পাকিস্তানের শাসন নাকি গেরো কাটাবে নিউজিল্যান্ড?

৩০ বছর আগের ঘটনা হঠাৎ-ই আলোচনায়। সেই ঘটনার সাথে মিলিয়ে অনেকেই বলছেন, 'হয়ে যেতে পারে তেমন কিছু।' টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কভার করা করতে আসা এক পাকিস্তানী সাংবাদিক যেমন খুব বিশ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন, 'ইমরান খানের মতো অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে বাবর আজমেরও। কেন জানি এটা ভেতর থেকে বলছে।'
ধুঁকতে ধুঁকতে এগোতে থাকা পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত দান মেরেছিল, জিতেছিলো ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ইমরান খানের হাতে উঠেছিল স্বপ্নের শিরোপা। এবার বাবরের দলেরও অনেকটা একইরকম পথচলা। শুরুর দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া দলটি পরের তিন ম্যাচে টানা জয়ে সেমির টিকেট কেটেছে পাকিস্তান।
আরও মিল খোঁজা হচ্ছে প্রতিপক্ষের কারণে। ইমরান খানের দল সেমি-ফাইনালে লড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এক ওভার বাকি থাকতে সেই ম্যাচে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। এবারও প্রতিপক্ষ সেই নিউজল্যান্ড, শুধু লড়াইয়ের মঞ্চটা আলাদা। সেই ম্যাচটি হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে, এবারের লড়াই সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
অস্ট্রেলিয়ায় চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে ৯ নভেম্বর সিডনিতে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। এই দুই দল বলেই ১৯৯২ বিশ্বকাপের পাশাপাশি আরও অনেক হিসাবই উঠে আসছে। যে হিসাবে সবখানেই এগিয়ে পাকিস্তান, এগিয়ে না বলে রাজত্ব বললেও ভুল হবে না।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। তিন সাক্ষাতেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে পাকিস্তান। ৯২ বিশ্বকাপের পর ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালেও নিউজিল্যান্ডকে হারায় পাকিস্তান। এরপর ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে সাক্ষাত হয় এই দুই দলের। কিন্তু এখানেও ভাগ্য বদলায়নি কিউইদের, লেখা হয় পাকিস্তানের শাসন করার গল্প।
ধুলোজমা স্মৃতি হাতড়ে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করতে পারে পাকিস্তান। যে সুযোগ নেই নিউজিল্যান্ডের। আবার সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও রেকর্ডেও পাকিস্তান এগিয়ে। সংক্ষিপ্ততম এই আসরে ৬টি ম্যাচ খেলেছে এই দুই দল। পাকিস্তান জিতেছে ৪টিতে এবং নিউজিল্যান্ড ২ ম্যাচে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৮ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ১৭ ম্যাচে, নিউজিল্যান্ডের ১১টিতে।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে, বিশেষ করে সেমি-ফাইনালে সব সময়ই ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড। এটা নিশ্চয়ই একটা ভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়াতে পারে কিউইদের সঙ্গে। মানসিক দিক থেকে এটা হতে পারে বাধাও। ছাড়া গত কয়েকটি আসরে দারুণ খেলেও শিরোপা ঘরে তুলতে না পারার আক্ষেপও সঙ্গী থাকবে তাদের।
২০১৫ বিশ্বকাপের পুরো আসরজুড়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলা নিউজিল্যান্ড ফাইনাল খেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শিরোপার লড়াইয়ে অজিদের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। ১০১ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে বড় জয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে মাইকেল ক্লার্কের দল। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও অজিদের মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড। এবারও ভাগ্য বদলায়নি, ৮ উইকেটের বড় জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে কখনই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিততে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলে আসা দেশটি কয়েকবার সুযোগ তৈরি করেও সোনালী শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। এই আক্ষেপ ঘোচানোর মিশনে পাকিস্তানকে হারিয়ে এগিয়ে থাকতে চাইবে কেন উইলিয়ামসনের দল। একই সঙ্গে নিশ্চয়ই লক্ষ্য থাকবে পাকিস্তান গেরো কাটানোর।
সুখস্মৃতি সাহস যোগায়, দুঃসহ স্মৃতি হতে পারে বাধা। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সংবাদ সম্মেলনে কেন উইলিয়ামসনকে এমনই এক প্রশ্ন করা হলো। কিউই অধিনায়ক অবশ্য নিজেদের সুখের স্মৃতিই মনে করতে চাইলেন, 'আমার আসলে সেসব দিনের কথা কিছুই মনে নেই। আমার বয়স কেবল দুই ছিল (নিরানব্বই বিশ্বকাপ)। তবে আমাদের নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। বেশ কিছু ভালো মুহূর্ত রয়েছে। আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে এখন একদমই ভাবছি না। আমরা সেমি-ফাইনালের ম্যাচ নিয়েই ভাবছি, যেটা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।'
পাকিস্তান শিবির অবশ্য ৯২ বিশ্বকাপকেই অনুপ্রেরণা মানছে। দলটির ব্যাটিং কোচ ম্যাথু হেইডেন বলেন, 'হয়তো সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই বিরানব্বই বিশ্বকাপের সঙ্গে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবেই ওই স্মৃতি থেকে প্রভাবিত হচ্ছি। আমরা প্রত্যেকেই এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝছি। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপ বড় প্রভাব রেখেছিল।'
ইমরানের খানের দলের বিশ্বকাপ মিশনের শুরু যে ভালো ছিল না, সেটাও মনে করালেন হেইডেন, 'পাকিস্তানের সেবারও বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো ছিল না। কিন্তু নক আউটে চলে আসার পর দারুণভাবে নিজেদের ফিরে পায় এবং বিশ্বকাপ জেতার মতো পারফরম্যান্স করে। এটাই বড় প্রতিযোগিতার ছন্দ। আপনি জানবেনও না কখন আপনি দৌড়ে টিকে আছেন।'