যে শিষ্টাচার শিক্ষা থেকে গ্যালারি ও টিমের ড্রেসিংরুম ঝাঁ চকচকে রেখে গেল জাপানিরা

কাতার বিশ্বকাপে শক্তিশালী দল জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে আনন্দে ভাসছে জাপান। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে আনন্দে ভাসলেও খেলা শেষে, স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে আবর্জনা পরিষ্কার করতে ভোলেননি জাপানি সমর্থকরা। শুধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিই নয়, ম্যাচ শেষে টিমের ড্রেসিংরুমও একেবারে চকচকে করে রেখে গেছেন জাপানিরা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নজির গড়ে করে আরো একবার প্রশংসা কুড়ালেন তারা।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় কাতারের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শুরু হয় জার্মানি বনাম জাপান ম্যাচ। এবারের বিশ্বকাপে এটিই ছিল জাপানের উদ্বোধনী ম্যাচ। প্রথম ম্যাচেই চারবারের ফুটবল চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় এশীয় দল জাপান। এ সময় গ্যালারিতে উল্লাসে ফেটে পড়েন জাপানি সমর্থকরা। তবে, এমন উল্লাসের মাঝেও খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্টেডিয়াম না ছেড়ে তাদেরকে উল্টো গ্যালারির আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, গ্যালারিতে পড়ে থাকা পলিথিন, পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট, খাবারের উচ্ছিষ্ট, এমনকি জার্মান সমর্থকদের ফেলে যাওয়া পতাকাও তুলে ব্যাগে ভরছেন জাপানিরা। সেইসঙ্গে ম্যাচ শেষে টিমের ড্রেসিংরুম ছাড়ার আগে, সে জায়গাটিও পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি করে গেছেন তারা।

জাপানের সমর্থদের কাছ থেকে এমন আচরণ এবারই প্রথম নয়। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপেও তারা একই কাজ করেছিলেন। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ১৬ রাউন্ডে বেলজিয়ামের কাছে ৩-২ গোলে হারার পর সেবারও স্টেডিয়াম পরিষ্কার করতে ভুলে যাননি 'ব্লু সামুরাই' ভক্তরা। ম্যাচ হেরে গেলেও সেবার দর্শকদের মন জিতেছিলেন তারা।
শুধু যে নিজের দেশের খেলা দেখার পরই জাপানিরা স্টেডিয়াম পরিষ্কার করেন, এমনটি নয়। রোববার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতার বনাম ইকুয়েডরের খেলা শেষেও স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে গ্যালারির আবর্জনা পরিষ্কার করে এসেছেন জাপানের ফুটবল ভক্তরা।
গ্যালারি পরিষ্কারে ব্যাস্ত জাপানি সমর্থক ড্যানোর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল জাজিরাকে তিনি বলেন, "আপনি যা বিশেষ বলে মনে করছেন, তা আসলে আমাদের কাছে অস্বাভাবিক বা বিশেষ কিছু নয়; এটি দৈনন্দিনের কাজ।"
"পরিষ্কার না করে আমরা কখনই জায়গা ছেড়ে যাই না। এটি আমাদের প্রতিদিনের শিক্ষার একটি অংশ," যোগ করেন তিনি।
কেন প্রতিবার স্টেডিয়াম পরিষ্কার করেন জাপানিরা?
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জাপানের সংস্কৃতির একটি অংশ। শৈশব থেকেই শিশুদেরকে পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেওয়া হয় সেদেশে।
২০১৮ সালে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্কট নর্থ বিবিসিকে বলেছিলেন, জাপানিদের জীবনযাত্রায় গর্ব প্রদর্শনের একটি উপায় হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
"ফুটবল ম্যাচের পরে গ্যালারি পরিষ্কার করার বিষয়টি বাচ্চাদের স্কুলেই শেখানো হয়, এটি তাদের শৈশবের প্রাথমিক আচরণেরই একটি সম্প্রসারিত রূপ। জাপানে বাচ্চারা তাদের স্কুলের ক্লাসরুম এবং হলওয়েও পরিষ্কার করে," বলেন তিনি।
জাপানে একটি প্রবাদ আছে- 'তাতসু তোরি আতো ও নিগোসাজু', যার আক্ষরিক অর্থ অনেকটা এরকম- 'যে পাখি উড়ে যায়, তার চলার পথকে সে কর্দমাক্ত (ময়লা) করে না'। জাপানের স্কুলগুলোতে শিশুকাল থেকেই বাচ্চাদের এই শিষ্টাচার শেখানো হয়।