Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

মাদারীপুরের 'ইতালি জ্বর': কেউ পুড়ে যায়, কেউ সৌভাগ্যের দেখা পায়

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা অতীতের বিপজ্জনক ডানকি পদ্ধতির মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার বুনো স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে মাদারীপুরের শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। আবার ইতালি প্রবাসীদের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে মাদারীপুরের পরিবারগুলো টিকে থাকলেও এখানকার মানুষদের জীবনে আনন্দের গল্পের পাশাপাশি বেদনার গল্পও কম নয়।
মাদারীপুরের 'ইতালি জ্বর': কেউ পুড়ে যায়, কেউ সৌভাগ্যের দেখা পায়

ফিচার

মাসুম বিল্লাহ
03 April, 2024, 07:50 pm
Last modified: 13 June, 2024, 12:00 pm

Related News

  • শিবচর-মাদারীপুর রুটে চার সেতু নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ
  • পেনশন পেতে মায়ের মৃত্যু গোপন, তার সাজেই আইডি নবায়ন করতে গিয়ে ধরা খেল ছেলে
  • মাদারীপুরে গাছ ফেলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ আ. লীগের নেতা-কর্মীদের, ৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ
  • টাকা দিলেই বসনিয়ায় নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষদের ‘শিকার’ করতে পারতেন পর্যটকরা; ‘স্নাইপার সাফারি’র তদন্তে ইতালি
  • মাদারীপুর-১ আসনে কামাল মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করল বিএনপি

মাদারীপুরের 'ইতালি জ্বর': কেউ পুড়ে যায়, কেউ সৌভাগ্যের দেখা পায়

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা অতীতের বিপজ্জনক ডানকি পদ্ধতির মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার বুনো স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে মাদারীপুরের শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। আবার ইতালি প্রবাসীদের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে মাদারীপুরের পরিবারগুলো টিকে থাকলেও এখানকার মানুষদের জীবনে আনন্দের গল্পের পাশাপাশি বেদনার গল্পও কম নয়।
মাসুম বিল্লাহ
03 April, 2024, 07:50 pm
Last modified: 13 June, 2024, 12:00 pm

এটি ছিল তার প্রথম 'গেম'

রোমান লিবিয়ায় যাওয়ার বেশ কয়েক মাস আগে এমন একটি মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। যদি তিনি এ 'গেম'-এ সফল হন তাহলে ইতালিতে একটি নিশ্চিত জীবন পাবেন। অন্যদিকে ব্যর্থতার মানে হলো, ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া অথবা অন্যান্য অগণিত উপায়ে মৃত্যু কিংবা লিবিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া।

২০১৮ সালের শুরুর দিকে রোমানকে 'গেম হাউস'-এ নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে জাহাজে উঠানোর আগে অভিবাসীদের রাখা হয়। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির উপকূলে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা যেটি বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাছে 'গেম' নামে পরিচিত, সেটি একটি ভাসমান নৌকায় শুরু হবে গভীর রাতে।

সেই রাতে সমুদ্র উত্তাল ছিল, সাথে ছিল ভয়াবহ ঢেউ। তারা যে নৌকায় চড়ে সমুদ্র পারি দিবে সেটি একটি পাথুরে সৈকতে ভেড়ানো হয়েছিল। ঢেউগুলো নৌকার উপর আছড়ে পড়ার কারণে নৌকাটি বারবার দুলছিল। ভয়াবহ পাথর থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে রোমান এবং অন্যান্য অভিবাসীদের লাফিয়ে নৌকায় উঠতে হয়েছিল।

দুজন বাংলাদেশি ও কয়েকজন আফ্রিকানসহ কয়েকজন নৌকায় উঠেছিলেন এবং বাকিরা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটি দৈত্যাকৃতি ঢেউয়ের আঘাতে নৌকাটি উল্টে গেলে যাত্রীরা সবাই ছিটকে পড়ে যান।

রোমান তার নিজ জেলা মাদারীপুরের রাজৈর বাজারে এক সাক্ষাৎকারে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের পিঠে থেঁতলে গেলেও আমরা (দুই বাংলাদেশি) বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে মাথা ফেটে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই দুজন আফ্রিকান মারা যান।"

রোমান সে ঘটনা স্মরণ করে বলেন, "আমি যা সহ্য করেছি তা আমি হয়তো ভুলে যেতে পারি, কিন্তু সে ঘটনা আমি কখনোই ভুলবো না। দুজন মারা গেল এবং আমরা কোন রকমে বেঁচে গেলাম। কিন্তু লিবিয়ান নৌকার মালিক তাতে পাত্তা দেননি। তিনি আমাদেরকে চিৎকার করে নৌকার ইঞ্জিন নিয়ে আসার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন। অন্যথায় আমাদের তীরে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না।"

প্রায় তিন বছরে মরতে বসা পাঁচটি ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্রযাত্রা, কারাবাস এবং বিক্রি ও নির্যাতনের পর রোমান অবশেষে একদিন ইতালিতে পৌঁছান। এক মাসের ছুটি নিয়ে ফিরে এসেছেন গ্রামে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করতে।

রোমান হলেন মাদারীপুরের হাজার হাজার মানুষের মধ্যে একজন যারা বছরের পর বছর ধরে ইতালিতে একটি উন্নত জীবনের জন্য সবকিছু ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগরে বা ডানকি পদ্ধতিতে (অবৈধ পন্থায় কষ্ট করে বিদেশ যাত্রা) ভ্রমণ করে আসছেন।

এই মাসের শুরুর দিকে এ জেলার বিভিন্ন গ্রামে টহল দেওয়ার সময় বিপজ্জনক পথটি পাড়ি দিয়ে ঠিক কতজন লোক তাদের ভাগ্য গড়েছে তা বের করার চেষ্টা করেছি আমরা। আমাদের সাথে থাকা একজন স্থানীয় সাংবাদিক এক পর্যায়ে বলেছিলেন, "ইতালি প্রবাসীরা গাছের পাতার মতো। আপনি তাদের এখানে প্রতিটি ঘরে পাবেন।"

সংখ্যাটি কত? কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক দশকে মাদারীপুর থেকে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ অবৈধভাবে ইতালিতে বসতি স্থাপন করেছেন। তবে জেলা পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলছেন, সংখ্যাটা অনেক বেশি। তিনি বলেন, "সম্ভবত শুধু মিলান শহরেই মাদারীপুর থেকে ৫ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করছেন।"

তিনি আরো বলেন, "ইতালিতে মাদারীপুরের বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। সঠিক সংখ্যা দেওয়া কঠিন। প্রকৃত সংখ্যা আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তার চেয়ে বেশি। আপনি এখানে এমন একটি পরিবারও পাবেন না যার সদস্য বা আত্মীয় ইতালিতে নেই।"

এবং রাজৈরের বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘোরাঘুরি করে আলমের অনুমান সঠিক বলে একটা ধারণা আমরা পেয়েছি। আমরা যাকেই জিজ্ঞাসা করেছি, তারই একজন আত্মীয় বা পরিবারের সদস্য ইতালিতে গিয়ে পুরো পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। গ্রামে তাদের বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ধীরে ধীরে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আমরা যেসব তরুণ-তরুণীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি তারা আমাদের জানিয়েছে, তাদের জীবনের লক্ষ্য হলো ইতালি যাওয়া।

কিন্তু যেহেতু এই লোকদের বেশিরভাগই অবৈধ পথে ইতালিতে গিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা অতীতের বিপজ্জনক ডানকি পদ্ধতির মাধ্যমে এই বুনো স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে শতাধিক মানুষ মারা গেছেন বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি হতাহতের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু জেলা পুলিশ সুপার একমত হয়ে জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। 

অভিবাসীদের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে মাদারীপুরের পরিবারগুলো টিকে থাকলেও এখানকার মানুষদের জীবনে আনন্দের গল্পের পাশাপাশি বেদনার গল্পও কম নয়।

যারা আর ফিরে আসেনি: 'আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনুন'

খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বর্নমঙ্গল গ্রামে থাকতেন মামুন। তার বাবা ইউসুফ আলি দীর্ঘ সময় ধরে গ্রীসে বসবাস করলেও তিনি ইতালি প্রবাসীদের মত গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি বানাতে পারেননি। এমনকি তিনি তাদের মত অনেক টাকাও উপার্জন করতে পারেননি। তার পরিবার এখনো একটি টিনের বাড়িতে বসবাস করে।

তাই মামুন নিজের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এ ভয়াবহ যাত্রার ব্যাপারে তাকে অনেকেই সতর্ক করলেও মামুন লিবিয়া গিয়েছিলেন ইতালি যাওয়ার আশায়। তার এই যাত্রার জন্য তার পরিবারকে এক খণ্ড জমি বিক্রি করতে হয়েছিল।

মামুনের বোন সাগরিকা বলেন, "এ এলাকার সবাই এভাবেই ইতালি গেছে। তার (মামুন) বন্ধুরা এবং পরিচিতরা তাকে ডেকে ইতালিতে কি পরিমাণ টাকা উপার্জন করছে সে গল্প গর্বের সাথে বলতো। এসব গল্প করে পরিচিতরা তার মাথা খেয়ে ফেলেছিল! যখন আমরা রাজি হলাম, আমরা ভেবেছিলাম হয় সে ইতালি যাবে অথবা গ্রেপ্তার হবে।"

কান্নায় ভেঙে পড়ে সাগরিকা আমাদের বলেছিল, "আমরা কখনোই ভাবতে পারিনি ও এভাবে মারা যাবে।"

মামুনের মা এখনো বিশ্বাস করেন তার ছেলে বেঁচে আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

মামুন ছিলেন মাদারীপুরের দুর্ভাগা ছয়জনের মধ্যে একজন যারা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভূমধ্যসাগরে মারা গিয়েছিলেন। স্বপ্নের ইতালি যাত্রায় মাদারীপুরবাসীর কয়েক দশকের পুরোনো মৃত্যুর মিছিলে তারা ছিলেন সর্বশেষ সংযোজন।

পাশে বসেই কান্না করছিলেন মামুনের মা। কিন্তু ছেলের মৃত্যু তিনি এখনো মেনে নিতে পারেননি। সে প্রতিবাদ করে বিড়বিড় করে বলছিলেন, "আমার ছেলে মরেনি। আপনি কি আমার ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসতে পারবেন? আমি আপনার জন্য দোয়া করব, আপানাকে সব দেব। আপনি তাকে বাড়িতে আনতে পারলে আমার মন শান্তি পাবে।"

পরিবারটি ঠিক জানে না, তাদের ছেলে কীভাবে মারা গেছে। 

মামুনের নৌকায় বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশিরা তাদের বলেছিল, মামুনকে ইঞ্জিন রুমে উঠতে বাধ্য করা হয়েছিল। নৌকায় থাকা একজন বাংলাদেশি জানান, ইঞ্জিন রুমে প্রবেশের আগে মামুন তাকে নিজের ফোন দিয়ে দেয় এবং তার কিছু হলে পরিবারকে জানাতে বলে।

মামুনের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আমার ছেলে লম্বা। সে ইঞ্জিন রুমের ভিতরে ঢুকতে চায়নি। তারা তাকে নির্যাতন করেছে।" মামুন হয় তেলের ধোঁয়ায় মারা গিয়েছিলেন বা তিউনিসিয়ার উপকূলরক্ষীরা যখন নৌকায় গুলি চালায় (যার ফলে এটি ডুবে যায়) তখন একটি বুলেট তাকে আঘাত করেছিল বলে মনে করা হয়।

মামুন গেইম হাউস থেকে বের হওয়ার আগে মাকে বলেছিল, তার পরের ফোন কল আসবে ইতালি থেকে।

তার মা কান্না করা অবস্থায় বলেন, "আমার ছেলে আমাকে আর ফোন দেয় না।" 

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এলাকার 'দালাল' (পাচারকারী) মুসার মাধ্যমে সে লিবিয়ায় গিয়েছিল বলে তার পরিবার জানিয়েছে। আমরা মুসার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে আমরা মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জের আরও কয়েকটি দালালের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু বেশিরভাগই লুকিয়ে ছিল এবং তাদের নম্বর বন্ধ ছিল।

ইশিবপুরের লুন্ডি গ্রামের শাফায়েতও নিহতদের একজন।

একজন কৃষকের ছেলে শাফায়েত তার পরিবারের হাল ধরবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তিনি তার মাকে একটি অডিও বার্তা পাঠান যাতে তিনি ইতালিতে একটি নৌকায় চড়ে তার মাকে প্রার্থনা করতে বলেন।

শাফায়েতের মা বলেন, "মাগরিবের নামাজের সময় আমার ছেলে আমাকে ভয়েস মেসেজ পাঠায়। এটাই আমার ছেলের শেষ কথা ছিল।"

নৌকাটি ইতালিতে পৌঁছালেও নৌকার অন্যান্য অভিবাসীরা জানিয়েছেন, ইতালিতে পৌঁছানোর আগেই শাফায়েত ঠান্ডায় মারা যান। মাদারীপুরের যে কয়জন মৃত যুবকের লাশ ভূমধ্যসাগর থেকে নিজ গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে শাফায়েত ছিলেন একজন।

কিন্তু অধিকাংশ পরিবারের মৃত ছেলের লাশ দেখবারও সুযোগ হয় না।

মামুনের মা ক্যামেরায় তার ছবি দেখাচ্ছেন। ছবি: মেহেদী হাসান

মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরলেন যারা

নৌকার তেল ফুরিয়ে গিয়েছিল। রোমান ১০ ঘণ্টা ধরে ভূমধ্যসাগরে ভাসছিল। লিবিয়ার উপকূল থেকে এটি ছিল তার দ্বিতীয় 'গেম'। তার জীবন আবারো ভয়াবহ শঙ্কায় পড়ে গেল। তারা একটি ভাসমান নৌকায় আছে এবং একটি বড় ঢেউ নৌকায় আঘাত করলে যেকোনো মুহূর্তে তারা ডুবে যেতে পারে। ঢেউ তাদের হত্যা না করলে হয়ত ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা মারা যাবে।

কিন্তু একটি জাহাজ তাদের দেখতে পাওয়ায় তিনি নতুন করে বেঁচে থাকবার আশা ফিরে পান।

রোমান বলেন, "ঢেউ বাধা ছিল কারণ কাছাকাছি আসা জাহাজটি আমাদেরকে পানিতে আরো পিছিয়ে দিচ্ছিলো। আরেক বাংলাদেশি ভাই এবং আমি সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আমাদের নৌকাটিকে জাহাজের কাছে টেনে নিয়ে যাই।"

এই দ্বিতীয় প্রচেষ্টাটি ২০১৮ সালের। জাহাজটি অভিবাসীদের উদ্ধার করলেও তাদের লিবিয়ায় ফেরত পাঠায়।

২০১৯ সালে তৃতীয় প্রচেষ্টায় রোমান ভূমধ্যসাগরের মাল্টিজ প্রান্তে পৌঁছেছিল। তার দলকে ডেনমার্কের একটি জাহাজ অভ্যর্থনা জানায়। অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত মাত্তেও সালভিনি তখন ইতালির উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাই উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের ইতালি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি করেছিল। জাহাজটি আরো কয়েকটি দেশের সাথে যোগাযোগ করলেও কেউ সাড়া দেয়নি।

রোমান বলেন, "জাহাজের মালিক জাহাজে থাকা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, অন্য কোনো দেশ তাদের না চাইলে তাদের যেন ডেনমার্কে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু জাহাজটি তেল নিতে লিবিয়ায় গেলে সেখানকার পুলিশ আমাদের দেখতে পায় এবং আমাদের গ্রেপ্তার করে।"

তাদের লিবিয়ার জাবিয়াহতে আল-নাসর ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারটি কুখ্যাত অভিবাসী চোরাচালানকারী ওসামা আল কুনি ইব্রাহিমের নামানুসারে 'ওসামা কারাগার' নামে পরিচিত। তিনি এই কারাগারের দেখভাল করেন।

নিজের ভয়াবহা অভভিজ্ঞতার গল্প বলতে গিয়ে রোমান বলেন, "কোন খাবার ছাড়া শুধু টয়লেটের পানি পান করে আমরা সাত দিন জেলে বেঁচেছিলাম। সেই 'গেম' এ আমরা ১৪ জন বাংলাদেশি একসাথে ছিলাম।"

রোমান তার আটককারীদের প্রায় চার লাখ টাকা দেওয়ার পর মুক্তি পায়।

রোমান নিজের চতুর্থ প্রচেষ্টাকে তার 'সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস এবং তারা খাবার ছাড়াই চার দিন ধরে সমুদ্রে ভাসছিলেন। তখন তারা বুঝতে পারেন, তাদের নৌকার ক্যাপ্টেন তাদের লিবিয়ার কোস্ট গার্ডদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। গ্রেপ্তার করে তাদের লিবিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আবার হাইতাম নামে লিবিয়ার এক 'মাফিয়া' ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

এ সময় ক্ষতবিক্ষত এবং নির্যাতনের শিকার রোমানকে মুক্তির জন্য ৫ হাজার মার্কিন ডলার (৫ লাখ টাকার বেশি) দিতে হয়েছিল। রোমান তার চতুর্থ 'গেম' পর্যন্ত ২৬ লাখ টাকা খরচ করেছিল। অথচ সে লিবিয়ায় নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটিয়েছে।

একটি মরিয়া পদক্ষেপে তিনি লিবিয়ার পাচারকারীদের ডান হাত হিসেবে কাজ করা বাঙালি দালালদের সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন। এই দালালদের মূলত অর্থের জন্য অন্যান্য বাংলাদেশিদের নির্যাতন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রোমান একই কাজ করবেন এবং টাকা কেটে রাখবেন।

রোমান বলেন, "যখন আমি তাদের মারতে গিয়েছিলাম তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিল কারণ আমি নিজেও এতদিন ধরে অত্যাচারিত ছিলাম। বাঙালিদের মন অনেক নরম। যদি মারধর করা হয় তাহলে আমরা দ্রুত টাকা দিতে রাজি হয়ে যাই। আফ্রিকানদের মেরে ফেললেও তারা এটা করে না। আমি সহজেই আরো টাকা নিতে পারতাম। কিন্তু আমি কিছু না বলে চলে গেলাম।"

তার পঞ্চম এবং শেষ 'গেম' ছিল ২০২০ সালের মে মাসে। তার নৌকা ৮৬ জন অভিবাসীকে নিয়ে সকাল ৩টায় যাত্রা শুরু করেছিল। ৫২ ঘণ্টা ধরে অস্থির ভূমধ্যসাগরীয় ঢেউয়ের সাথে লড়াই করার পরে তারা অবশেষে ইতালির দ্বীপ ল্যাম্পেডুসায় পৌঁছায়।

রোমান বলেন, "যতবারই আমি ধরা পড়ি সেটা জিরো পয়েন্টে (উন্মুক্ত পানিতে) ঘটেছে। যখন আমরা জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ইতালির জলসীমায় আসলাম তখন আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম। আমরা জানতাম যে আমাদের কষ্ট শেষ হয়ে গেছে।" 

ল্যাম্পেডুসা থেকে উদ্ধার করে তাকে সিসিলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় মহামারি থাকায় তাদের ৪০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। তারপর তাকে কাতানিয়ার কাছের অ্যাসিরিয়াল শহরে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি এখন থাকেন।

তিনি দেড় বছর ধরে অভিবাসীদের একটি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন যেখানে তিনি মাঝে মাঝে দৈনিক ভিত্তিতে কাজের সুযোগ ছাড়াও মাসিক ভাতা হিসেবে কয়েকশ ইউরো পেতেন। তার ক্যাম্প জীবনের প্রায় আট মাস পর তিনি একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি পান এবং অবশেষে চলে যান।

তারপর থেকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি তার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করেছেন এবং লিবিয়ায় তার ব্যয় করা ২৬ লাখ টাকা তুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। এবার তিনি বিমানে করে ইতালিতে ফিরবেন।

মাদারীপুরের ইতালি অভিবাসীদের সাফল্যের গল্প কমবেশি একই।

অ্যাসিরিয়ালে রোমানের এক সহকর্মীর নৌকা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার পর তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল, সে মারা গেছে। লোকটির পরিবার ভয়াবহ শোকের মধ্যে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে।

কিন্তু ১৪ দিন পরে লোকটি তার পরিবারকে ফোন করে জানায়, সে এখনো বেঁচে আছে। তিনি কোনোভাবে ভাসতে ভাসতে ইতালির উপকূলে চলে আসেন এবং তাকে উদ্ধার করা হয়।

'ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন'

রাজৈরের একটি বাজারে রোমানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় আমরা দুই ঘণ্টার ব্যবধানে অন্তত ছয়জনের সাথে দেখা করি।

একটি দোকানের ম্যানেজার যিনি নিজেও ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন বলেছেন, "আপনি দেখেন, জীবন এবং অর্থ হারিয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ধরুন ১০ জন ক্ষতির সম্মুখীন হলেও ৯০ জন ইতালি চলে যায়। এর মানে ৯০টি পরিবার উপকৃত হচ্ছে।"

তিনি বলেছিলেন, ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন তাদের এলাকায় এতটাই তীব্র যে তাদের পৌরসভার সাবেক মেয়রও শেষ পর্যন্ত ইতালিতে চলে যান।

তরুণ স্বপ্নবাজরা অবশ্য বলেছেন, তারা এখনই লিবিয়া হয়ে ইতালি যেতে চান না। তারা প্রাথমিকভাবে স্পনসর (পৃষ্ঠপোষক) এবং সিজনাল ভিসার মাধ্যমে আইনি উপায়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করতে চান। দোকানে আমরা যে ছয়জনের সাথে দেখা করেছি তারা সবাই বলেছেন, তারা স্পনসর ভিসায় বৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় কেন তারা জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার পরিবর্তে বাড়িতেই ব্যবসা করার চেষ্টা করেন না তখন তাদের একজন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, "আপনি যা করছেন তা করে আপনি কত টাকা সঞ্চয় করতে পারেন? ১ লাখ টাকা বাঁচাতে আপনার ছয় মাস লাগবে। কিন্তু আমার ছোট ভাইয়ের (একজন ইতালি প্রবাসী) দিকে তাকান। সে এখন একটি আইফোন ব্যবহার করে। আগে ২০ হাজার টাকার ফোনও ব্যবহার করতে পারত না। ইতালিতে পৌঁছানোর দেড় বছরের মধ্যে একটি বাড়ি তৈরি করছে এবং পরের বার সে এলে বিয়ে করে স্যাটেল হবে।"

গ্রামটি ইতালির মোর নামে পরিচিত কারণ এখানের বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা ইতালিতে থাকেন। ছবি: মেহেদী হাসান

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, কতজন মানুষ ইতালিতে গেছেন তার সঠিক সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কারণ অনেকেই নথিভুক্ত অভিবাসী নয়।

তিনি বলেন, "এভাবে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা অযৌক্তিক হবে কারণ তাদের সংখ্যা কোথাও নথিভুক্ত নেই।" 

তিনি আরো বলেন, "এবং তারা এভাবে মারা গেলেও সেই তথ্য নথিভুক্ত করা হয় না। তবে আমরা জানি যে মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ এলাকার লোকেরাই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ইতালি বা ইউরোপে যায়।" 

মাদারীপুরের একটি খালি 'ইতালি গ্রাম'

মাদারীপুরের হাসানকান্দি গ্রামে বাইকে করে টহল দেওয়ার সময় রাস্তার পাশের দর্শনীয় ভবনগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই গ্রামটি ইতালির মোর নামে পরিচিত কারণ এখানে বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যই ইতালিতে বাস করছে।

এবং গ্রামটি নির্জন হয়ে যাওয়ার এটি অন্যতম একটি কারণ যেহেতু কয়েক বছর পরে বেশিরভাগ প্রবাসীরা তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ইতালিতে নিয়ে যায়।

এই গ্রামে 'ইতালি হাউস-১' আছে। আপনি যদি রাজধানীর শনির আখড়ার ইতালি বাড়িগুলো দেখে থাকেন তবে আপনি বাজি ধরে বলতে পারবেন যে বাড়ির মালিকরা এই গ্রাম থেকে এসেছেন।

'ইতালি হাউস-১' হাসনাবাদ গ্রামের একটি চমৎকার ভবন। এর আশেপাশে রয়েছে আরও কয়েকটি দর্শনীয় ভবন। এই ভবনগুলোর একটির উপরে একটি মডেল প্লেন রয়েছে। আপনি যদি শাহরুখ খানের সিনেমা ডানকি দেখে থাকেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন, বাড়ির মালিকরা বিদেশে আছেন।

'ইতালি হাউস-১' এর মালিক ছিলেন প্রয়াত জব্বার মাতুব্বর। তার ছেলে আতিয়ার মাতুব্বর ৯০ এর দশকে এ গ্রাম থেকে ইতালিতে প্রথম যাত্রা করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।

ভবনের ওপরে একটি প্লেনের মডেল থাকা মানে বাড়ির মালিক বিদেশে থাকেন। ছবি: মেহেদী হাসান

বাড়ির বাইরে কাজ করা এক বৃদ্ধা জানান, জব্বার মাতুব্বরের ছয় ছেলের কেউই সেখানে থাকেন না। ছেলেদের মধ্যে একজন শনির আখড়ার ইতালি হাউসে থাকেন। অন্যরা পরিবার নিয়ে ইতালি বা অন্য কোনো দেশে থাকেন।

এসব বাড়িতে আমরা দুজন যুবককে পেয়েছি। তাদের একজন জসিম মাতুব্বর। জসিম (২০) বলছিলেন, তিনি স্পনসর ভিসায় ইতালি যাওয়ার জন্য তার কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমির হোসেন নামে আরেক যুবক জানান, তিনিও ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জব্বার মাতুব্বরের ছেলেদের কেউ ইতালি হাউস-১ এ না থাকলেও তার বিধবা মেয়ে রানু বেগম নিজের মেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকেন।

ভাইদের নিয়ে গর্ব করে রানু বেগম বলেন, "আমার ভাইয়েরা জঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে ইতালিতে গিয়েছে। তারা অনাহারে থেকে, জেল খেটেছে এবং আরো অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।"

৫৪টি বাড়ির পাঁচ কিশোর ও ডানকি থেকে বেঁচে ফেরা একজন

ইতালি গ্রামের বাদল খানের গল্পটা ব্যতিক্রমী। অন্যরা যখন ইতালি যাওয়ার স্বপ্নের পেছনে ছুটছিলেন তখন তিনি অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। তবে তিনিও এখন ইতালি যেতে চান।

বাদল বলেন, "ইতালি প্রবাসীরা আমাদের গ্রামের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। এই পরিবর্তন আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। এখানে প্রত্যেকেরই এখন ঢাকা এবং মাদারীপুর শহরে একটি বাড়ি আছে। আমাদের গ্রামে যদি ১০০টি পরিবার থাকে তাহলে তাদের মধ্যে ৪০টি পরিবার ঢাকায় একটি বাড়ির মালিক"

আমরা যখন উচ্চস্বরে কথা বলছিলাম তখন মহসিন খান নামে এক ব্যক্তি কৌতূহল নিয়ে তার বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। ডানকির দিনগুলোতে ইতালি জ্বর থেকে বেঁচে যাওয়াদের একজন তিনি।

দালাল মহসিনকে বলেছিল, ডানকি পদ্ধতিতে তাকে হাঙ্গেরি নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় রাশিয়া যাবেন, সেখান থেকে ইউক্রেনে যাবেন এবং তারপর বিমানে ইতালি যাবেন।

কিন্তু দালাল মিথ্যা বলেছিল। তিনি বলেছিলেন, তারা রাশিয়ায় যাওয়ার আগে উজবেকিস্তানে একটি ট্রানজিট নেবে।

মহসিন বলেন, "কিন্তু আমরা উজবেকিস্তানে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি একটি কৌশল ছিল। তারা আমাদের পাঁচজনকে তুর্কমেনিস্তানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ির ট্রাঙ্কে ভরে এবং এমনভাবে নির্যাতন করেছে যে আমি বলতে পারবো না। একটা সময়ে ১৭ দিন ধরে আমাদের কাছে খাওয়ার মতো কিছুই ছিল না। আমরা ক্ষুধার্ত পেটে সোয়েটার বেঁধে রাখতাম। তারা ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনকে এক লিটার পানি দিত। আমরা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছি।"

তুর্কমেনিস্তানে তাদের কাটানো ছয় মাসের যন্ত্রণাদায়ক সময়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য করেছিলেন। তার সমস্ত ডলার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তারপর তাকে কাজাখস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আবার একটি গাড়ির ট্রাঙ্কে ভরে দেওয়া হয়।

কাজাখ-রুশ সীমান্তে তারা ঘোড়ার গাড়িতে করে রাশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের দালাল রুশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

মহসিন বলেন, "আমাদের খুঁজে বের করা হয়। তারা আমাদের পাসপোর্ট ফুটো করে আমাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। তখন (২০০০ সাল) আমি ১২ লাখ টাকা হারিয়েছিলাম যখন অনেকে ১ লাখ টাকাও চোখে দেখেনি।"

স্থানীয় তরুণদের মধ্যে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন তীব্র। ছবি: মেহেদী হাসান

মহসিনের বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে আমরা পাঁচ কিশোরের সাথে গল্প করছিলাম। তাদের মধ্যে কার পরিবারের সদস্য ইতালিতে আছে জানতে চাইলে সবাই হাত তুলেছিল।

এসএসসি পরীক্ষার্থী ইয়ামিন শরীফ জানান, তার বড় ভাই ইতালিতে থাকতেন। চাচাসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্য ইতালিতে বসবাস করতেন।

তিনি বলেন, "আমিও ইতালি যেতে চাই।"

তাদের সবাইকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় বড় হয়ে তারা কী করতে চায় তখন তারা একই উত্তর দেয়— তারা ইতালি যেতে চায়।

একজন কিশোর বলেন, "এই এলাকার ৫৪টি বাড়িতে আমরাই অবশিষ্ট কিশোর। সবাই ইতালি গেছে বা যাচ্ছে।" 

পুলিশ সদস্য মাসুদ আলমের মতে, মাদারীপুরে যে ইতালি জ্বর লেগেছে তা শুধু আইনি ব্যবস্থা দিয়ে ঠেকানো যাবে না।

তিনি বলেন, "এটা এমন নয় যে কেউ তাদের সেখানে যেতে বাধ্য করছে। যখন কেউ দেখে যে তার প্রতিবেশী ইতালিতে গিয়ে দুই বছরে একটি বিল্ডিং তৈরি করেছে, তাদের বাবা-মা এবং পরিবার সচ্ছল, তখন সে ঝুঁকির কথা ভাবে না। তিনি সমুদ্রে ডুবে মারা যেতে পারেন বা অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু তারা এগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না।" 

মাসুদ আলম বলেন, "আমরা অনেক দালালকে গ্রেপ্তার করেছি। আপনি জানেন যে এখানে দালালদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর সাথে অন্যান্য জেলা ও এলাকার লোকজন যুক্ত রয়েছে। তবে শুধু গ্রেপ্তার করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। সামাজিক সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন করে এটি বন্ধ করা যাবে না।"


সাক্ষাৎকার দেওয়া কিছু ব্যক্তির অনুরোধে তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের শরীয়তপুর প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামান মনির এই প্রতিবেদন তৈরি করতে সাহায্য করেছেন। মাদারীপুরের সাংবাদিক মোনাসিফ ফরাজী সজীব ও আকাশ আহমেদ মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের সময় সহযোগিতা করেছেন।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়

Related Topics

টপ নিউজ

মাদারীপুর / ইতালি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: সংগৃহীত
    যৌথবাহিনীর অভিযানে আলোচিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ তাহরিমা গ্রেপ্তার
  • ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    আমানতকারীদের সোমবার থেকে টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক
  • ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
    হাদি হত্যা: ভারতে বসে শ্যুটারদের পালানোর ব্যবস্থা করেন যুবলীগ নেতা বাপ্পী
  • ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় দাঁড়িয়ে দুই ভারতীয় সেনা। ছবি: এএফপি/ ভায়া গেটি
    ২০২৫: দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কঠিন এক বছর
  • ফাইল ছবি
    আগামীকাল স্মৃতিসৌধে যাচ্ছেন তারেক রহমান, ১০০০ পুলিশ মোতায়েন
  • ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার আলোচনা চলছে: গোলাম পরওয়ার

Related News

  • শিবচর-মাদারীপুর রুটে চার সেতু নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ
  • পেনশন পেতে মায়ের মৃত্যু গোপন, তার সাজেই আইডি নবায়ন করতে গিয়ে ধরা খেল ছেলে
  • মাদারীপুরে গাছ ফেলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ আ. লীগের নেতা-কর্মীদের, ৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ
  • টাকা দিলেই বসনিয়ায় নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষদের ‘শিকার’ করতে পারতেন পর্যটকরা; ‘স্নাইপার সাফারি’র তদন্তে ইতালি
  • মাদারীপুর-১ আসনে কামাল মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করল বিএনপি

Most Read

1
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

যৌথবাহিনীর অভিযানে আলোচিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ তাহরিমা গ্রেপ্তার

2
ফাইল ছবি: সংগৃহীত
অর্থনীতি

আমানতকারীদের সোমবার থেকে টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

3
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

হাদি হত্যা: ভারতে বসে শ্যুটারদের পালানোর ব্যবস্থা করেন যুবলীগ নেতা বাপ্পী

4
ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় দাঁড়িয়ে দুই ভারতীয় সেনা। ছবি: এএফপি/ ভায়া গেটি
আন্তর্জাতিক

২০২৫: দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কঠিন এক বছর

5
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ

আগামীকাল স্মৃতিসৌধে যাচ্ছেন তারেক রহমান, ১০০০ পুলিশ মোতায়েন

6
ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার আলোচনা চলছে: গোলাম পরওয়ার

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab