‘পলাশী’র প্রাঙ্গণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কিংবা লর্ড ক্লাইভ হতে চান?

একটা প্রশ্ন রেখে শুরু করি— ছোটবেলায় যখন ইতিহাসের বইয়ের পাতা উল্টেছেন, কখনো কি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার জায়গায় নিজেকে দেখার ইচ্ছে হয়েছে? কিংবা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের জায়গায়? কখনো কি ইচ্ছে করেছে ইংরেজ বাহিনীর সামনে মোহনলালের মতো বুক চিতিয়ে যুদ্ধ করার? যদি এমন কোনো ইচ্ছে মনের গহীনে লুকোনো থাকে, তবে তা পূর্ণ করার সুযোগ নিয়ে এসেছে প্লেগ্রাউন্ড ইনকর্পোরেটেড। নিয়ে এসেছে পলাশীর প্রান্তরকে হাতের সামনে, তাও আবার বোর্ড গেমের মাধ্যমে।
পলাশীর যুদ্ধকে কার্ডের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই বোর্ড গেমটির নাম 'পলাশী'। পলাশীর প্রান্তরে অংশ নেওয়া বিভিন্ন চরিত্রকে কার্ডের মাধ্যমে চয়ন করে খেলতে হয় 'পলাশী' বোর্ড গেম। ইতিহাসকে সঙ্গী করে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের বোর্ড গেম প্রেমীদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে নতুন ধারার এই বোর্ড গেম। যার নেপথ্যে আছেন দুই স্বপ্নবাজ তরুণ— মোহাম্মদ আরাফাত ওয়াসিউল্লাহ্ এবং ইমতিয়াজ হায়দার। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশে অল্পসময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইতিহাসভিত্তিক বোর্ড গেম পলাশী।
সহজ ভাষায়, বোর্ড গেম বলতে একাধিক ব্যক্তি মিলে টেবিলে বা সমতল পৃষ্ঠে খেলা যায় এমন খেলাকেই নির্দেশ করে। বাংলাদেশে বোর্ড গেমের মধ্যে ক্যারাম, লুডো, দাবা বেশি জনপ্রিয়। অথচ বোর্ড গেমের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরোনো। মনে করা হয়, লেখ্য ভাষার প্রচলনের পূর্বেই জন্ম হয়েছিল বোর্ড গেমের। ইতিহাস বলে, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল বোর্ড গেম সেনেট-এর। এরপর ধীরে ধীরে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, চীন এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এটি।

প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ভারতবর্ষে জনপ্রিয় হওয়া বোর্ড গেমের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দাবা। লোককথা অনুযায়ী, লঙ্কার রাণী মন্দোদরী লঙ্কারাজ রাবণকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার জন্য সূচনা করেছিলেন দাবা খেলার। সময়ের পরিক্রমায় ভারত থেকে দাবা খেলা ছড়িয়ে পড়ে ইরানে, এরপর দক্ষিণ ইউরোপে। সেখানে জন্ম হয় আধুনিক দাবার। বিংশ শতকের শুরু থেকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে বোর্ড গেমেও। জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে মনোপলি, স্ক্র্যাবল, প্যান্ডামিক, স্টার ওয়ার, টিকেট টু রাইড, বিট্রায়েল অ্যাট হাউজ অন দ্য হিল, দ্য রেজিস্ট্যান্স সহ অজস্র আধুনিক বোর্ড গেম।
যেভাবে জন্ম নিলো 'পলাশী'
পলাশীর অন্যতম কারিগর আরাফাতের আধুনিক বোর্ড গেমের প্রতি আগ্রহ জন্মায় ২০১৭ সালের দিকে। বাংলাদেশে সৃষ্ট আধুনিক বোর্ড গেমের চল তখন তেমন একটা ছিল না। বোর্ড গেম সেসময় কেবল মনোপলি, লুডু, দাবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বন্ধুদের সাহচর্যে আরাফাতের নজরে আসে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বোর্ড গেম। খেলতে খেলতে জন্মে যায় এই রঙিন দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা।
বাংলাদেশ সৃষ্ট বোর্ড গেমের নাগাল আরাফাত তখনও পাননি, তাই দেশের বাইরে থেকে কিনে এনে খেলতে হতো। আর তাতে খরচও হতো প্রচুর। আচমকা আরাফাতের মাথায় আসে, 'বাংলাদেশেই আধুনিক বোর্ড গেম তৈরি করলে কেমন হয়?'
আরাফাত বলেন, "আমার খেলা প্রথম বোর্ড গেম ছিল টিকেট টু রাইড। এরপর আরো ভিন্ন ভিন্ন রকমের বোর্ড গেম খেলা শুরু করি। এর মধ্যে একটা ছিল- দ্য রেজিস্ট্যান্স: অ্যাভালন। খেলতে গিয়ে মনে হলো এখানকার মানুষ এসব বোর্ড গেম সম্পর্কে কম জানে, তাদের জানানো দরকার।"
"তখন সমস্যা ছিল এই যে মডার্ন বোর্ড গেম যদি কেউ খেলতে চাইতো, তাহলে আমেরিকা থেকে আনাতে হতো। এর জন্য খরচ হতো গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এই খরচ আসলে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।"
তখনই আরাফাত এবং ইমতিয়াজের মাথায় আসে 'দ্য রেজিস্ট্যান্স: অ্যাভালন'- এর অনুরূপ দেশীয় প্রেক্ষাপটে আধুনিক বোর্ড গেম তৈরির কথা। এমন একটি গেম- যেখানে দুটি পক্ষ থাকবে এবং একটি পক্ষ আরেকটি পক্ষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। ইতিহাস অনুযায়ী ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ ছিল এমন গেমেরই নামাঙ্কমাত্র, যার সাথে দ্য রেজিস্ট্যান্স গেমেরও সাদৃশ্য আছে। ভাবনানুসারে দ্য রেজিস্ট্যান্স-এর মতো করেই কাজ শুরু হয় পলাশী-র; জন্ম হয় বাংলাদেশে তৈরি আধুনিক বোর্ড গেমের।

"অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন পলাশী? কেন দ্য রেজিস্ট্যান্স- এর মতো করে গেম বানানো হলো? উত্তর হচ্ছে— জাতিগত ভাবে আমরা একটু কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া পছন্দ করি। তখন আমার বন্ধু এবং পলাশীর আরেকজন স্বত্বাধিকারী ইমতিয়াজ বলে যে দ্য রেজিস্ট্যান্স-কে যদি পলাশী থিমে বানানো যায়, তাহলে গেম বাংলাদেশে ভালোমতো চলবে। এটাই ছিল পলাশী তৈরির গল্প," হেসে বলেন আরাফাত।
কিন্তু বোর্ড গেম বানাবো, ভাবলেই তো চলে না- প্রয়োজন পরিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ। তার উপর খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও আরাফাত এবং ইমতিয়াজের বোর্ড গেম তৈরির পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এ যেন অনেকটা 'ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার'- এর মতো অবস্থা। তাতে অবশ্য কাবু হননি তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের শুরুতে শুরু করেন পলাশী-র 'ইলাসট্রেটর' খোঁজার কাজ। এবার বাদ সাধে করোনা মহামারি। পলাশী-র কাজ তখন সাময়িক বন্ধ থাকলেও প্লেগ্রাউন্ড ইনকর্পোরেটেডের 'ভাই থামেন' নামে আরেকটি প্রকল্পের কাজ তাল মিলিয়ে চলতে থাকে।
ইলাসট্রেশন, থিম এবং প্রোডাকশন মিলিয়ে একেকটি বোর্ড গেম তৈরিতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় মাস। পলাশীর পুরো কার্যক্রমে বর্তমানে যুক্ত আছে ছয় জন। যারা ইলাস্টেশন থেকে শুরু করে উৎপাদনের পুরো কাজে যুক্ত থাকে।
কীভাবে খেলতে হয় পলাশী?
৫ থেকে ১০ জন মিলে খেলতে পারে পলাশী। ৫টি অধ্যায়ে বিভক্ত পলাশী বোর্ড গেমে প্লেয়াররা নবাবপক্ষ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি-র (ইআইসি) হয়ে খেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। পুরো পলাশী যুদ্ধের আদলে সাজানো হয়েছে খেলাটিকে। তাই বিশ্বাসঘাতকতার চিহ্নও আছে এই বোর্ড গেমে। এখানে যারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ হয়ে খেলবে, তারা খেলার শুরুতেই একে অপরকে চিনতে পারবে বা জানতে পারবে তাদের দলে কারা কারা খেলছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে নবাবপক্ষ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা যেহেতু ১৭৫৭ সালে যুদ্ধের আগে কে তার পাশে আছে তা সঠিকভাবে জানতে পারেননি, অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলেন, এখানেও ঘটবে তার পুনরাবৃত্তি। নবাবপক্ষের মানুষ জানবে না কে কোন পক্ষের হয়ে খেলছে। নবাব পক্ষের উদ্দেশ্য হবে প্রতিটি অধ্যায়ে জয়লাভ করা আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পক্ষের উদ্দেশ্য হবে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে নবাব পক্ষের জয়লাভে ব্যাঘাত ঘটানো। দুই দলের উদ্দেশ্যই হবে ৫টির মধ্যে কমপক্ষে ৩টি অধ্যায়ে জয় লাভ করা।

পলাশী বোর্ড গেমে মোট ১৪টি চরিত্রের কার্ড আছে। যার মধ্যে চারটি কার্ডকে ধরা হয় 'অ্যাডভান্সড' কার্ড। সেই চারটি কার্ডের মধ্যে রয়েছে মোহন লাল, মীর মদন, ঘসেটি বেগম এবং রায় দূর্লভ। কে কোন পক্ষ হয়ে খেলবে, তা নির্ধারণ করে চরিত্রের কার্ডগুলো। এছাড়াও আছে ১০ জোড়া ভোট টোকেন, ৫টি ম্যাপ কার্ড, ৫ জোড়া অধ্যায় কার্ড এবং এক জোড়া লয়্যালটি কার্ড। 'পলাশী' বোর্ড গেমের একটি নিজস্ব 'রুল-বুক' রয়েছে। যেখানে লেখা আছে খেলার সমস্ত নিয়মকানুন।
আরাফাত বলেন, "১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাবপক্ষের যুদ্ধের আগমুহূর্তে যা যা হয়, সেগুলোকে আমরা থিমেটিক্যালি আনার চেষ্টা করেছি। নবাবপক্ষের চরিত্র হচ্ছে নবাব সিরাজউদ্দৌলা, উনার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম, মীর মদন। তাছাড়া ফ্রেঞ্চরাও নবাবদের যুদ্ধে সাহায্য করেছিল, তাই তাদেরও দুটো কার্ড আছে এই তালিকায়। পলাশীর যুদ্ধে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারা ইস্ট ইন্ডিয়ার পক্ষ হয়ে খেলবে।"
খেলোয়াড়ের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নবাবপক্ষ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পক্ষের কার্ড নিতে হবে। আরাফাত যোগ করেন, "একটি ৬ প্লেয়ারের গেমে ৪টি নবাবপক্ষ এবং ২টি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পক্ষের কার্ড নিতে হবে। কার্ডগুলো নিয়ে অদলবদল করে খেলোয়াড়দের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। সবাই লুকিয়ে কার্ডগুলো দেখবে এবং এর মাধ্যমেই কে কোন দলের হয়ে খেলবে তা নির্ধারণ হয়ে যাবে। কেবল মনে রাখতে হবে, পলাশীর প্রত্যেক গেমে নবাবপক্ষের মীর মদন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মীর জাফর থাকবেই।"
যুদ্ধ পরিচালনা করবেন সেনাপতি
৫টি অধ্যায় মূলত ৫ ঘণ্টার যুদ্ধপর্ব। প্রথম পর্বে একজন সেনাপতি থাকবেন, যিনি যুদ্ধকে পরিচালনা করবেন। অধ্যায় পর্বের শুরুতে দলের খেলোয়াড়দের সেনাপতি এক জোড়া উদ্ধার কার্ড দেবেন। যার মধ্যে থাকবে একটি সফল কার্ড, আরেকটি বিশ্বাসঘাতক কার্ড। দলের খেলোয়াড়রা এক জোড়া কার্ড থেকে একটি কার্ড গোপনভাবে নির্ধারণ করবে এবং সামনে রাখবে। নিয়ম এখানে একটাই, নবাব পক্ষে যারা খেলবে তাদের সফল কার্ড দিতে হবে। অপরদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাইলে সফল কিংবা বিশ্বাসঘাতক উভয় কার্ডই দিতে পারবে।
যে কার্ডগুলো খেলা হবে সেনাপতি সেগুলো সংগ্রহ করে অদলবদল করবেন এবং সবার সামনে প্রকাশ করবেন। প্রকাশিত কার্ডগুলো যদি সব 'সফল' কার্ড হয়, তাহলে সেই অধ্যায়ে জয় লাভ করবে নবাবপক্ষ। যদি একটি কার্ডের মধ্যেও 'বিশ্বাসঘাতক' কার্ড থাকে তাহলে সেই অধ্যায়ে জিতে যাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
অধ্যায়ের ফলাফল পাওয়ার পর ঐ অধ্যায়ের জন্য ম্যাপ কার্ড ব্যবহার করে অধ্যায়ের ফলাফল চিহ্নিত করতে হবে। যদি নবাবপক্ষ জয়ী হয়, তাহলে ম্যাপ কার্ডের সবুজ অংশ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়ী হলে ম্যাপ কার্ডের লাল অংশ রাখতে হবে। এভাবেই অবসান ঘটে একটি অধ্যায়ের। একটি অধ্যায় শেষ হলে সেনাপতির বাম পাশের জন নতুন সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হবেন।
পলাশী বোর্ড গেমে যেকোনো পক্ষ তিনটি অধ্যায় জিতে গেলেই শেষ হয়ে যাবে খেলা। তবে নবাবপক্ষের জয় নিশ্চিত করার জন্য সম্পন্ন করতে হবে একটি অতিরিক্ত ধাপ। যদি নবাবপক্ষ তিনটি অধ্যায়ে জয় লাভ করে, তাহলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে সুযোগ থাকবে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার। তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে চিহ্নিত করতে হবে নবাবপক্ষের মীর মদনকে। যদি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ নবাবপক্ষের মীর মদনকে খুঁজে বের করতে পারে, তবে জয় হবে তাদের। আর যদি না পারে তাহলে জয়ের পতাকা নবাবপক্ষেরই থাকবে।

'অনেকে বোর্ড গেমকে জুয়ার সাথে মিলিয়ে ফেলেন'
এখন পর্যন্ত পলাশী বোর্ড গেম ২,০০০ কপির মতো বিক্রি হয়েছে বলে জানান পলাশীর স্বত্বাধিকারী আরাফাত। পলাশীর পুরো কাজ যেহেতু বাংলাদেশ ভিত্তিক, তাই এর দামও হাতের নাগালে রাখার চেষ্টা করেছেন তারা। প্রতিটি পলাশী বোর্ড গেম কিনতে খরচ করতে হবে ৫৯৯ টাকা। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেই কেনা যাবে পলাশী। প্লেগ্রাউন্ড ইনকর্পোরেটেড-এর ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করলেই পাওয়া যাবে এই বোর্ড গেমের সন্ধান।
তাছাড়াও কিনতে পাওয়া যাবে দারাজ, রকমারি এবং নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকস্টোর থেকে। পলাশী ছাড়াও 'ভাই থামেন' নামে আরেকটি বোর্ড গেম তৈরি করেছে প্লেগ্রাউন্ড ইনকর্পোরেটেড। বর্তমানে স্টক আউট থাকলেও দ্রুতই 'ভাই থামেন'-কে আবার বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বোর্ড গেমের সাথে মানুষ এখনো পরিপূর্ণভাবে পরিচিত হতে পারেনি, যার দরুণ বাংলাদেশে বোর্ড গেম সেভাবে এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি বলে মনে করেন আরাফাত।
তিনি বলেন, "বাইরের দেশে ওয়েস্টার্ন, ইস্টার্ন ইউরোপ, আমেরিকাতে বোর্ড গেম ক্যাফে আছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বোর্ড গেম নিয়ে কিছু ধারণা আছে, কিছুটা অন্য চোখে দেখে তারা। অনেকে একে জুয়ার সাথে মিলিয়ে ফেলে। এমন ধরণের মানসিকতা এখনো আমাদের সমাজে ছড়িয়ে আছে। এটা দূর করা আমাদের লক্ষ্য।"
"তাছাড়া আমরা যখন বাইরে কোনো ক্যাফেতে বসে খেলতে চাই, তখন দেখা যায়, হাতে গোণা কিছু জায়গায় অনুমতি পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্যাফেতে কারণ ছাড়াই বলা হয় যে খেলা যাবে না। এটা আসলে সামাজিক চ্যালেঞ্জ। প্রোডাকশনের দিক থেকে বলা যায়, বাইরের দেশে মডার্ন বোর্ড গেম যে কোয়ালিটিতে পাবলিশ হয়, বাংলাদেশে ঐ কোয়ালিটির প্রোডাকশন এখনো আমরা দিতে পারছি না। আমাদের দিক থেকে যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করছি," যোগ করেন আরাফাত।
বোর্ড গেমের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ এর বিভিন্ন নিয়ম-কানুন। তাই আরাফাত এবং ইমতিয়াজ শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সহজ ভাষায় পলাশী-র নিয়মকানুন সবার সামনে তুলে ধরার। আরাফাত স্বপ্ন দেখেন নতুন নতুন বোর্ড গেম তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশে বোর্ড গেম ক্যাফে তৈরি করার। "এমন একটা বোর্ড গেম ক্যাফে তৈরি করতে চাই, যেখানে মানুষ এসে বোর্ড গেম খেলার পাশাপাশি চা-কফি-জুস খেতে পারবে," বলেন আরাফাত।
পলাশী একটি বুদ্ধিবৃত্তিক খেলা। সেখানে যেমন আছে বিশ্বাসঘাতকতা, ধোঁকা তেমনি আছে মাথা খাটিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ। খেলায় জিততে হলে রাখতে হবে মনোযোগ; বুদ্ধি দিয়ে বের করতে হবে জয়ের পথ।