খালেদার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে, বিএসএমএমইউর প্রতিবেদন

আপিল বিভাগে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, আর্থারাইটিস ও শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। তবে তার ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর বোর্ড বলেছে, খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় তার আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তার শারীরিক অবস্থা লক্ষণীয়ভাবে উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনটিকে 'ভুয়া' বলেছেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
তিনি আপিল বিভাগে বলেন, ২২ মাস ধরে বন্দি খালেদা জিয়া প্রায় ছয়মাস ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া দিন দিন তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। একা চলতে পারেন না। এছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন খালেদা জিয়া।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।
আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৫। তিনি গুরুতর অসুস্থ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হোক।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরও রয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নিতাই রায় চৌধুরী, এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
বুধবার বিকেলে রিপোর্টটি গ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর। আপিল বিভাগের নির্দেশে এই প্রতিবেদন পাঠায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে মেডিকেল রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া রিপোর্টে কী আছে সেটা তিনি জানেন না বলে জানান। উপাচার্য বলেন, ‘নির্দিষ্ট মেডিকেল বোর্ড বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কয়েকদিন ধরে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদন সিলগালা করে আমাকে দেওয়া হয়। আমি শুধু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মাধ্যমে তা আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয়েছে।
গত ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার মেডিকেল প্রতিবেদন না আসায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার জামিন আবেদনের শুনানি ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেন শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি পিছিয়ে ৫ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একই বেঞ্চ ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ দেন।
গত ১৪ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে খারিজ হওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আবেদনটি দায়ের করেন।
গত ৩১ জুলাই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপি প্রধান। অরফানেজের মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান তিনি। পরে হাইকোর্ট সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর আদালতের আদেশে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। ৮ নভেম্বর তাকে চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অনুমোদনের পরে খালেদাকে বিএসএমএমইউ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় এবং নাইকো দুর্নীতি মামলায় পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি অস্থায়ী আদালতে হাজির করা হয়।