খুলছে মিরপুরের গ্যালারি, তবে টিকেট পাবেন না দর্শকরা

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমেছে। নতুন আক্রান্তের হার ধীরে ধীরে কমে আসছে। এ কারণে মাঠে দর্শক ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফ পর্বের ম্যাচগুলোয় মিরপুরের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন তিন-চার হাজার দর্শক। তবে সাধারণ দর্শকদের কাছে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না।
অবাক শোনালেও এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে। দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে টিকেট কিনে নেবে অংশগ্রহণকারী ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজি। তারা তাদের ইচ্ছামাফিক টিকেট বণ্টন করবে। রোববার এমনই জানিয়েছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু।
দর্শক ফেরানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাসের জন্য আমাদের যে একটা স্থবিরতা ছিল যে, মাঠে দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া বন্ধ ছিল। তো সরকারের সঙ্গে আমাদের কথার প্রেক্ষিতে ও বিসিবি প্রধানের আন্তরিক চেষ্টায় কিছু সংখ্যক দর্শককে মাঠে নিয়ে আসার জন্য অনুমতি পেয়েছি। তিন থেকে চার হাজার দর্শক মাঠে খেলা দেখতে আসতে পারবেন।'
টিকেট বিক্রি শুরু হলে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা বিসিবির। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারটি মাথায় রেখে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, 'ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আমাদের কাছ থেকে টিকিট কিনে নিচ্ছে, আমরা সেভাবে বরাদ্দ করছি। আমরা যদি উন্মুক্ত বিক্রিতে যাই, তাহলে কোভিড প্রটোকল মানা কষ্ট হয়ে যাবে।'
'দর্শকরা পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে থাকবে, যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সীমিত আকারে টিকেট রাখা হয়েছে, সেহেতু তিন থেকে চার হাজার দর্শক যেন পুরো স্টেডিয়ামের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে পারে এবং একটা দূরত্ব মেনে বসতে পারে, সে জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।' যোগ করেন তিনি।
তিন-চার হাজার দর্শকের কথা বলা হলেও সব টিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে না। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি জানিয়েছে, এমনিতেই ১৭০টি টিকেট পেয়ে থাকে তারা। এবার তাদেরকে ৩০০ টিকেট কেনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব টিকেট তারা বাইরে বিক্রি করবে না। দলের সঙ্গে যুক্ত স্পন্সর ও তাদের স্বজনদের মধ্যে এগুলো বণ্টন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ দর্শকদের টিকেট কেনার সুযোগ নেই।
বিপিএলে অংশ নেওয়া ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ৩০০ করে টিকেট কিনতে সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০০। সেক্ষেত্রে অর্ধেক টিকেট থেকে যাবে বিসিবির কাছে। এসব টিকেটও সাধারণ দর্শকের কাছে বিক্রি করা হবে না। বিভিন্ন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, কাউন্সিলর, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এসএসসি) ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এসব টিকেট কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে বরাদ্দ রাখা হবে।
গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ দিয়ে মাঠে দর্শক ফেরানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে বিপিএলে দর্শকশূন্য মাঠে খেলা হয়ে আসছিল। প্রকোপ কমায় এবার দর্শক ফেরানো হচ্ছে। তবে মাঠে এসে খেলা দেখতে হলে বিসিবির কিছু শর্ত মানতে হবে দর্শকদের।
তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, 'আমাদের যে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারগুলো আছে, সরকারের যে নির্দেশনা আছে, সেগুলো মেনে এখানে আসতে হবে। মাস্ক তো অবশ্যই পরতে হবে, দুটি ভ্যাকসিন যাদের নেওয়া আছে, তারা আসতে পারবে এবং টিকার সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে, কালকের ম্যাচ থেকে।'
বিপিএলের পরপরই বাংলাদেশ-আফিগানিস্তান সিরিজ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে সিলেটে ক্যাম্প করতে চলে গেছে আফগানরা। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। এই সিরিজে মাঠে দর্শক রাখার পরিকল্পনা করেছে বিসিবি।
বিপিএলে তিন-চার দর্শক অনুমতি দিলেও আফগানিস্তান সিরিজে দর্শক সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানান বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, 'আশা করি আফগানিস্তান সিরিজে দর্শক সংখ্যা বাড়বে, কারণ দর্শক না থাকলে মাঠে প্রাণ থাকে না। চাই যে দর্শকরা যেন আসতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের বিধি নিষেধ মানতে হবে।'
আফগানিস্তান সিরিজে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা পদ্ধতিও (ডিআরএস) থাকবে বলে জানান তানভীর আহমেদ টিটু। তবে বিপিএলের শেষ পর্যায়ে ডিআরএস রাখার পরিকল্পনা থাকলেও সেটা হচ্ছে না, 'ডিআরএস পরিচালনার জন্য যে সরঞ্জাম দরকার, সেগুলো এরই মধ্যে বাংলাদেশে চলে এসেছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে সেগুলো পরিচালনা যারা করবেন, তারা এখনও এসে পৌঁছাননি।'
'তারা আসতে পারছে না, তবে আমরা আশা করেছিলাম বিপিএলের এই রাউন্ড থেকে হয়তো পাব। সেটা মনে হয় হচ্ছে না। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ডিআরএস থাকবে, এটা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিপিএলে মনে হয় আর ডিআরএস রাখা সম্ভব হচ্ছে না।' যোগ বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান।