকেই অতিরিক্ত প্রচেষ্টার ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সাথে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ বেড়ে চলেছে। এখন একটি সমন্বিত পরিকল্পনাই পারে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্পন্ন করতে।