প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আরও দুটি বোয়িং কেনার ইঙ্গিত

মঙ্গলবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বিমানের বহরে চতুর্থ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’ যুক্ত হল। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য আরও দুটি বোয়িং কেনার ইঙ্গিত দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে বিমানগুলো রয়েছে সেগুলো ছাড়াও বিমানের বহরে আরও তিনটি ড্যাশ বোম্বাডিয়ার বিমান যোগ হবে। আমরা আরও একটি খবর পেয়েছি যে, বোয়িং শিগগিরই তাদের আরও দুটো বিমান বিক্রি করবে।”
বোয়িংগুলো কেনার অর্ডার এখনও কেউ দেয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুযোগটি গ্রহণের কথা বললেন।
জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বহরে ‘রাজহংস’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির ১০টি নতুন বিমান কেনার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি করে। সে অনুযায়ী বোয়িং ইতোমধ্যেই চারটি ৭৭৭-৩০০ইআর ও দুটি ৭৩৭-৮০০ এবং চারটি ড্রিমলাইনার বিমানকে হস্তান্তর করেছে।
২০১৮ সালের আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ ও ‘হংসবলাকা’ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। এ বছরের জুলাই মাসে তৃতীয় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘গাঙচিল’ ঢাকায় অবতরণ করে।
১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে চতুর্থ বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার যুক্ত হয়েছে। সেদিন বিকেলে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বিমান কারখানা থেকে সরাসরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।এটি জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের বহরে যুক্ত ১৬তম বিমান।
বিমানের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ড্রিমলাইনারগুলোর নাম দিয়ে থাকেন।
২৭১ আসনের ‘রাজহংস’ বোয়িং ৭৮৭-৮ কে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি জ্বালানি-সাশ্রয়ী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বিমানটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম। তাছাড়া এটি ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ওয়াইফাই পরিষেবা দেবে।

রিজার্ভ বৃদ্ধি ও উন্নয়ন
দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ভালো রয়েছে। কাজেই নিজস্ব অর্থে আরও দুটি বিমান কিনলে সমস্যা হবে না উল্লেখ করে তিনি যাত্রীসেবা বাড়ানোয় মনেোযোগ দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। দেশের ভৌগলিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে যাত্রী-পরিবহন বাড়াতেও কাজ করতে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবসময় আমরা রিজার্ভ হিসাব করি এ কারণে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে খাদ্য কিনতে হলে যেন তিন মাসের খাদ্য আমরা কিনতে পারি। সে পরিমাণ অর্থ জমা থাকতে হবে। এর অতিরিক্ত অর্থ রেখে দেওয়ার দরকার নেই। সেটা আমরা উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারি।”
ইতোমধ্যেই আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি জানিয়ে তিনি বলেন, “কাজেই, খুব যে আমরা বিপদে পড়ব তা নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য যে পরিমাণ মজুদের দরকার তা আমরা রাখছি।”
খাদ্য গুদাম বা সাইলোগুলোতে কুলিং সিষ্টেম করে দেওয়ায় সংরক্ষিত খাদ্য অন্তত দু’-তিন বছর ভালো থাকতে পারে। সব দিক বিবেচনা করেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাড়াতে হবে যাত্রীসেবা
প্রধানমন্ত্রী বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। সে সঙ্গে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বলেন।
তিনি বলেন, “যাত্রীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের বিষয়টা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমরা ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অনেক বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারব।”
সেটা সম্ভব হলে দেশ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
এবারের হজ ফ্লাইট সুচারুরূপে পরিচালিত হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঠিক একইভাবে যেন আমাদের যাত্রীরাও অন্যান্য জায়গার যাত্রীরাও ভালোভাবে যাতায়াত করতে পারেন।”
বিমানবন্দর উন্নয়নের সরকারি উদ্যোগ
তাঁর সরকার বিমানের বিভিন্ন বন্ধ স্টেশনগুলো নতুনভাবে খোলার ওবং নতুন গন্তব্য তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে।এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইনশাল্লাহ লন্ডনে আমরা আরও দুটি স্লট নিতে পারব। সেটা ম্যাঞ্চেস্টারে হলে ভালো হয়। কারণ নর্থ ইংল্যান্ডে বসবাস বাঙালিদের এ ধরনের একটি দাবি রয়েছে।”
পাশাপাশি বোয়িং-এর ড্রিমলাইনার নিয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে যাওয়ারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে নতুন নতুন বিমানবন্দর গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান বিমানবন্দরগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলায় তাঁর সরকারের প্রতিটি উদ্যোগের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বিমান বন্দরটির উন্নয়ন হয়েছে।সিলেট, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল এগুলো ২০০১ সালের পর একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও সেগুলো চালু ও মান উন্নয়নের কাজ চলছে। কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে তৈরি করে সেখানে বড় বিমান নামার ব্যবস্থা হচ্ছে। সে সঙ্গে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল তৈরির কাজটিও চলছে।
“এখানে কর্মচাঞ্চল্য যেমন বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে,” বললেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা জানিয়ে তিনি দেশের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের কথা বলেন।