Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
June 14, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JUNE 14, 2025
ট্রেন চালক: রেললাইনের ওপর চোখ রেখে যার জীবন কেটে যায়

ফিচার

সালেহ শফিক
27 August, 2023, 01:00 pm
Last modified: 27 August, 2023, 02:16 pm

Related News

  • চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রাবি শিক্ষার্থী আহত
  • আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে
  • ঈদযাত্রায় ট্রেনের ৪ জুনের টিকিট মিলছে আজ 
  • বগুড়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তির পড়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিও’র পেছনের কাহিনি
  • নেত্রকোনায় রেলসেতুর ওপর ১৩ বগি রেখেই স্টেশনে চলে এলো ইঞ্জিন

ট্রেন চালক: রেললাইনের ওপর চোখ রেখে যার জীবন কেটে যায়

লোকো মাস্টার অহিদুল। চাকরির বয়স ১৯ বছর। অহিদুলের মনে হয়, লোকো মাস্টার যেন ধ্যানী বক। যখন সবাই ঘুমায় তখনো সে জেগে থাকে। দৃষ্টি মেলে রাখে রেল লাইনের ওপর। ঝড়-বৃষ্টি, কুয়াশায় লোকো মাস্টারের আপ্লুত হওয়ার সুযোগ থাকে না কোনো, বরং সতর্ক হতে হয় আরো বেশি। এভাবেই যায় দিনের পর দিন, অহিদুলের আরো প্রায় ১৭ বছর কাটবে এভাবেই। কোনোরকম বিপত্তি না ঘটলে তার আগে বিশ্রাম নেবার সুযোগ মিলবে না।
সালেহ শফিক
27 August, 2023, 01:00 pm
Last modified: 27 August, 2023, 02:16 pm
তিন হাজার সিরিজের লোকোমোটিভ/ ছবি সৌজন্য- ফেসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

'এই মামা, ওই ড্রাইভার' বলে ডাকলে ট্রেন চালকের (লোকো মাস্টার) মান ক্ষুণ্ণ হয় বৈকি। কারণ বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করার পরই কেবল সহকারি লোকোমোটিভ মাস্টার পদে আবেদন করার সুযোগ পাওয়া যায়। আরো বড় কারণ, দুই বছর ধরে নিবিড় এক প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত চাকরি পাকা হয় না তাদের। এই দুই বছরের মধ্যে প্রথম এক বছরের নয় মাস দেওয়া হয় তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ। ইঞ্জিন কত রকমের হয়, কী কী কাজ করে, কিভাবে করে, ইঞ্জিনের ইতিহাসসহ আরো অনেক কিছু জানানো হয় তাত্ত্বিক ক্লাসগুলোয়। পরের তিন মাস রেলের আইন-কানুন পড়ানো হয়। রেলের আইন বড় শক্ত, না মানলে বিপদ। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায় বহুগুণে।

আইন জানার পর ১ বছর প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ। এই সবগুলোতে দক্ষতা দেখাতে পারলে তবেই চাকরি হয় পাকাপোক্ত। আবেদন করার পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। তারপর হয় শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা। এতে দৃষ্টিশক্তির প্রখরতার বিষয়টি আসে আগে।  
 
ডব্লিউটিইউতে প্রশিক্ষণ শুরু

অহিদুল ইসলাম '৯৫ সালে এসএসসি পাশ করেছেন প্রথম বিভাগে। এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট নিয়ে গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে পড়তে এলেন। এরমধ্যে পরিবার পড়লো নিদারুণ অর্থসংকটে। পড়ালেখা ছেড়ে অহিদুল একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ নিলেন। ২০০৩ সালে যখন সহকারি লোকোমাস্টার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো, অহিদুল তাতে আবেদন করলেন। পরীক্ষাগুলোয় ধাপে ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাকে চট্টগ্রামে ইস্টার্ন জোনের হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করতে বলা হলো। রিপোর্ট করার পর দিন থেকে প্রতিদিনই হাজিরা দিতে হয়। কাজ নেই, অফিস চত্বরেই ঘোরাঘুরি।

হাল আমলের ইঞ্জিন ক্যাব/ ছবি সৌজন্য- ফেসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একদিন এতগুলো লোকের জটলা দেখে নির্দেশ দিলেন, তাড়াতাড়ি এদের ঢাকা পাঠাও। প্রথম দফায় ৫৫ জনকে, পরের দফায় ১১ জনকে ঢাকায় পাঠানো হলো। একটি মেইল ট্রেনে ঢাকায় আসার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। পুবাইলের কাছে আড়িখোলা স্টেশনে এসে ট্রেন থেমে গেল। এক দুই করে কয়েক ঘণ্টা, কিন্তু ট্রেন নড়ে না। অহিদুল একটু ভীত হয়ে পড়েছিলেন, যদি ঠিক সময়ে রিপোর্ট করতে না পারেন তবে কর্তৃপক্ষ হয়তো রাগ করে বসবেন। আসলে আবেদন করার আগে রেল সম্পর্কে বেশি কিছুই জানতেন না, ২-৩ বারের বেশি রেলেও চড়েননি। তাই বুঝতে পারেননি ট্রেন দেরি করার দায় তার ওপর চাপবে না। সকাল সাড়ে আটটায় পৌঁছে যাওয়ার কথা ঢাকায়, সেই ট্রেন বিকাল সাড়ে চারটায় পৌঁছাল। হুড়াহুড়ি করে ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিটে (ডব্লিউটিইউ) গিয়ে রিপোর্ট করলেন। সেকশন ইনচার্জ তাদেরকে হাসিমুখেই স্বাগত জানালেন। মন থেকে বোঝা নামল অহিদুলের।  

পরের দিন থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হলো। অহিদুল বুঝলেন, লোকোমোটিভ হলো একটি মেশিন যা ইঞ্জিন, জেনারেটর, কম্প্রেসর, মোটর ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি হয়। ইঞ্জিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে জেনারেটরকে। সে বিদ্যুৎ দিয়ে মোটর চলে, ফলে ঘোরে চাকা আর কম্প্রেসর বাতাসকে চেপে ধরে চাপ বৃদ্ধি করে। জেনারেটরের লো ভোল্টেজ সার্কিট দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, ঘর্ষণ হ্রাস করা এবং আলো সরবরাহ করা হয়। আর হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্যবহৃত হয় ট্রেন চলাচলের জন্য।

দুই হাজার সিরিজের লোকোমোটিভ/ ছবি- সৌজন্য ফেসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

অহিদুল জানলেন, এখনকার ট্রেনের ইঞ্জিনগুলো হয় ডিজেল-ইলেকট্রিক। এগুলো ডুয়াল মোড (দুই পদ্ধতিতে কার্যকর) ইঞ্জিন। বৈদ্যুতিক সংযোগে যেমন আবার ডিজেল থেকে শক্তি উৎপাদন করেও চলতে পারে। প্রতিটি ইঞ্জিন ১৫০০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন। দুই স্ট্রোকের যেমন, তেমনি চার স্ট্রোকের ইঞ্জিনও আছে। সব মিলিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিন পরিচালন ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত হলেন অহিদুল ও তার সঙ্গী সহ-লোকো মাস্টাররা।
 
স্টেশন মাস্টার ও লোকো মাস্টার

ইতিহাস পর্বে অহিদুলদের জানানো হল, বাংলাদেশ রেলযুগে প্রবেশ করে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছিল প্রথম রেলপথ। সে হিসাবে পূর্ববঙ্গে রেল চলাচলের বয়স ১৬০ বছর অতিক্রম করেছে।

চাকরি জীবনের শেষগাড়ি রাজশাহী অভিমুখে তিতুমীর এক্সপ্রেস নিয়ে লোকোমাস্টার সামাদ সাহেব

রেল ব্যবস্থাপনাও একটি জটিল প্রক্রিয়া। স্টেশন মাস্টার ও তার সহকারির সঙ্গে ট্রেন চালকের যোগাযোগে সমন্বয়হীনতা তৈরি হলে দুর্ঘটনা, নিদেনপক্ষে পরিস্থিতি জটিল হওয়া অনিবার্য। মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য প্রতিটি স্টেশনের আপডেট জানা থাকতে হয় লোকো মাস্টারদের। সেসঙ্গে ট্রেনের গতি নির্ধারণ, এক লাইন থেকে অন্য লাইন বা ক্রসিং হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম-কানুন আছে সেগুলো জানাও জরুরী।

ট্রেনের রকমফেরও জানলেন অহিদুল। ইন্টারসিটি ট্রেনগুলোকে ধরা হয় ফার্স্ট লিংক ট্রেন। লোকাল ও কমিউটারকে ধরা হয় সেকেন্ড লিংক ট্রেন। এছাড়া আছে গুডস (মালবাহী) লিংক ট্রেন। বর্তমান সময়ে দেশসেরা ট্রেন ধরা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সুবর্ণ এক্সপ্রেসকে। ঢাকা-রাজশাহী রুটের বনলতা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সোনার বাংলাকেও ফার্স্ট ক্লাস ট্রেন ধরা হয়। প্রধান কারণ এগুলো বিরতিহীন। এগুলোতে যাত্রীসেবাও নিশ্চিত করা হয়।

লোকো মাস্টারকে থাকতে হয় সবার আগে

ইঞ্জিন ক্যাবে একজন সহকারি লোকো মাস্টার/ ছবি সৌজন্য- ফেসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

অহিদুল বলেছিলেন, 'আমাদের আগে লোকো মাস্টার পদে সরাসরি নিয়োগ ছিল না। ইঞ্জিন মেকানিক, পরিষ্কারকদের উন্নীত করে লোকো মাস্টার বানানো হতো। তারা ইঞ্জিনের ত্রুটি, মেরামত বা অন্য বিষয়ে সুপারভাইজারদের বোঝাতে সমর্থ হতেন না। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় তারা সংকুচিত হয়ে যেতেন। ফলে পর্যাপ্ত সম্মানও পেতেন না।'

অহিদুলের মনে আছে, শুরুর দিকে তিনি একজন লোকো মাস্টারের সহকারী হয়েছিলেন যিনি আসলে ছিলেন ইঞ্জিন ক্লিনার। চালক হিসাবে ভালোই ছিলেন কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতেন কোনো ভুল হয়ে যায় কি না। রেলের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, এমনকি স্টেনোগ্রাফারের চরিত্রও উপন্যাস বা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হতে দেখা যায়, কিন্তু লোকো মাস্টার সেখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। অথচ লোকো মাস্টার রেলের ফ্রন্ট লাইনার। তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পেছনে রাইফেলধারী ব্যক্তি উপস্থিত থাকতে পারে কিন্তু তার সামনে কেউ উপস্থিত থাকলে দুর্ঘটনা সুনিশ্চিত। বছর কয় আগে এক ইঞ্জিন ক্যাবের সম্মুখ জানালা ফুঁড়ে গাছের ডাল ঢুকে পেছনের দেয়ালে আঘাতে করে। লোকো মাস্টার ঝুঁকে না পড়লে সেটি তার শরীর ভেদ করে চলে যেতে পারতো।

১২ বছর পর ফার্স্ট গ্রেড

পাহাড়তলীর ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিটে কয়েকজন সহকারী লোকোমাস্টার/ ছবি সৌজন্য- ফেসবুক পেইজ লোকো

তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর অহিদুলরা এবার ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিতে থাকলেন। এতোদিন যে তাত্ত্বিক জ্ঞান আহরণ করেছিলেন এবার তার ব্যবহার করার সুযোগ এলো। এ কাজে পারদর্শিতা যতক্ষণ না আয়ত্ত্ব হয় ততক্ষণ পুরো দায়িত্ব অর্পণ করা হয় না। অহিদুল ভালোভাবেই প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করলেন। তাকে রিপোর্ট করতে বলা হলো ইস্টার্ন রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার চট্টগ্রামে। তিনি দ্বিতীয় গ্রেডের লোকো মাস্টার পদে নিয়োগ পেলেন।

ইস্টার্ন রেলওয়ের ৯টি লোকোশেড আছে। যেখানে ইঞ্জিনের ত্রুটি সারানো ও মেইন্টেন্যান্স করা হয় সেগুলো লোকোশেড। লাকসাম, আখাউড়া, কুলাউড়া, সিলেট, ময়নসিংহের কেওটখালী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোশেড। এগুলোকে ক্রু চেঞ্জিং স্টেশনও বলা হয়, অর্থাৎ এখান থেকে প্রয়োজনে চালক বা সহ-চালক পরিবর্তন করা যায়। অহিদুলরা লোকোশেডগুলোতে গিয়ে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকলেন এবং রেলের সংস্কৃতি বুঝতে থাকলেন।

কুয়াশাঘেরা সকালে রেল সেতুতে ঝুকিপূর্ণ পারাপার/ ছবি- সাদিক খান

সহকারি লোক মাস্টারের দায়িত্ব ট্রেন চালনা হলেও এক দফাতেই পুরো দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয় না। গ্রেড টু থেকে অহিদুলের প্রথম গ্রেডে উন্নীত হতে ৫ বছর লেগেছিল। এরও ২ বছর পর তিনি সাব লোকো মাস্টার পদে উন্নীত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় গ্রেডের লোকো মাস্টার হয়েছিলেন আরো ২ বছর পর। চাকরির ১২ বছরের মাথায় তিনি প্রথম গ্রেডের লোকো মাস্টার হয়েছিলেন। এখন তার চাকুরির বয়স সাড়ে ১৯ বছর।

অহিদুল বলছিলেন, 'লোকো মাস্টারের চাকরিটা প্রকৃতি বিরুদ্ধ বা সমাজ বিরুদ্ধ বলতে পারেন। সমাজের বাইরের এক প্রাণী ধরতে পারেন লোকো মাস্টারকে। রানিংয়ে (ট্রেন চলাচলরত অবস্থা) যখন থাকবেন তখন যদি পিতার মৃত্যু সংবাদও আসে, গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আপনি কান্না করারও সুযোগ পাবেন না। দেড়-দুই হাজার যাত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পথ চলছেন যখন, আপনার তখন কোনোভাবেই বিষন্ন বা বেখেয়াল হওয়ার সুযোগ নেই।'

ছবি- কবির হোসেন

'চাকরি পাওয়ার পরের প্রথম ঈদটা বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটাতে না পেরে কান্না করে ফেলেছিলাম। এখন অবশ্য আর কোনো কিছুই গায়ে লাগে না। জহির রায়হানের 'সময়ের প্রয়োজনে' গল্পের একটি বাক্য মনে পড়ে আমার মাঝেমধ্যে। সেটি মোটামুটি এমন, আগে লাশ দেখলে আঁতকে উঠতাম, এখন লাশের মধ্যেই জীবন কাটাচ্ছি। গেল ১৯ বছরের চাকুরি জীবনে কখনো স্বস্তি বোধ করেছি বলে মনে পড়ে না। রানিংয়ে প্রতিটা সময় কাটে উৎকণ্ঠায়, উদ্বেগে।'

১৮৫ জন আহত হয়েছিলেন

রেল একটি সমন্বিত চলাচল ব্যবস্থা। বাসের মতো, ট্রাকের মতো এখানে চালকের একক সিদ্ধান্তে চলার সুযোগ বেশি নেই। তার ওপর আছে ঢিল ছোঁড়ার মতো বাইরের আক্রমণ। এটা তো ঘটে দুষ্ট বালক বা লোকদের কারণে। কিন্তু যখন ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করা হয় তখন ব্যাপারটি হয়ে ওঠে মারাত্মক। ২০১৫ সালের লাগাতার হরতালে বিভিন্ন জায়গাতে ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছিল, অনেকক্ষেত্রেই তা আগে থেকে জানা সম্ভব ছিল না। ফলে ১৮৫ জন লোকো মাস্টার মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম ডিজেল শপ/ ছবি সৌজন্য- ফেইসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

এরপর আছে ট্রেন লাইনের ওপর দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তি, তিনি হয়তো ট্রেন এসে পড়ার আগেই নেমে যাবেন কিন্তু চালকের তো ত্রাহি অবস্থা। ট্রেন যে হুট করে থামানো যায় না তা সবার জানা। অনেকে আবার ট্রেন আসতে দেখলে টিকটক করা শুরু করেন। বিনা টিকিটের যাত্রীরাও কিন্তু ঝামেলা কম করে না। এরপর আছে লাইনের ওপর গাছ পড়ে থাকার ঘটনা। লাইনের দুই ধারে বনায়ন বিধানের বাইরে। কিন্তু শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া তো নিজেই বন। তার মধ্য দিয়ে রেললাইন চলে যাওয়ায় বন্যপ্রাণী যেমন, তেমনি রেল চালক আর যাত্রীরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। বনের পাহাড় শীর্ষ ১৫০ ফুট উঁচু। এটি পার হয়ে ট্রেন আপনা থেকেই চলতে থাকে, চালক চাইলেও তখন তা থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না।

অহিদুল জানিয়েছেন, লাইনের ওপর পড়ে থাকা লাশ মাড়িয়ে গেলেও চালককে জবাবদিহি করতে হয়। চলাচল পথের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের গতি বিভিন্ন রকম নির্ধারণ করা আছে। লাউয়াছড়া বনের ভিতর যেমন ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলার বিধান নেই। আবার আখাউড়া-সিলেট এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রুটের কিছু জায়গায় ট্র্যাক দুর্বল থাকার কারণে ৬০-৭০ কিলোমিটারের বেশি স্পিড তোলা যায় না। কতদূর থেকে ব্রেক টেনে ধরলে তা নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে থামবে সেটা নির্ভর করে লোকোমোটিভের বয়স ও ট্রেনের ওজনের ওপর। পুরনো লোকোর ব্রেক ধীরে কাজ করে আবার হালকা ট্রেনেও সতর্কতা বেশি লাগে।

ছবি সৌজন্য- ফেসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

একবার অহিদুল নারায়ণগঞ্জ রুটে ডেমু ট্রেন চালাচ্ছিলেন, ফতুল্লার কাছে গিয়ে দেখেন ট্র্যাকের ওপর দাঁড়িয়ে এক ছেলে পাশের ট্র্যাকের লোকদের দূরে সরে যেতে বলছেন অথচ ট্রেনটা তারই পেছনে। অহিদুল ছেলেটার নির্বুদ্ধিতা আঁচ করতে পেরে আগে থেকেই ব্রেক কষেছিলেন। একেবারে শেষে গিয়ে শেষ রক্ষা হলো। ছেলেটার বলতে গেলে গায়ের ওপরই থেমে গিয়েছিল ডেমু।

মন তো বটেই, শরীরও মানিয়ে নেয়

আরেকবারের ঘটনাটি ছিল রাতেরবেলার। মৃত্যুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে মানুষটি শুয়ে ছিল রেল লাইনের ওপর। আন্দাজ ৬০০ মিটার দূর থেকে অহিদুল টের পেয়েছিলেন কিছু একটা পড়ে আছে লাইনের ওপর। আরো একশ মিটার এগিয়ে তিনি বুঝলেন, এটা মানুষ। সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেক চেপে ধরলেন। ৫০ মিটার আগে থাকতে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ইঞ্জিন ক্যাব থেকে নেমে অহিদুল কাছে গিয়ে দেখলেন মানুষটি নারী। আরো কয়েকজনের সহায়তায় তাকে তুলে ধরে দাঁড় করালেন। অসহায় মানুষটি চোখ মেলে চাইতেও পারছিলেন না। কেউ কেউ বকাঝকাও দিচ্ছিল তবে অহিদুলের কেবলই মনে হচ্ছিল, একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে তবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়!

জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস/ ছবি- হাসান তানভীর অয়ন

ঈদের সময় নিজে বাড়ি যেতে পারেন না অহিদুল তবে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তৃপ্তি বোধ করেন। যাত্রীরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে তার ভালো লাগে তবে বেশিরভাগ যাত্রীই অবুঝ। কেন দেরি হচ্ছে তা বুঝতে না চেয়ে গালিগালাজ শুরু করে দেন। তাইতো অহিদুল বললেন, 'খুব ধৈর্য রাখতে হয় লোকো মাস্টারদের। এমনকি শরীরকেও মানিয়ে নিতে হয় সময়ের সঙ্গে। ইঞ্জিন ক্যাবে যেমন টয়লেট থাকে না, স্টেশনে যাওয়ার আগে তার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।'

কুমিল্লা জেলার একটি পরিপাটি স্টেশন লালমাই/ ছবি সৌজন্য- ফেসবুক পেইজ লোকো মাস্টার

অহিদুলের মনে হয়, লোকো মাস্টার যেন ধ্যানী বক। যখন সবাই ঘুমায় তখনো সে জেগে থাকে। দৃষ্টি মেলে রাখে রেল লাইনের ওপর। ঝড়-বৃষ্টি, কুয়াশায় লোকো মাস্টারের আপ্লুত হওয়ার সুযোগ থাকে না কোনো, বরং সতর্ক হতে হয় আরো বেশি। এভাবেই যায় দিনের পর দিন, অহিদুলের আরো প্রায় ১৭ বছর কাটবে এভাবেই। কোনোরকম বিপত্তি না ঘটলে তার আগে বিশ্রাম নেবার সুযোগ মিলবে না।

[অনিবার্য কারণে অহিদুলের আসল নাম প্রকাশ করা গেল না]

 

Related Topics

টপ নিউজ

লোকো মাস্টার / ট্রেন চালক / ট্রেনের গতি / ট্রেন / রেল অব্যবস্থাপনা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম : জ্বালানি উপদেষ্টা
  • এবার এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে 'বোমা হামলার' হুমকি, থাইল্যান্ডে জরুরি অবতরণ
  • ‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা
  • ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে ১০০-র বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে ইরান: আইডিএফ
  • বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প
  • ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, ৪ জনই বরগুনার

Related News

  • চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রাবি শিক্ষার্থী আহত
  • আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে
  • ঈদযাত্রায় ট্রেনের ৪ জুনের টিকিট মিলছে আজ 
  • বগুড়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তির পড়ে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিও’র পেছনের কাহিনি
  • নেত্রকোনায় রেলসেতুর ওপর ১৩ বগি রেখেই স্টেশনে চলে এলো ইঞ্জিন

Most Read

1
বাংলাদেশ

সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম : জ্বালানি উপদেষ্টা

2
আন্তর্জাতিক

এবার এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে 'বোমা হামলার' হুমকি, থাইল্যান্ডে জরুরি অবতরণ

3
বাংলাদেশ

‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা

4
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে ১০০-র বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে ইরান: আইডিএফ

5
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প

6
বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, ৪ জনই বরগুনার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net