Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ট্রাক ড্রাইভার: দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার নেপথ্য নায়কেরা

ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান নিয়ে কেটে যায় রাস্তায়। আয় যৎসামান্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ছিনতাই, পুলিশের চাঁদাবাজি, হয়রানির শিকার। এভাবেই ধূলিমলিন জীবন কাটে দেশের সরবরাহ চেইন সচল রাখা, স্বীকৃতি না পাওয়া এই কর্মীদের। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারদের জীবনের দুঃখ-বেদনা-লড়াই জানার চেষ্টা করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ট্রাক ড্রাইভার: দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার নেপথ্য নায়কেরা

ফিচার

আরিফুল ইসলাম মিঠু
02 October, 2022, 10:45 pm
Last modified: 04 October, 2022, 10:40 am

Related News

  • রামুতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ক্যাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে নিহত ৩
  • ‘ইংরেজিতে দক্ষ নন এমন চালকরা যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে ট্রাক চালাতে পারবেন না’: ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ কার্যকর
  • ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ: ট্রাকচালকদের অবশ্যই ইংরেজি বলতে হবে
  • চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২
  • গাজীপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিক্সার ৪ যাত্রী নিহত

ট্রাক ড্রাইভার: দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার নেপথ্য নায়কেরা

ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান নিয়ে কেটে যায় রাস্তায়। আয় যৎসামান্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ছিনতাই, পুলিশের চাঁদাবাজি, হয়রানির শিকার। এভাবেই ধূলিমলিন জীবন কাটে দেশের সরবরাহ চেইন সচল রাখা, স্বীকৃতি না পাওয়া এই কর্মীদের। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারদের জীবনের দুঃখ-বেদনা-লড়াই জানার চেষ্টা করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
আরিফুল ইসলাম মিঠু
02 October, 2022, 10:45 pm
Last modified: 04 October, 2022, 10:40 am

ঢাকার তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড। এক বুধবারের সন্ধ্যা।

বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়ন অফিসের সামনেটা কোম্পানি এজেন্ট, ড্রাইভার ও হেলপারদের ভিড়ে গমগম করছে। তাদের কেউ কেউ দাঁড় করিয়ে রাখা মোটরসাইকেলের সিটে বসে স্মার্টফোনে লুডু খেলছেন।

কেউ কেউ ফোনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন, কয়েকজন কার্গো পরিবহনের ভাড়া নিয়ে দরাদরি করছেন। ইউনিয়ন অফিসের পেছনেই তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড, সেখানে দাঁড়িয়ে সার সার ট্রাক।

ট্রাক স্ট্যান্ডে নিজের কাভার্ড ভ্যান পার্ক করেছেন ২৬ বছর বয়সি ড্রাইভার মোহাম্মদ রেদওয়ান। ট্রাকভর্তি আমদানি করা ফ্যাব্রিক নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে এখানে এসেছেন তিনি। খানিক বাদেই ট্রাক খালাস করতে রওনা হবেন গাজীপুরের এক পোশাক কারখানার উদ্দেশে।

নিজের কাভার্ড ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে রেদওয়ান বললেন, 'আজ খুব সকালে স্ট্যান্ডে এসেছি। এসে সারাদিন এখানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছি। এখন আমি গাজীপুরে যাব, কার্গো খালাস করে রাতে গাড়িতেই ঘুমাব। এরপর পরের ট্রিপের কল কখন আসবে, সেই অপেক্ষা করব।'

সাত বছর ধরে গাড়ি চালান রেদওয়ান। এই সাত বছরের বেশিরভাগ সময়ই তার কেটেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এ সময়ে কাভার্ড ভ্যানটাই হয়ে উঠেছে তার ঘর। এখানেই বেশিরভাগ রাতে ঘুমান তিনি। গোসল করেন একেক সময় একেক জায়গায়—ট্রাক স্ট্যান্ডে কিংবা পেট্রোল পাম্পে। গত সাত বছরে প্রায় প্রতিদিনই তাকে খাবার খেতে হয়েছে রেস্টুরেন্টে। সময়মতো কার্গো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য কতবার যে তাকে খাওয়া, গোসল ও ঘুম বাদ দিতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।

ছবি: নূর-এ-আলম/ টিবিএস

বছর কয়েক আগে বিয়ে করেছেন রেদওয়ান। পুরো পরিবার থাকে তার জন্মস্থান রামগড়ের লক্ষ্মীপুরে। প্রতি তিন কি চার মাসে একবার বাড়ি যান তিনি। এক ধরনের ছুটি নেওয়া আরকি। পরিবারের মানুষের কথা রেদওয়ানের মনে পড়ে, কিন্তু মাসের ৩০ দিনই তাকে মহাসড়কে থাকতে হয়। ঢাকায় তার কোনো বাসা নেই। 

সাত বছর আগে মোটামুটি মরিয়া হয়ে কাজের সন্ধানে তিনি ঢাকা এসেছিলেন। পরের সাত বছরে তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন।

বর্তমানে সেলিম কার্গো সার্ভিসের ড্রাইভার রেদওয়ান বলেন, 'এরপর আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের হেলপার হিসেবে চার বছর কাজ করি। নিজের ড্রাইভিং নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি।'

রোজকার জীবনের একটা উদাহরণ দেওয়ার জন্য রেদওয়ান তার আগেরদিনের কাজকর্মের বর্ণনা দিলেন। ১৬ বছর বয়সি হেলপার আহাদকে নিয়ে রাত ৯টায় তিনি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেন। রাতের বেলায় বন্দর ছাড়ার সময় তাদের সঙ্গে ছিল শুধু রুটি, কলা আর বিস্কুট।

'ট্রাফিক জ্যামের জন্য আমাকে হাইওয়ে আর কার্গো ডিপোতে টানা চব্বিশ ঘণ্টা গাড়িতে থাকতে হয়। ঘুম পেলে আমরা কোনো দোকানের পাশে ভ্যান দাঁড় করিয়ে এক কাপ চা বা কফি খেয়ে নিই ঘুম তাড়ানোর জন্য।'

দেশের সরবরাহ চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য সর্বক্ষণ চলার ওপরে থাকেন রেদওয়ানের মতো হাজারো ট্রাক ও কাভার্ড-ভ্যান ড্রাইভার। কারওয়ান বাজার ও আমাদের বাড়ির আশপাশের নিত্যপণ্যের দোকানে তাজা সবজি সরবরাহের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্যও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তারাই অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন ও অতুলনীয় এক জীবনযাপন করেন।

ছবি: নূর-এ-আলম/ টিবিএস

পরিহবন কোম্পানিগুলো ড্রাইভার ও হেলপারদের মাসে গড়ে ৫-৬ হাজার টাকা বেতন দেয়।

এর বাইরে রেদওয়ান ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে ঢাকায় ফিরে আসার জন্য তিন দিনের একটি ট্রিপে নগদ সাড়ে ৬ হাজার টাকা পান। একে তারা 'কমিশন' বা 'লাইন খরচ' বলেন। সেতুর টোল, শ্রমিক ও খাবার খরচ রয়েছে এই কমিশনের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি জানান, 'ট্রিপে আমরা ৪ হাজার টাকা খরচ করে। প্রতি ট্রিপ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা আয় করতে পারি। তেল আর অন্যান্য জিনিস কোম্পানি দেয়। মাসে আটটা ট্রিপ দিতে পারলে বেতনের বাইরে আমরা ২০ হাজার টাকা রোজগার করতে পারি।'

রেদওয়ান ভবিষ্যতে টাকা জমিয়ে একটা ভাড়া গাড়ি কিনে নিজের এলাকায় চালাতে চান।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংস্থাটি সারা দেশে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৪টি ট্রাক ও ৪৪ হাজার ২৯২টি কাভার্ড ভ্যানকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। অর্থাৎ সারা দেশে এই দুটি বাহন চলাচল করে প্রায় ২ লাখ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনে (বিআরটিসি) চালকদের ভারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরে তাদের কাছে এই প্রশিক্ষণ নিতে গড়ে ১০০ জন লোক আসেন। তাদের অধিকাংশই বিদেশে গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং শেখেন।

বিআরটিসির তেজগাঁও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইউনিট প্রধান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশের বেশিরভাগ ড্রাইভারই আগে হেলপার হয়ে তারপর গাড়ি চালানো শিখতে চায়।'

মহাসড়কে ঝুঁকির জীবন

মহাসড়কে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ে রেদওয়ান খুব বিরক্ত।

তিনি বলেন, 'তারা সড়কের এত নিচ দিয়ে গাড়ি চালায় যে আমরা স্টিয়ারিংয়ে বসে তাদের দেখতে পারি না। খুব সতর্ক না থাকলে দুর্ঘটনা হবেই।'

'সবাই বড় গাড়িকে গালি দেয়,' বলেন রেদওয়ান।

ছবি: নূর-এ-আলম/ টিবিএস

কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারদের বিশ্বাস, ট্রাক চালানো তুলনামূলক কঠিন কাজ। কারণ বৃষ্টি নামলে তাদেরকে তারপুলিন দিয়ে কার্গো ঢাকতে হয়। তাছাড়া ড্রাইভারদের ঘুম পেলে ট্রাকে ঘুমানোর কোনো জায়গাও নেই।

এছাড়া ট্রাক-ভ্যান ছিনতাইও নিত্যদিনেরই ঘটনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ও দাউদকান্দি সেতুতে ছিনতাই হয় বেশি।

পণ্য সরবরাহের সম্পূর্ণ দায়িত্ব রেদওয়ান ও তার ১৬ বছরের হেলপার আহাদ। রেদওয়ান জানালেন, 'আমার গাড়িতে ১ থেকে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ফ্যাব্রিক আছে। গাড়িটা ছিনতাই হলে সবার আগে জেলে যাব আমি।'

এর আগেও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন রেদওয়ান। তিনি বলেন, 'একবার রাত ১টার দিকে এক নির্জন জায়গায় আমার গাড়ি থামিয়েছিলাম। তখন কয়েকটা ছেলে এসে ছুরি ধরে আমার মোবইল আর টাকা ছিনিয়ে নেয়।'

রেদওয়ান জানালেন, গাড়িতে আমদানি বা রপ্তানি কার্গো তোলার সময় কারখানার কর্মকর্তারা তাদের ছবি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার তুলে রাখেন।

আরেক চালক সাব্বিরও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

এই যুবক চালক ওই ঘটনা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, 'গাড়ি চালানোর সময় আমি ফোনে কথা বলছিলাম। তখন একজন আমার ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও ব্যর্থ হয়। আমি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সে ছুরি নিয়ে আক্রমণ করে। তারপর আমাকে খুন করার হুমকি দেয়। তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে আমি মাফ চাই।'

লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার, মাদকাসক্তি সমস্যা ও হয়রানি

নোয়াখালীর সোনাপুরের মোহাম্মদ ফয়সাল গাড়ি চালানোর পেশায় আসেন তার মামা জাহাঙ্গীরের হাত ধরে। জাহাঙ্গীর নিজেও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার। ফয়সাল জানান, তিনি ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

'শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রশ্ন খুব কঠিন করেছিলেন, তাই আমি এক বিষয়ে ফেল করেছি,' বলেন ফয়সাল।

আত্মবিশ্বাসী ড্রাইভার হওয়ার আগে তাকে তিন মাস হেলপার হিসেবে কাজ করতে হয়। এখন তিনি গত দেড় বছর ধরে এস আলম কোম্পানির জন্য কাভার্ড ভ্যান চালাচ্ছেন।

দেশে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় গাড়ির চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। তাই নতুন ট্রিপ পাওয়ার জন্য ফয়সালকে আগের চেয়ে বেশি সময় বসে থাকতে হয়।

তিনি বলেন, 'আমি হালকা যানের লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাই, তাই পুলিশ প্রায়ই আমার গাড়ি আটকায়। কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ওদেরকে টাকা দেই, নইলে পুলিশ মামলা দেয়। অনেকসময়ই কারখানা মালিকরা আমাকে দিয়ে তাদের পণ্য পাঠাতে চান না।'

ফয়সাল সবচেয়ে বেশি সময় একটানা গাড়ি চালিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা, যানজটের কারণে।

ছবি: নূর-এ-আলম/ টিবিএস

বেশিরভাগ ট্রাক ড্রাইভারের বিরুদ্ধেই মাদকাসক্তির থাকার অভিযোগ আছে। অতীতে অনেকবার সড়কে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার জন্য তাদের মাদকাসক্তিকে দায়ী করা হয়েছে।

অধিকাংশ ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে এই মাদকাসক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে ফয়সাল বলেন, সিংহভাগ দুর্ঘটনাই রাতে হয়। কারণ ওই সময় ড্রাইভারদের ঘুম পায় বেশি।

ফয়সাল বলেন, 'এক রাতে আমার খুব ঘুম পেয়েছিল। তখন দেখি আমার গাড়ি ডানে-বাঁয়ে দুলছে। বুঝতে পারি যে গাড়ি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। তখন আমি রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছোট একটা ঘুম দিয়ে নিলাম।'

তবে কয়েকজন ড্রাইভার স্বীকার করেছেন যে কিছু কিছু ট্রাক চালক আছেন মাদকাসক্ত।

প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পণ্য নিয়ে হাজার হাজার ট্রাক ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোতে আসে। রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি সবজি বাজার হলো কারওয়ান বাজার। মঙ্গলবার রাতে ২৩ বছর বয়সি ট্রাক চালক সাব্বির কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন ট্রাকভর্তি আলু নিয়ে।

রাত ৮টায় মুন্সীগঞ্জ থেকে রওনা দেন তিনি, কারওয়ান বাজারে পৌঁছেন রাত ১০টায়। ১০৫ বস্তা আলু খালাস করে তিনি কারওয়ান বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যান।

মাঝে মাঝে সাব্বির রাজধানীর কদমতলী এলাকায় যান ট্রাফিক সার্জেন্টদের চোখ এড়ানোর জন্য, কারণ তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।

তরুণ এই ট্রাক চালক বলেন, 'আমরা রাস্তার কুকুরের মতো বাঁচি। আমরা টাকা কামাই, কিন্তু সেই টাকা বাড়িতে নিতে পারি না। সড়কেই টাকাটা খরচ করে ফেলতে হয়।'

সাব্বির সম্প্রতি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পাঁচ ডোপ টেস্টের একটিতে ফেল করায় তার লাইসেন্সপ্রাপ্তি আটকে যায়।

'আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই একটা রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে,' এই তরুণ ড্রাইভার বলেন। সাব্বির দাবি করেন, তিনি কোনো ধরনের মাদক নেন না।

ফয়সাল ও সাব্বির মতো আরও অনেক ড্রাইভার আছেন, যাদের কোনো লাইসেন্স নেই কিংবা থাকলেও সঠিক লাইসেন্সটা নেই। ট্রাফিক সার্জেন্টদের ঘুস দিয়ে তারা মহাসড়কে গাড়ি চালান।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন ট্রাক ড্রাইভার বলেন, 'অনেকবার সার্জেন্টরা আমাকে চড়, লাথি মেরেছে। কয়েকবার আমি মাল জব্দ এবং মামলা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে তাদের পা ধরেছি।'

একটি সাধারণ ট্রিপে ট্রাফিক সার্জেন্টরা অনেকবার ড্রাইভাদের থামান। মাঝে মাঝে একটি ট্রিপেই দুটি বা তার বেশি মামলা খান ড্রাইভাররা।

এক ড্রাইভার জানান, ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসার সময় তাকে দুজন পুলিশ সদস্যকে ঘুস দিতে হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে দিতে হয়েছে তার।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মজুমদারের মতে, দেশের মাত্র ২০ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালকের পণ্যবাহী ট্রাক চালানোর লাইসেন্স আছে। প্রায় ২৫ শতাংশ ড্রাইভারের কোনো লাইসেন্সই নেই। বাকি ৫৫ শতাংশ ড্রাইভার হালকা ও মাঝারি যানের লাইসেন্স দিয়ে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালান।

তোফাজ্জলের অভিযোগ, মহাসড়কে ড্রাইভারদের প্রধান সমস্যা হলো হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হওয়া। তিনি বলেন, 'তারা টাকা নেয় এবং হাইওয়েতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।'

ছবি: নূর-এ-আলম/ টিবিএস

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের প্রধান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রামাতউল্লাহ স্বীকার করেন যে এ ধরনের ঘটনা (ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারদের কাছ থেকে পুলিশের চাঁদা আদায়) মাঝেমধ্যে ঘটে, কিন্তু তারা এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, 'হাইওয়ে পুলিশ ইউনিট যাতে এ ধরনের ঘটনায় জড়িত না হয়, তার কড়া নির্দেশ আছে আমাদের। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও আমরা এরকম ব্যবস্থা নিয়েছি।'

ড্রাইভাররা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘদিন ধরেই তারা উপেক্ষিত।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মোহাম্মদ মনির বলেন, 'ড্রাইভারদের যদি মানসিক শান্তি থাকে, তাহলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে।'

তিনি জানান, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক চালকদের জন্য কুমিল্লা ও সিরাজগঞ্জে সরকার দুটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করছে। সেখানে চালকরা ট্রাক পার্ক করতে পারবেন, গোসল করতে পারবেন। এমনকি তাদের ঘুমানোরও ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। 

তালুকদার মোহাম্মদ মনির বলেন, 'ড্রাইভাররা আগামী দু-মাসের মধ্যেই বোধহয় কুমিল্লার বিশ্রামাগারটি ব্যবহার করতে পারবেন।'

Related Topics

টপ নিউজ

ট্রাক ড্রাইভার / ট্রাকচালক / কাভার্ড ভ্যান / সরবরাহ চেইন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নতুন ‘সাইকস-পিকো বন্দোবস্তের’ বিরুদ্ধে এরদোয়ানের হুঁশিয়ারি
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ
  • ইরানের মোসাদ-আতঙ্ক বাড়ছে, সন্দেহ এখন ‘মাস্ক, টুপি ও সানগ্লাসে’
  • সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস
  • ভারত জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিচুক্তিতে আর কখনোই ফিরবে না
  • ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে ‘চিরকাল’ ক্ষমতায় থাকতে চান নেতানিয়াহু: বিল ক্লিনটন

Related News

  • রামুতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ক্যাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে নিহত ৩
  • ‘ইংরেজিতে দক্ষ নন এমন চালকরা যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে ট্রাক চালাতে পারবেন না’: ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ কার্যকর
  • ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ: ট্রাকচালকদের অবশ্যই ইংরেজি বলতে হবে
  • চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২
  • গাজীপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিক্সার ৪ যাত্রী নিহত

Most Read

1
বাংলাদেশ

নতুন ‘সাইকস-পিকো বন্দোবস্তের’ বিরুদ্ধে এরদোয়ানের হুঁশিয়ারি

2
বাংলাদেশ

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

3
আন্তর্জাতিক

ইরানের মোসাদ-আতঙ্ক বাড়ছে, সন্দেহ এখন ‘মাস্ক, টুপি ও সানগ্লাসে’

4
আন্তর্জাতিক

সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

5
আন্তর্জাতিক

ভারত জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিচুক্তিতে আর কখনোই ফিরবে না

6
আন্তর্জাতিক

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে ‘চিরকাল’ ক্ষমতায় থাকতে চান নেতানিয়াহু: বিল ক্লিনটন

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab