'আমি শুধু তাকে শেষবারের মত দেখতে চাই'

"গতকাল (বৃহস্পতিবার) চারটা থেকে ঘুম নেই, খাওয়া নেই, শান্তি নেই, পাগল হইয়া গেছি আমার স্ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে। তাকে হারিয়ে আমার সন্তানদের নিয়ে কিভাবে থাকবো এখন? আমার সাত বছরের মেয়ের কাছে কি জবাব দিবো? কিভাবে ওকে বলবো তোমার মা নেই?"
শুক্রবার বিকালে ঢাকা মেডিকেলের সামনে স্ত্রীর লাশ খুঁজতে এসে এভাবেই কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার শ্রমিক অমৃতা বেগমের (৩২ বছর) স্বামী মো. সেলিম।
সেলিম একজন রিক্সা চালক। থাকেন নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলের কাছেই। এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সেলিম ও সেলিমের স্ত্রী অমৃতা বেগমের ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম।
সেলিম টিবিএসকে বলেন, "আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন একটু ভিতরে যায় আবার দেইখ্যা আইসা পরে। ফায়ার সার্ভিসের লোকের অবহেলার কারণেই এ লোকগুলো মারা গেসে তা না হলে এ লোকগুলো মারা যায় না"।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমার মানুষ গেছে সান্ত্বনা দিবে তো তারা! কিন্তু কিসের সান্ত্বনা, তারা আমায় আরো লাঠি দিয়ে মারে। আমার ৭ বছরের মেয়ে কানতেছে। তাকে আমি কি জবাব দেবো?"

কারখানার কর্মকর্তারা ছাদে এবং গেটে তালা দিয়ে চলে গিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ছাদে তালা না মারলে লোকগুলো বাঁচতে পারতো। লোকগুলো নামতেই পারেনাই।"
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা কার কাছে গেলে বিচার পাবো? মানুষগুলোকে ইচ্ছা করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার স্ত্রীর লাশ পাইনি এখনও। ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে ১৫ থেকে.২১ দিন সময় লাগতে পারে"।
মেয়ের লাশ খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলে
অভাবের সংসারে দুই মেয়েকে কারখানায় কাজে দিয়েছিলেন সুজন মিয়া। কিন্তু এক মেয়ে কাজ করে ফিরে আসলেও আরেক মেয়ের সন্ধানের জন্য মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) এসেছেন সুজন মিয়া। ডিএনএ টেস্টের জন্য দিয়েছেন রক্ত।

সুজন মিয়ার বড় মেয়ে লতা ও ছোট মেয়ে ফাতেমা কাজ করতো হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায়। বড় মেয়ে লতা আক্তার ( ১৮ বছর) রাতে ডিউটি করে আসায় বাসায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ছোট মেয়ে ফাতেমা আক্তার ( ১৪ বছর) কাজে যায় সকাল ৮টায়।
সুজন মিয়া টিবিএসকে বলেন, "আমি রিক্সা চালাই। সংসারের খরচ যোগাতে আমার মেয়েদের চাকরিতে ঢুকিয়েছি। আমার ছোট মেয়ে দুর্ঘটনার দিন সকালে আমার কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে গিয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টায় শেষ কথা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের লাশটা দেখতে চাই। আমার মেয়ে বলতো বাবা আমরা দুই বোন চাকরি করে তোমার সংসারের হাল ধরবো। সেই মেয়ে আমার নেই"।