ক্যাসিনো-কিং সম্রাট চান দেশ ছাড়তে

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের অবস্থা কদিন আগেও ছিল ভিন্ন। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি ক্ষমতা দেখিয়েছেন। যেখানেই যেতেন, সঙ্গে থাকত শত শত কর্মী।
বুধবার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর দায়ে পুলিশ গ্রেফতার করার পর সম্রাট নিজের অফিসে অনেকটা লুকিয়েই রয়েছেন বলতে গেলে।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তার বিরুদ্ধে প্রমাণপত্র সংগ্রহের আগেই দেশ ছেড়ে যাওয়া তার উদ্দেশ্য।
যুবলীগের কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন, সম্রাট বুধবারেই বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ধরে ফিরিয়ে দেয়। ক্যাসিনো অভিযান শুরু হতেই সম্রাট যে কোনো মূল্যে দেশ ছাড়তে চাচ্ছিলেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা থানার একজন কর্মকর্তা জানালেন, “শুরুতে উনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রভাবিত করতে চেষ্টা করছিলেন। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে মেডিকেল চেকআপের নামে তিনি দেশ ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন।”
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে ফোনালাপে সম্রাট বললেন, “আমার হার্টের সমস্যা আছে। গত বছর সিঙ্গাপুরে আমার জটিল একটা অপারেশন হয়েছে। আমার বুকে পেস-মেকার বসানো আছে। প্রতি মাসে মেডিকেল চেকআপের দরকার হয়। সেজন্য বিদেশে যাই।”
লোকে যেভাবে ভাবছে সেটা ঠিক নয়, নিজের অফিসে তিনি লুকিয়ে নেই, এমনটাও দাবি করলেন। বরং দিনের বেশিরভাগ সময় সেখানেই থাকেন তিনি, সেটা জানালেন।
বুধবার রাতের পর অফিস ছাড়লেন না কেন সেটা জিজ্ঞেস করলে শরীর খারাপের কথা বললেন। আর এ সময় তার বিশেষ কোনো কাজ বা প্রোগ্রামও নাকি নেই।
বুধবারের অভিযান শুরুর আগে সম্রাট সাধারণত অনুসারীদের নিয়ে নানা মিটিং করতেন। দলের সেমিনার, মিছিল আর নানা কর্মসূচিতে উপস্থিত হতেন। বিভিন্ন সালিশিতেও ছিলেন সরব।
অভিযানের রাতে নিজের অফিসে সম্রাটের অবস্থান নেওয়ার শুরুতেই শত শত কর্মী সেখানে চলে আসেন, যাতে পুলিশ তাদের নেতাকে গ্রেফতার করতে না পারে। মধ্যরাতের পর যুবলীগের কর্মীরা বাড়িটি ঘিরে রেখে সম্রাটের প্রশংসা করে শ্লোগান দিতে শুরু করলেন।
তারপর অবশ্য নেতাকে পাহারা দেওয়া কর্মী ও অনুসারীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে লাগল। যুবলীগের কিছু সূত্র থেকে জানা গেছে, সম্রাটের গুলশানের বাসার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের একজন কর্মী বললেন, “পুলিশি অভিযান শুরুর আগে রোজ তাকে দেখতে শত শত লোক আসত। এখন সবাই তার সঙ্গে দেখা করতে ভয় পাচ্ছে।”
কাকরাইলের ‘সম্রাট ভবন’টি আটতলা। সেখানে সম্রাটের অফিসের ভেতরে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভবনের পঞ্চম তলায় রয়েছেন তিনি। গুটিকয়েক যুবলীগ কর্মী বাড়ির প্রবেশমুখ ও চারপাশ ঘিরে রেখেছেন। ওরাই বাধা দিচ্ছেন সবাইকে ভেতরে যেতে, এমনকি সাংবাদিকদেরও।
ভবনের বাইরে পাহারারত এমন এক কর্মী বললেন, “যারাই উনার সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাইছে তাদের পরীক্ষা করছি আমরা। যে কোনো মূল্যে উনাকে রক্ষা করব আমরা। কেউ তার ক্ষতি করতে পারবে না— র্যাব বা পুলিশও না।”
এখন সম্রাটের পাশে আছেন বিশ কী ত্রিশ জনের মতো অনুসারী। ওরাই তাকে রক্ষা করছেন, রান্না করেও খাওয়াচ্ছেন। তবে ওরাই জানালেন, সম্রাট তার এখনকার অবস্থা নিয়ে খুবই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিযেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জাদান খান কামাল। সম্রাটের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, সম্রাটকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিগগির তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।