ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি ইংলিশ জয়গান?

একটা দলের বিশ্বকাপ মিশনে তাদের পুরনো দলের সঙ্গে কতোটা মিল থাকতে পারে? অস্ট্রেলিয়ায় চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত কয়েকদিনে এই প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশিবার উঠেছে। উত্তর মিলিয়ে প্রতিবারই অবাক সবাই। চেষ্টা করেও মিলছে না কোনো অমিল। ইমরান খানের সেই পাকিস্তান আর বাবর আজমের এই পাকিস্তানের ভাগ্য যেন একই কালি, অক্ষরে লিখেছেন ক্রিকেট ঈশ্বর!
৩০ বছরের ব্যবধানে দুটি দলের মিলের ব্যাপারটি এই কদিনে ভালো করেই পড়া হয়ে গেছে ক্রিকেটমোদীদের। তবুও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। মিলের প্রশ্নটি এখনও আছে, তবে সেটার রূপ পাল্টেছে। বিস্ময়ের সুরে সবারই জিজ্ঞাসা, এতো সময়ের ব্যবধানে দুটি দলের পথচলায় এতোটা মিল থাকতে পারে কীভাবে?
এতোটা না বলে পুরোপুরি মিল বলাই ভালো। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করা পাকিস্তান ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের পথে যেভাবে সামনে এগিয়েছিল, এবার ঠিক সেভাবেই শিরোপা থেকে নিশ্বাস দূরত্বে দাঁড়িয়ে। আর একটি ম্যাচ, যে ম্যাচে জয় মিললেই ইমরান খানের সেই বিশ্বকাপ যাত্রার প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায় এবারের পাকিস্তানের। তাতে একই বিন্দুতে নাম লেখা হয় ইমরান-বাবরের।
এই মিলে বাবররা অনুপ্রাণিত, যা সেমি-ফাইনালের আগেই তারা জানিয়েছে। কিন্তু এতে অবশ্য কিছুই যায় আসে না শিরোপার যোগ্য দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করা ইংল্যান্ডের। বরং এ নিয়ে মাথা ঘামালেই তো মানসিক বাধার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে! তাই ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারের ভাবনায় কেবলই নিজের দল ও ফাইনালে সর্বোচ্চটা দিয়ে নিজেদের সেরা প্রমাণ করার ব্যাপারটি। এ লক্ষ্যেই আজ পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড। ফাইনাল ম্যাচটি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে।
সেই পাকিস্তান, এই পাকিস্তান
১৯৯২ সালে শিরোপা জেতা পাকিস্তান সেমি-ফাইনালের আগ পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে পথ আগায়। প্রথম মিলটি প্রথম ম্যাচে, এমসিজিতে প্রথম ম্যাচে হেরে যায় ইমরানের দল। এবার বাবর আজমের দলও হার দিয়ে আসর শুরু করে। ৯২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ৩টি মাচে জেতে পাকিস্তান। এবার তারা শেষ তিনটি ম্যাচ জিতে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।
৩০ বছর আগের সেই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ দিনে গিয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে পাকিস্তানের। এবারও একইভাবে শেষ দিনে শেষ চারের টিকেট কাটে এশিয়ার এই ক্রিকেট পরাশক্তি। ইমরান খানের সেই পাকিস্তান সেমিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। এবারও একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান।
আরেকটি মিল ফাইনালের ভেন্যুতে। প্রথমবার রঙিন জার্সির প্রচলন হওয়া সেই আসরের ফাইনাল মাচটি এমসিজিতে অনুষ্ঠিত হয়, পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। এবারও একই ভেন্যু ও প্রতিপক্ষ। সেবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা উচিয়ে ধরে পাকিস্তান, এবার বাবরের সামনেও একই হাতছানি। সব মিলিয়ে ৯২ বিশ্বকাপের চিত্রনাট্য আবার ফিরে আসার অপেক্ষা।
লড়াইয়ের মূল জায়গা
ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল জেতার পর ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটিকে বলা হচ্ছে 'সেরাদের সেরা।' ভারতের দেওয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্য বিনা উইকেটেই পেরিয়ে যায় ইংল্যান্ড। বিধ্বংসী ব্যাটিয়ে দলকে ১০ উইকেটের বিশেষ উপহার দেন জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস। তবে পাকিস্তানও প্রস্তুত শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহকে নিয়ে। মোট কথা ইংলিশ ওপেনার ও পাকিস্তানি পেসারদের মধ্যকার লড়াই হবে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, যা নির্ধারণ করে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
দুই অধিনায়কের ভাষ্য
বাবর আজম: 'আমাদের শুরুটা ভালো ছিল না। এরপর যেভাবে দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাঘের মতোই খেলেছে সবাই। আশা করি এটা ধরে রাখব আমরা এবং যে মোমেন্টাম আমাদের আছে, তা ফাইনালেও কাজে লাগাবো। গত চার ম্যাচে দল হিসেবে যেমন, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও ছিল দারুণ কিছু।
আগেও আমরা বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলেছি, এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলেছি। এই ধারাবাহিকতা তাই বেশ কিছু সময় ধরেই চলছে। তবে আমাদের স্বপ্ন ট্রফি জয়ের। আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস আছে, পরস্পরের প্রতি আস্থা আছে যে আমরা পারব। ফাইনালে উঠেছি, চেষ্টা থাকবে ভালো করার।'
জস বাটলার: 'স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ নিয়ে অনেক উত্তেজনা কাজ করছে। যেকোনো সময় বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়াটা অনেক বড় সম্মানের। দল হিসেবে আমরা সবাই রোমাঞ্চিত, দেখে মনে হচ্ছে দলের চারপাশের অবস্থা দারুণ আছে। স্বাভাবিকভাবেই আগের পারফরম্যান্স (সেমি-ফাইনাল) আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। যদিও এই ম্যাচে এসব হিসাব করার সুযোগ নেই। প্রতিটি ম্যাচই নতুন, কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নতুন শুরু করি। যেকোনো সময়ে শিরোপার লড়াই নামবেন, সেটা সহজ হবে না, এটা সবাই জানে।
পাকিস্তান একাদশ (সম্ভাব্য): বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস, শান মাসুদ, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ, শাদাব খান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, ও শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ইংল্যান্ড একাদশ (সম্ভাব্য): জস বাটলার (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), অ্যালেক্স হেলস, দাভিদ মালান/ ফিল সল্ট, বেন স্টোকস, হ্যারি ব্রুক, লিয়াম লিভিংস্টোন, মঈন আলী, স্যাম কারান, ক্রিস ওকস, মার্ক উড/ক্রিস জর্ডান/ডেভিড উইলি ও আদিল রশিদ।