দুর্বার আরিফুলে খুলনার অবিশ্বাস্য জয়

ইডেন গার্ডেন্সের দর্শকঠাসা গ্যালারি। কার্লোস ব্রাথওয়েটের ব্যাটের দিকে তখন কোটি চোখ তাক করা। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ১৯ রান। ইংল্যান্ডের পেসার বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারে প্রথম চার বলে ছক্কা মেরে খেল খতম করে দেন ব্রাথওয়েট।
সেই দৃশ্যই যেন ফিরিয়ে আনলেন আরিফুল হক। খুলনার এই ব্যাটসম্যান ম্যাচের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে চার ছক্কা মেরে দলকে উপহার দিলেন দারুণ এক জয়। তুলনাটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তবে দৃশ্যপটে দারুণ মিল। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের দ্বিতীয় ম্যাচের শেষ ওভারে চার ছক্কায় ২৪ রান তুলে খুলনাকে আনন্দে ভাসালেন আরিফুল।
ম্যাচসেরা আরিফুলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে জেমকন খুলনা। অথচ আরিফুলের শুরুর দিকের ব্যাটিং বিপদেই ফেলছিল দলকে। তার মন্থর ব্যাটিং নিশ্চিতভাবেই হতাশা বাড়াচ্ছিল জেমকন খুলনা শিবিরে। রান তোলার গতির চেয়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ১৫৩ রান তাড়ায় প্রথম ২১ বলে ১২ রান করেন তিনি। কিন্তু শেষ ১৩ বলে ৩৬ রান তুলে মুরুর সব হাতাশা মুছে দেন তিনি।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশাল। প্রথম বলেই উইকেট হারানো বরিশাল বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। পারভেজ হোসেন ইমনের হাফ সেঞ্চুরি, তৌহিদ হৃদয় ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ছোট ছোট ইনিংসে ৯ উইকেটে ১৫২ রান তোলে।
জবাবে প্রথম ওভারেই দুই উইকেট হারানো খুলনা প্রায় পুরোটা সময় ধরে ধুঁকেছে। শেষ ওভারেও অনিশ্চয়তার ঘেরাটপে বন্দি ছিল তারা। কিন্তু শেষ ওভারে সব অনিশ্চয়তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দলের ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন ৩৪ বলে ২টি চার ও ৪ ছক্কায় হার না মানা ৪৮ রান করা আরিফুল।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দুঃস্বপ্নের শুরু হয় জেমকন খুলনার। আগুনে বোলিংয়ে প্রথম ওভারেই খুলনার দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েসকে ফিরিয়ে দেন বরিশালের পেসার তাসকিন আহমেদ। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা সাকিব আর হাসান ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
যদিও তাদের জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলীয় সংগ্রহ ৩০ পেরোতেই বিদায় নিতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। ১৭ রান করে থামেন তিনি। কয়েক মুহূর্ত পর সুমন খানের শিকারে পিরনত হয়ে বিদায় নেন ১৫ রান সাকিবও। ৩৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় খুলনা। দিকাহারা দলকে টেনে নিতে থাকেন জহুরুল ইসলাম অমি ও আরিফুল হক।
এই জুটি থেকে ৪২ রান পায় খুলনা। তবে রান তোলার গতিতে পিছিয়ে ছিল তারা। জহুরুল স্বাভাবিক ব্যোটিং করলেও আরিফুল ছিলেন ঢিমে তালে। ২৬ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রান করা জহুরুলকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। অবস্থা কঠিন হলেও আরিফুলের সঙ্গে যোগ দিয়ে জয়ের আশা জিইয়ে রাখেন যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য শামীম পাটোয়ারি।
শামীম ২৬ রান করে ফেরার পর বাকি কাজটুকু আরিফুলকেই করতে হয়। যদিও একটা সময়ে জয়টা অসাধ্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ ওভারে স্পিন পেয়ে ছক্কার ফুলঝুরি সাজান নায়ক আরিফুল। বরিশালের তাসকিন আহমেদ ও সুমন খান ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
এরআগে ব্যাটিংয়ে নামা ফরচুন বরিশাল শুরুতেই হোঁচট খায়। প্রথম বলেই ফিরে যান ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুর চাপ অবশ্য কাটিয়ে তোলেন অধিনায়ক তামিম ও ও যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য পারভেজ হোসেন ইমন। ৩৮ রানের জুটি গড়েন তারা। তিথু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তামিম। ১৫ রান করে বিদায় নেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর আফিফ হোসেনও ফিরে যান। সাকিব আল হাসানের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জহুরুল ইসলাম অমির হাতে ক্যাচ দেন তিনি। গত বছরের ২ অক্টোবরের পর প্রথম উইকেট পাওয়ার তৃপ্তি নিয়ে সাকিব যখন পরের বল করার অপেক্ষায়, ফরচুন বরিশাল তখন ঘোর সঙ্কটে।
এখান দলকে টেনে তোলার কাজে মন লাগান পারভেজ হোসেন ইমন ও যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের আরেক সদস্য তৌহিদ হৃদয়। এই জুটিতে ৮১ রানে পৌঁছে যায় বরিশাল। এ সময় থামেন ৪ মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা ইমন। ৪২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তরুণ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
এরপর বরিশালের কোনো ব্যাটসম্যানই আর ইনিংস বড় করতে পারেননি। তৌহিদ হৃদয় ২৭, ইরফান শুক্কুর ১১, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ২১ ও তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ১২ রান করেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন খুলনার পেসার শহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া শফিউল ইসলাম এবং হাসান মাহমুদ ২টি করে ও সাকিব একটি উইকেট নেন।