Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

শ্যামবাজারের পানের নিলাম: বেচাল, গোছাল, ছিটানিদের হাঁকডাকে সরগরম শনিবার

বরিশালের ঝাল পানের ৮০টিতে ১ বিড়া হয়, এই পান প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়, বাঙলা পান নামে এর পরিচিতি। বাংলা পান পাতলা ও গোলাকার হয়। শীতকালে বেশি মেলে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ, মানে নাটোর, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা ইত্যাদি জায়গার পান। এই পান হয় ৬৪টিতে এক বিড়া। রাজশাহীর পান মহেশখালীর মতো মিষ্টি নয়, তবে বরিশালের মতো ঝালও নয়। এর চাহিদা তাই কম নয়। মিষ্টি পানের পাতা ছোট, মোটা, নরম ও লম্বাটে হয়। 
শ্যামবাজারের পানের নিলাম: বেচাল, গোছাল, ছিটানিদের হাঁকডাকে সরগরম শনিবার

ফিচার

সালেহ শফিক
01 February, 2023, 09:55 pm
Last modified: 01 February, 2023, 09:52 pm

Related News

  • পান–জর্দা: জেনেশুনে বিষ করছেন পান?
  • মহেশখালীর পান কেন বিখ্যাত!
  • ফায়ারপান খান সাহস বাড়ান!
  • ইউরোপের বাজারে পুনরায় পান রপ্তানি শুরু 
  • ৬ হাজার জুম থেকে পান বিক্রিতে আয় কমেছে অর্ধেক, আর্থিক সংকটে খাসি সম্প্রদায়

শ্যামবাজারের পানের নিলাম: বেচাল, গোছাল, ছিটানিদের হাঁকডাকে সরগরম শনিবার

বরিশালের ঝাল পানের ৮০টিতে ১ বিড়া হয়, এই পান প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়, বাঙলা পান নামে এর পরিচিতি। বাংলা পান পাতলা ও গোলাকার হয়। শীতকালে বেশি মেলে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ, মানে নাটোর, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা ইত্যাদি জায়গার পান। এই পান হয় ৬৪টিতে এক বিড়া। রাজশাহীর পান মহেশখালীর মতো মিষ্টি নয়, তবে বরিশালের মতো ঝালও নয়। এর চাহিদা তাই কম নয়। মিষ্টি পানের পাতা ছোট, মোটা, নরম ও লম্বাটে হয়। 
সালেহ শফিক
01 February, 2023, 09:55 pm
Last modified: 01 February, 2023, 09:52 pm

শফিক গণি 'মা পান ভাণ্ডারে'র বেচাল। শ্যামবাজারের ফরাশগঞ্জ রোডে পানের আড়ত আছে সত্তরের বেশি। তার মধ্যে ত্রিশটি আছে তিনটি বড় শেডের ভেতরে। মানে গড়ে ১০টি আড়ত একটি শেড শেয়ার করে। এগুলোকে বলা যায় গুচ্ছ আড়ত। মা পান ভাণ্ডারও তেমন একটি শেডের ভেতর। এর আয়তন প্রস্থে ১০ আর দৈর্ঘ্যে হবে ২০ ফুটের মতো। প্রতিদিন ১,৬০০ টাকা ভাড়া গোনে। 

মা পান ভান্ডারের ৭ কর্মীর একজন শফিক গণি। ওই ৭ জনের ৩ জন লেবার, একজন সরকার, একজন পানি ছিটানি, একজন গোছাল আর তিনি নিজে বেচাল। লেবাররা পানের চাঙারি বা ডুলি ওঠানো-নামানোর কাজ করে। সরকার হিসাব-পত্তর রাখেন আর টাকা গোনেন। বেচাল হলেন পানের নিলামকারী। পানের বিড়া গুছিয়ে দেওয়ার কাজ করেন গোছাল।

পানি ছিটানি সাধারণত নারী কর্মী হয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে পানি ছিটিয়ে পানকে রসালো বা সতেজ রাখার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া তার বাড়তি দায়িত্ব বেপারি ও পাইকারদের চা এনে দেওয়া। বেতন হিসাবে পানি ছিটানি ৩ হাজার টাকা পান। প্রধান গোছালের সহকারী হিসাবে ছোট বেপারিদের বিড়া গুছিয়ে দেওয়ার কাজও করেন। এর বকশিস বাবদ পান ৪-৬ বিড়া পান, যার বাজার মূল্য ২০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়। 

বরিশালের ঝাল পানের ৮০টিতে ১ বিড়া হয়, এই পান প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়, বাঙলা পান নামে এর পরিচিতি। বাংলা পান পাতলা ও গোলাকার হয়। শীতকালে বেশি মেলে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ, মানে নাটোর, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা ইত্যাদি জায়গার পান। এই পান হয় ৬৪টিতে এক বিড়া। রাজশাহীর পান মহেশখালীর মতো মিষ্টি নয়, তবে বরিশালের মতো ঝালও নয়। এর চাহিদা তাই কম নয়। মিষ্টি পানের পাতা ছোট, মোটা, নরম ও লম্বাটে হয়। 

পৌষের বাকি বৈশাখে

শফিক গণির বয়স চল্লিশের ধারে-কাছে। বাবার মারফত তিনি পানের কাজে ঢুকেছেন। তার বাবা গোছাল ছিলেন। বলছিলেন, 'লেখাপড়া বেশি কিছু করি নাই, তাই এ কাজে ঢুকেছি। এখানে সারাদিনই চিল্লাচিল্লি, গালাগালি শুনবেন। চিটিং-ফিটিংও আছে। বেতন আমরা কেউ ১০, কেউ ১৫ হাজার টাকা পাই। আড়তদার, মানে মালিক পায় আড়তদারি। ১০০ টাকায় সাড়ে ১০ টাকা। এর মধ্যে মোকাম থেকে আমাদের ঘরে যে বেপারি মাল পাঠায় তাকে দিতে হয় সাড়ে ৩ টাকা। আবার যে কেনে তার জন্যও কমিশন আছে।

ছবি: রাজীব ধর

'আড়তদার আসলে শয়ে ৪-৫ টাকার বেশি পান না। আজকে শনিবারে কোনো ঘরে ৫ লাখ টাকা, কোনো ঘরে ১৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। আপনি হিসাব করে দেখেন, ৪ টাকা আড়তদারি ধরলেও ১০ লক্ষ টাকায় ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। যদি সবটা নগদ বিক্রি হতো, তবে কিন্তু ব্যবসাটা খারাপ হতো না। কিন্তু বাকিই যায় অর্ধেক। আর জানেনই তো, বাকির নাম ফাঁকি। 

'৫ লাখ টাকা বাকি পড়লে ৫০ হাজার টাকা আপনাআপনি গায়েব হয়ে যায়। ধরেন, এই পৌষ মাসের বাকি উসুল হয় যদি বৈশাখ মাসে, ততদিনে জিনিসপত্রের দাম কয় দফা বাড়ে তার হিসাব করেন। এরপর কিছু আছে হাত-পা ধরাধরি (মাফ করে দ্যান, মহাজন সাব)। আর প্রতি বছর কিছু বেপারি ব্যবসা ছেড়ে পালায়, এই টাকা আর উসুল করা সম্ভব হয় না। এইসব নিয়ে চলে যাচ্ছে ভাই।'

শনি, সোম আর বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারে পানের বাজার বার। শুক্রবারে পান তেমন আসেই না, আর অন্য তিনদিন কম আসে। শনিবারের বাজার ধরতে শুক্রবার গভীর রাত থেকেই ট্রাক ভর্তি করে পান আসতে থাকে। ছোট ট্রাকে ত্রিশটি ডুলি আঁটে, আর বড় ট্রাকে আঁটে ৫০টির মতো। এক ডুলিতে ৯০০ থেকে ১,৪০০ বিড়া পান ধরে। ছোট-বড় মিলিয়ে শুধু পানের ৪৫-৫০টি ট্রাক ঢোকে শুক্রবার রাতে শ্যামবাজারে। সবমিলিয়ে ৭ থেকে ১০ লাখ বিড়া পান আমদানি হয়।

বেচালরা পাড়া মাত করছে

শনিবার খুব ভোর থেকে পানের বেচাকেনা শুরু হয়। সেদিনটা ছিল পৌষের শেষ শনিবার। ভারী কুয়াশা জমেছিল বুড়িগঙ্গার ওপর আর শ্যামবাজার জামে মসজিদের মাথায়। মসজিদ আর আড়তঘরগুলোর মাঝখানে ছোট্ট পাকা সড়ক। মসজিদের উল্টোদিকে বিখ্যাত রূপলাল হাউজ। এটি ১২ নম্বর ফরাশগঞ্জ। হাউজের সামনের খোলা জায়গায় অনেকগুলো আড়তঘর আর সবগুলোই বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করা। 

শ্যামবাজারের এদিকটায় পান আর সবজির আড়ত বেশি। পানের ঘরগুলোর সবই এক সারিতে। কুয়াশার চাদর ভেদ করে রুপলাল হাউজের একটা গুচ্ছ আড়তে ঢুকতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া আর কানও ঝালাপালা। অনেক লোক এখানে, আর শব্দও হচ্ছে খুব। বেচালরাই বেশি শোর মাচাচ্ছেন… '১২ হাজার', 'সাড়ে ১২ হাজার' (৮০ বিড়া বা ১ গাটি) ইত্যাদি।

ছবি: রাজীব ধর

বেচালরা তাদের আড়তে সার বেঁধে রাখা একেকটি ডুলির সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন আর পানের রকম বুঝে দাম বলছেন নামতার মতো করে। ঘরে নতুন ক্রেতা ঢুকলেই হল্লা বেড়ে যাচ্ছে। 

তবে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে দেখলাম অক্ষয় নামের এক পাইকারকে। তিনি শেডে ঢুকতেই একটা ঢেউ খেলে গেল। প্রায় সব বেচালই নামতা পড়া বাদ দিয়ে 'অক্ষয় এই দিকে আয়', 'এই দিকে দ্যাখ' ইত্যাদি বলতে থাকল।

অক্ষয়ের বয়স মেরেকেটে ৪০-৪২ হবে। গলায় মাফলার আর লুঙ্গির ওপর সবুজ মোটা সোয়েটার। অক্ষয়ের গলাটা একটু ফ্যাসফ্যাসে। সবার ডাকেই সাড়া দিচ্ছেন, তবে পান পছন্দ না হলে আর দাঁড়াচ্ছেন না। এক বেচালকে বলতে শুনলাম, 'বেঈমানি করিস না অক্ষয়। রাস্তায় চলাফেরা করস, গাড়িটাড়ি আছে। মনে রাখিস।' 

অক্ষয় অবশ্য এ সতর্কবার্তায় তেমন পাত্তা দিলেন না। এক গোঁত্তা মেরেই শেড থেকে বেরিয়ে পড়লেন। পাশের আরেক আড়তে গিয়ে ৯২ টাকা বিড়া দরে দুই ডুলি পান কিনে ফেললেন। এর কতটা নগদ আর কতটা বাকি, তা অবশ্য বোঝা গেল না। অক্ষয়ের কোঁচড়ে টাকার খুতি দেখলাম না। ১৫-২০ বছর আগেও এর ভালো চল ছিল। পাইকার আর বেপারিরা খুতিতে ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে ঘুরতেন। তখন তো ২০ হাজার টাকারও ভালো দাম ছিল। এখন এক ডুলি পানের টাকা (কমবেশি ৯০ হাজার টাকা) খুতিতে নিয়ে ঘুরলে দেখাবে বাজারের ব্যাগের মতো।

বেচালরা সাধারণত প্যান্ট বা লুঙ্গির ওপর একটি বড় গামছা পেঁচিয়ে রাখেন। শীতকাল বলে প্রায় সবার পায়েই কেডস। দেখেশুনে বুঝলাম, পানের নিলাম হয় উল্টোমুখী। অন্য নিলামে দেখেছি, নিলামকারী সর্বনিম্ন দাম ধরে ডাকতে শুরু করেন। ক্রেতারা দাম বাড়াতে থাকেন একে একে। এখানে বেচাল সর্বোচ্চ দাম হাঁকেন শুরুতেই। ক্রেতা দেখেশুনে দাম বলেন, 'সাত হাজার।' বেচাল মুখ ঝামটা দিয়ে বলেন,' এইসব ফকির-মকির কই থেকা আসে? এটা সাতের মাল?' তারপর বিড়া হাতে নিয়ে তাসের মতো ফেটে-বেটে-বাড়ি মেরে দেখান। কিছু পানির ঝাপটা ক্রেতার মুখেও লাগে। 

ক্রেতাও কম যান না। বলেন, 'দেখছি, দেখছি, গত হাটে তোমার পান নিয়ে ঠকছি। সাত হইলে দ্যাও, নাইলে জায়গামতো রাইখ্যা দ্যাও।' বলে যেই না পা বাড়াতে যাবেন, বেচাল মাফলার নইলে সোয়েটারের খুট টেনে ধরেন—'আর ৫০০ টাকা বাড়াইয়া দ্যাও মিয়া। ঠকবা না।' শেষে সাড়ে ৭ হাজারেই রফা হয়। 

শ্যামবাজারে দুপুর গড়িয়ে যাওয়া অবধি পানের বেচাকেনা চলে আড়তগুলোয়। খুচরো বিক্রেতারা অবশ্য বিক্রি বহাল রাখেন রাত ৮টা পর্যন্ত। এখানে বড় পাইকার যেমন আছেন, আবার ছোট পাইকারও আছেন। বড় পাইকার সারাদিন ঘুরে ৫-১০ হাজার বিড়া পান কেনেন। ছোট পাইকার ৪০০-৫০০ বিড়া পান কেনেন। ছোট পাইকার সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে বসে বিড়াপ্রতি ৫ টাকা বা ১০ টাকা লাভে অর্ধেক মাল বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বড় পাইকারদের কাজ তখনো বাকি থাকে। রমজান আলীকে যেমন সন্ধ্যা গড়িয়েও দেখলাম পান গোছাচ্ছেন।

 রমজান আলী পাইকার

প্রভাত পান ভান্ডারটি পুরোনো, ভবনের চেহারা দেখেও আঁচ করা গেল। রমজান আলী ৪ জন কর্মী নিয়ে এখানে পান গোছাচ্ছেন। পান ব্যবসার একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার পান গোছানো। তিন, চার বা পাঁচ দফায় পান গোছানো আর পানি ছিটানোর কাজ চলতে থাকে। 

রমজান আলীও বড় পাইকার। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার বেতকা ইউনিয়নে। বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় বেতকা হাটেও পান বিক্রি করেছেন। তারপর প্রায় ২৫ বছর হচ্ছে শ্যামবাজারে। আজ তিনি ৬ হাজার বিড়া পান কিনেছেন। ১৬০ বিড়া করে একেকটি খাঁচি বানিয়ে রাখছিলেন। গোছানো শেষে খাঁচিগুলো ভেজা চট বা নেট কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিলেন।

ছবি: রাজীব ধর

তিনি ধারেকাছের বড় বড় বাজার, যেমন যাত্রাবাড়ি, কারওয়ানবাজার, সাভার, পাগলায় পান সাপ্লাই দেন। ১০-২০ বিড়া বিক্রি করে তার ফায়দা হয় না, বরং সময় নষ্ট হয়। বলছিলেন, 'এই ব্যবসায় বড়লোক হতে যেমন সময় লাগে না, ফকির হতেও টাইম লাগে না। কত পাইকাররে পলাইতে দেখলাম। খুব টাইট না হইলে এই ব্যবসায় টিকন যায় না। বহুত গালমন্দ করতে হয়, চোটপাট নিতে হয়, শুনতেও হয়। মহাজনের কাছে বিলাই হয়া থাকতে হয় আর বেপারির কাছে বাঘ। আজ ৫ হাজার বিড়া কিনছি, নগদ টাকা দিছি দেড় হাজার বিড়ার। বাকি টাকা বিক্রির পর দফায় দফায় দিমু। সবারই কিছু কিছু টাকা মার্কেটে পইড়া থাকে। এই ব্যবসার অনেকটাই চলে কথার ওপর।'

রমজান আলী পানের খুব ভক্ত, মানে পান খেতে পছন্দ করেন। পান ছাড়া তার সময় কাটে না। আরো খান তামাকের গোল্লা। পানি ছেটাতে ছেটাতে তার আঙুল সাদা হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা তুললে জানালেন, অনেকসময় হাত ফেটে রক্তও বের হয়ে যায়। অবশ্য ব্যাপারটিকে তিনি থোড়াই কেয়ার করেন। ১৫ দিনে একবার বাড়ি যান। ব্যবসার ঘাত-ঘুত (ট্রিক বা কৌশল) সব তার আয়ত্তে। ব্যবসাটা করে তিনি মজা পাচ্ছেন। মনে হলো এটা তার কাছে একরকমের খেলা। 

রমজান আলীর কাজ ফুরাতে আজ রাত ১২টা বেজে যাবে। এখানে পাইকারদের থাকার ব্যবস্থা আড়তঘরেই থাকে। মোকাম (রাজশাহী বা বরিশাল) থেকে যারা আসে তারাও দু-চার রাত এখানেই কাটিয়ে যায়। প্রতিটি আড়তঘরের ওপরদিকে কাঠের মাচান থাকে। তাতে কয়েকটি কেবিন থাকে, আবার ঢালাও বিছানাও থাকে। আড়তের ভেতরেই পানির কল, টয়লেট থাকে। রমজান আলী খাওয়া-দাওয়া হোটেলেই করেন। তবে লেবার, বেচালরা বাটির খাবার খান। প্রতিবেলা (১ মিল) ৮০ টাকা। দুইবেলায় ১৬০ টাকা গুনতে হয়। সকালের নাস্তা হোটেলে।

পান চাষি সাইজদ্দিন

ফেরার পথে সূর্য পান ভান্ডার পেরুনোর সময় সাইজদ্দিন মাতব্বরের সঙ্গে দেখা। তিনি ৩৫ বছর ধরে পানের কারবারে আছেন। তিনি মূলত একজন পান চাষি। নাটোরে বাড়ি তার, পানের বরজ আছে। সেসঙ্গে মাঝেমধ্যে অন্য চাষিদের কাছ থেকে পান সংগ্রহ করে ঢাকায় ট্রাক নিয়ে আসেন। 

তিনি বলছিলেন, 'পান খুব আদুরে গাছ। প্রতিদিন বরজে (বাগান) দুইবার করে চক্কর দিতে হয়। খেয়াল করতে হয় কোন গাছটা হেলে আছে, কোনটার গায়ে ফেউয়া (উড়ে আসা খড় কুটো) লাগছে। আদর না করলে এ গাছ টেকানো যায় না। এর আশপাশের সব সাফ রাখতে হয়। পান চাষের জন্য একটু উঁচু জমি হলে ভালো হয়। মাটি হতে হয় শক্ত আর আশপাশে জলাশয় থাকলে ভালো। পানের বরজ বাবা করে গেলে ছেলেও তা থেকে ফসল তুলতে পারে। রাজশাহী-নাটোর থেকে প্রচুর পান ঢাকায় আসে। 

ছবি: রাজীব ধর

'তবে চাষি থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত পানের দামের আকাশ-পাতাল ফারাক হয়। পানের বরজ থেকে যদি ৪০ টাকা বিড়া কেনেন, তাহলে প্রতি পানের দাম পড়ল আট আনা। সেখানে সূত্রাপুর বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা ১ বিড়া বিক্রি করেন ১২০ টাকায়। তবে সব পানের এক হিসাব নয়। আড়তেই কোনো কোনো পান ২০০ টাকা বিড়া দরে বিক্রি হয়। এগুলো সংখ্যায় বেশি হয় না। এই পানগুলো বেশি বিদেশে (মধ্যপ্রাচ্য, ইংল্যান্ড) চালান হয়।'

সাইজউদ্দিন আরও বলছিলেন, 'এই ব্যবসা আগে ভালো ছিল। শ্যামবাজারে আশি সালের দিকে ৪-৫ জন আড়তদার ছিলেন। প্রতাপবাবু, সুধীরবাবুরা বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। পরের দিকে আড়তের কর্মচারীরাই তিন-চারজন মিলে আড়ত করতে থাকে। এতে প্রথম প্রথম ভালোই থাকে, কিন্তু তারপর সমস্যা শুরু হয়। 

'ব্যবসা শেয়ারে হলে গ্যাঞ্জাম লাগবেই, খেলাটা তো টাকা-পয়সার। কয় হাতে এখানে টাকা ঘোরে খেয়াল করেন—আড়তদার মোকামগুলোতে যে লোক রাখে তাদেরকে টাকা দিয়ে পাঠাতে হয়, কিছু লোক আবার পান চাষিদের দাদনও (চাষের জন্য অগ্রীম বিনিয়োগ) দিতে যায়, দাদন নেওয়া চাষি যেন অন্য আড়তে মাল পাঠিয়ে না দেয় তার জন্য নজরদার রাখতে হয়। সবশেষ করেও যখন আড়তে মাল পৌঁছায় তারপর সামলাতে হয় বাকির ধাক্কা। এখন এক আড়তের মালিক যদি তিনজন হয়, তবে ভাগাভাগি করতে গিয়ে হিসাবই মেলানো যায় না সবসময়। ঝগড়াঝাঁটি লাগেই। ফলে ব্যবসা কমে যায়। এই সূর্য ভাণ্ডারেই দিনে ৩০-৩৫ ডুলি মাল নামতে দেখছি। আজকে মনে হয় ৮ ডুলি নামছে। এ দিয়ে ব্যবসা হয়?'

পানের কথা আছে বলার আরো

শীতকালে পানের দাম চড়া থাকে, কারণ সরবরাহ থাকে কম। পানের সরবরাহ বেশি থাকে আষাঢ়ে। পান গাছে কমপক্ষে ষোলোটি পান রেখে বাকি পান তুলে নেওয়া যায়। পান চাষ বেশি হয় বরিশাল অঞ্চলে। শ্যামবাজারের পান ব্যবসায়ীদের মধ্যে বরিশালের লোকই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

অঞ্চলভেদে আকারে, প্রকারে, গন্ধে, স্বাদে পান হয় ভিন্ন ভিন্ন। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে যে পান হয় তাকে বলে সাঁচি পান (পাতা ছোট, পাতলা ও ডিমের মতো)। বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসীদের মধ্যে খাসি জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা চাষ। তাদের উৎপাদিত পান খাসি পান নামে পরিচিত।

ঢাকাই খিলি পানও খুব নামকরা। একসময় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কর্পূরের গন্ধবিশিষ্ট একরকম পান হতো, যাকে ডাকা হতো কাফুরি পান নামে।

ছবি: রাজীব ধর

পানের বাগানিরা বারুই নামে পরিচিত। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে এটি ছিল একটি বিশেষ পেশাজীবী শ্রেণী। মোগল আমলে পান চাষ থেকে ভালো রাজস্ব লাভ হতো। বাংলার সুবাদার আজিম-উস-শান একে 'সাউদিয়া খাস' নামে রাজকীয় ব্যবসায় পরিণত করেন। পরে বাংলার দেওয়ানি লাভের পর রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৭ সালে পান চাষকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসায় পরিণত করেন।

পানের গুণেরও শেষ নেই। সর্দি-কাশি কমাতে পান ভালো দাওয়াই। হজমে সাহায্য করে পান। তাই তো ভোজের পরে পান খাওয়ার চল আছে। রূপচর্চায়ও কম যায় না পান। ত্বকে আর চুলে পান পাতাকে কাজে লাগালে জেল্লা বাড়ে। কমে চুল পড়ার সমস্যাও।

মন খুশি করতে পানের জুড়ি নেই, মান রাখতেও লাগে পান। আমাদের দেশে বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয় পান দিয়ে, বিচার-সালিশ পান ছাড়া শেষ হয় না, বিয়ের ভোজও শেষ হয় পান দিয়ে। পান নিয়ে তাই কথা হতে পারে আরো অনেক, তবে তা তোলা রইল আগামীর জন্য।

Related Topics

টপ নিউজ

পানের নিলাম / পান / পান ব্যবসা / পান নিলাম

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে না জড়ানোর অনুরোধ পাকিস্তান সেনাপ্রধানের
  • সরকারি সেবায় ঘুষবাণিজ্য: শীর্ষে বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বিতীয়—বিবিএসের জরিপ
  • যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে কথাই বলতে চান না পুতিন
  • ইসরায়েলিদের ‘সামরিক ও গোয়েন্দা এলাকা’ এড়িয়ে চলার আহ্বান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
  • এনবিআরের নীতির হঠাৎ পরিবর্তনের কবলে শিপিং খাত, ৩৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে
  • ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি, ঘোষণা রবিবার: উপদেষ্টা ফারুকী

Related News

  • পান–জর্দা: জেনেশুনে বিষ করছেন পান?
  • মহেশখালীর পান কেন বিখ্যাত!
  • ফায়ারপান খান সাহস বাড়ান!
  • ইউরোপের বাজারে পুনরায় পান রপ্তানি শুরু 
  • ৬ হাজার জুম থেকে পান বিক্রিতে আয় কমেছে অর্ধেক, আর্থিক সংকটে খাসি সম্প্রদায়

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে না জড়ানোর অনুরোধ পাকিস্তান সেনাপ্রধানের

2
বাংলাদেশ

সরকারি সেবায় ঘুষবাণিজ্য: শীর্ষে বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বিতীয়—বিবিএসের জরিপ

3
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে কথাই বলতে চান না পুতিন

4
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলিদের ‘সামরিক ও গোয়েন্দা এলাকা’ এড়িয়ে চলার আহ্বান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

5
অর্থনীতি

এনবিআরের নীতির হঠাৎ পরিবর্তনের কবলে শিপিং খাত, ৩৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

6
বাংলাদেশ

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি, ঘোষণা রবিবার: উপদেষ্টা ফারুকী

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab