Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 02, 2025
আব্বাস কিয়ারোস্তামির কোকার: কল্পনা ও বাস্তবের অসাধারণ এক চালচিত্র

ফিচার

ফারাহ জাহান শুচি
31 August, 2021, 10:40 pm
Last modified: 22 June, 2023, 08:38 pm

Related News

  • আগাথার একই উপন্যাস থেকে শোয়ার্জনেগার ও স্ট্যালনের অ্যাকশন সিনেমা—দুটোই ফ্লপ
  • তিতাস একটি নদীর নাম: আরেকবার
  • বিদেশি সিনেমার ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প
  • ঢাকাই ছবির অস্ত্রশস্ত্র: নূরুর কারিগরি, জসিমের স্টাইল এবং ছিটকিনি ও রুহ আফজা
  • ১১০ কোটি ডলার আয় করে চীনের সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের রেকর্ড ‘নে ঝা ২’-এর

আব্বাস কিয়ারোস্তামির কোকার: কল্পনা ও বাস্তবের অসাধারণ এক চালচিত্র

আজ ২২ জুন আব্বাস কিয়ারোস্তামি'র জন্মদিন। ‘হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?’, ‘লাইফ, অ্যান্ড নাথিং মোর…’, ‘থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ’ নিয়ে তৈরি কোকার ত্রয়ী। এটি বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ত্রয়ীর একটি যার পরিচালক বিশ্ববরেণ্য এই ইরানি চলচ্চিত্রকার।
ফারাহ জাহান শুচি
31 August, 2021, 10:40 pm
Last modified: 22 June, 2023, 08:38 pm
আব্বাস কিয়ারোস্তমি। ছবি: প্যাসকাল লে সেগ্রেটাইন/গেটি ইমেজেস ভিয়া ভক্স

"আমার চলচ্চিত্র দেখার সময় দর্শক ঘুমোবে। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমি জানি, অনেক ভালো চলচ্চিত্র দেখার সময়ও ঘুম আসতে পারে। এটাকে খারাপভাবে নেওয়ার কিছু নেই। আমি তা বরং বেশ পছন্দ করি। সিনেমা হলে বসে এমন অনেক চলচ্চিত্র দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঠিক সেই ছবিগুলো আমাকে রাত-বিরাতে জাগিয়ে রেখেছে, দিনের পর দিন আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে। এ ধরনের চলচ্চিত্রকে আমি ভালোবাসি।"

- আব্বাস কিয়ারোস্তামি, বিশ্ববরেণ্য ইরানি চলচ্চিত্রকার (১৯৪০-২০১৬)

আব্বাস কিয়ারোস্তামির চলচ্চিত্রের যাত্রাটা আমি শুরু করেছিলাম 'ক্লোজ-আপ' (১৯৯০) দিয়ে। ভিন্ন ধারার এ ডকু-ফিকশন দেখে একইসঙ্গে অবাক এবং বিমোহিত হয়েছিলাম। তারপর একে একে কোকার ট্রিলজি, 'টেস্ট অভ চেরি', 'দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস', 'সার্টিফাইড কপি', 'শিরিন', 'টেন', '২৪ ফ্রেমস' দেখেছি। তাঁর গুণের প্রতি আমার মুগ্ধতা কখনো কাটেনি।

১৯৯৯ সালে আব্বাস কিয়ারোস্তামি, ক্রেডিট: এভারেট, দ্য নিউ ইয়র্কার

একজন শিল্পী কীভাবে নিজের প্রতিটা কাজে নতুনত্বের ছাপ রেখে যান তা ভাবতেও চমৎকার লাগে। স্রেফ একজন চলচ্চিত্রকারের চেয়ে ঢের বেশি ছিলেন কিয়ারোস্তামি। একইসাথে চলচ্চিত্রের কবি এবং দার্শনিকও ছিলেন তিনি। পারস্যের আছে এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। চলচ্চিত্রশিল্পের এই মহীরুহ সেই সংস্কৃতির সাথে চলচ্চিত্রকে এক সুতোয় গেঁথে নির্মাণ করেছিলেন কিছু কালজয়ী সৃষ্টি। আজ কথা বলব তারই তিনটি চলচ্চিত্র নিয়ে।

কোকার ট্রিলজি। 'হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?', 'লাইফ, অ্যান্ড নাথিং মোর…', 'থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ' নিয়ে তৈরি কোকার ত্রয়ী। এটি বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ত্রয়ীর একটি। তবে ত্রয়ীর এমন নামকরণ প্রখ্যাত এ চলচ্চিত্রকার নিজে করেননি। বরং চলচ্চিত্র-তাত্ত্বিক এবং সমালোচকরা এ নাম দিয়েছিলেন; যেহেতু তিনটি ছবিই ইরানের উত্তরাংশের নগরী কোকারের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। কিয়ারোস্তামি বরং শেষ দু'টো চলচ্চিত্রের সাথে 'টেস্ট অভ চেরি' (১৯৯৭) কে মিলিয়ে একটি ত্রয়ীর কথা বলেছিলেন। কারণ ওই তিনটি ছবিই জীবনের মূল্য নিয়ে কথা বলে।

কোকার ট্রিলজির ডিভিডি কালেকশন, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

কিয়ারোস্তমির এ কোকার ত্রয়ী (১৯৮৭-১৯৯৪) কল্পকাহিনী ও বাস্তবতার মাঝে একটি সেতুবন্ধন গড়ে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের অতি সাধারণ ঘটনাকেও পর্দায় কীভাবে অসাধারণ করে তুলতে হয় তা ভালোমতোই জানতেন তিনি। প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রে তিনি গতানুগতিক নির্মাণশৈলীকে অভিনব কায়দায় ভেঙেছেন। 

'হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?' (১৯৮৭):

বন্ধু মোহাম্মাদের বাড়ির সন্ধানে বের হয় আট বছর বয়সী আহমেদ। মোহাম্মাদের সাথে স্কুলে ভুলে তার খাতার অদলবদল ঘটে গেছে। যেভাবেই হোক বন্ধুকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। 

আগের ক্লাসেও বাড়ির কাজ দেখাতে পারেনি মোহাম্মাদ। এরকম কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটলে কড়া শিক্ষক ইতোমধ্যেই তাকে বহিষ্কার করার সতর্কবাণী দিয়ে রেখেছেন। বন্ধুর কথা ভেবে মায়ের বারণ না মেনেই আহমেদ তাই বেরিয়ে পড়ে। বাড়ি কোথায় তা কিছুই জানে না সে। তবে পাশের গ্রাম পশতেহ-তে বন্ধু থাকে এতটুকু সে জানে। এভাবেই এগিয়ে চলে কোকার ত্রয়ীর এ প্রথম চলচ্চিত্রের গল্প।

‘হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?’ এর পোস্টার, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

ইরানি শিল্পী সেপেহরির কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে এর শিরোনাম। ফার্সি ভাষায় বলে 'খানে-ইয়ে দুস্ত কোজাস্ত'। ছোট্ট আহমেদের চোখ দিয়ে দেখতে পাওয়া যায় গ্রামের পথ। সেখানে তার জন্য ওত পেতে আছে নানানরকম বাধা-বিপত্তি। সেই আঁকাবাঁকা পথ-ঘাট বেয়েই বন্ধুর বাড়ি খোঁজে সে।

শিশু আহমেদের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কিয়ারোস্তামি নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের এমন এক মিশেল দেখিয়েছেন, যা কখনো কখনো বয়স্কদের মাঝেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইরানের ছোট্ট একটা গ্রামে দৈনন্দিন জীবন আর সেখানকার বয়োবৃদ্ধদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তার এক চিলতে ধারণাও পাবেন দর্শক।

এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম নজরে আসেন কিয়ারোস্তামি। পারস্যের কাব্যময় সংস্কৃতি এবং দর্শনের অতুলনীয় এ যুগলবন্দী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছিল।

বন্ধুকে খুঁজতে গিয়ে আহমেদ অনেকের সংস্পর্শে এলেও, কেউই তাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক না। আর প্রাপ্তবয়স্কদের কেউ কেউ সাহায্য করতে চাইলেও, তাতে আহমেদের জন্য জুটে আরও উটকো ঝামেলা। তাদের দেওয়া ভুল দিকনির্দেশনা তার কোনো কাজেই আসে না।

শৈশবের সবচেয়ে গভীর এবং নিবিড় চিত্রায়ণ খুঁজে পাওয়া যায় চলচ্চিত্রটিতে। তবে 'হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?' এর পৃথিবীটা শিশুদের জন্য নিষ্ঠুরই বটে। 

মায়ের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাচ্ছে আহমেদ, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

বয়োজ্যেষ্ঠরা শিশুদের সাথে একেবারে বিচ্ছিন্ন না হলেও, শিশুর কোনো কথা শুনতে বা বুঝতেই তারা আগ্রহী নন। ছবির শুরুর দৃশ্যেই দেখা যায়, শিশুদের কোলাহলপূর্ণ একটা শ্রেণিকক্ষ। কিন্তু কড়া শিক্ষকের আগমনের সাথে সাথেই সেখানে পিনপতন নীরবতা এসে পড়ে। সামান্য একটা ভুলের জন্য দাদির বকুনি খায় আহমেদ, তার মায়ের মধ্যেও দেখা যায় এক ধরনের উদাসীন আচরণ। ছেলের কোনো কথা না শুনেই একের পর এক আদেশ দিয়ে যান তিনি।

ইরানি ইসলামি বিপ্লব (১৯৭৯) পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে চলচ্চিত্রটিকে দেখা যায়। শিশু চরিত্রের মধ্য দিয়ে কর্তব্যপরায়ণতা এবং প্রবীণ গোষ্ঠীর কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু সিনেমায় থাকা সংঘাত-সংকটগুলো এতটাই বিশ্বজনীন যে একে একটি শক্তিশালী মানবতাবাদী গল্প বলেও মনে হয়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা যেকোনো বয়সের মানুষ আহমেদের দুশ্চিন্তা-দুর্দশা উপলব্ধি করতে পারবে আর তখন তা হয়ে ওঠে প্রাসঙ্গিক।

কিয়ারোস্তামির গল্পকথনের স্টাইলকে সামাজিক বাস্তবতা/সোশ্যাল-রিয়্যালিজমে ফেলা যায়। কিন্তু এখানেও পুরোপুরিভাবে সেই পথ অনুসরণ করেননি তিনি। নিজের চিরচেনা কাব্যিক ঢঙ সংযোজন করেছেন। 

তাঁদের কাছে দিকনির্দেশনা চায় আহমেদ, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

কোকারের কয়েকজন শিশুকে বাছাই করে তাদের ইম্প্রোভাইজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। ৮৩ মিনিটের এ যাত্রায় প্রায় পুরোটা সময়ই তিনি দর্শকের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন শিশু আহমেদের গতিবিধির উপর। দায়িত্বের প্রতি শিশুটির নিষ্ঠা দর্শককে আগামী প্রজন্মের প্রতি আশাবাদী করে তোলে।

সবচেয়ে সহজ-সাধারণ গল্পগুলো মাঝেমধ্যে মানবজীবনের সবচেয়ে গভীর সত্যকে পর্দায় তুলে আনে৷ পরোপকারী এবং দায়িত্ববোধসম্পন্ন আহমেদের বন্ধুর বাড়ির সন্ধানে বের হওয়াও ঠিক তেমনই একটি গল্প। চলচ্চিত্রকে অর্থপূর্ণ হতে হলে যে সারাক্ষণ তাতে ধুন্ধুমার অ্যাকশন থাকতে হবে না তা-ও জানান দেয় কিয়ারোস্তামির চলচ্চিত্রগুলো।

সিনেমাটি নির্মাণের পাশাপাশি সম্পাদনা এবং চিত্রনাট্য লেখার কাজটিও কিয়ারোস্তামি নিজেই করেছেন। চিত্রগ্রাহক হিসেবে ছিলেন ফারহাদ সাবা। সিনেমার শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন বাবেক আহমেদপুর এবং আহমেদ আহমেদপুর। শেষতক আহমেদ তার বন্ধুর বাড়ি খুঁজে পেয়েছিল কি-না তা জানতে দেখে ফেলতে পারেন ফিল্মটি।

'অ্যান্ড লাইফ গোওজ অন' / 'লাইফ, অ্যান্ড নাথিং মোর…' (১৯৯২):

১৯৯০ সালে ইরানের উত্তরাঞ্চলে ৭.৪ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। মঞ্জিল-রুদবারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কোকারও। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত এবং গৃহহারা হয়েছিলেন অনেকে। 
  
আব্বাস কিয়ারোস্তামি এবং তাঁর ছেলে বাহমান তখন 'হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?' চলচ্চিত্রের দু'জন শিশুশিল্পীকে খুঁজতে কোকারে যান। কোকার ট্রিলজি-র দ্বিতীয় ছবিটি তাঁদের সেই যাত্রার উপরই, ডকুমেন্টারির ঢঙে নির্মিত হয়েছে।

‘লাইফ, অ্যান্ড নাথিং মোর..’ এর পোস্টার, ক্রেডিট: জেনাস ফিল্মস

বাবা-ছেলে কোকারের দিকে যাত্রা শুরু করলেও, ভূমিকম্পের কারণে নষ্ট কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট। যাত্রাপথে তারা ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষের চিত্র দেখেন, এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা হয় তাদের। নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন। তবু সামনের দিনগুলোর জন্য আশাবাদী তারা।

ভূমিকম্পে জনজীবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে গেলেও, স্বাভাবিক জীবনযাপন স্থবির হয়ে পড়েনি। দুরবস্থা কাটিয়ে গ্রামবাসী আবার আগের জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠছে। চলচ্চিত্রটির নাম তাই হয়ে ওঠেছে তাৎপর্যপূর্ণ। 

ফার্সি ভাষায় ‘জিন্দেগি ভা দিগার হিচ’ নামের চলচ্চিত্রটি সেমি-ফিকশনাল, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখার জন্য এলাকাবাসী এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। সবাই মিলে এক টেলিভিশনে খেলাটা উপভোগ করবে। 

পরিচালক তখন গ্রামের একজনকে জিজ্ঞেস করেন, "আপনার কি মনে হয় এমন একটা সময়ে খেলা দেখাটা মানানসই?" লোকটি তখন উত্তরে বলে, "সত্যি বলতে, আমি নিজে এখনো কষ্টে আছি। নিজের সন্তান আর তিনজন নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছি। কিন্তু আমাদের কী-ই বা করার আছে? বিশ্বকাপ প্রতি চার বছরে একবার আসে, মিস করতে পারি না। জীবন তো থেমে থাকে না।"

ভূমিকম্পে এক নবদম্পতির পুরো পরিবারের প্রায় সবাই মারা গেলেও, তারা বিয়ে করেছেন। কোকার ত্রয়ীর শেষ চলচ্চিত্রটির মূল বিষয়বস্তু আবার পর্দার এই নবদম্পতি। 

যা-ই হোক, এটাকে মেটা-সিনেমা বলা যেতে পারে। কারণ এই সিনেমাও চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়েই কথা বলছে। এতে পয়েন্ট অভ ভিউ শটই বেশি দেখতে পাওয়া গেছে যেখানে বাবা এবং সন্তান গাড়িতে থাকা অবস্থায় ক্যামেরা তাদের আলাদাভাবে অনুসরণ করে।

এই চলচ্চিত্রের দু'টো এক্সট্রিম ওয়াইড শট যা তুলে আনে জনপদের চিত্র, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

গাড়ির উইন্ডশিল্ডের উপর ক্যামেরা বসিয়ে কিয়ারোস্তামি তৈরি করেছেন জটিল এক মিজ-অঁ-সেন। একজন পরিচালকের কাজ তার চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা, সেই সত্য কিয়ারোস্তামি উপলব্ধি করেছেন এবং চমৎকারভাবে তা পর্দায় ধারণ করেছেন। একটা হৃদয়বিদারক প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রত্যুত্তরে তিনি এ মুভির মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রতি তাঁর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

জীবন ও মৃত্যুর মাঝে সম্পর্ক - কিয়ারোস্তামির জন্য এ চলচ্চিত্রের পর আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্রে তা বারবারই উঠে এসেছে। 

তবে 'হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ড'স হাউজ?' পুরোপুরিভাবে কল্পকাহিনী হলেও, ৯৫ মিনিটের এই ফিল্মটি কল্পনা এবং বাস্তবতাকে মিশিয়ে সামনে এগিয়েছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনীর পর, সম্মানসূচক রবার্তো রসেলিনি পুরস্কার জিতে নিয়েছিল চলচ্চিত্রটি। 

ফার্সি ভাষায় ‘জিন্দেগি ভা দিগার হিচ’ নামের চলচ্চিত্রটি সেমি-ফিকশনাল, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

এটি পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্য এবং সম্পাদনার কাজও আব্বাস কিয়ারোস্তামি করেছেন। চিত্রগ্রাহক হিসেবে ছিলেন হুমায়ুন পেয়ভার। সিনেমার শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন অপেশাদার অভিনয়শিল্পী ফরহাদ খেদেরমান্দ এবং বুবা বায়ুর। 

'কাহিয়ে দ্যু সিনেমা' নির্বাচিত ১৯৯২ এর বার্ষিক শীর্ষ ১০ এর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল এ সিনেমা। তবে ইতালীয় সঙ্গীতজ্ঞ আন্তোনিও ভিভালদির মিউজিক ব্যবহার করায় ইরানে কিয়ারোস্তামিকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল।

'থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ' (১৯৯৪):

কোকার ত্রয়ীর দ্বিতীয় কিস্তির ভিত্তি যেমন প্রথম কিস্তিটি ছিল, ঠিক তেমনি শেষ এ কিস্তির ঘটনাপ্রবাহ দ্বিতীয়টির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে।
 
চলচ্চিত্র, মোটাদাগে, শিল্প এবং জীবনের মাঝে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করে চলচ্চিত্রটি। এটি ফার্সি ভাষায় 'যির-এ দেরাখতান-এ যায়তুন' নামে পরিচিত। কিয়ারোস্তামি এখানে এমন এক ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছেন যা প্রায়শই কল্পনা ও বাস্তবতার মাঝের ফারাকটিকে মুছে দিয়ে তাদেরকে একাকার করে দেয়।

‘থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ’ এর পোস্টার, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

চলচ্চিত্রের ভেতরে চলচ্চিত্র! হ্যা, ঠিক এটাই শেষ এ কিস্তির সারবস্তু। 'অ্যান্ড লাইফ গোওজ অন' চলচ্চিত্রে যে নবদম্পতির কথা বলা হয়েছিল, তাদেরকে পর্দায় অভিনয় করাতে গিয়েই পরিচালক পড়েন বিপাকে। নবদম্পতির চরিত্রে অভিনয় করা দু'জন অভিনয়শিল্পীর মধ্যে পর্দায় এবং পর্দার বাইরে 'বাস্তব'-র সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে এখানে। 

শ্যুটিংয়ের ফাঁকে পর্দায় স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা হোসেইন 'বাস্তবে' তাহেরেহকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হোসেইন অশিক্ষিত ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায়, তাহেরেহর দাদি তার কাছে বিয়ে দিতে ইচ্ছুক নন। 

এ কারণে তাহেরেহ হোসেইনকে পুরোপুরিভাবে এড়িয়ে চলছে। কিন্তু তাতে গোলমাল বেধে যায় শ্যুটিংয়ে৷ পর্দায় দম্পতি হিসেবে অভিনয় করলেও, তাদের দু'জনের এ সমস্যার দরুন বাস্তব এবং সিনেমায় নিজের ভূমিকায় তাহেরেহ জট পাকিয়ে ফেলে।

সিনেমার ভেতর সিনেমার শ্যুটিংয়ের দৃশ্য, ক্রেডিট: ক্রাইটেরিয়ন

শুধু তারাই নয়, সিনেমার 'বাস্তবে' কোনটা ঘটছে আর কোনটা 'সিনেমার ভেতরকার সিনেমা'য় ঘটছে তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যাবেন দর্শকও। যেমন: শুরুর দিকে একজন বৃদ্ধা এবং হোসেইনের মধ্যেকার বাকবিতণ্ডাকে সত্যিকার মনে হলেও, পরক্ষণেই আঁচ করা যায় যে তা সিনেমার ভেতরকার সিনেমার অংশ। এজন্যই চলচ্চিত্রটি দর্শক-শ্রোতাকে ভালোভাবে যুক্ত করে নিতে পারে।

১০৩ মিনিটের এ ডকুড্রামায় অধিকাংশ সময় জুড়ে হোসেইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাপ্রবাহকে দেখানো হয়েছে। একরাশ নৈরাশ্যের মাঝে একটুখানি আশা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে, নাছোড়বান্দার মত আচরণ করছে সে।

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বাড়ি, ক্রেডিট: আইএমডিবি

পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেকার সম্পর্কের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে এতে। অভিনেতা মোহাম্মদ-আলী কেশাভারজকে পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করিয়ে কিয়ারোস্তামি প্রথমবারের মতো কোনো পেশাদার অভিনয়শিল্পীকে তাঁর চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছেন। গ্রামবাসী এ চলচ্চিত্রকারকে তাদের গ্রামের আচার-ব্যবহার শেখাচ্ছেন তা-ও দেখা যায়।

দীর্ঘসময় ধরে কিয়ারোস্তামির ব্যাপারে অনেকের আক্ষেপ ছিল যে তিনি তাঁর চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রকে প্রাধান্য দেন না। কিন্তু এই ডকুড্রামায় দু'টো স্মরণীয় নারী চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়। তাহেরেহ এবং মিসেস সিভা। 

মিসেস সিভা দক্ষতার সাথে প্রোডাকশনের কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, তাহেরেহর নীরবতাও তার দুর্বলতা নয়। বরং হোসেইনের প্রত্যুত্তরে তার নিশ্চুপ থাকাটাই তার ঢাল, হয়ে ওঠেছে প্রতিরোধের একটা ধরন।

ইরানি সিনেমার ইতিহাসে সেরা শেষ দৃশ্যের তালিকা করলে, এ ছবিটি যে অনেক উপরে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বলে রাখা ভালো, তাঁর অন্য অনেক চলচ্চিত্রের মতো এখানেও কিয়ারোস্তামি ফলাফলটা দর্শকের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন।

এই দৃশ্যটির জন্য ছবির নামকরণ হয়ে ওঠে সার্থক, ক্রেডিট: সিনে প্যাশন

'কাহিয়ে দ্যু সিনেমা' নির্বাচিত ১৯৯৫ এর বার্ষিক শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নেওয়া এ চলচ্চিত্র পেয়েছে সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা। ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার ১৫ বছর পর, প্রথমবারের মতো ইরান অস্কারে এ চলচ্চিত্রটিকে পাঠিয়েছিল।

বাকি দু'টো সিনেমার মতো, এটিরও পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা ও সম্পাদনার কাজ কিয়ারোস্তামি নিজেই করেছেন। চিত্রগ্রাহক হিসেবে ছিলেন হোসেইন জাফারিয়ান। আরেক খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহিকেও এখানে দেখা গেছে। সিনেমার শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন মোহাম্মদ আলী, হোসেইন রেজাই, তাহেরেহ লাদানিয়ান, যারিফেহ সিভা প্রমুখ।

ষাটের দশকে শাহের শাসনামলের সময় ওয়েস্টার্নাইজড তেহরানে শিল্পকলার শিক্ষার্থী ছিলেন কিয়ারোস্তামি; পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি-সভ্যতার সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁর চলচ্চিত্রে তাই খুঁজে পাওয়া যায় ইয়াসুজিরো ওজু, জ্যাঁক তাতি এবং বাস্টার কিটনের প্রভাব। বিশেষ করে, 'অ্যান্ড লাইফ গোওজ অন' এ গাড়ির ভেতর বাবা-ছেলের সংলাপে ক্যামেরার ফ্রেমিং কৌশল তাতির এবং সেখানে লং টেকের ব্যবহার দেখে ওজুর কথাই মাথায় আসে। 

এরিক রোমারের মতো কিয়ারোস্তামিও ফিলোসোফিকাল কমেডি তৈরি করতে আগ্রহী ছিলেন। আর সিনেমার 'বাস্তবতা'কে তাঁর বারবার জব্দ করতে চাওয়ার চেষ্টাটা বাঘা স্প্যানিশ শিল্পী লুই বুনুয়েলের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

চলচ্চিত্র তিনটিকে ভালোভাবে বোঝার জন্য এদেরকে পর্যায়ক্রমিকভাবে দেখা খুব জরুরি। 'বাস্তবতা'-কে যদি একটা সিঁড়ির মতো কল্পনা করি, তাহলে কোকার ত্রয়ীর প্রত্যেকটা চলচ্চিত্র তার পূর্ববর্তীটির চেয়ে সিঁড়ির আরেকটা উঁচু ধাপে নিয়ে যায়। সেখানে দেখা যায় যে আগের ফিল্মটি স্রেফ একটি কল্পকাহিনী ছিল। এজন্য এ ত্রয়ীকে সহজ গল্প ভাবলে মস্ত বড়ো একটা ভুল হবে। বরং এটা একটা আয়নাঘরের মতো।


আরও পড়ুন: বিবর্তনের যে ধারায় এগিয়েছে চলচ্চিত্র


ফারাহ জাহান শুচি। স্কেচ: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

 

Related Topics

টপ নিউজ

চলচ্চিত্র / আব্বাস কিয়ারোস্তামি / ইরানি চলচ্চিত্র / চলচ্চিত্র বিশ্লেষণ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইতিহাসে এ প্রথম: ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার শুনানি কাল সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বিটিভিতে
  • ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানতে মিলবে আবগারি শুল্কমুক্ত সুবিধা
  • করমুক্ত আয়সীমার সঙ্গে বাড়তে পারে করের হারও
  • ‘মবের নামে আগুন, ভাঙচুরের সুযোগ নেই’: সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা
  • যে বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকে না, কিচিরমিচিরে কান পাতা দায়
  • ‘সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন’: ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির সালাহউদ্দিন

Related News

  • আগাথার একই উপন্যাস থেকে শোয়ার্জনেগার ও স্ট্যালনের অ্যাকশন সিনেমা—দুটোই ফ্লপ
  • তিতাস একটি নদীর নাম: আরেকবার
  • বিদেশি সিনেমার ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প
  • ঢাকাই ছবির অস্ত্রশস্ত্র: নূরুর কারিগরি, জসিমের স্টাইল এবং ছিটকিনি ও রুহ আফজা
  • ১১০ কোটি ডলার আয় করে চীনের সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের রেকর্ড ‘নে ঝা ২’-এর

Most Read

1
বাংলাদেশ

ইতিহাসে এ প্রথম: ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার শুনানি কাল সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বিটিভিতে

2
অর্থনীতি

৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানতে মিলবে আবগারি শুল্কমুক্ত সুবিধা

3
অর্থনীতি

করমুক্ত আয়সীমার সঙ্গে বাড়তে পারে করের হারও

4
বাংলাদেশ

‘মবের নামে আগুন, ভাঙচুরের সুযোগ নেই’: সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা

5
ফিচার

যে বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকে না, কিচিরমিচিরে কান পাতা দায়

6
বাংলাদেশ

‘সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন’: ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির সালাহউদ্দিন

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net