‘লায়ন’ কি পারবে শতবর্ষে পা রাখতে?

পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর, নবাবপুর, তাঁতীবাজার, আরমানিটোলা আর চকবাজার ছিল তখনকার ঢাকার প্রাণকেন্দ্র। ঢাকার সব বড়লোকেরা এই চৌহদ্দিতেই থাকতেন।
পাটুয়াটুলি থেকে ওয়াইজঘাট যাওয়ার পথে মোড়ের ডান দিকে যে দোতলা বাড়িটি ছিল, তার নীচতলায় ছিল নান্দুরামের পানের দোকান। তিনি বেনারসের লোক ছিলেন, ঢাকাবাসীকে পান খাইয়ে বশ করে ফেলেছিলেন।
বাড়িটির ওপরতলায় থাকতেন নামকরা বাইজিরা। উত্তর ভারত থেকে এসে তারা এখানে উঠতেন। বাড়িটির নাম ছিল 'গঙ্গাজলী'। খুব সকালে গোসল করতে তারা বুড়িগঙ্গায় যেতেন, কিছুক্ষণ পরে গোসল সেরে গায়ে গামছা জড়িয়ে ফিরে আসতেন। রাস্তার দুই ধারে ছেলে-বুড়ো অনেকেই দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখত।
জীবনের সাত রং বইয়ে 'লায়ন সিনেমা ও সেকালের দর্শক' শিরোনামের নিবন্ধে নাট্যকার সাঈদ আহমদ তিরিশের দশকের ঢাকার দৃশ্যাবলি ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেই। লায়ন সিনেমার মালিক মীর্জা আব্দুল কাদের সর্দারের ভাইপো ছিলেন তিনি।
সাঈদ আহমদ আরো লিখেছেন, নান্দুরামের পানের দোকানের পাশে ছিল সোনারুদের দোকান। সেকালে বিখ্যাত ছিল ইসলামপুরে আব্বাসের পরোটা-কাবাব। আব্বাসের দোকানের উল্টোদিক থেকে যে রাস্তাটি নবাববাড়ির গা ঘেঁষে ওয়াইজঘাটে গিয়ে মিলেছে, তার বাম দিকে ছিল ক্রাউন থিয়েটার ও একটি বরফকল। ক্রাউন থিয়েটার চালাত মারোয়ারিরা। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছুকাল পরে বরফকলও বন্ধ হয়ে যায়।
ডায়মন্ড হলো লায়ন
প্রথম জীবনে কাদের সরদার চাকরি করতেন। খুব উল্লেখযোগ্য কোনো চাকরি নয়। তার ভাই এফ আহমদও চাকরি করতেন। আর তাদের বাবা মীর্জা হায়াৎ ছিলেন আতর ব্যবসায়ী।
এফ আহমদের ছেলেদের মধ্যে হামিদুর রহমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন, নাজির আহমদ বিবিসিতে কাজ করেছেন ও এফডিসি গড়ে তোলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং সাঈদ আহমদ নাট্যকার হিসেবে যশস্বী ছিলেন।
কাদের সরদার ১৯৬৩ সালে মারা যাওয়ার বছর কয়েক আগে এক পুত্র সন্তানের পিতা হন। তার নাম মীর্জা আব্দুল খালেক। কাদের সরদার কীভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়লেন? জানতে চেয়েছিলাম মীর্জা খালেকের কাছে।
তিনি বললেন, 'সম্ভবত আশপাশের পরিবেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তিনি নাটক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ভালোবাসতেন।'
থিয়েটার হলটি ছিল জমিদার কিশোরীলালের। রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে বসার ৬০ বছর উপলক্ষে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং নাম রেখেছিলেন ডায়মন্ড জুবিলি থিয়েটার।

'কাদের সরদার, মানে আমার বাবা, হলটি কিনে নেন বিশের দশকের কোনো এক সময়। তিনি এর নাম রাখেন লায়ন থিয়েটার। শুরুতে তার নিজের আর্থিক সঙ্গতি বেশি না থাকলেও বৃহৎ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হওয়ায় আর্থিক সমর্থন পেয়েছিলেন কারও কাছ থেকে।'
কলকাতা থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়ে এসে তিনি নাটক মঞ্চস্থ করাতেন। ঢাকায় ভালো কেউ ছিল না বলে মোস্তফা হোসাইন নামে কলকাতার একজন বিখ্যাত মঞ্চসজ্জাকারককে তিনি নিয়ে এসেছিলেন।
থিয়েটারের জন্য পর্যাপ্ত ব্যয় করতে প্রস্তুত ছিলেন কাদের সর্দার। আর ঢাকাবাসীর তখন এর অধিক বিনোদন আর কিছু ছিল না।
সিনেমা এলে থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়
লায়নে হিন্দি, উর্দু ও বাংলা নাটক পরিবেশিত হতো। নির্বাক চলচ্চিত্রের আবির্ভাবের পর থিয়েটার কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়ে। নাটকের কলাকুশলীরা বেকার হয়ে পড়েন।
সাঈদ আহমদ কাব্যিকভাবে লিখেছেন, যে সুদর্শন পুরুষ কাল পর্যন্ত সম্রাট জাহাঙ্গীরের ভূমিকায় গান গেয়ে স্টেজে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতেন, যে রূপবতী নারী লায়লার ভূমিকায় গান গেয়ে কেবল মজনুর নয়, দর্শকের চোখেও জল আনতেন, তারা যেন রাতারাতি নিরর্থক হয়ে পড়লেন।
তবে লায়ন থিয়েটারে হুট করেই নাটক বন্ধ হয়ে যায়নি। সপ্তাহের পাঁচদিন সিনেমা চললে দুদিন নাটক মঞ্চস্থ হতো।
লায়ন ছিল ঢাকার সর্বশেষ থিয়েটার কোম্পানি। শিল্পীদের অনেকেই যে যেখান থেকে এসেছিলেন—বেনারস, লক্ষ্ণৌ বা বোম্বে (এখন মুম্বাই)—সেখানে ফিরে গেলেন।
কেউ কেউ অবশ্য ঢাকাতেই থেকে গিয়েছিলেন, কারণ এখানেই তাদের চেনা-পরিচয় ও সম্পর্কসূত্র তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ বেশ পরিমাণে টাকা-পয়সার মালিকও হয়েছিলেন।
দু-চারজন অবশ্য সিনেমা হলেও কাজ পেয়েছিলেন। যেমন ফটিক নন্দী; তিনি সেট ডিজাইনার থেকে হয়ে গিয়েছিলেন সিন পেইন্টার। ছোট ছোট চরিত্রের কেউ হয়ে গেলেন গেটকিপার, কেউ প্রজেকশনিস্ট।
বাদ্যযন্ত্রীদের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল, কারণ নির্বাক চলচ্চিত্রের দৃশ্যগুলোতে মুড মিউজিক পরিবেশন করা হতো। স্টেজের পাশে পিয়ানো রাখা থাকত, অন্যদিকে উইংয়ে সাজানো থাকত হারমোনিয়াম, তবলা বা বেহালা।

উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য—যেমন নায়ক ভিলেনের পিছু নিয়েছে, নায়িকা কান্নায় ভেঙে পড়ছে, বা যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্রের ঝনঝনানি—এসব মুহূর্তে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার তুঙ্গে উঠত। টানটান উত্তেজনার এই দৃশ্যগুলোকে প্রাণবন্ত করতে দক্ষ বাদকদের অভিজ্ঞতা খুবই কাজে লাগত।
তবে নির্বাক যুগ বেশি দিন টেকেনি। সবাক চলচ্চিত্র প্রথম প্রকাশেই জায়গা করে নেয় এবং কলাকুশলীরা আবারও বেকার হয়ে পড়ে।
আরও একবার বেকার হলেন
উপমহাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'আলম আরা' ১৯৩১ সালে লায়নে প্রদর্শিত হয়। এর মধ্য দিয়ে থিয়েটার পুরোপুরি সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়। রঙিন সিনসিনারির জায়গায় আসে সাদা সেলুলার কাপড়ের পর্দা। অতিকায় আরসিএ প্রজেক্টর থেকে বোম্বেতে নির্মিত ছবি এতে প্রতিফলিত হতো।
সারনা নামের এক পার্সি প্রকৌশলী এসিএ মেশিন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি চালু করার জন্য ঢাকায় আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন সিনহা নামের আরেক প্রকৌশলী, যিনি ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে বহুদিন ধরে জড়িত ছিলেন।
তার হাতের পরশে জীবন্ত হয়ে উঠত কাজ্জান বাই, ওহিদান বাই অথবা মাস্টার নেসারের কণ্ঠস্বর। ঢাকায় সবাক চিত্র জনপ্রিয় করতে এইসব কুশলীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।
লায়নে মূলত বোম্বের ছবি বেশি প্রদর্শিত হতো, তবে কলকাতার ছবিরও সমাদর ছিল। দোতলা প্রেক্ষাগৃহটি ছিল বেশ লম্বা ও চওড়া।
হলটিতে তখনকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যরাও ছবি দেখতে আসতেন। তবে থার্ড ক্লাস, ইন্টার ক্লাস দখলে থাকত মুটে, মজুর, ওস্তাগর, বয়-বেয়ারাদের। গরীব ছাত্ররাও ছবি দেখার জন্য থার্ড ক্লাসকেই বেছে নিত।
গণি মিয়া শুয়ে পড়তেন সটান
মুকুল (আজাদ) বা পিকচার প্যালেসের (শাবিস্তান) তুলনায় লায়নে টিকিটের দাম ছিল অনেক কম। কিছু দর্শক সিনেমা দেখত বেঞ্চে সটান শুয়ে।
সাঈদ আহমদ গণি মিয়ার কথা বলেছেন। ওস্তাগর ছিলেন গণি মিয়া। সারাদিন খাটুনির পর হাত-মুখ ধুয়ে চট করে টিকিট কেটে ঢুকেই থার্ড ক্লাসের বেঞ্চিতে সটান শুয়ে পড়তেন।
'হাতেম তাই' নামের সিরিয়াল চলত সারারাত ধরে। তাই দিনমজুরেরা সারাদিনের খাটুনির পর সিনেমা দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ ঘুমিয়েও নিতেন।
ভিলেনের কূটকৌশলে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতের বিড়ি পর্দার দিকে ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার।

সেসময় 'হান্টারওয়ালী' ছবির নায়িকা নাদিয়া ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। মারামারির দৃশ্যে তিনি অন্যদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। জন কাওয়াস আর নাদিয়া জুটির ছবি এলে ঢাকাবাসীর ভিড় লেগে যেত লায়নে।
থার্ড ক্লাসে কাঠের বেঞ্চি ছিল, ইন্টার ক্লাসে টিনের চেয়ার, সেকেন্ড ক্লাসে কাঠের চেয়ার এবং ফার্স্ট ক্লাসে অল্প গদিওয়ালা চেয়ার ছিল। সবার ওপরের ক্লাসে সোফা রাখা থাকত।
মীর্জা আব্দুল খালেককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমন ছিল টিকিটের দাম? 'টিকিট বিক্রির হিসাবের খাতায় দেখেছি, থার্ড ক্লাসে লাগত ২ পয়সা, সেকেন্ড ক্লাসে ১ আনা, ডিসি ও সোফায় ৩ টাকা।'
একটা বক্স ছিল যেখানে ৮ জন বসতে পারত। সাধারণত একই পরিবারের সদস্যরা মিলে বক্স ভাড়া নিতেন, দাম পড়ত ২৪ টাকা।
'হিসাবের খাতায় আরও দেখেছি, ছবির আয় ১০০০ টাকা হলে বাবা গুড মার্কিং করতেন। কোনো কোনো ছবির আয় আড়াই-তিন হাজার টাকাও হয়েছে। বাবা লিখেছেন, ভেরি গুড। সে আমলে এটা ছিল অনেক টাকা।'
ঢাকায় তিরিশ ও চল্লিশের দশকে দাঙ্গা হতো অনেক ঘনঘন। তাই নাইট শোতে দর্শকরা বুঝেশুনে আসত। ইসলামপুর, পাটুয়াটুলি মুসলমানপ্রধান এলাকা হওয়ায় মুসলমান দর্শকের অবশ্য অভাব হতো না লায়নে।
সরদারদের সরদার ছিলেন কাদের সরদার
কাদের সরদার ও তার ভাই এফ আহমদ দেশভাগের আগেই রংপুর, যশোর, চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বড় বড় শহরে হল প্রতিষ্ঠা করেন।
কাদের সরদার একজন জবরদস্ত মানুষ ছিলেন। তাকে বলা হতো সরদারদের সরদার।
মির্জা আব্দুল খালেক বললেন, 'আমি তাকে খুব বেশিকাল পাইনি। তার সম্পর্কে বই-পুস্তক পড়ে ও বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বহু ক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল। তিনি শেরে বাংলা ফজলুল হক সাহেবের কৃষক প্রজা পার্টিতে সক্রিয় ছিলেন। মনের দিক থেকে ছিলেন বামপন্থি। ভাষা আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল।'
দেশভাগের সময় থেকেই বাংলাকে সরকারি ভাষা করার প্রসঙ্গটি সামনে আসতে থাকে। কিন্তু ভাষার দাবিতে মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা পাটুয়াটুলি, নবাবপুরের দিক অতিক্রম করলে লোকজন ঢিল ছুড়ত বা গালি-গালাজ করত।

তখন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা হিসাব-নিকাশ করে বুঝলেন, আদি ঢাকাইয়াদের সমর্থন তাদের দরকার। তারা এলেন কাদের সরদারের কাছে। কাদের সরদার তাদের সঙ্গে গল্প করলেন, আন্দোলনের পরিস্থিতি বুঝে নিলেন।
তারপর বললেন, 'কাল থেকে মিছিল করবা, কেউ তোমাদের কিছু কইব না।' জাহাঙ্গীরনগর পঞ্চায়েত সমিতি বলে একটি সংগঠন ছিল তখন। তিনি সমিতির সদস্যদের কড়া নির্দেশ দিলেন, মিছিলে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
দেশভাগের কিছুকাল পরে কাদের সরদার ও তার ভাইয়ের মধ্যে হলগুলোর বণ্টন সম্পন্ন হলে কাদের সরদার ঢাকার লায়ন ও চট্টগ্রামের লায়নের মালিকানা পেলেন। পরে উত্তরাধিকার সূত্রে সেগুলো পেয়েছেন মীর্জা আব্দুল খালেক।
ষাটের দশকে একবার হলের প্রজেকশন সিস্টেম বদল করা হয়েছিল। প্রজেক্টরটি ছিল মার্কিন সিমপ্লেক্স।
ঈদে পর্দা বদলানোর রীতি ছিল
১৯৮৩ সালে আব্দুল খালেক লায়ন সিনেমা হল সংস্কার করান। এর সম্মুখভাগ ছিল জমিদার বাড়ির মতো কারুকাজখচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেগুলো ক্ষয়ে যায়।
ভেতরে অনেক চেয়ার ভেঙে গিয়েছিল, দেয়াল হয়েছিল স্যাঁতসেঁতে। তাই সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছিল। এমনিতেও সে আমলে ঈদে পর্দা বদলানোর, হল রং করার একটি রীতি তৈরি হয়েছিল।
এখন বাংলাদেশে লায়নের বয়সি হল আর একটিও নেই।
আব্দুল খালেক দুইবার চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ছিলেন। এখনো সপ্তাহে এক-দুইবার এফডিসিতে যান। সোনালী অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করেন আর দুঃখের ভাণ্ডার নিয়ে ঘরে ফেরেন।
সিনেমা শুধু তার বাবার ব্যবসা নয়, এটি তার পরিবারের ঐতিহ্য। চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা দেখে তার বুক ভেঙে যায়। কোনো কোনো রাতে তিনি ঘুমাতেও পারেন না।
ভ্যালেন্টাইন ডেতে মাত্র ২২টি টিকিট!
১৯৯৯ সালে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। ২০০৩-০৪ সালে তা সীমা অতিক্রম করে যায়।
একদিন আব্দুল খালেকের মা বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে লায়নে চলিতেছে লেখার নিচে অসহনীয় একটি পোস্টার দেখতে পান।

আরেকটু বেলা হলে নাস্তার টেবিলে খালেককে তিনি বলেন, 'এসব ছবি না চালালে হয় না?'
তারপর খালেক ম্যানেজারকে ডেকে বলে দেন, ছবি বাছাইয়ের আগে পোস্টার যেন তাকে দেখিয়ে নেয়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, ঠগ বাছতে গাঁ উজার।
শেষে ২০০৫ সালে তিনি লায়ন বন্ধ করে দেন।
তবে মাকে জানান, নদীর ওইপারে কেরানীগঞ্জে যে জমিটি কিনেছেন, সেখানে আরেকটি লায়ন হল তৈরি করবেন।
ঢাকার লায়ন বন্ধ হয়ে এখন লায়ন টাওয়ার একটি ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবন। কেরানীগঞ্জের জমিতেও উঁচু ভবন তুলেছেন। তার একটা ফ্লোরে ২০২২ সালে উদ্বোধন করা হয় লায়ন সিনেমাস।
এখন সারাবছরে ঈদে কেবল কিছু দর্শক পাওয়া যায়, বাকি সময় হল খালি পড়ে থাকে। বিদ্যুৎ বিলও ওঠে না।
গেল ভ্যালেন্টাইন ডেতে লায়নে মাত্র ২৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামের লায়ন আব্দুল খালেক বিক্রি করে দিয়েছিলেন ২০০৭ সালে।
জনাব খালেক ২০৩১ সালকে লায়নের শতবর্ষ বলে বিবেচনা করছেন। সে হিসাবে বাকি আরও ছয় বছর। কিন্তু এই ছয় বছর ভর্তুকি দিয়ে চালাতে পারবেন কি-না, সে বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি।
বললেন, 'খুব একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছি। কিছু পুরোনো কর্মচারীও আছে আমাদের, হল বন্ধ করে দিলে তারা বেকার হয়ে যাবে। আমি নিজে মন থেকে হল বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারটি কিছুতেই মানতে পারি না।
কিন্তু পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় আছে বলেও মনে হয় না।
'চলচ্চিত্র বিনোদন মাধ্যম, কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এটি হয়ে উঠেছে পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যম। পুরস্কার পেলে আমরাও খুশি হই, তবে বিনোদন আগে,' বলেন আব্দুল খালেক।