এ বছর জন্মনিবন্ধন বেড়েছে ২১%: মন্ত্রণালয়

দেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ৯% থেকে ২১% এ উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বুধবার রাজধানীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে 'জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস-২১' উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা জানান।
এ বছর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে শ্রেষ্ঠ বিভাগ হয়েছে রাজশাহী। সেখানে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সংখ্যা প্রায় ৫০%।
এছাড়াও শ্রেষ্ঠ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচিত হয় রাজশাহী, শ্রেষ্ঠ জেলা নাটোর ও জয়পুরহাট, শ্রেষ্ঠ উপজেলা চট্টগ্রামের আনেয়ারা, শ্রেষ্ঠ পৌরসভা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন নাটোরের গুরুদাসপুর।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, "জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়টি শুনে যতো ছোট মনে হোক না কেন এর প্রভাব অনেক বেশি। এর গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। আমাদের রেজিস্ট্রারদের অফিসগুলো লোকবল এবং নানা সমস্যায় ভুগছে, এ সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করা হবে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ১০০% জন্মনিবন্ধন এবং ৫০% মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার বিভাগ"।
তিনি আরও বলেন, "অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে কিন্তু সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দেয় মাঝে মাঝে, এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে এবং ভালো মানের সফটওয়্যারের ব্যবস্থা করবো"।
মন্ত্রী বলেন, "এটাকে গুরুত্বহীন মনে করার কোনো অবকাশ নেই। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফ্রি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ব্যবস্থা করানো যায় কিনা সে বিষয়ে আমি কথা বলবো"।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, "১৮৭৩ সালে আইন হয় জন্মনিবন্ধনের। এতো দিনে এ বিষয়ে যে পরিপূর্ণতা অর্জন করা প্রয়োজন ছিল তা আজও হয়নি। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনে অনেকগুলো কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে কিন্তু ১০০% কার্যকর করতে পারিনি আমরা"।
মেয়র আরও বলেন, জন্ম নিবন্ধন সিটি কর্পোরেশন থেকে করলেও সংশোধনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে যেতে হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কাছে। সেখানেই দালালরা ফায়দা নিচ্ছেন। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, "আমাদের কাউন্সিলরা যাতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিতে পারে সে জন্য আবেদন করা হয়েছে।
ডিজিটাল সময়ে এসে কেন আমরা দালালের শরণাপন্ন হবো। যদি প্রচার বাড়ানো হয় তাহলে সবাই এ বিষয়ে জানবে এবং তাদের জন্য সহজ হবে"।
'সবার ঢাকা' অ্যাপসের মাধ্যমেও জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে এবং ডিএনসিসি থেকে একটি জন্ম নিবন্ধনের সাথে একটি করে গাছের চারা উপহার দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদে সভাপতিত্ব করেন; এছাড়াও বক্তব্য রাখেন লোকমান হোসেন মিয়া, সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ; ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ ভীরা মেনডোনকা প্রমুখ।
'সবার জন্য প্রয়োজন, জন্ম ও মৃত্যুর পরপরই নিবন্ধন' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে উৎসাহী করার লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে 'জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস'। গত ৯ আগস্ট মন্ত্রিসভা বৈঠকে 'জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস' ঘোষণা করে সরকার। যা ১২ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে অনুমোদন দেয়।
১৮৭২ সালের জন্মনিবন্ধন আইন রহিত করে সরকার ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন প্রণয়ন করে যা পরবর্তীতে ২০১৩ সংশোধিত হয় এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা ২০০৬ ও ২০১৭ রহিত করে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করা হয় যা বর্তমানে কার্যকর আছে।
২০১০ সালে অনলাইন জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় এবং তার এখন 'বার্থ এন্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম' (বিডিআরআইএস) নামে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে।
জন্ম সনদ ব্যবহারের মাধ্যমেই একটি শিশু পরবর্তীতে স্কুলে ভর্তি এবং পর্যায়ক্রমে ব্যাংক হিসাব খোলা, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহ নিবন্ধনসহ রাষ্ট্রের ১৮টি সেবা গ্রহণ এবং কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে স্থাবর এবং ক্ষেত্রবিশেষে অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরসহ ৪টি রাষ্ট্রীয় সেবা গ্রহণে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।