Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

 ‘ডাকপিয়নদের এখন কাজ কী?’

নতুন প্রজন্মের অনেকেই ডাকপিয়ন পেশাটির সঙ্গে পরিচিত নয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে বেড়ে ওঠায়, চিঠিপত্রের আদান-প্রদানে অনভ্যস্ততায় ডাকপিয়নের নামও শোনেননি তারা। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ডাকপিয়নের ডাক শুনে তাই কেউ কেউ বলে ওঠেন, ‘মাফ করেন’। কাঁপা গলায় আবু সাইদ বলেন, “অনেকেই মনে করে আমরা ভিক্ষুক। তখন আমরা তাদের বুঝায়ে বলি যে চিঠি নিয়া আসছি। বয়স্ক মানুষজনও কখনো কখনো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন ‘দেশে ডাকবিভাগ আছে এখনো!’
 ‘ডাকপিয়নদের এখন কাজ কী?’

ফিচার

শেহেরীন আমিন সুপ্তি
19 May, 2023, 12:45 pm
Last modified: 19 May, 2023, 01:21 pm

Related News

  • পেঙ্গুইনের রাজ্যে পাঁচ মাস; হাড় কাঁপানো অ্যান্টার্কটিকায় ‘পোস্টমাস্টার’-এর চাকরি!
  • চিঠির বাক্সগুলো খালি পড়ে আছে, চিঠি থাকে না
  • রানার থেকে ডিজিটাল স্পিড: বাংলাদেশের ডাক ব্যবস্থার সেকাল-একাল
  • পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে পোস্টমাস্টার উইলিয়াম ফকনার
  • কেউ চিঠি লিখে না

 ‘ডাকপিয়নদের এখন কাজ কী?’

নতুন প্রজন্মের অনেকেই ডাকপিয়ন পেশাটির সঙ্গে পরিচিত নয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে বেড়ে ওঠায়, চিঠিপত্রের আদান-প্রদানে অনভ্যস্ততায় ডাকপিয়নের নামও শোনেননি তারা। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ডাকপিয়নের ডাক শুনে তাই কেউ কেউ বলে ওঠেন, ‘মাফ করেন’। কাঁপা গলায় আবু সাইদ বলেন, “অনেকেই মনে করে আমরা ভিক্ষুক। তখন আমরা তাদের বুঝায়ে বলি যে চিঠি নিয়া আসছি। বয়স্ক মানুষজনও কখনো কখনো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন ‘দেশে ডাকবিভাগ আছে এখনো!’
শেহেরীন আমিন সুপ্তি
19 May, 2023, 12:45 pm
Last modified: 19 May, 2023, 01:21 pm
খাকি পোশাক গায়ে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কাজে। ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি/ টিবিএস

"এখন কি আর চিঠিপত্র আসে মানুষের কাছে? ডাকপিয়নদের আর কাজ কী! আমাদের সময় ছিল চিঠির স্বর্ণযুগ। কতদিন চিঠির আশায় বসে থেকেছি ডাকপিয়নের পথ চেয়ে! কোনো মানিঅর্ডার আসার কথা থাকলে তো সময় ফুরাতেই চাইতো না," ডাকপিয়ন প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব রুহুল আমিন।

ডাকবিভাগের কথা উঠলেই স্মৃতির ঝুলি খুলে বসেন দেশের বয়স্ক নাগরিকেরা। অন্যদিকে এই প্রজন্মের কিশোর-তরুণদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত একসময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের এই মাধ্যম। স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের কাছে যেন এক বিস্ময়ের নাম ডাকপিয়ন। ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য চিঠির প্রয়োজন ফুরিয়েছে অনেক আগেই। মুহূর্তেই টেক্সট, অডিও আর ভিডিও কলের যুগে কাগজে-কলমে চিঠি লিখে অপেক্ষা করার ফুরসৎ আর কয়জনের আছে! চিঠির বাহক হিসেবে যারা দোরে দোরে পৌঁছে দিতেন প্রিয়জনের বার্তা সেই ডাকপিয়নদের জীবন এমন কেমন কাটছে? কী কাজ করছেন তারা? দিনবদলের প্রভাবে ডাকপিয়নদের খবরাখবর জানতে খোঁজ চালিয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

চাহিদার তুলনায় লোকবল কম

ডাক অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট পোস্ট অফিসের সংখ্যা ৯৯৭৪টি। যার মধ্যে ৮৫৪৩টি পোস্ট অফিসই এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল বা অবিভাগীয়। সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত ডাকপিয়নের জন্য ৩৩৫৫টি পদ থাকলেও বর্তমানে ডাকপিয়ন পদে কর্মরত আছেন ২১৪৩ জন। এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল ডেলিভারি এজেন্ট (ইডিডিএ) হিসেবে আছেন আরো ৭২৫৩ জন। এছাড়া আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সারাদেশে সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডাকপিয়নের সংখ্যা ২৮৯ জন। সবমিলিয়ে দেশজুড়ে ৯৬৮৫ জনের মতো ডাকপিয়ন কর্মরত থাকলেও বর্তমান চাহিদার তুলনায় তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যে কারণে কর্মরত ডাকপিয়নদের পালন করতে হচ্ছে অতিরিক্ত দায়িত্ব।

গুলিস্তানে অবস্থিত ঢাকা জিপিও দেশের ব্যস্ততম পোস্ট অফিসগুলোর মধ্যে অন্যতম। ডাকঘরটিতে ১২৫টি ডাকপিয়নের পদ থাকলেও বর্তমানে মোট কর্মরত আছেন ৫১ জন। এখানকার তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মোঃ সোলায়মান খান জানান, পোস্ট অফিস হিসেবে ঢাকা জিপিও-র বিলি এলাকা অনেক বিস্তৃত। বর্তমানে ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য চিঠির আদান-প্রদান তেমন না হলেও দাপ্তরিক চিঠির সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই ফুরসৎ নেই ডাকপিয়নদের।

ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল কাম সিনিয়র পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ বলেন, "১৯৮৪-র পর পোস্টম্যানের কোনো পদ বাড়েনি। আগে এটা একটা ইমার্জেন্সি সার্ভিস ছিল। তাই পোস্টম্যানের পদগুলো খালি থাকতো না কখনো। কেউ একদিনের জন্য ছুটি নিলেও পোস্টম্যান ক্যান্ডিডেট লিস্ট থেকে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করানো হত। কিন্তু এখনকার নিয়োগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন। সরকারি সব নিয়োগ কেন্দ্রীয়ভাবে হয়। তাই নতুন পোস্টম্যান নিয়োগে জটিলতার কারণে অনেক পদই খালি থেকে যাচ্ছে।"

খাকি পোশাক গায়ে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কাজে

বেড়েছে দায়িত্ব, বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা

ঢাকা জিপিও-তে কর্মরত সবচেয়ে প্রবীণ ডাকপিয়নদের একজন মোঃ আবু সাইদ। ১৯৯১ সাল থেকে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে ডাকপিয়ন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার। সরকারি কর্মচারী হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। প্রায় ৩২ বছর ধরে একই পদে থাকা সাইদের সুযোগ হয়েছিল কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির। কিন্তু চিঠি বিলির কাজকে ভালোবেসে একই পদে থেকে গেছেন নিজ ইচ্ছাতেই।

ইস্কাটন, দিলুরোড, টঙ্গী ডাইভারশন রোড এলাকায় চিঠি বিলির কাজ করেন তিনি। চিঠির সোনালী অতীতের কথা মনে করে সাইদ বলেন, "আগে তো আমাদের পোস্টম্যানদের অনেক চাহিদা ছিল। কখন চিঠি আসবে অপেক্ষায় থাকতো মানুষ। আত্মীয়-স্বজনদের মত খাতির যত্ন করতো আমাদের। এখন সব উলটপালট হয়ে গেছে। মোবাইল টিপ দিলেই সব হয়ে যায়। তবু কেউ কেউ শখ করে চিঠি লেখে এখনো। এছাড়া সবই অফিস-আদালতের, বিলের চিঠি। এলাকায় অনেকদিন কাজ করায় যারা আমাদের চেনেন তারা এখনো অনেক সম্মান করেন।"

বর্তমানে লোক স্বল্পতার কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ তার। আবু সাইদের ভাষ্যে, "চিঠির সংখ্যা কম হলেও এলাকাটা তো ছোট হয় নাই। চারজনের কাজ একজনে করতে হয়। একটা চিঠি থাকলেও যেতে হয় অনেক দূর হেঁটে।"

কয়েক দশকে দেশের জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বাড়িঘরের সংখ্যাও। একতলা বাড়ির জায়গায় গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার বাড়ায় একই বাড়ির মানুষের ঠিকানাও হয়েছে কয়েক ভাগ। ফলে চিঠির গন্তব্যও হয়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই গন্তব্যগুলো পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় ডাকপিয়নদের।

মিরপুর পোস্ট অফিসে দেখা হয় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ডাকপিয়নের কাজ করে আসা মাহবুবুর আলম মোড়লের সঙ্গে। তার ভাষ্যে, "পোস্টম্যানদের অফিসে ঢোকার টাইম আছে, কিন্তু বাসায় ফেরার কোনো নির্দিষ্ট টাইম নাই। প্রতিদিন সকাল আটটায় অফিসে আসলেও একেকদিন সন্ধ্যা ছয়টা-সাতটা বা রাত নয়টা-দশটা বেজে গেলেও যাওয়ার সুযোগ মেলে না। কাজ আগেও যেমন ছিল এখনো অনেক বেশি। মানুষভাবে চিঠিপত্র কমে গেছে, কিন্তু আপনিই দেখেন আশেপাশে তাকায়ে সব টেবিলে কত শত-শত চিঠি জমা হয়ে আছে। এগুলো সবই সময়মতো ডেলিভারি করতে হয় আমাদের।"

ছবি: শেহেরীন আমিন সুপ্তি/ টিবিএস

ডাকপিয়ন হিসেবে খাকি পোশাক পরে সাইকেলে চাপা যে মানুষদের ছবি আমাদের কল্পনার চোখে ভাসে, ঢাকার ডাকঘরগুলোতে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। ইউনিফর্মের বদলে সাধারণ জামা-কাপড় পরেই কাজে নামেন তারা। কারণ হিসেবে ঢাকা জিপিও-র আরেক প্রবীণ ডাকপিয়ন শাহ আলম জানান, খাকি রঙের ইউনিফর্মের কাপড়টিতে গরম বেশি, সারাদিন রোদে হেঁটে হেঁটে চিঠি বিলি করতে গিয়ে বারবার ঘেমে ভিজে যান এতে। তাই কষ্ট কমাতে বেছে নিয়েছেন বিকল্প।

একসময় ডাকবিভাগ থেকে ডাকপিয়নদের সাইকেল দেওয়া হলেও এখন আর সেই ব্যবস্থা নেই। মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলের ডাকপিয়নেরা নিজস্ব সাইকেলে চেপে কাজে বেরোলেও ঢাকায় সাইকেলের চল নেই খুব একটা। চিঠি বিলির কাজে প্রায়ই বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং-এ ঢুকতে হয় তাদের। বাইরে সাইকেল রেখে গেলে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে কেউ থাকে না। ফলে বাস, রিকশা বা পায়ে হেঁটেই দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিতে হয় শহুরে ডাকপিয়নদের। আবু সাইদ জানান, যাতায়াত খরচ হিসেবে আগে অফিস থেকে হাজার-বারোশো টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন তা কমে হয়েছে তিন-চারশো টাকার মতো। তাই যাতায়াত খরচের বড় অংশ যায় নিজেদের পকেট থেকেই।

ডাকপিয়ন হিসেবে কাজ শুরুর করার সময়ের স্মৃতিচারণ করে আবু সাইদ বলেন, "মাসে সর্বোচ্চ ২০-২৫ হাজার টাকা বখশিস পাওয়ার কথাও মনে আছে আমার। প্রিয় মানুষের চিঠি বা মানিঅর্ডার নিয়ে গেলে খালি হাতে ফেরাত না কেউ। কিন্তু এখন তেমন বখশিসও আর পাওয়া যায় না।"

পার্সেল হিসেবে আসে অনেক পরীক্ষার খাতা

"অনেকেই মনে করেন আমরা ভিক্ষুক"

নতুন প্রজন্মের অনেকেই ডাকপিয়ন পেশাটির সঙ্গে পরিচিত নয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে বেড়ে ওঠায়, চিঠিপত্রের আদান-প্রদানে অনভ্যস্ততায় ডাকপিয়নের নামও শোনেননি তারা। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ডাকপিয়নের ডাক শুনে তাই কেউ কেউ বলে ওঠেন, 'মাফ করেন'। কাঁপা গলায় আবু সাইদ বলেন, "অনেকেই মনে করে আমরা ভিক্ষুক। তখন আমরা তাদের বুঝায়ে বলি যে চিঠি নিয়া আসছি। দরজা খুলে এরপর দুঃখ প্রকাশ করেন কেউ কেউ।

"বয়স্ক মানুষজনও কখনো কখনো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন 'দেশে ডাকবিভাগ আছে এখনো!' তাদের উত্তরে বলি যে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের মানচিত্র যতদিন থাকবে, দেশের ডাকবিভাগও ততদিনই থাকবে।" ডাকবিভাগের সঙ্গে নতুনদের পরিচয় করিয়ে দিতে স্কুল পর্যায় থেকে ডাকবিভাগ সম্পর্কে তথ্য প্রদান, শিক্ষার্থীদের ডাকঘর পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান এই প্রবীণ ডাকপিয়ন।

প্রসঙ্গত জানা যায়, রাজস্বখাতের অন্তর্ভুক্ত ডাকপিয়ন হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এসএসসি। ১৭তম গ্রেডের এই পদে বেতনস্কেল বর্তমানে ৯০০০-২১৮০০ টাকা। তবে গ্রামাঞ্চলে কর্মরত ইডিডিএ কর্মচারীদের বেতন সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা।

রেজিস্ট্রি করা চিঠির ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হয় অতিরিক্ত সতর্কতা

খাকি পোশাকের সাইকেলওয়ালা ডাকপিয়নের দেখা মেলে যেখানে

কিশোরগঞ্জ জেলার প্রধান ডাকঘরে কর্মরত ১০ জন ডাকপিয়নের ছয়জন বর্তমানে বিলি কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাদের প্রত্যেকের পরনেই খাকি রঙের ইউনিফর্ম, যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন নিজস্ব সাইকেল। একই জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা ডাকঘরেও দেখা যায় একই দৃশ্য। ডাকঘরটিতে পুরো উপজেলায় চিঠি বিলির কাজে নিয়োজিত আছেন মাত্র একজন ডাকপিয়ন।

কিশোরগঞ্জে কর্মরত ডাকপিয়ন শোয়ায়েব আহমেদ বলেন, "সাইকেল দিয়ে যাতায়াত করলেও এখন কষ্ট অনেক বেশি হয়। রেগুলারই অনেক তলা বেয়ে উপরে গিয়ে চিঠি-পার্সেল দিয়ে আসতে হয়। ডাকবিভাগের লোক হিসেবে আগের মতো সম্মানের চোখেও দেখে না মানুষ। চিঠির সংখ্যা কিন্তু ঠিকই আছে। তবে ক্রাইমের চিঠিই বেশি। একটা খারাপ খবর নিয়ে গেলে সাধারণভাবেই মানুষের মন মেজাজ খারাপ থাকে। তাই চিঠির প্রাপকদের সাথে আগের মতো সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে না আর।"

সেখানে কর্মরত আরেক ডাকপিয়ন মো. শাহরোয়ার উদ্দিন স্মৃতিচারণ করছিলেন নব্বইয়ের দশকের। তার ভাষ্যে, "আগে চিঠি বিলি করার সময় বিদেশে আত্মীয়স্বজন থাকা বাড়িগুলোতে আমাদের কদর ছিল সবচাইতে বেশি। বিদেশের একটা চিঠি কি মানি অর্ডার নিয়ে গেলে বাড়ির বাসিন্দারা খুশি হইতো খুব। আমাদের বাড়িতে বসায়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করতেন। এমনকি নিজেদের চাষের ফলমূলও তুলে রাখতেন আমাদের জন্য। এখন তো আর সেই দিন নাই। বিদেশের টাকাও আসে মোবাইলের মধ্যেই।"

'পিরীতের চিঠি কম, ডিভোর্সের চিঠি বেশি'

এলাকা ভিত্তিক আলাদা টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয় চিঠিগুলো

একসময় প্রেম, ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের জন্য প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে সবই। প্রেমপত্রের আদান-প্রদান একেবারে থেমে না গেলেও তা হাতে-হাতে বা ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠানোই সুবিধাজনক মনে করে বর্তমান প্রজন্ম। ডাকপিয়নদের হাত বেয়ে প্রেমের বার্তা পৌঁছায় তাই কদাচিৎই। করিমগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার ইসমাইল ফকির সেই সূত্রেই বলেন, "এখন পিরীতের চিঠি কম, ডিভোর্সের চিঠি বেশি। তালাক দেওয়ার কাজেই মানুষ ডাকবিভাগের দ্বারস্থ হয়।"

আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ডাক ভবন

তার কথার প্রতিফলন দেখা যায় অন্যান্য পোস্ট অফিসগুলোতে খোঁজ নিয়েও। ঢাকা জিপিও, মিরপুর পোস্ট অফিস, কিশোরগঞ্জ প্রধান ডাকঘর ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আদান-প্রদান হওয়া চিঠিগুলোর বেশিরভাগই মামলা-মোকদ্দমা, তালাক, জমি-জমা সংক্রান্ত চিঠি হয়ে থাকে। এছাড়াও টেলিফোন বিল, চাকরির আবেদন, ইন্টারভিউ কার্ড, নিয়োগ পত্র, সাংবাদপত্রসহ নানান দপ্তরের চিঠি ও দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পার্সেল বিলি হয় ডাকপিয়নদের মাধ্যমে।

আবু সাইদের মতে, প্রাপকেরা সবচেয়ে খুশি হয় চাকরির নিয়োগপত্র বা ইন্টারভিউ কার্ড পেলে। অন্যদিকে মাহবুবুর আলম জানান, তালাকের চিঠি বা কোর্ট থেকে আসা যেকোনো চিঠিতে শংকিত হয় প্রাপকেরা। কেউ কেউ পরিচয় গোপন করে নিজের চিঠি নিতেও অস্বীকার জানান তখন।

পোস্ট অফিসে চিঠি ইস্যু করতে এসেছেন তারা

'সামান্য একটা' কাগজ হিসেবে পৌঁছে দিলেই হয় না

ঢাকা জিপিও-র সবচেয়ে তরুণ ডাকপিয়ন মো. মাসুদ রানা। চার বছর আগে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ডাকপিয়নের কাজ শুরু করেন তিনি। এই কাজে আসার আগ পর্যন্ত তার ধারণাও ছিল না 'সামান্য একটা' কাগজের চিঠি ঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে। বর্তমানে সচিবালয় এলাকায় চিঠি বিলি করেন তিনি।

মাসুদের ভাষ্যে, "এই কাগজের চিঠিটা কারো কারো কাছে দলিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ। একটা চিঠির কারণে কতশত কাজ আটকে থাকে। কারো কারো জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িত থাকে এটাতে। তাই অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয় আমাদের। মূলত বিভিন্ন অফিসিয়াল চিঠি, দাওয়াত কার্ড ইত্যাদি বেশি আসে আমার কাছে। একজনকে ফোনকলে মুখের কথায় দাওয়াতের চাইতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠানো কার্ডে দাওয়াত দেওয়ার গুরুত্বও কিন্তু অনেক বেশি।"

প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর করা হচ্ছে ডাকবিভাগকে। যার প্রভাব পড়েছে ডাকপিয়নদের কাজেও। বর্তমানে রেজিস্ট্রি করা চিঠি-পার্সেল বিতরণ করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক পিওএস মেশিনের মাধ্যমে। ডিভাইসটির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা চিঠি বা পার্সেল কোথায় আছে তা সহজেই শনাক্ত করতে পারেন প্রেরক। ডাকপিয়নের কাছ থেকে চিঠি হস্তান্তরের কাজ শেষ হয়ে গেলে তা এন্ট্রি করা হয় ডিভাইসে। ফলে চিঠিপত্র বা পার্সেল হারানোর সম্ভাবনা কমে গেছে অনেকাংশেই। নতুন এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করাতে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে ডাকপিয়নদের।

ডাকঘরের শেলফে জমে হাজার হাজার চিঠির স্তূপ

কাজের বিস্তৃতি বাড়ার আশায়

সিনিয়র পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ মাসুদ পারভজের মতে, বর্তমানে ডাকপিয়নদের কাজের চাহিদা বাড়ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। তার ভাষ্যে, "চিঠিপত্রের বাইরেও অনলাইন ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে পোস্টম্যানদের। অনলাইনের পার্সেল ডেলিভারির জন্য ডাকবিভাগ হতে পারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য একটা মাধ্যম। আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি। গত কয়েক বছরে সারাবিশ্বে অনলাইন ব্যবসার যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে সব জায়গাতেই পোস্টম্যানদের নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। যত প্রযুক্তি আগাবে পোস্টম্যানের চাহিদা তত বাড়বে। কারণ আপনি সবকিছুই প্রযুক্তির মাধ্যমে করতে পারবেন, কিন্তু দিনশেষে কাউকে না কাউকে তো সেটা বহন করে নিয়ে আসতে হবে আপনার কাছে। সেই বহন করার কাজে যুগ-যুগান্তরের মতো ভবিষ্যতেও কাজে লাগবে পোস্টম্যানদের।"

Related Topics

টপ নিউজ

ডাকপিয়ন / পোস্টমাস্টার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পর ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল
  • ‘গত আট মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে’: মির্জা আব্বাস
  • ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
  • জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়, কঠিন শর্তে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার
  • চাঁদাবাজির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার, ‘পালানোর চেষ্টাকালে’ বিমানবন্দরে আটক

Related News

  • পেঙ্গুইনের রাজ্যে পাঁচ মাস; হাড় কাঁপানো অ্যান্টার্কটিকায় ‘পোস্টমাস্টার’-এর চাকরি!
  • চিঠির বাক্সগুলো খালি পড়ে আছে, চিঠি থাকে না
  • রানার থেকে ডিজিটাল স্পিড: বাংলাদেশের ডাক ব্যবস্থার সেকাল-একাল
  • পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে পোস্টমাস্টার উইলিয়াম ফকনার
  • কেউ চিঠি লিখে না

Most Read

1
অর্থনীতি

বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পর ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল

2
বাংলাদেশ

‘গত আট মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে’: মির্জা আব্বাস

3
বাংলাদেশ

ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা

4
বাংলাদেশ

ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

5
অর্থনীতি

জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়, কঠিন শর্তে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার

6
বাংলাদেশ

চাঁদাবাজির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার, ‘পালানোর চেষ্টাকালে’ বিমানবন্দরে আটক

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab