ইরানের বিপক্ষে নিজেদের ফর্ম নিয়ে ভয়ে ইংল্যান্ড!

ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ তিন ম্যাচে মেহেদি তেরেমি করেছেন পাঁচ পাঁচটি গোল। তার পায়ের জাদুতেই এফসি পোর্তোর জয় সুনিশ্চিত হয় বায়ের লেভেরকাসেন- এর বিরুদ্ধে। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজের
তেরেমির অসামান্য ফর্ম, বিশেষত গ্রুপ ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের ব্যবধানের তীব্র উত্তেজনাকর জয় ছাড়া– পোর্তোর পক্ষে নকআউট রাউন্ডে যাওয়া ছিল অসম্ভব। অথচ এই পর্বকেই ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার আসর মনে করা হয়।
সুতরাং, নির্দ্বিধায় বলা যায়–সেরা ফর্মে থাকা তেরেমিই ইরানের জাতীয় দলে ফিরেছেন।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের তারকা হ্যারি ম্যাগুয়ার গত মার্চে খেলেছেন সর্বশেষ চ্যাম্পয়িন্স লীগ। এই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে জোয়াও ফেলিক্স- এর দেওয়া গোলে অ্যাটলেটিকোর বিরুদ্ধে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
এই মওসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগেই নেই ম্যান ইউ। অপরদিকে, প্রিমিয়ার লীগের জন্য নির্বাচিত একাদশে-ও ম্যানেজমেন্টের আস্থায় ছিলেন না ম্যাগুয়ার। লীগের মাত্র চারটি ম্যাচে ছিল তার উপস্থিতি। কিন্তু, বেশিরভাগ সময়েই মাঠের চেয়ে বেঞ্চে দেখা গেছে তাকে।
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ সোমবার (২১ নভেম্বর) বিশ্বকাপ যাত্রার প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের হয়ে অদম্য তারেমিকে সামলানোর দায়িত্ব নিতে হবে ফর্ম সংকটে ভোগা ম্যাগুয়ারকে। অর্থাৎ, তারিমির আক্রমণ থেকে ইংলিশ রক্ষণভাগ সামলানোর অন্যতম নির্ভরতা ম্যাগুয়ারের ওপরই। মোটেও সহজ নয় এই কাজ। যদিও ফিফার র্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ড রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে, আর ২০তম ইরান।

বিশ্বকাপ দলে ম্যাগুয়ারকে রাখার বিরুদ্ধেই যুক্তি দেয় তার ফর্ম। কারণ, টিম ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেটের কাছে বিকল্প অন্যরাও ছিল। তবে ২৯ বছরের এই তারকার প্রতি এক ধরনের টান আছে ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজারের।
ফর্মে না থাকলেও– নেতৃত্বের জন্য ম্যাগুয়ারকে মূল্যবান মনে করছেন তিনি। পেনাল্টি এরিয়ায় দুধর্ষ থাকাও তার একটি গুণ। সেটি কাজে লাগানোও সাউথগেটের কোচ হিসেবে দায়িত্বপালনকালের প্রতীক। এসব দিক থেকে ম্যাগুয়ার থ্রি লায়ন্সে অপরিহার্য।
কোচ হিসেবে সাত বছরে পা দিয়েছে গ্যারেথ সাউথগেটের মেয়াদ। এই সময়ে যথেষ্ট সাফল্য এনেছেন দলের জন্য। ফলে ইংলিশ জনতার আস্থাও অর্জন করেছে। পারফরম্যান্সে মন্দা থাকা নির্দিষ্ট কিছু জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়কে বাদ দেন না তিনি।
গত বিশ্বকাপে কিছু প্রতিযোগী সীমাবদ্ধতা থাকার পরও ম্যাগুয়ারের অবদান সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের অগ্রগতি। গত বছর পায়ের গোড়ালির ইনজুরি নিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পয়িনশিপ শুরু করেন তিনি, সেখান থেকে সেরে ওঠে একাদশে ফেরেন ফাইনালের দিকে ইংল্যান্ডের অগ্রগতির সময়ে। প্রতিযোগিতায় দেখিয়েছেন তার সর্বোচ্চটা।
ম্যাগুয়ারের এই রেকর্ডের ফলে ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের পর- দলটির সর্বোচ্চ অর্জনকারী ম্যানেজার হয়ে ওঠেন সাউথগেট।
তবে এতসব সাফল্য থাকার পরও তার উজ্জ্বল্য স্তিমিত হয়ে এসেছে। ইউয়েফা নেশনশ লীগে এবার সাউথগেটের তত্ত্বাবধানেই অবনতিও হয়েছে ইল্যান্ডের।
গত এক বছরের প্রতিযোগিতামূলক কোনো আসরের ম্যাচে জেতেনি থ্রি লায়ন্সরা। গত আট ম্যাচে দলটি ছিল গোলশূন্য। জুনে হাঙ্গেরির কাছে হারে ৪-০ গোলে।
এসব কারণে দোহায় ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে অনিশ্চয়তায় ঘেরা দুর্বল ইংল্যান্ড টিম নিয়ে হাজির হচ্ছেন সাউথগেট। আর প্রথম ম্যাচে জয়ের চাপটা স্বাভাবিকভাবেই থাকছে। বিশ্বকাপ একাদশের জন্য বাছাই করা খেলোয়াড়দের ফর্ম নিয়ে সমালোচনার মুখে– তিনি অনেকটা কৌশলী সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে রোমার স্টাইকার ট্যামি আব্রাহামকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন, 'ভুল সময়ে ফর্ম দুর্বল হওয়ায়' তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ফুটবল যুদ্ধে তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং দলের বিষয়ে ধারণাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যখন তার অংশ হলেন ম্যাগুয়ার এবং রহিম স্টারলিং- এর মতো তারকারা। দোহায় আজ তার আস্থার প্রমাণই দিতে হবে থ্রি লায়ন্সের একাদশকে।