প্রিমিয়ার লিগের বৈঠক ‘শুধুই সময় নষ্ট’, বিদ্রোহ করে বসতে পারেন খেলোয়াড়রা

লিগ কর্তৃপক্ষের ডাকে প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবের অংশগ্রহণে হওয়া বৈঠককে 'সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু না' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন টটেনহাম হটস্পার ম্যানেজার অ্যান্তনিয়ো কন্তে। কোভিড সংকটের মাঝেও খেলোয়াড়দের কল্যাণের কথা বিবেচনাতে না আনায় খেলোয়াড়রা বিদ্রোহ করে বসতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন ম্যানচেস্টার সিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা।
কোভিড ১৯ মহামারীতে আবারও কাবু হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ। করোনার প্রকোপে গত দুই সপ্তাহে লিগজুড়ে স্থগিত হয়েছে মোট ১৩টি ম্যাচ। এই সংকটকালে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে সব ক্লাবের ম্যানেজারদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি বৈঠকের আয়োজন করে প্রিমিয়ার লিগ।
স্পার্স কোচের দাবি, সে বৈঠকে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল লিগ কর্তৃপক্ষ। কন্তে বলেন, "হ্যাঁ, এটা সময় নষ্ট ছাড়া কিছু না। গতকালের বৈঠকে মনে হচ্ছিল সবাই দেয়ালের উদ্দেশ্যে কথা বলছে। এইজন্য আমি কিছু বলতেই চাইনি।
"কারণ দেয়ালের উদ্দেশ্যে আপনি যা বলার বলতে পারেন, এবং কী দরকার তা চাইতে পারেন, কিন্তু প্রতিটি সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া ছিল।"
নরউইচ সিটি ম্যানেজার ডিন স্মিথও একই দাবি করেছেন।
লিগজুড়ে খেলোয়াড়-কোচসহ মোট ৯০ জনের মতো এখন করোনায় আক্রান্ত। কন্তের দলও করোনার প্রকোপে হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত তাদের দুটি ম্যাচ স্থগিত হয়েছে- ব্রাইটনের বিপক্ষে লিগ ম্যাচ ও রেনের বিপক্ষে ইউরোপা কনফারেন্স লিগের ম্যাচ৷
বড়দিনের সময়ে এমনিতেও বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ম্যাচের পরিমাণ বেশি থাকে। ডিসেম্বরের শেষ দুই সপ্তাহে সব ক্লাবের জন্যই গড়ে ছয়টি করে ম্যাচ বরাদ্দ রেখেছে লিগ কর্তৃপক্ষ। এই ফিক্সচারের ঘনত্বের কারণে করোনা সংকট আরও বাড়ছে বলে দাবি করছেন কন্তের মতো অনেকেই। তাই দাবি উঠেছিল কয়েকদিনের জন্য পুরো লিগই স্থগিত করার।
কিন্তু বড়দিনের সময়কার ম্যাচগুলোর সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া প্রিমিয়ার লিগ সেদিকে কানই দিতে চাইছে না। করোনা সংক্রমণের জন্য মূল একাদশ গড়তেই অপারগ যেসব দল, তাদের ম্যাচ স্থগিত করে বাকি ম্যাচগুলো যেকোনো মূল্যে খেলানোর পরিকল্পনা করেছে লিগ কর্তৃপক্ষ।
খেলোয়াড়দের ভালো-মন্দের কথা বিবেচনা না করে লিগ কর্তৃপক্ষের এমন 'অমানবিক' সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না কোনো ক্লাবই। লিভারপুল এবং ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসন এই সপ্তাহের শুরুতে বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, "খেলোয়াড়দের কল্যাণের কথা কেউই গুরুত্ব সহকারে নেয় না।"
খেলোয়াড়দের শারীরিক সামর্থ্য ও মানসিক প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করে দিন দিন ফিক্সচারের ঘনত্ব বাড়ানোয় ফিফা, উয়েফা, প্রিমিয়ার লিগের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অনেকদিন ধরেই নাখোশ খেলোয়াড় ও ম্যানেজাররা। এ মাসে এসে সেই অসন্তোষের পরিমাণ প্রায় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
ম্যান সিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা তো বিদ্রোহের ডাকই দিয়ে বসলেন। গতকালকের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কাতালান বলেন, "খেলোয়াড় ও ম্যানেজারদের এক হয়ে বিদ্রোহ করা উচিত। শুধু মুখের কথায় এসব সমাধান হবে না। ফিফা, প্রিমিয়ার লিগ, সম্প্রচারকারী সবাই শুধু ব্যবসার কথাই ভাবে। তাদের কাছে খেলোয়াড়দের সুস্থতা তেমন জরুরী না।"
লিভারপুল ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ, এভারটন ম্যানেজার রাফা বেনিতেজসহ বেশ কয়েকজন প্রিমিয়ার লিগ ম্যানেজার এই সপ্তাহে লিগ কর্তৃপক্ষের ফিক্সচার ব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা করেছেন।