প্রসিকিউটর পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ
পেশাগত অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সরকারী আইনজীবী (প্রসিকিউটর) ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে অপসারণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে এই আদেশ জারি করা হয়। তুরিন গুরুতর পেশাগত অসদাচরণ করেছেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি মেজর (অব.) ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে গত বছরের ৯ মে তাকে ট্রাইব্যুনালের সকল কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর।
এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় প্রায় ১৮ মাস তদন্ত সম্পন্ন করে। অতঃপর তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সোমবার এই আদেশ জারি করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত বছরের ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন ২৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলার প্রসিকিউটর ছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান৷ ২০১৭ সালে তদন্ত শুরু হওয়ার পর ১১ নভেম্বর তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়।
অভিযোগ ওঠে, ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তারের আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর তুরিন আফরোজ প্রথমে তাকে টেলিফোন করে দেখা করার সময় চান। এরপর গুলশানের একটি রেস্ট্রুরেন্টে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন তুরিন।
এ সংক্রান্ত দু'টি অডিও-রেকর্ড পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থার হাতে এলে তা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে হস্তান্তর করা হয়। অডিও-রেকর্ড দু'টি ওয়াহিদুল হক গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়।
ট্রাইব্যুনাল সুত্রে জানা যায়, দু'টি অডিওর মধ্যে একটি টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড। এটা চার মিনিটের মতো৷ অন্য অডিওটি ঐ গোপন বৈঠকের, প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার মতো৷ টেলিফোনে কথা হয় ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর আর বৈঠকটি হয় পরদিন অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর। ঢাকার অলিভ গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর গোপন কক্ষে বৈঠক করেন তারা৷ সেখানে তুরিন আফরোজ, তার সহকারী ফারাবি, আসামি ওয়াহিদুল হকসহ মোট পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই অডিও রেকর্ডিংয়ে আসামী ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের ইঙ্গিত দেন তুরিন আফরোজ।
পরবর্তীতে ওইসব অডিও রেকর্ড আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু।
ওই তদন্ত সম্পন্ন করে সোমবার এই আদেশ জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) বিকাশ কুমার সাহা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “তুরিনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে।”
