করোনা মোকাবেলা: কতটা নিরাপদ সাতক্ষীরার সীমান্ত

সাতক্ষীরা জেলার উত্তরে যশোর, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে খুলনা ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
ভৌগোলিক দিক দিয়ে সাতক্ষীরার অবস্থান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে। জেলার ১৩৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমানা, আর ১০০ কিলোমিটার জল সীমানা।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। তবে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কতটা নিরাপদ সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা?
শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদরের বৈকারী সীমান্ত হয়ে কলারোয়া উপজেলার ভাদিয়ালী সীমান্ত পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি।
কালিয়ানী সীমান্ত এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি সদস্য বলেন, বর্তমানে টহলের সময় বাড়ানো হয়েছে। কালিয়ানী সীমান্ত এলাকায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আমরা চারজন ডিউটি করছি। যা খুবই কষ্টসাধ্য।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে ভারত থেকে বিএসএফের সদস্যরা অসুস্থ ব্যক্তিদের আমাদের দিকে পুশব্যাক করে দিচ্ছে। আমরাও তাদের কোনো ভাবেই প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছি না।
বিজিবি ও বিএসএফের এত নিরাপত্তার মধ্যেও কী চোরাইপথে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ''হ্যাঁ, সম্ভব।''
সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে অবৈধভাবে দু'দেশে পারাপার করার কাজে নিয়োজিত দালাল। অবৈধপথে ভারতে পাঠানো বা ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কাজ করেন এসব দালালরা।
কালিয়ানী সীমান্তে কথা হয় এমন এক দালালের সঙ্গে। সংবাদকর্মী পরিচয় গোপন করে ভারতে যাওয়া-আসার পদ্ধতি জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
তিনি বলেন, ''এটা কোনও ব্যাপারই না। আমি এ সবেরই কাজ করি। যেতে গেলে ছয় হাজার টাকা লাগবে। আবার ফিরতে গেলেও ছয় হাজার টাকা হলেই হবে। কোনও প্রকার বিজিবি বা বিএসএফের বাঁধার মুখে পড়তে হবে না।''
অন্যদিকে, কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি এলাকায় বাংলাদেশ-ভারতকে আলাদা করেছে সোনাই নদী। যে নদী অতিক্রম করেই চোরাইপথে বাংলাদেশে অবৈধভাবে আনা হয় ভারতীয় মালামাল। এই নদীতে গোসল করেন ভারতীয় ও বাংলাদেশ উভয় পাড়ের মানুষ।
কেড়াগাছি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল হোসেন জানান, সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন সময় ভারতীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র আসে। তবে আসার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
বিজিবির নজরদারির মধ্যে কিভাবে আসে এমন প্রশ্নের তিনি কোনও উত্তর দেননি। অবৈধভাবে ভারতে মানুষ যাতায়াত করে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ''মাঝে মধ্যে দুই-একজন আসা-যাওয়া করে।''
সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার জানান, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সীমান্ত এলাকাগুলোতে টহল দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিশেষ টহল, রুটিন টহল ছাড়াও চোরাচালান রোধে টহল রয়েছে।
কাশিয়ানী সীমান্ত এলাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তবে আমাদের যেটুকু জনবল রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি।
ভারত থেকে অবৈধভাবে কারো প্রবেশের সুযোগ নেই জানিয়ে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, বিজিবির নজরদারি মধ্যে চোরাইপথে যাতায়াতের কোনও সুযোগ নেই।
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ''করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও করনীয়'' শীর্ষক এক মতবিনিময়ের আয়োজন করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। সেখানে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকারকে সীমান্তে অবৈধ যাতায়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন।
উত্তরে অধিনায়ক বলেন, সীমান্তে অবৈধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।