পরিমিত পরিমাণে ডিম খাওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিগত বছরগুলোতে খাদ্য তালিকায় ডিম নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা কমে গেলেও তা পুরোদমে বিলীন হয়ে যায়নি।
নর্থ -ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন -এ প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিভাগের পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রধান লিন্ডা ভ্যান হর্নের মতে, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসে ভোগা মানুষদের জন্যে পছন্দমতো ডিম খাওয়ার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বেশি ডিম খাওয়া যদিও শঙ্কাজনক, তবে এটি পুরোপুরি বাদ দেয়া উচিত নয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী, বেশিরভাগ লোকের জন্য দৈনিক একটি ডিমই যথেষ্ট। যাদের রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের দৈনিক একটিরও কম ডিম গ্রহণ করা উচিত। অপরদিকে, রক্তে স্বাভাবিক মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকা বয়স্করা দিনে দুটি ডিম গ্রহণ করতে পারবেন।
খাদ্যতালিকা থেকে ডিম বাদ দেওয়া নিয়ে কিছু লোকের ভুল ধারণা রয়েছে। কার্ডিওভাসকুলার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করার জন্যে মূলত বিশেষজ্ঞরা কোলেস্টেরলযুক্ত খাদ্য কম গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু তাদের উল্লেখিত খাদ্যগুলো হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং লাল মাংস জাতীয়। এসকল খাদ্য উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্যে দায়ী। কিন্তু এ কথা সত্য যে, ডিম খাওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
জনস্বার্থ বিজ্ঞান কেন্দ্রের পুষ্টি পরিচালক বনি লিবম্যান বলেন, "লাল মাংস, মাখন, পনির, এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ডিমের চেয়ে অনেক বেশি। এসকল খাদ্যের জায়গায় ডিমই মানুষের রোষের শিকায় হয়েছে।"
খাদ্যতালিকায় কি কি খাবার রাখতে হবে তা নির্বাচনের জন্য খাদ্যে থাকা কোলেস্টেরল এবং রক্তে থাকা কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। যেমন: ডিম ও চিংড়িতে থাকা কোলেস্টেরল, এলডিএল কোলেস্টেরল (বা 'খারাপ' কোলেস্টেরল) যা স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের ফলে তৈরি হয় ইত্যাদি।
মায়ো ক্লিনিক কলেজ অব মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডোনাল্ড হেনসার্ড বলেন, "মানুষ এই ব্যাপারটিই বুঝতে পারে না যে কোলেস্টেরল যুক্ত খাবারের চেয়ে স্যাচুরেটেড ফ্যাট সম্বলিত খাবারের কারণে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি বাড়ে।"
অর্থাৎ, আপনি মাঝেমধ্যেই ডিম খেতে পারেন। তবে উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত বেকন, সসেজ ও মাখনের টোস্ট এড়িয়ে যান।
খাদ্যতালিকা বিষয়ে জনসাধারণের বিভ্রান্তির শুরু সম্ভত ২০১৫ এবং ২০২০ সালে ইউএস ডায়েটেরি গাইডলাইনের দুটি সেট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে। ২০১০ সালের পর তৈরি ওই গাইডলাইনে খাদ্যে থাকা কোলেস্টেরল সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়নি এবং এ কারণেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
অধ্যাপক ভ্যান হর্ন বলেন, "যাদের ওজন পরিমিত এবং বংশগতভাবে হৃদরোগের ইতিহাস নেই, তাদের জন্য ডিম হচ্ছে প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। যদি আপনার বয়স ৫৫ বা তার ঊর্ধ্বে হয়, বা আপনার অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে আমি বলবো সপ্তাহে দু থেকে তিনটি কুসুম খেতে। যদি কোনো আশঙ্কাজনক অবস্থা না থাকে তাহলে সপ্তাহে ৪ থেকে ৫টা ডিম খেলেও কোনো সমস্যা নেই।"
তবে বেশিরভাগ পুষ্টিবিদের মতে হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া গাইডলাইন নিরাপদ। লিবম্যান বলেন, "রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর জন্য উত্তম পন্থা হচ্ছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের জায়গায় মাছ, বাদাম, অ্যাভোকাডো, তেল, নারকেল জাতীয় আনস্যাচুরেটেড খাদ্য গ্রহণ করা।"
এছাড়াও তিনি ডায়েট প্যাটার্নে পরিবর্তন আনার বিষয়ে ভূমধ্যসাগরীয় বা 'ড্যাশ' প্যাটার্নের কথা উল্লেখ করেন যেখানে খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, শস্য, কম চর্বি বা চর্বি ছাড়া দুগ্ধ, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, তরল উদ্ভিজ্জ তেল, প্রক্রিয়াজাত কম লাল মাংস ইত্যাদি খাবারের প্রচলন রয়েছে।
অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান অবশ্য খাদ্যতালিকা থেকে ডিম পুরোপুরি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, এমন কোনো ঝুঁকিপূর্ণ খাবার গ্রহণ না করে তার জায়গায় স্বাস্থ্যসম্মত কিছু গ্রহণ করা উচিত।
তবে তার মত সকলেই ডিম ছেড়ে তার বিকল্প খাদ্য গ্রহণ করতে উৎসাহী হবে না। শেষমেশ, ভ্যান হর্নের ভাষ্য অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে কিছুদিন পরপর খাওয়া ডিম কারও ক্ষতি করবে না। বরং, বেকন বা সসেজের মত খাদ্যই দেহের জন্য ক্ষতিকারক।
সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট