দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ‘রোল মডেল’: ওয়াসা প্রধান

দক্ষিণ এশিয়ার বড় শহরগুলোতে পানি সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ঢাকা ওয়াসাকে 'রোল মডেল' বলে দাবি করেছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
তিনি বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ (এডিবি) আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঢাকা ওয়াসাকে দক্ষিণ এশিয়ায় পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে নিয়েছে। ঢাকা ওয়াসা তার 'ঘুরে দাঁড়াও' রোডম্যাপ থেকে বিচ্যুত হয়নি, তবে বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। ঢাকায় বর্তমানে পানির চাহিদা মৌসুমভেদে দৈনিক ২১০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। ওয়াসার উৎপাদন সক্ষমতা ২৭০ কোটি লিটার।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বলেন তিনি।
তবে একই সাথে সভায় এই ওয়াসার পানিকেই ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়েছেন তাকসিম এ খান।
ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, "নগরীতে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে সে পানির ৯০ থেকে ৯৫ ভাগই নির্ধারিত সময়ে পানযোগ্য। তখন পানি না ফুটিয়েই পান করা সম্ভব কিন্তু ৫-১০ শতাংশ স্থানে লাইনে সমস্যার কারণে চিহ্নিত করা সম্ভব নয় যে কোথায় সমস্যা রয়েছে তাই পানি ফুটিয়েই পান করা ভালো।"
বাসাবাড়ির পানির ট্যাঙ্ক ও পাইপ লাইন নিয়মিত পরিষ্কার করে না রাখায় অনেক বাসার পানিই সরাসরি পান করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তাকসিম এ খান বলেন, "আমরা যে পানি সরবরাহ করি তা সম্পূর্ণভাবে পানযোগ্য কিন্তু বাড়ির মালিকদের অবহেলার কারণে দোষ এসে ওয়াসার উপরে পড়ছে। আমরা শতভাগ বাসায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছি না এটা মানছি তবে এ পানি না ফুটিয়ে পান করলেও তেমন কোনো সমস্যা হয়েছে বলে আমরা অভিযোগ পাইনি।"
নগরবাসীকে ফুটিয়ে পানি সরবরাহ করলে প্রায় ১০ গুণ খরচ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "একজন মানুষ দিনে ১০০ লিটার পানি ব্যবহার করলে সেখানে মাত্র ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করছে এজন্য এতো টাকা খরচ করার কোনো মানে নেই তাই পান করার পানি ফুটিয়ে পান করাটাই ভালো।"
তবে ইতোমধ্যে ওয়াসা ঢাকা শহরে এলাকা ভিত্তিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থার একটি আধুনিক পদ্ধতি ডিএমএ (ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া) হাতে নিয়েছে। ঢাকা শহরের মোট ১৪৫টি ডিএমএ এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৭১টি ডিএমএ স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ডিএমএগুলোর কাজ চলমান আছে যা জুন, ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কোন এলাকায় পানির স্বল্পতা দেখা দিলে পার্শ্ববর্তী ডিএমএ হতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ইমপোর্ট হবে অথবা উদ্বৃত্ত হলে পার্শ্ববর্তী ডিএমএতে এক্সপোর্ট হবে।
যেসব এলাকায় ডিএমএ এর কাজ শেষ হয়েছে সেসব এলাকায় পানির সংকট থাকবে না এবং পানি না ফুটিয়ে পান করা যাবে বলে আশ্বাস দেন ঢাকা ওয়াসার এমডি।
এদিকে ঢাকার মাত্র ১৮-২০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার স্যুয়ারেজের লাইন রয়েছে। ঐসব এলাকার পয়ঃবর্জ্য ওয়াসা তাদের ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে যায় তবে বাকি বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য অধিকাংশই মিশে যাচ্ছে খাল, লেক, ড্রেন কিংবা নদীতে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ সময় পার করলেও নগরবাসীকে শতভাগ নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারেনি এবং পারেনি সব বাসাবাড়িকে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইনের মধ্যে আনতে। এরপরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সেবা সংস্থাগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদনের তালিকায় প্রথম হয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
ঢাকা ওয়াসা সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০টি দপ্তর/সংস্থা/সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির প্রতিবেদন ও প্রমাণকসমূহ মূল্যায়নে ১০০ নম্বরের বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা ৯৮.২৭ নম্বর পেয়েছে।
এ সম্পর্কে ওয়াসা এমডি বলেন, "ঢাকা শহরে পানির সমস্যা কোথাও নেই। কিছু জায়গায় কারিগরি সমস্যা বা পকেট সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানে আমরা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। বর্তমানে ৩৪ শতাংশ ভূ-উপরস্থ পানি ও ৬৬ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি দিচ্ছি। আমাদের দুটি প্রকল্প চলমান আছে। সেগুলো শেষ হলে আমাদের যেলক্ষ্য, ৭০ ভাগ ভূ-উপরস্থ পানি সরবরাহ করা। কোভিডের সময় যখন সবদিকে লকডাউন ছিল, তখনও কিন্তু একদিনের জন্যও ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল না।"
শীতকালে নদীতে পানি কমে যাওয়া এবং গভীর নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিছু এলাকায় পানির সমস্যা হয়। পানির পাম্পগুলোতে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো এলাকায় পানির সংকট হলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি সরবরাহে ওয়াসার গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি সমবায় অধিদপ্তরের অডিটে ঢাকা ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তাকসিম এ খান বলেন, "দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলমান। ওয়াসার প্রধান শৃঙ্খলা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।"
ওয়াসার স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার বিষয়ে এমডি জানান, ঢাকা ওয়াসা ২০১৬ সাল থেকে স্যুয়ারেজ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। পাঁচটি পয়োবর্জ্য শোধনাগার করার কার্যক্রম চলছে। ঢাকা ওয়াসা ২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকা শহরের শতভাগ এলাকাকে স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায়, সচিব শারমিন হক আমির ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিশাত মজুমদার।