যে কারণে নির্বাচকের পদ ছাড়লেন হান্নান সরকার

খেলোয়াড়ি জীবনের পাট চুকিয়ে কোচিংয়ে নাম লিখিয়েছিলেন হান্নান সরকার। এরপর তার পরিচয় বদলে যায়, ক্রিকেটার তুলে আনার দায়িত্ব নেন। লম্বা সময় ধরে বয়সভিত্তিক নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় দলের সাবেক এই ওপেনার। গত বছর এসে হন জাতীয় নির্বাচক। কিন্তু এই দায়িত্ব পালনের এক পূর্ণ হতেই পুরনো পরিচয়ে ফেরার তাড়া অনুভব করেছেন করেছেন হান্নান, ছেড়ে দিয়েছেন নির্বাচকের পদ।
শনিবার রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন হান্নান। আগে থেকেই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন, তাই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে বিসিবি। নির্বাচকের পদ ছেড়ে আবারও কোচিংয়ে ফিরতে চান বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে ১৭ টেস্ট ও ২০টি ওয়ানডে খেলা হান্নান।
নির্বাচকের পদ ছাড়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে টিবিএসকে সাবেক ডানহাতি এই ওপেনার বলেন, 'মূলত আমি কোচিংয়ে ফিরতে চাচ্ছি, কোচিং করাতে চাচ্ছি। জাতীয় নির্বাচকের পদে থেকে তো কোচিং করানো যায় না, এটা সাংঘর্ষিক। যেকেনো একটাকে বেছে নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমার লম্বা ক্যারিয়ার বা ভবিষ্যতের জন্য একটা বেছে নিতে হবে কোচিংটাকে বেছে নেওয়া উচিত। নির্বাচক তো লম্বা ক্যারিয়ারের জায়গা না, দীর্ঘমেয়াদ সমাধান নয় বা দীর্ঘমেয়াদী কোনো ক্যারিয়ার নয়। তো সেই জায়গা থেকেই কোচিংকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নির্বাচকের পদ থেকে সরে আসা।'
নির্বাচক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করায় জায়গাটির প্রতি ভালোবাসা জন্মে গিয়েছিল। লম্বা ক্যারিয়ার বা নিজের ভবিষ্যতের কারণে পদটি ছাড়লেও সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না বলে জানান তিনি। হান্নান বলেন, 'নির্বাচকের পদটা আট বছর আট মাসের, লম্বা ক্যারিয়ার। অবশ্যই আলাদা একটা আবেগ কাজ করে। একটা জায়গায় এতোদিন কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই একটা আবেগ কাজ করে। জাতীয় নির্বাচক, তার আগে প্রায় সাড়ে আট বছর; জায়গাটার প্রতি আবেগ কাজ করবেই।'
'একটু তো আবেগী ব্যাপার ছিলই। কিন্তু বাস্তবতা আমার ভবিষ্যতের জায়গা থেকে চিন্তা করে ওই আবেগকে বিসর্জন দিতে হয়েছে আমাকে। তারপরও এতোদিন ধরে একটা জায়গা কাজ করে আসছিলাম, সেখান থেকে সরে আসাটা আবেগী একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিলে তো চলতে হবে, ভবিষ্যতের চিন্তাও করতে হবে, তো সেই জায়গা থেকেই সরে আসা। তবে আবারও আবেগী ব্যাপার ছিলই, কারণ আমি যখনই যেখানে কাজ করি, সৎভাবে সেই কাজটা করার চেষ্টা করি। ছেড়ে আসাটা কিছুটা কষ্টের ছিল, সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না।' যোগ করেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ধারাভাষ্যকার হিসেবেও কাজ করেছেন হান্নান। চলতি বিপিএলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে নিয়মিত ধারাভাষ্য দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও ভিডিও তৈরি করতে দেখা গেছে তাকে। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, 'ওটা আমার ব্যক্তিগত একটা বিষয়, ওটার সঙ্গে আমার চাকরির কোনো সম্পর্ক নেই, ওটা আমার পেশাও নয়। কখনও কখনও মনে হয়েছে কিছু ভিডিও বানানো, মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা বা সবাইকে জানানো; ওই জায়গা থেকে এটা করা। তবে ওটা আমার ক্যারিয়ার বা ভবিষ্যৎ নয়, আমার জীবনের একটা অংশ মাত্র।'
কোচিংয়ে ফিরতে যাওয়া হান্নান ইতোমধ্যে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দুই-একটি ক্লাবের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনায় মিললে আগামী প্রিমিয়ার লিগেই তাকে কোচিংয়ে দেখা যাবে। সাবেক এই ব্যাটসম্যানের ইচ্ছা আছে প্রথম শ্রেণি ও বিপিএলেও কোচিং করানোর। তবে তার বড় স্বপ্ন বাংলাদেশের কোনো দলে কোচ হিসেবে কাজ করা। হান্নান বলেন, 'স্থানীয় কোচদের শীর্ষ পর্যায়ে বিবেচনা করছে বিসিবি। আমারও ইচ্ছা শীর্ষ পর্যায়ে কিছু করার। নির্বাচকের পদ ছাড়লাম, আমি প্রস্তুত আছি কাজ করতে। বিসিবি মনে করলে আমি অমন দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি।'
বিসিবি থেকে লেভেল-টু কোচিং কোর্চ সম্পন্ন করেছেন হান্নান। ২০১৪ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই বছরই জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) ঢাকা মেট্রোর প্রধান কোচ ছিলেন হান্নান। একই বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) ইসলামী ব্যাংক ইস্ট জোনে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৬ ও ২০১৭ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রাজশাহী কিংসে সহকারী কোচ হিসেবে ছিলেন তিনি।