আবরার হত্যাকাণ্ডের ৪০ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তোপের মুখে বুয়েট ভিসি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের একদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সব দাবি-দাওয়া তিনি মেনে নেবেন।
আবরারের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা টানা দুইদিন আন্দোলন চালিয়ে গেলেও বুয়েটের উপাচার্যের কোন খোঁজ মিলছিলো না। এমন অবস্থায় সমালোচনার মুখে পড়েন আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল বুয়েটের উপাচার্য।
মঙ্গলবার সকালে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বুয়েট উপাচার্যের সমালোচনা করে তাকে এ ঘটনায় জবাবদিহি করার জন্য আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
এরপর বিকাল সোয়া ৪টার পর ক্যাম্পাসে এলেও শহীদ মিনারে বিক্ষোভস্থলে না গিয়ে নিজের কার্যালয়ে চলে যান উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে ভিসির অফিসের নিচে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের ওই অবস্থান থেকে স্লোগান ওঠে- ‘ভিসি স্যার নীরব কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার ভাই কবরে, ভিসি কেন ভেতরে’, ‘প্রশাসন নীরব কেন, জবাব চাই দিতে হবে’। সেই সঙ্গে চলতে তাদের মূল স্লোগান- ‘আবরারের খুনিদের, ফাঁসি চাই দিতে হবে’।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার পর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম দোতলা থেকে নেমে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সামনে এলে শুরু হয় হট্টগোল।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আটদফা দাবি মেনে নেওয়ার কথা বললেও, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যেকটি দাবির প্রেক্ষিত উপাচার্যকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান।
ঘটনাস্থলে ভিসির অনুপস্থিতি নিয়েও একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তারা।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, “আমি শিক্ষা-উপমন্ত্রীর সাথে তোমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলেছি৷ তোমাদের দাবিগুলোর সাথে নীতিগতভাবে আমরা একমত৷ আমার হাতে সব ক্ষমতা নেই৷ ক্ষমতা অনুযায়ী তোমাদের দাবিগুলো মেনে নেবো।”
আবরারের মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসে কেন আসেননি-শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি ক্যাম্পাসে এসেছি৷ কিন্তু কাজে ব্যস্ত ছিলাম।”
প্রায় আধা ঘণ্টা হট্টগোল চলার পর আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই উপাচার্য আবার উপরে তার কার্যালয়ে চলে যান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিচে হাতে তালি আর স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি হল:
১। খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজে ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে শনাক্তকারী খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে হত্যাকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল ও ক্যাম্পাস থেকে তাদের বহিষ্কার করতে হবে।
৩। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে আদালতে আবরার হত্যার বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
৪। বুয়েট উপাচার্য ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন তিনি ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ৩০ ঘণ্টার মধ্যেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি। মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত থেকে এর জবাবদিহি করতে হবে। একইসঙ্গে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালককেও ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার জবাবদিহি দিতে হবে।
৫। বুয়েটের হলগুলোতে র্যাগের নামে ও ভিন্নমতের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং নিপীড়কদের ছাত্রত্ব বাতিল করে তাদের হল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। আহসানউল্লাহ হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনার জন্য দায়ীদেরও আগামী ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে বহিষ্কার করতে হবে।
৬। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় আগামি ১১ অক্টোবর বিকাল পাঁচটার মধ্যে শেরে-ই-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে।
৭। আবরার হত্যার মামলা চলাকালীন সকল খরচ ও আবরারের পরিবারের সকল ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
৮। আগামী ৭ দিনের মধ্যে (১৫ অক্টোবর) বুয়েট ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন ও কর্মকাণ্ড অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।