১১৭ দিন পর ক্রিকেটের ঘরে ফেরা

ক্রিকেট; শব্দটা আগের মতো করেই গত চার মাসে উচ্চারিত হয়েছে। তবে তাতে মিশে ছিল রাজ্যের হতাশা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা হয়েছে; কবে ফিরবে ক্রিকেট! অবশেষে অপেক্ষা ফুরোচ্ছে, মাঠে ফিরছে ক্রিকেট। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দিয়ে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নতুন সফর।
'নতুন সফর' শব্দ দুটি একটু খটকা বাধাতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলার ইতিহাস তো বিরাট লম্বা। সেখানে নতুন সফর হয় কী করে! কিন্তু এই সফরটা নতুনই। ১১৭ দিন পর মাঠে ফিরছে ক্রিকেট। লম্বা এই সময়ের অপেক্ষা যেমন যন্ত্রণা দিয়েছে, তেমনি বাস্তবতা শিখিয়েছে নতুনকে মেনে নেওয়ার।
বুধবার বিকেল চারটা থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট ম্যাচটি যেভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এভাবে কখনই কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। নিয়মের বেড়াজালে বন্দি হয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের।
প্রথম যে অস্বস্তির জায়গা, সেটা হলো মাঠ থাকবে দর্শকশূন্য। ক্রিকেটারসহ অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর বাইরে কোনো উপায় ছিল না স্বাগতিক দেশ ইংল্যান্ডের। অনেক ক্রিকেটারই দর্শকবিহীন মাঠে খেলা নিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এই ব্যাপারটি মেনে নিয়েই ব্যাট-বলের লড়াই শুরু করতে হচ্ছে তাদের।
কেবল দর্শকশূন্য মাঠই নয়, থাকছে বিধিনিষেধও। থুথু দিয়ে বলের এক পাশের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখার ব্যাপারটি টেস্ট ক্রিকেটের অতি চেনা দৃশ্য। এই কাজটি আর করা যাবে না। ভুলবসত হয়ে যেতে পারে। এ জন্য আম্পায়াররা সতর্ক করে দেবেন বোলারদের। তবে দুইবারের বেশি হয়ে গেলে পেনাল্টি হিসেবে গুনতে হবে ৫ রান।
উদযাপনেও মানতে হবে সতর্কতা। সাধারণত উইকেট পড়লে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদযাপন করতে দেখা যায় ফিল্ডিং করা দলের ক্রিকেটারদের। এ বিষয়টি নিয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, এভাবে যতটা কম উদযাপন করা যায়, ততই ভালো।
থাকছে শঙ্কাও, খেলা চলাকালীন কোনো ক্রিকেটার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। এ জন্য বদলি খেলোয়াড়ের নিয়ম করা হয়েছে। বদলি খেলোয়াড় চূড়ান্ত করার দায়িত্ব থাকবে ম্যাচ রেফারির ওপর। কনকাশন সাবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আক্রান্ত খেলোয়াড়ের কাছাকাছি মানের কোনো খেলোয়াড়কে বদলি হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে।
আরও পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় ম্যাচ অফিসিয়াল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকায় নিরপেক্ষ আম্পায়ার নিয়োগের নিয়মটি সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে। আইসিসির এলিট প্যানেলের ম্যাচ অফিসিয়াল ও আন্তর্জাতিক প্যানেল ম্যাচ অফিসিয়ালদের মধ্যে স্থানীয়দেরকে ম্যাচে নিয়োগ দেবে আইসিসি।
নিরপেক্ষ আম্পায়ার নিয়োগের ব্যাপারটি বাতিল করায় অভিজ্ঞ আম্পায়ারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই বিষয়টি বিবেচনা করে বাড়তি একটি রিভিউ যোগ করা হচ্ছে ম্যাচে। সঙ্কটকালীন এই সময়ে টেস্টের প্রতি ইনিংসে রিভিউ থাকবে তিনটি করে। এ ছাড়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির প্রতি ইনিংসে থাকবে দুটি করে রিভিউ।
নিয়মের বেড়াজালে খেলা শুরু হচ্ছে বলে অস্বস্তি কাজ করতে পারে ক্রিকেটারদের মধ্যে। কিন্তু ১১৭ দিন পর ক্রিকেটের জনক দেশে ফিরছে খেলাটি, এটা বড় স্বস্তি ক্রিকেটমোদীদের জন্য। গত ১৩ মার্চ সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সেই ম্যাচের পর বাকি সবকিছুর মতো কোয়ারেন্টিনে চলে যায় ক্রিকেটও।