নারী ফুটবলারকে চুমু খাওয়ার দায়ে লুইস রুবিয়ালেসের জরিমানা

২০২৩ সালের নারী বিশ্বকাপের ফাইনালের পর ফুটবলার জেনিফার হারমোসোকে অনুমতি ছাড়া চুমু খাওয়ার ঘটনায় স্পেনের রয়্যাল ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সাবেক সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসকে দোষী সাব্যস্ত করেছে স্পেনের ন্যাশনাল হাই কোর্ট।
বিচারক হোসে ম্যানুয়েল ক্লেমেন্তে ফার্নান্দেজ-প্রিয়েতো যৌন নিপীড়নের দায়ে রুবিয়ালেসকে ১১ হাজার ২৮৮ ডলার জরিমানা করেছেন। তবে চুমুর পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে হারমোসোর ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
রায়ের শর্ত অনুযায়ী, আগামী এক বছর রুবিয়ালেস হারমোসোর ২০০ মিটারের মধ্যে যেতে পারবেন না এবং তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও করতে পারবেন না। পাশাপাশি, হারমোসোকে তিন হাজার ১৩৮ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ার অর্ধেক খরচ বহন করতে হবে। তবে স্প্যানিশ ফুটবলারদের অ্যাসোসিয়েশনের দায়ের করা মামলার ব্যয় এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
এছাড়া, আদালত একই মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন ব্যক্তিকে—স্পেনের পুরুষ দলের সাবেক পরিচালক আলবার্ট লুকে, নারী দলের সাবেক কোচ হোর্হে বিলদা ও ফুটবল ফেডারেশনের বিপণন বিভাগের সাবেক প্রধান রুবেন রিভেরাকে—জবরদস্তি তথা চাপ প্রয়োগের চেষ্টার অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন।
প্রসিকিউশন রুবিয়ালেসের জন্য আড়াই বছর এবং অপর তিনজনের প্রত্যেকের জন্য ১৮ মাসের কারাদণ্ড চেয়েছিল।
বিচারক ফার্নান্দেজ-প্রিয়েতো বলেন, 'অভিযুক্তের আচরণ বিক্ষিপ্ত ঘটনা হওয়ায় এবং তার জন্য বিশেষ কোনো পুনর্বাসনের প্রয়োজন না থাকায় তাকে জরিমানা করা হয়েছে।' তবে তিনি এটিও স্পষ্ট করেন যে, রুবিয়ালেসের কর্মকাণ্ড যৌন হয়রানির শামিল।
বিচার চলাকালে হারমোসো সাফ জানিয়ে দেন যে তিনি রুবিয়ালেসকে চুমুর অনুমতি দেননি এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সময় রুবিয়ালেসও তার অনুমতি চাননি।
বিচারক হারমোসোর বক্তব্যকে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ করেন এবং স্প্যানিশ হাই কোর্টও তা সমর্থন করেন। অন্যদিকে, রুবিয়ালেস আদালতে উল্টো দাবি করেন। তার আইনজীবী ওলগা তুবাউ যুক্তি দেন যে, হারমোসো নিজেও চুমুটিকে যৌন নিপীড়ন হিসেবে দেখেননি।
বিচারক ফার্নান্দেজ-প্রিয়েতো আরও বলেন, নারীর প্রতি সংঘটিত যৌন নিপীড়নের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে, যা উপেক্ষা করা যায় না।
তিনি রুবিয়ালেসের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেননি। ঘটনার ভিডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এই ভিডিও থেকে প্রমাণিত হয় না হারমোসা চুমুর সম্মতি দিয়েছিলেন। কারণ ক্যামেরায় তিনি পেছনে ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন, তাই কী উত্তর দিয়েছিলেন, তা জানা যায়নি।'
এছাড়া, বিচারক যুক্তি দেন, 'বিচার চলাকালে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি কেন তিনি হারমোসোকে ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন, যেখানে তিনি অন্য দলের খেলোয়াড়দের গালে চুমু খেয়েছিলেন।'
আদালত হারমোসো ও তার সতীর্থদের বক্তব্য সমর্থন করে জানায়, পুরস্কার বিতরণ মঞ্চ থেকে নামার পরপরই হারমোসো তার ভাই, বন্ধু ও সতীর্থদের কাছে চুমুর ঘটনায় 'অসন্তোষ' প্রকাশ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের প্রেক্ষাপটে আরএফইএফ তাকে রুবিয়ালেসের পক্ষে কথা বলার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছিল।
অন্যদিকে, রুবিয়ালেসের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
২০২৩ সালের ২৬ আগস্ট ফিফার নিষেধাজ্ঞার পর ব্যাপক জনঅসন্তোষ ও রাজনৈতিক চাপের মুখে ২১ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর রুবিয়ালেস শেষ পর্যন্ত আরএফইএফ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।