Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
June 19, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JUNE 19, 2025
তার পুরান ঢাকা বাঁচানোর লড়াই

ফিচার

শেহেরীন আমিন সুপ্তি
23 July, 2022, 10:40 pm
Last modified: 24 July, 2022, 01:40 pm

Related News

  • এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম দিনই বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় ঢাকা
  • ‘নো করিডর, নো পোর্ট’: ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ করবেন বামপন্থীরা
  • অন্য জেলা থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহন ঈদের দিনসহ ১০ দিন নিষিদ্ধ
  • বৈরী আবহাওয়া: ঢাকামুখী চার ফ্লাইট শাহ আমানতে জরুরি অবতরণ

তার পুরান ঢাকা বাঁচানোর লড়াই

ঢাকা কারো কাছে জাদুর শহর, প্রাণের শহর আবার কারো কাছে কেবলই ব্যস্ততা আর জ্যামের শহর। ষাটোর্ধ্ব স্থপতি তাইমুর ইসলামের কাছে ঢাকার সবচেয়ে বড় পরিচয় ঐতিহ্যের শহর। হাজার বছরেরও পুরোনো এই শহরের বুকে ঐতিহ্যের স্মৃতি চিহ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি কাজ করছেন ১৮ বছর ধরে। শহরের যত ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির স্থাপনা আছে প্রত্যেকটির জন্য তার গভীর মমত্ববোধ।
শেহেরীন আমিন সুপ্তি
23 July, 2022, 10:40 pm
Last modified: 24 July, 2022, 01:40 pm

ইউএসজি-র সঙ্গে পুরান ঢাকা ঘুরে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। ছবি: তাইমুর ইসলামের সৌজন্যে

"আজকেও কোর্টে একটা আপিল চলছে আমাদের। পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে শতবর্ষী স্থাপনা শঙ্খনিধিদের ঠাকুরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলার আয়োজন চলছে অনেক বছর ধরেই। অনেকটা অংশই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এটার। স্থাপনা টিকে তার পুরানো আদলে ঠিকঠাক করে সংরক্ষণের জন্য কোর্টে রিট করেছিলাম আমরা।  ১৯২০ সালের দিকে ঢাকায় লাল মোহন সাহা বণিক আর তার ভাইদের রমরমা অবস্থা ছিল ব্যবসার। তাদেরই ঠাকুরবাড়ি এটা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই পরিবারের সর্বশেষ সদস্যও দেশ ছেড়ে চলে গেলে এটা অর্পিত সম্পত্তি হয়ে যায়। এখন সেখানে গাড়ির ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ। বাড়ির বর্তমান অবস্থাটা খুবই প্যাথেটিক।এই বাড়িটা কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত বাড়ির তালিকায় অন্যতম," একটানে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তাইমুর ইসলাম। ঢাকা শহরের যেকোনো কোণে পুরাকীর্তির গায়ে আঁচ আসলেই সরব থাকেন তিনি।

ঢাকা কারো কাছে জাদুর শহর, প্রাণের শহর আবার কারো কাছে কেবলই ব্যস্ততা আর জ্যামের শহর। ষাটোর্ধ্ব স্থপতি তাইমুর ইসলামের কাছে ঢাকার সবচেয়ে বড় পরিচয় ঐতিহ্যের শহর। হাজার বছরেরও পুরোনো এই শহরের বুকে ঐতিহ্যের স্মৃতি চিহ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি কাজ করছেন ১৮ বছর ধরে। শহরের যত ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির স্থাপনা আছে প্রত্যেকটির জন্য তার গভীর মমত্ববোধ। পরবর্তী প্রজন্মের সামনে স্মৃতি হিসেবে জাতিগত ঐতিহ্যের এই চিহ্নগুলো যেন সংরক্ষিত থাকে সেজন্যই তার যুদ্ধ।

শাঁখারি বাজারে শুরু

২০০৪ সালের জুন মাসে শাঁখারি বাজারে তিন তলা এক পুরোনো ভবন ধ্বসে নিহত হন ১৯ জন। ঘটনার পর জনগণের সমালোচনায় সরকারি মহল থেকে সিদ্ধান্ত হয় পুরোনো সব বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হবে শাঁখারি বাজারের। সিঙ্গাপুর মতো সাজানো হবে এলাকাটিকে। কয়েক মাসের মধ্যেই সরকারি কমিটি থেকে পুরান ঢাকার প্রায় ৮০০টি ঝুকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়।  

৪০০ বছরের পুরোনো শাঁখারি বাজার এলাকা মুঘল আমলের নিদর্শন। ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মহল্লার একটি। বংশ পরম্পরায় সেখানে বাস করেছেন শাঁখারিরা। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তাদের কয়েক শতাব্দী পুরোনো বাড়িগুলো। কিন্তু ঐতিহাসিক এসব স্থাপত্য সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পরিকল্পনাই ছিল না।

সেই দুর্ঘটনার পর তাইমুর ইসলাম আর স্থপতি হুমায়রা জামান ছুটে যান শাঁখারি বাজারের স্থানীয়দের সাথে কথা বলতে। এলাকার রাস্তাঘাটে তখন থমথমে অবস্থা। কেউ এসব স্থাপত্য নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী না। দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী একজনের সাথে আলাপ করে জানা গেল তাদের বাড়ির পাশেই নতুন এক স্থাপনার নির্মাণ কাজ চলছিল। পুরোনো ভবনটির পাশের জমিতে কোনো সুরক্ষা ছাড়াই গভীর ফাউন্ডেশনের জন্য মাটিতে চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। যার কারণে তাদের বাড়ি কেঁপে উঠছিল বারবার। অভিযোগ জানানোর পরও কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় কারণে হেলে পড়ে ধ্বংস হয় ভবনটি।

তাইমুর ইসলাম, পুরান ঢাকা বাঁচানোর জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দেড় যুগ ধরে। ছবি: তাইমুর ইসলামের সৌজন্যে

শাঁখারি বাজারের বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে যথাযথভাবে ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে এর কিছুদিন পরই প্রতিষ্ঠিত হয় "আরবান স্টাডি গ্রুপ" (ইউএসজি)। তাইমুর ইসলাম, হুমায়রা জামানসহ আরো কয়েকজন তরুণ স্থপতি মিলে শুরু হয় নগরীর পুরাকীর্তি সংরক্ষণের এই আন্দোলন। নিজস্ব অর্থায়নে চলা অলাভজনক এই সংস্থায় বর্তমানে কাজ করেন ৩০-৪০ জন নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক। তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এছাড়া পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তিনজন স্থপতি। ২০০৭ সাল থেকে ইউএসজি-র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন স্থপতি শামিরা ইসলাম।

'সেভ শাঁখারি বাজার'

সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে শাঁখারি বাজারকে রক্ষা করতে ২০০৪ সালে ইউএসজি-র পক্ষ থেকে শুরু করা হয় "সেভ শাঁখারি বাজার" ক্যাম্পেইন। শুরুতেই তাইমুর আর তার দল প্রতিটি পুরানো বাড়িতে গিয়ে সেসব বাড়ির ইতিহাস সংগ্রহ করেন । বাড়ির সদস্যদের সাথে কথা বলে, পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটে, ছবি সংগ্রহ করে তথ্য জোগাড় করা হয়। শাঁখারি বাজার সংরক্ষণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের চিন্তাভাবনাও জানা হয় এর মাধ্যমে।

সরকারি দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের অনেক ব্যক্তিত্বের সাথে যোগাযোগ করা হয় ক্যাম্পেইনের বিষয়ে। তাইমুরের ভাষ্যে, "সে সময়ে আমি আর হুমায়রা বিভিন্ন অফিসে অফিসে গিয়ে প্রেজেন্টেশন করতাম। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম।" প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সাহায্য নেওয়া হয় বেশ কিছু ঐতিহাসিক বাড়িগুলোর নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য।

ঐতিহাসিক মহল্লা হিসেবে দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র শাঁখারি বাজার। পর্যটন উন্নয়ন পরিকল্পনায় পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ এই এলাকাকে সংযুক্ত করতে পর্যটন কর্পোরেশনের সাথেও যোগাযোগ করে ইউএসজি। পর্যটন কর্পোরেশন থেকে একটি দল এসে তাইমুরের দলের সাথে পরিদর্শন করে যায় শাঁখারি বাজার।

ইউএসজি-র আমন্ত্রণে ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টরও ঘুরে দেখে যান শাঁখারি বাজারের ঐতিহাসিক ভবন আর ঐতিহ্যময় শাখা শিল্প। সুশীল সমাজের মধ্যে শাঁখারি বাজার সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে তাদেরকে নিয়ে আয়োজন করেন "মিট দ্য কমিউনিটি" প্রোগ্রাম। যেখানে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সাথে শাঁখারি বাজারের স্থানীয়দের আলোচনা করান।

এত কিছুর পরও সরকারের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ আনুমানিক ৮০০ বাড়ির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে শাঁখারি বাজারের ৯০ টি ভবন ছিল- যে বাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেলা হবে।  ততদিনে স্থানীয় লোকজন, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সমর্থন অর্জন করেছিল ইউএসজি। তাদের চলমান প্রতিবাদের মুখে ২০০৫ সালে ঢাকার মেয়র সেই তালিকা বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

শাঁখারি বাজারকে ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষিত করার জন্য ২০০৬ সাল থেকে প্রচারণা শুরু করে ইউএসজি। ইউনেস্কোর অর্থায়নে জাতীয় জাদুঘরে পুরাকীর্তির নিদর্শন প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। পাশাপাশি কারুশিল্প হিসেবে শাঁখা তৈরিকে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টাও চালিয়ে যায় তাইমুরের দল। পরবর্তী বছরে ২০০৭ সালে শিল্পকলা একাডেমিতেও প্রদর্শনীর আয়োজন করেন তারা। সে বছরই আমেরিকান দূতাবাসের আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত তাইমুর ইসলাম। ফেলোশিপের প্রোগ্রামে বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন তিনি। "আমেরিকায় যেখানে ৫০ বছরের পুরানো স্থাপনা সংরক্ষণের জন্যও বিশাল আয়োজন করা হয় আমাদের দেশে সেখানে ৪০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়েও কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশজুড়ে একটা গভীর ষড়যন্ত্র এইগুলাকে বিদায় করো, বিদায় করো মনোভাব নিয়ে," বলছিলেন তাইমুর।

'সেভ পুরান ঢাকা'

"২০০৮ সালে ফরাশগঞ্জে যখন বড়বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছিল তখন 'সেভ শাঁখারি বাজার' মুভমেন্ট রূপান্তরিত হয় 'সেভ পুরান ঢাকা' মুভমেন্টে," জানান তাইমুর ইসলাম। পুরান ঢাকার ফরাসগঞ্জের এই বড়বাড়ি সংরক্ষণের দাবীতে হেরিটেজ ওয়াক আর মানবন্ধন করে ইউএসজি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক গুরুত্বের সাথে কভার করা হয় এই আন্দোলন। ড. হামিদা হোসেন, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস,  ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক পারভিন হাসানসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের সরাসরি অংশগ্রহনের ফলে বড়বাড়ি রক্ষার এই দাবি তাইমুরদের আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল।

সূত্রাপুরের হেরিটেজ হোমে প্রদর্শনী।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর নগর উন্নয়ন কমিটির মাসিক মিটিং-এ বড়বাড়ি ও অন্যান্য পুরাকীর্তি সংরক্ষণের দাবি তুলে ইউএসজি। এই কমিটির পক্ষ থেকেই প্রথম গঠিত হয় হেরিটেজ কমিটি। যাদের দায়িত্ব দেয়া হয় পুরো ঢাকার ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির তালিকা তৈরি করতে। পরবর্তীতে রাজউকের নির্দেশে বড়বাড়ি ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করা হয়।

তাইমুর ইসলাম ও ইউএসজি-র সহায়তায় ২০০৯ সালে প্রথমবার শহরের পুরাকীর্তির একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। যদিও তালিকাটি ছিল অসম্পূর্ণ। সে তালিকাকে উপেক্ষা করেই বিভিন্ন সময়ে পুরান ঢাকার নানা এলাকায় ভাঙ্গা হচ্ছিল নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবন, শাঁখারি বাজারের বিভিন্ন ঐতহাসিক ভবন, ব্রাহ্ম সমাজের লাইব্রেরি, শঙ্খনিধি ঠাকুরবাড়ি ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা করতে বেশ কয়েকবার আদালতে রিট করেছে ইউএসজি। আদালতের হস্তক্ষেপে তারা রক্ষা করতে পেরেছেন বেশ কয়েকটি স্থাপনা। আবার প্রাণপণ চেষ্টাতেও রক্ষা হয়নি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি। ইউএসজি-র তালিকা অনুযায়ী ২০১৮ সালে প্রায় ২৭০০টি  ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও বারবার আঘাত এসেছে স্থাপনাগুলোতে।

ঘটেছে বিপদ

পুরাকীর্তি রক্ষার আন্দোলনে নানা সময়ে নানা ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাইমুর ইসলাম ও তার দলকে। একবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এক স্বেচ্ছাসেবক প্যারিদাস রোডে কয়েকটি ঐতিহাসিক বাড়ির ছবি তুলতে গেলে তাকে স্থানীয় মাস্তানেরা আটকে রেখেছিল। মারধোরও করা হয়েছিল সেই স্বেচ্ছাসেবককে। আরেকবার একদল স্বেচ্ছাসেবকের ক্যামেরা জব্দ করে রাখা হয়েছিল বনগ্রাম রোডে।

এমনকি পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় মিথ্যা হ্যান্ডবিল ছড়ানো হয়েছিল তাইমুর ইসলাম ও হুমায়রা জামানের নামে। সেখানে দাবি করা হয় ইউএসজি-র পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের হুমকি দিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। টাকা না দিলে পুরাকীর্তি তালিকায় জোর করে নাম দিয়ে দিবে এই হুমকি দিচ্ছেন বলেও গুজব ছড়ানো হয়। এমন নানা ধরনের অপপ্রচার ও গুজবকে পাত্তা না দিয়ে তারা বছরের পর বছর অবিচল থেকেছেন নিজেদের লক্ষ্যে।

আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুলের ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণের দাবিতে ইউএসজির সঙ্গে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন বিদেশিরাও। ছবি: ইউএসজি-র ফাইল থেকে

বিফল হয়েছেন অনেকবার

"১৮ বছরের এই মুভমেন্টে অনেকবারই বিফল হয়েছি। একটা করে কোনো ঘটনা বলা যায় না তাই। ১৪ নম্বর, শাঁখারি বাজারে একটা সুন্দর বিল্ডিং ছিল। ছাদের উপর ছোট্ট একটা ঠাকুরঘর ছিল সেখানে। সে বিল্ডিংটা বাঁচাতে না পারা অনেক বড় কষ্টের স্মৃতি। কয়েকবছর ধরে চেষ্টা করেছি আমরা। থানায় জিডি নেয়নি, গ্যাজেট বের হতে হতেই ভেঙ্গে ফেলে। থানা, কমিশনার আর্কিওলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে সবাই বললো 'আমরা দেখছি'। সেই দেখা আর হলো না। হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে জাহাজ বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা চরম ফ্রাস্ট্রেশনের ঘটনা ছিল। খামার বাড়ি ভাঙ্গার ঘটনাটাও একই রকম। জগন্নাথ মন্দির বাঁচাতে না পেরেও কষ্ট পেয়েছিলাম খুব," স্মৃতিচারণ করছিলেন 'পুরান ঢাকার পক্ষের লোক' হিসেবে পরিচিত তাইমুর।

সুখস্মৃতি

"টিকাটুলিতে একটা অনেক পুরানো বিল্ডিং আছে। এর বাইরের অংশটা ভাঙতে শুরু করেছিল, আমরা প্রতিবাদ করে পুরো বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলার আগেই আটকাতে পেরেছিলাম। ওইটার বাইরের অংশটা ভেঙ্গে ফেলায় ভেতরের সৌন্দর্যটা আরো বেশি বেরিয়ে এসেছে। শাঁখারি বাজারে নাই নাই করেও বাঁচিয়ে রেখেছি অনেকগুলো বাড়ি। ফরাসগঞ্জের বড়বাড়িও একটা সন্তুষ্টির জায়গা। আমাদের আন্দোলনের ফলে ২৪ ঘন্টা পুলিশ প্রোটেকশনে ছিল বাড়িটি," বলছিলেন আত্মবিশ্বাসী তাইমুর ইসলাম।

"এখনো কতগুলো কেস চলছে আদালতে। মিডিয়াও আমাদের সাথে আছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের পরিচয় রেখে যাওয়ার চেষ্টাতেই এত কিছু।"

হেরিটেজ ওয়াক

২০০৬ সাল থেকেই শাঁখারি বাজার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জনমত সৃষ্টি করতে নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সাথে নিয়ে ঘুরেছেন শাঁখারি বাজারের অলিগলি। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস করা আমেরিকান বন্ধু এন মরিসনের অনুপ্রেরণায় পুরান ঢাকা জুড়েই শুরু করেন হেরিটেজ ওয়াকের প্রচলন।

পুরান ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা। ছবি: ইউএসজির ফাইল থেকে

ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক এলাকায় হেরিটেজ ওয়াক বেশ জনপ্রিয়। ইতিহাস জানাতে পুরাকীর্তির মাঝে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হয় দিনব্যাপী। মূলত বাংলাদেশে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকদের নিয়েই ইউএসজিতে আয়োজন হয় হেরিটেজ ওয়াকের। করোনার আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তেই হত এই আয়োজন। সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত পাঁচ ঘন্টা ব্যাপী হেঁটে বেড়ানো হয় নারিন্দা, ওয়ারী, সূত্রাপুর, আরমানিটোলা, চকবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। পর্যটকদের কাছে ঐতিহাসিক নানা স্থাপনার ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পুরান ঢাকার বাসিন্দা আর সেখানকার শিক্ষার্থীরাই মূলত ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন।

পর্যটকদের ইচ্ছা অনুযায়ী বুড়িগঙ্গায় নৌকা ভ্রমণের আয়োজনও করা হয় ইউএসজি-র পক্ষ থেকে। শুরুতে একদমই বিনামূল্যে এই ওয়াকের আয়োজন করা হলেও পরবর্তীতে পর্যটকদের অনুরোধেই নেওয়া হয় ফি। বর্তমানে দিনব্যাপী হেরিটেজ ওয়াকে প্রতি জনের ফি ১০০০ টাকা। নৌকা ভ্রমণ করলে জনপ্রতি যোগ হয় আরো ২০০ টাকা।

হেরিটেজ ওয়াকের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে খাবারের আয়োজন করা হয় পর্যটকদের জন্য। পুরান ঢাকার দুইটি বাড়িকে হেরিটেজ হোম হিসেবে সাজাতে সহায়তা করেছে ইউএসজি। ইমরান'স হেরিটেজ হোম এবং কাজী বাড়ি হেরিটেজ এটেস্টে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয় পর্যটকদের জন্য। খাবারের আয়োজনের সাথে বাড়ির ভেতর ঘুরিয়ে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন দেখানো হয় সেখানে।

ইউএসজি কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পুরাকীর্তিপ্রেমি যেকেউ যোগ দিতে পারবেন এই হেরিটেজ ওয়াকে।

করোনা মহামারিতে ইউএসজি

মহামারিতে লকডাউনের সময় আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছে ইউএসজি। অলিতে গলিতে ডিজইনফেক্ট্যান্ট স্প্রে করেছে স্বেচ্ছাসেবকেরা। তাইমুর বলেন, "এই ভলান্টিয়ারদের নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই। মানুষ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হত না, তখন তারা কাজ করেছে পুরান ঢাকার নানা এলাকায়।"

করোনার ফলে সৃষ্ট আর্থিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পুরান ঢাকার মানুষদের মধ্যে দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ইউএসজি। সোনারগাঁও থেকে প্রশিক্ষক এনে ৭-৮ মাস যাবত সূত্রাপুর, ওয়ারী, ঋষিপাড়াসহ নানা স্থানে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তারা। "কারুবিকাশ" নামে তাদের এই কার্যক্রম আগামী আরো বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে তাইমুর ইসলামের।

তাইমুর ইসলামের প্রিয় ঐতিহাসিক স্থাপনা

ফরাসগঞ্জের রূপলাল হাউজ তার প্রিয় স্থাপনা। বিকেলবেলায় রূপলাল হাউজের ছাদে বসে কেটেছে অনেক প্রিয় মুহূর্ত। এছাড়া ছোট কাটরা তাইমুরের আরেক প্রিয় স্থাপত্য। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ছোট কাটরা বাঁচাতে চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

সংস্কারের নামে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে পুরাকীর্তির সৌন্দর্য। ছবি: ইউএসজির ফাইল থেকে

জন্মের পর থেকে কৈশোর পর্যন্ত বড় একটা সময় পুরান ঢাকায় কেটেছে তাইমুর ইসলামের। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ বছর বয়স তার। পরিবারের সাথে থাকতেন ওয়ারীতে। সেসময়ে ছবির মতো সাজানো ছিল ওয়ারী এলাকা। স্বাধীনতার পর পুরান ঢাকা ছেড়ে এলেও সেখানকার পুরাকীর্তির প্রতি টান ছাড়তে পারেননি। ঐতিহ্য স্থাপনের আন্দোলন করতে করতে স্থপতি হিসেবে নিজের কাজ ছেড়েছেন অনেক বছর আগেই। শেষ বয়সে আবার ফিরে যেতে চান পুরান ঢাকার মাঝেই।

পুরাকীর্তি যোদ্ধা তাইমুর ইসলাম দৃঢ়তার সাথে বলেন, "আমি ভাই হেরিটেজের ব্যাপারে একেবারে ফান্ডামেন্টালিস্ট। এখানে কোনো ছাড় নেই। এখানে মুনাফেকি চলবে না।"

 

Related Topics

টপ নিউজ

পুরান ঢাকা / ঢাকা / ঐতিহ্য / ঢাকার ঐতিহ্য

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সিআইএ-এর গোপন ঘাঁটি ছিল এ রানওয়ে; পরিচিত ছিল বিশ্বের ‘সবচেয়ে গোপন স্থান’ হিসেবে
  • কেন অধিকাংশ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লাল লিপস্টিক পরেন?
  • যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও ইরানের একটি সরকারকে উৎখাত করেছিল, কী পরিণতি হয়েছিল তার
  • ‘দক্ষিণ সিটির মেয়রের মেয়াদ শেষ, শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই’: উপদেষ্টা আসিফ
  • 'আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে': বিবিসিকে বললেন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা
  • ‘আমি করতে পারি, নাও করতে পারি’: ইরানে হামলা করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প

Related News

  • এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম দিনই বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় ঢাকা
  • ‘নো করিডর, নো পোর্ট’: ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ করবেন বামপন্থীরা
  • অন্য জেলা থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহন ঈদের দিনসহ ১০ দিন নিষিদ্ধ
  • বৈরী আবহাওয়া: ঢাকামুখী চার ফ্লাইট শাহ আমানতে জরুরি অবতরণ

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

সিআইএ-এর গোপন ঘাঁটি ছিল এ রানওয়ে; পরিচিত ছিল বিশ্বের ‘সবচেয়ে গোপন স্থান’ হিসেবে

2
আন্তর্জাতিক

কেন অধিকাংশ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লাল লিপস্টিক পরেন?

3
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও ইরানের একটি সরকারকে উৎখাত করেছিল, কী পরিণতি হয়েছিল তার

4
বাংলাদেশ

‘দক্ষিণ সিটির মেয়রের মেয়াদ শেষ, শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই’: উপদেষ্টা আসিফ

5
আন্তর্জাতিক

'আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে': বিবিসিকে বললেন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা

6
আন্তর্জাতিক

‘আমি করতে পারি, নাও করতে পারি’: ইরানে হামলা করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net