মাশরাফিকে দলে নিতে লড়াইয়ে বরিশাল-খুলনা

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিনের ছুটিতে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। একক অনুশীলন দিয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে মাঠে ফিরতে শুরু করেন ক্রিকেটাররা। এরপর তিন দলের বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ শেষে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করেছে বিসিবি। অনেক ক্রিকেটারই মাঠের লড়াইয়ে ব্যস্ত, কিন্তু কোথাও ছিলেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা।
অবশেষে মাঠে ফিরেছেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ককে। দীর্ঘ ৯ মাস পর গত মঙ্গলবার মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেন মাশরাফি। মাঠে ফেরা মাশরাফিকে পেতে লড়াইয়ে নেমেছে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের দুই দল ফরচুন বরিশাল ও জেমকন খুলনা। মাশরাফিকে পেতে দুই দলই বিসিবির কাছে আবেদন করেছে।
হ্যামস্টিং চোটের কারণে প্লেয়ার্স ড্রাফটে নাম ছিল না মাশরাফির। তবে ওয়ানডের সফলতম অধিনায়ককে ড্রাফটের বাইরে থেকেও কোনো দল নিতে পারবে বলে জানিয়েছিল বিসিবি। একাধিক দল মাশরাফির প্রতি আগ্রহ দেখালে লটারি করা হবে বলে জানিয়ে রেখেছে বিসিবি। ফরচুন বরিশালের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান লটারির পক্ষেই ভোট দিচ্ছেন। তবে আগে আবেদন করায় মাশরাফিকে পাওয়ার আশায় তারা।
১ ডিসেম্বর আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা শুরু থেকে জানতাম যে মাশরাফি ফিট ছিল না এবং ড্রাফটের দিন তারা বলেছিল মাশরাফি ফিট হলে পাঁচটি দলই চাইলে তাকে নিতে পারবে। আমরা এখন জানতে পেরেছি, মাশরাফি ফিট হয়েছেন এবং গত পরশু আমরা আবেদন করেছি তাকে দলে চেয়ে। আশা করি, আমরা তাকে পাব।'
দুটি দল আগ্রহ দেখানোয় লটারির কথা বলছেন মিজানুর রহমান, 'এর মধ্যে খুলনাও তাকে পেতে আবেদন করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, এখন লটারিতে যেতে হবে বা অন্য কিছু হবে। তবে আমরা আশাবাদী যে আমরা মাশরাফিকে পাব। আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, আমরাই প্রথম দল যারা মাশরাফির জন্য অনুরোধ করেছি। খুলনা আজ পাঠিয়েছে।'
এ বিষয়ে জেমকন খুলনার ম্যানেজার ও বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল বলেন, 'মাশরাফি এমন একটা নাম, সে এমন একজন খেলোয়াড়, সবাই তাকে দলে নিতে চাইবে। আমরাও আগ্রহ দেখিয়েছি। এখানে কিছু ব্যাপার আছে। ওর খেলার ইচ্ছা, বোর্ড থেকেও আলাদা ফিডব্যাক নিতে হবে যে ও কী অবস্থায় আছে। এ ছাড়া ওর ফিটনেস কী অবস্থায় আছে, সেটাও দেখতে হবে।'
'বোর্ডের একটা পলিসি ছিল মাশরাফির ব্যাপারে। যেহেতু ড্রাফটে ওর নাম ছিল না, অনেক দল তাকে নিতে আগ্রহ দেখাতে পারে। এখন বিসিবির কী ধরনের পলিসি হবে, সেটা জানতে হবে। আমরা আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছি, বাকিটা এখন বোর্ডের ওপর। এখন দেখার বিষয় অন্য কোনো দল আগ্রহ দেখিয়েছে কিনা। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কে কীভাবে তাকে পাবে।' যোগ করেন তিনি।
মাশরাফিকে পেতে বুধবার বিসিবিতে আবেদন করেছে খুলনা। বিসিবির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে নাফিস ইকবাল বলেন, 'যেহেতু ও ড্রাফটে ছিল না, তাই তাকে নেওয়ার অধিকার পাঁচ দলেরই রয়েছে। এখন যার যে সময়ে টিম কম্বিনেশনে হবে, ওই দল ওভাবে ওকে নিতেই পারে। আমরা বিসিবিতে একটা মেইল করেছি যে মাশরাফিকে দলে নিতে আগ্রহী। এরপর বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।'
মাশরাফির ফিটনেস এবং তার খেলার ইচ্ছা সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করছে খুলনা। সাবেক এই সতীর্থকে নিয়ে নাফিস ইকবাল বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ও খেলতে পারবে কিনা। ও একটা দিন অনুশীলন করেছে। মাশরাফি আমার বন্ধু। ওর সাথে আমার প্রতিনিয়ত কথা হয়। মাশরাফি অনুশীলন শুরু করেছে বলে আমরা নিজেরাই আগ্রহ দেখিয়েছি। আমরা মাশরাফির প্রতি আগ্রহী। এটা বোর্ড এবং মাশরাফির ওপর নির্ভর করে যে ব্যপারটা কতদূর সামনে এগোচ্ছে।'
নাফিস ইকবাল জানিয়েছেন, কেবল মাশরাফি চাইলেই তাকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করবে খুলনা। তিনি বলেন, 'এটা তো ফ্র্যাঞ্চাইজির সিদ্ধান্ত না, এটা সম্পূর্ণ মাশরাফির সিদ্ধান্ত। ও কখন খেলতে চায়, ও বুঝবে। যদি সে মনে করে খেলতে পারবে, পুরোপুরি ফিট, তবে সে অবশ্যই বোর্ডকে জানাবে। এরপর বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর আমরা তাকে নিতে পারি। এটা আমাদের হাতে নেই।
ফিটনেসের কারণে নিজে থেকেই বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে ফেরার কথা ছিল তার। এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে মাস খানেক আগে থেকে অনুশীলন শুরু করেন ডানহাতি এই পেসার। কিন্তু অনুশীলনে রানিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান তিনি। এরপর থেকে বিশ্রামে ছিলেন মাশরাফি। চোট কাটিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও মাঠের লড়াইয়ে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি।