আইসিইউ’র জন্য হাহাকার, ঝুঁকির মুখে ক্রিটিক্যাল রোগীরা

২৩ মে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনার। ৩১ মে রাতে লুনার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে প্রয়োজন হয় আইসিইউ সাপোর্টের। অনেক চেষ্টা করেও নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার কোনো হাসপাতালের কোথাও আইসিইউ বেড খালি পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
লুনার মত প্রতিদিনই আইসিইউ বেডের জন্য ক্রিটিক্যাল করোনা রোগীদের হাহাকার বাড়ছে। আইসিইউ এর অভাবে অনেকে মারাও যাচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ রোগীদের ১৫ শতাংশের উপসর্গ তীব্র হয় । আর ৫ শতাংশ রোগীর পরিস্থিতি থাকে জটিল। এই ২০ শতাংশের অনেকেরই আইসিইউ সেবার পাশাপাশি ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, বয়স্ক ও করোনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী অন্য রোগ আছে এমন রোগীদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়।
ঢাকার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ এর জন্য চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া ও আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. আসাদুল মজিদ নোমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মুগদা হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড আছে। তবে প্রতিদিন একটি বেডের বিপরীতে চার/পাঁচজন ক্রিটিক্যাল রোগী অপেক্ষায় থাকেন। আইসিইউ এর অভাবে অনেক ক্রিটিক্যাল রোগী ওয়ার্ডেই মারা যায়।
তিনি বলেন, "আইসিইউতে একজন রোগী ভর্তি হলে ওই রোগী মারা যাওয়া ছাড়া বেড খালি হওয়ার উপায় নেই। একজন রোগী আইসিইউতে আসলে তার সুস্থ্য হতে অন্তত ১৪ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে কেউ মারা গেলে সেই বেড খালি হয়। তবে অনেক সময় রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে সেই রোগীকে আইসিইউ থেকে কেবিন বা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে অন্য রোগীকে জায়গা করে দেয়া হয়।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন বেড আছে ১৩ হাজার ৯৮৪টি। এর মধ্যে আইসিইউ বেড আছে ৩৯৯টি।
রাজধানী ঢাকার করোনা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড আছে ২১৮টি। ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা বিভাগে ৪৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪, রাজশাহী বিভাগে ২৮, খুলনা বিভাগে ১৮, বরিশাল বিভাগে ১৮, সিলেট বিভাগে ১৬ ও রংপুর বিভাগে ১৩টি আইসিইউ বেড আছে কোভিড-১৯ রোগীর জন্য।
কোভিড-১৯ রাগীদের জন্য সবচেয়ে কম মাত্র ৭টি আইসিইউ বেড আছে ময়মনসিংহ বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাসের হটস্পট নায়ারণগঞ্জে আইসিইউ বেড আছে ১০টি আর গাজীপুরে ৭টি। টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও মাদারীপুরে কোনো আইসিইউ বেড নেই।
করোনাভাইরাসের নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক শিল্পপতির ভাইসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।
দেশে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ১৫৩ জন ও মারা গেছে ৬৫০ জন। প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড বাড়ানো ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ ও করোনা বিষয়ক ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখন রোগী অনেক বাড়ছে। সবকিছু খুলে দেওয়ায় আগামীতে রোগী আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড বাড়াতে হবে ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।"
তিনি বলেন, "বয়স্ক ও ক্রিটিক্যাল রোগীদের আইসিইউ বেশি প্রয়োজন হয়। দেশে এখন যারা মারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে মধ্যে ৬০ উর্ধ্ব বেশি, তাদের অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। তাই মৃত্যু কমাতে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।"
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও করোনা বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যতগুলো আইসিইউ বেড আছে সেগুলোর ফুল ইউটিলাইজেশন যাতে হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটি হলেও ৪০০ মানুষ সেবা পাবে। রাতারাতি এ মুহূর্তে আইসিইউ বেড বাড়ানো সম্ভব না। এটিই বাস্তবতা। এখন যা রিসোর্স আছে তাই ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে আর বিদেশ থেকে যা যা আনা যায় তা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।"