Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
June 11, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, JUNE 11, 2025
প্রাণিকুল এবং আমরা 

ইজেল

শাহরিয়ার
18 January, 2025, 01:20 pm
Last modified: 18 January, 2025, 01:26 pm

Related News

  • ইরানে কুকুর নিয়ে চলাচলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

প্রাণিকুল এবং আমরা 

মানুষ কৃষিসভ্যতার আগে থেকেই কুকুর নিয়ে শিকারে যেত। কুকুর ছিল মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গী। নগর সভ্যতার আগে পরিবারের সব মানুষ কুকুর নিয়েই ঘুরত। গবাদিপশুর পাহারা দেওয়া থেকে একাকী হাঁটার সঙ্গী হিসেবে কুকুর সেই পাথর যুগ থেকে এই পর্যন্ত এসেছে। তাই কুকুরের সাথে খারাপ ব্যবহার করা ওই প্রাণিকুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
শাহরিয়ার
18 January, 2025, 01:20 pm
Last modified: 18 January, 2025, 01:26 pm

আমাদের পাড়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মন্টুকে নিয়ে আমার অনেক সন্দেহ। ওর বাবা একটা লন্ড্রি চালায়। সেখানে আমাদের বাসার কাপড় পাঠানো হয়। কিন্তু আমার অভিযোগ, ওখান থেকে সব কাপড় ফেরে না কেন? আমার স্ত্রী লন্ড্রিকে ডিফেন্ড করে: কী যা-তা বলছ! সব ফেরত আসে!

আমি চিৎকার করি: আমার কালো টি-শার্ট কই গেল তাইলে? ওই শার্টটাও দেখছি না কেন?

স্ত্রী: কী বলতে চাও?
আমি: মন্টু! নিশ্চয় মন্টু আমার গেঞ্জি-শার্ট মেরে দেয়!

আমার স্ত্রী এসব অভিযোগ গ্রাহ্য না করে মন্টুকে দিয়ে মাঝে মাঝে কাজ করায়। মন্টু যখন আসে, তখন সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের বলে, 'আগে আপনাগো কুকুর সরান!'

সে কুকুর খুব ভয় পায়। আমাদের বাসায় তিনটা কুকুর। বড়টা বু। পুরুষ। নীলক্ষেত থেকে সেই ২০১১ সালে আনা স্পিৎজ প্রজাতির ১০ কেজি ওজনের কুকুর। একটা কান নেতিয়ে থাকা চরম নিরীহ এবং ভীতু কুকুর। বু অন্য কুকুর দেখলে পালায়। 

দ্বিতীয়টা তার এক বছর ছোট বাবেলস। বাবেলস কমলা রঙের মিক্সড স্পিৎজ। সাইজে বুর অর্ধেক। কিন্তু ও হচ্ছে বাসার ডিফেন্ডার। মানে বাসায় কে ঢুকল, কে বের হলো, তাকে তা দেখতে হবে; অপছন্দ হলে ধাওয়া দেবে আর ঘেউ ঘেউ করবে। হ্যাঁ, ও কামড়েও দিয়েছে কয়েকজনকে। বাবেলস শুধু আমাদের বাসা না, বাসার সামনের রাস্তায় কে যাচ্ছে, ওই পাশের ছাদে কারা ঘুরঘুর করছে সেটাও খেয়াল রাখে। অন্য কুকুরদের দেখলে বারান্দার গ্রিল থেকে মাথা বের করে ঘেউ ঘেউ করে। এসব ঘেউ ঘেউ আমি সকালে হাঁটতে গিয়ে এক কিলোমিটার দূর থেকেও শুনেছি।

আর সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছে প্যাচেস, যার জন্ম, বাংলাদেশের অধিকাংশ জনতার মতো ১ জানুয়ারি। সত্যি! মানে ২০১৪ সালের ১ তারিখ বাবেলসের পেটে ওর জন্ম। বাবেলস ওর বাবার মতোই নিরীহ এবং একটু ছিঁচকাঁদুনে।

বু কিংবা প্যাচেস বাইরের লোকদের সমস্যা না! সমস্যা হচ্ছে বাবেলস!

তাই যখন মন্টু আসে, বাবেলসসহ সব কুকুর আমার স্টাডি রুমে রাখা হয়। সেদিনও তা-ই হয়েছিল। মন্টু রান্নাঘরে কোনো একটা সুইচ মেরামত করছিল। কোনো একভাবে বাবেলস ঘর থেকে বেরিয়ে মন্টুর দিকে তেড়ে গেছে। মন্টু বাবারে মারে বলে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে খাবার টেবিলের চারপাশ দিয়ে দৌড়াচ্ছে। বাবেলস তো মজা পেয়ে টেবিলের নিচ দিয়ে গিয়ে ওর গোড়ালিতে দিয়েছে কামড়! 

ওরে মা বলে মন্টু ধরাশায়ী! কেউ একজন বাবেলসকে ধরে আবার ঘরে ঢুকিয়েছে। কিন্তু মন্টু তো শেষ! যদিও কামড়টা সাদামাটা, মন্টু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, 'এখন আমার কী হইব!'

আমার স্ত্রী এসে সান্ত্বনা দেয়, চিন্তার কিছু নেই! তোমাকে ইনজেকশন দিয়ে দেব!

যতই ইনজেকশন দেওয়ার কথা আমার স্ত্রী বলুক, মন্টুর দুর্ভাবনার শেষ নেই, 'আমার পেটে কুকুরের বাচ্চা হইব!'

'এহ?'

'হ! কুত্তায় কামড়াইলে মানুষের পেটে বাচ্চা হয়!'

আমার স্ত্রীর ধমকে সেদিন মন্টু হাউমাউ করা থামিয়ে ইনজেকশন নিতে যায়! এরপর ৮-৯ বছর পার হয়ে গেছে, ওর পেটে কোনো কুকুরের বাচ্চা হয়নি! আমি ওকে বলেছিলাম, হলে আমি নিতে চাই!

মন্টুর মতো অনেকেই কুকুর নিয়ে অনেক ধরনের খারাপ ধারণা পোষণ করে! আসলে অনেকেই পশু-পাখি নিয়ে বাজে ধারণা পোষণ করে। তবে অধিকাংশ মানুষ অন্য প্রাণীদের নিয়ে কৌতূহলী এবং তাদের ক্ষতি করার কথা ভাবে না! আর কিছু মানুষ আছে, যারা প্রাণীদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল।

আসলে আমাদের আশপাশে যত গৃহপালিত পশু আছে, তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হাজার হাজার বছরের। জংলি নেকড়ে থেকে মানুষ কুকুরকে পোষ মানিয়েছে তার স্বার্থে; অথবা শুধু প্রাণীটাকে দেখে খুব ভালো লেগেছে বলে।

মানুষ কৃষিসভ্যতার আগে থেকেই কুকুর নিয়ে শিকারে যেত। কুকুর ছিল মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গী। নগর সভ্যতার আগে পরিবারের সব মানুষ কুকুর নিয়েই ঘুরত। গবাদিপশুর পাহারা দেওয়া থেকে একাকী হাঁটার সঙ্গী হিসেবে কুকুর সেই পাথর যুগ থেকে এই পর্যন্ত এসেছে। সেই কুকুরের সাথে খারাপ ব্যবহার করা ওই প্রাণিকুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। শুধু কুকুর কেন, আপনার আশ্রিত যেকোনো প্রাণীর সাথে দুর্ব্যবহার একদম অমানবিক! 

আমি কোরবানির হাটে বিক্রেতাকে গরু বিক্রির পর হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি। কেন সে তার গরু বিক্রি করে কাঁদে? গরু বিক্রি ছিল তার জীবিকা। কিন্তু মাঝখানে ওই গরু পালতে গিয়ে ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক হয়েছে। ওই গরু বিক্রেতাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছে। ওই গরু ওর আদরের জন্য প্রতিদিন কাছে এসেছে। এই সম্পর্ক মোচন করা অনেক কষ্টের।

আমরা ছোটবেলায় সবাই কমবেশি কোনো না কোনো প্রাণী পেলেছি। আমার ছোটবেলা হাঁস, মুরগি এবং কবুতর ভরা ছিল! কখনো কখনো যখন আঙ্গিনাসহ বাড়িতে উঠেছি, তখন বাবা গরু-ছাগলও বাসায় পেলেছে। তারপর শহর যত ইট দিয়ে ভরেছে, আমাদের শখের প্রাণী পোষাটাও কমে গেছে। কিছুদিন খাঁচায় পাখি পেলেছি, যদিও আমি খাঁচায় পোষা খুব অপছন্দ করি। ফেলেছিলাম আমার বাচ্চার শখে। সে চাইত কুকুর আর তার মা তার বদলে এনে দিয়েছিল লাভ বার্ড! কয়েক বছর পালার পর ওগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

ওই সময় আমার অ্যাপার্টমেন্ট বাসায় একটা মোরগ-মুরগি পালার ঘটনাও আছে। এর আগে আঙিনাওয়ালা বাসায় মুরগি পাললেও অ্যাপার্টমেন্টে পালা সেটাই প্রথম। মোরগটা প্রতিদিন ভোরে তার ঘর থেকে বের হয়ে লাফিয়ে আমার বিছানায় আমার পিঠের ওপর বসত! আমি যতক্ষণ না উঠি ততক্ষণ! 

এর পরের অ্যাপার্টমেন্টেও মোরগ-মুরগি ছিল! তাদের দিনের বেলায় নিচে পাঠিয়ে দিতাম; বিকেলে ঘরে আসত। একদিন মুরগিটা একা একা সিঁড়ি বেয়ে আমাদের পাঁচতলার ফ্ল্যাটের দরজায় ঠোঁট দিয়ে টোকা দিচ্ছে! কয়েকবার টোকা দেওয়ার পর আমার স্ত্রী দরজা খুলে মুরগিটা দেখে অবাক। মুরগিটা এক দৌড়ে পেছনের ঘরটায় চলে গেল। ওই ঘরে সে ঘুমায়। কী ঘটনা? একটু পর দেখা গেল মুরগিটা ডিম পেরেছে। আমার স্ত্রী এতে এত অবাক হয়ে গেল! মুরগিটা তার নিরাপদ জায়গায় ফিরে ডিম পারতে চেয়েছে বলে বাসায় ফেরত এসেছে।

সেই মুরগির ডিম ফুটে বাচ্চা হলেও ১ মাসের বেশি টেকাতে পারিনি!

আমার ছেলে আবার কুকুর আনতে চায়। একটা আহত রাস্তার কুকুরের বাচ্চা নিয়ে এল! আমার স্ত্রী সেটাকে বাসায় রাখতে দেবে না! গ্যারাজে জায়গা আছে ওখানে থাকুক। ওর নাম দিলাম মার্স। মার্স খুব নিঃস্বঙ্গতায় ভুগত, যেটা তখন আমরা বুঝতাম না। তার ওপর পাড়ার ভোম্বা সাইজের কুকুরগুলো গেটের সামনে এসে ওকে হুমকি-ধমকি দিত। ওর যখন ২ বছর বয়স, মার্স ওই কুকুরগুলোর ভয়ে আমাদের বাসা থেকে পালাল!

আমার ছেলে আবার কুকুরের জন্য কান্নাকাটি, বাসায় রাখবে এমন কুকুর চাই। আমি ভাবলাম ছোটবেলায় আমিও কুকুর পালতে চাইতাম, মা দিত না। তবে মা আমাদের আঙিনায় কুকুর পালার অনুমতি দিয়েছিল এবং দুটো কুকুর সেভাবে দুবছর পেলেছি (পরে ওরা চলে গিয়েছিল)। এখন আমি বুইড়া একটা লোক, পালতে সমস্যা কী? সমস্যা ছিল আমার স্ত্রীর। তবে সে কিছু শর্ত দিয়ে বাসায় কুকুর আনতে দিল। সেই এল বু! নীলক্ষেত থেকে ভীরু সাদা একটা কুকুর।

শর্ত ছিল কুকুর সোফায় কিংবা বিছানায় উঠবে না। প্রতি সপ্তাহে গোসল ইত্যাদি। সেই বু আস্তে আস্তে বাসার সবার প্রিয় প্রাণী হয়ে গেল। কখন ওকে আদর করে কোলে নিয়ে সোফায় বসেছি, মনে নেই। কুকুররা অন্য প্রাণীদের থেকে মানুষের সাথে ভিন্ন আচরণ করে। সে তার প্রিয় ব্যক্তির পায়ের কাছে বসে থাকবে। আপনি যেখানে যাবেন, সে উঠে আপনার পিছু নেবে। আপনি খেতে বসলে সে-ও এসে সেখানে বসে খাবার চাইবে। ওর জন্য আলাদা খাবার দিলেও আপনি যেটা খাচ্ছেন, সেটা থেকে কিছু চাইবে। আপনি যখন বাইরে থেকে ফিরে আসবেন, আপনাকে দেখে খুশিতে লাফাতে থাকবে। এসব আচরণ ওদের মস্তিকে হার্ডওয়ার করা আছে। মানে সব কুকুরই এসব করে।

বুর পর এল বাবেলস। তারপর এক যুগ আগে নববর্ষের রাতে আমি বিছানার পাশে বাবেলসকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। বাবেলস প্রেগন্যান্ট এবং কয়েক দিন ধরে বেশ অস্বস্তিতে আছে বলে আমি ওকে বিছানার পাশে এনে রেখেছি।

এর মধ্যে আমার মা অসুস্থ। মাকে তার বাসা থেকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি এবং স্টাডি রুমটা এখন মায়ের ঘর। অতএব, কুকুররা হয় আমার ঘর অথবা আমার ছেলের ঘরে থাকবে। আজ বাবেলস আমার ঘরে; কারণ, কুকুরটা আজ হয়তো বাচ্চা জন্ম দেবে। 

সকাল ৭টায় আমার ঘুম ভাঙল বাবেলসের শব্দে। তাকিয়ে দেখি ও বেশ অস্বস্তিতে নড়াচড়া করছে। মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর বাচ্চা হবে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে আমার ছেলের ঘরে চলে গেলাম। ও গত রাতে বন্ধুর বাসায় ছিল। এ ঘরটায় বাচ্চা রাখার প্রিপারেশন হিসেবে একটা বাক্স রাখা আছে। 

আমি বাবেলসকে একটা কাপড়ের ওপর রেখে পাশের বিছানায় আবার একটু ঘুম দিলাম। একটু পর বাবেলসের শব্দে ঘুম ভেঙে যেতেই দেখি, চোখের সামনে বাবেলস বাচ্চা দিচ্ছে। একটা ছোট্ট দলার মতো কিছু বের হয়ে এল। বাবেলস হাঁপাচ্ছে। পরমুহূর্তে বাবেলস ওই ছোট্ট দলাটাকে চেটে পরিষ্কার করল। আমি তাড়াতাড়ি আমার ফোনটা নিয়ে প্রথম বাচ্চার ছবি তুললাম। তারপর দ্রুতই দ্বিতীয় বাচ্চাটার জন্ম দেখলাম। এভাবে একে একে চারটা বাচ্চার জন্ম দেখলাম। জীবনে এই প্রথম চোখের সামনে একটা প্রাণীর জন্ম হওয়া দেখলাম। 

এবং এর মধ্যে দেখলাম বাবেলস কী করে বাচ্চাগুলো এক এক করে চেটে পরিষ্কার করে দুধ খাওয়ানো শুরু করল। এ যেন প্রকৃতির প্রোগ্রাম তৈরি করা। বাবেলস জানে তাকে কী করতে হবে। 

সেদিন বিকেলে বাবেলসের পঞ্চম বাচ্চাটা বের হলো; সেটি সবচেয়ে ছোট এবং এক মাত্র পুরুষ বাচ্চা।

৫ বাচ্চা নিয়ে বাবেলস তার মায়ের দায়িত্ব এক টানা দুই মাস পালন করল ওই ঘরে। বাচ্চাগুলো ওই বক্সে থাকে। দুর্দান্ত কিউট বাচ্চাগুলো। তবে যত কিউটই হোক, বাসায় তো এতগুলো কুকুর রাখা সম্ভব না। অতএব, দুমাস বয়স হতে হতে বিভিন্নজনকে বাচ্চাগুলোকে দিয়ে দিলাম। তার মধ্যে একজন একটা বাচ্চা ফেরত দিয়ে গেল; কারণ, সে নেওয়ার পর খাওয়াদাওয়া করে না আর সারা দিন কাঁদে।

সেই বাচ্চাটা শেষ পর্যন্ত আমাদের বাসায় থেকে গেল। ওর নাম দিলাম প্যাচেস।

এদিকে অসুস্থ মা যদিও কুকুর বাসায় থাকাটা পছন্দ করে না; এরা ছোট বলে সহ্য করে গেছেন। একদিন দেখি মা বসে খাচ্ছে, আর তার পেছনে বাবেলস বসে আছে। মা তাকে টুকটাক খাবার দিচ্ছে। কুকুরের বিষয়টাই এমন; পছন্দ না করলেও ওদের ঠিক ফেলে দিতে পারবেন না।

কয়েক মাস পর আমার মায়ের শারীরিক অবস্থা যখন শেষ পর্যায়ে, সেই সময় আমরা মেয়ে কুকুর দুটোকে এক এক করে নিউটার করে ফেললাম; যাতে ওদের বাচ্চা আর না হয়। কারণ, দেখলাম বাচ্চা হলে তাদের কার কাছে দিলে ভালো থাকবে, এটাও আমাদের ভাবতে হচ্ছে।

এই নিউটার অপারেশনটা কিন্তু মেজর। পেটে সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে বাবেলকে বাসায় যখন ফেরত আনলাম, তখন তার অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাব কাটেনি। যখন জ্ঞান পুরো ফিরে এল, সে দৌড়াদৌড়ি শুরু করল এবং সাথে সাথে তার রক্ত পড়া শুরু হলো। কী ভয়ংকর কথা। আমি গিয়ে ওর ব্যান্ডেজ সরিয়ে দেখি সেলাই একটু খুলে গেছে। ব্যান্ডেজটা খুব দায়সারাভাবে লাগানো ছিল। আমি আর আমার ছেলে মিলে তুলা-গজ ফিতা দিয়ে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে রক্তপাত সামলালাম। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে ওকে আবার সেলাই করলাম, প্রপার ব্যান্ডেজ করলাম।

আমাদের একধরনের অপরাধবোধ কাজ করছিল। বাবেলস শিশুদের মতো আমাদের ওপর নির্ভরশীল। ও আমাদের কাছে ওর নিয়তি দিয়ে দিয়েছে। অপারেশন তো ওর দরকার ছিল না; এটা আমরা করিয়েছি আমাদের সুবিধার জন্য। কাটাকাটিতে বেচারি বিপর্যস্ত।

তাই সেদিন বাবেলসকে বিছানায় উঠিয়ে রাখলাম আমার পাশে। এই বিছানায় উঠানোর ফলে বাবেলসের ভাবসাব বদলে গেল। বিছানা থেকে সে বু আর তার মেয়ে প্যাচেসকে গরর করে হুমকি দেয়। দুদিনে বুঝলাম, বাবেলস নিজেকে এখন তাদের সমাজের উচ্চস্তরের কুকুর মনে করছে। 

এভাবে দিন যায়; প্রতিদিন আমাদের তিন কুকুর আমাদের পরিবারের নিবিড় অংশ হয়ে ওঠে। আমরা কোথাও কয়েক দিনের জন্য গেলে বাসায় কুকুরদের কে দেখাশোনা করবে তার ব্যবস্থা করে তারপর যাই। বিদেশে গেলে সবার জন্য উপহার কিনি, ওদের জন্যও কিছু কিনে আনি। প্রতি শুক্রবার সকালে ওদের নিয়ে গাড়িতে বাইরে ঘুরিয়ে আনি।

এক যুগে কুকুরগুলো বুড়ো হয়ে গেল। যেটা ভাবিনি– সবচেয়ে ছোট কুকুর প্যাচেস প্রথমে অসুস্থ হয়ে গেল, ডায়বেটিস। ওকে ইনসুলিন দিতে হতো। ওর ডায়বেটিস একসময় চরম আকার ধারণ করে খুব করুণভাবে দুই বছর আগে মারা গেল। 

এদিকে বাসার কুকুরদের বস বাবেলস হটাৎ করেই অনবরত কাশি দেওয়া শুরু করল। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল, ওর হার্ট অতিরিক্ত বড় হয়ে গেছে, মানে ওর হৃদ্রোগ! ওকেও ওষুধ খাওয়ানো শুরু হলো। দেড় বছরের মাথায় ওর শরীর আরও খারাপ হয়ে গেলে ওকে অক্সিজেনও দিত আমার ছেলে। বাবেলস আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, এটা ভাবতে খুব কষ্ট হলেও আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম! ওর শরীর যখন আরও খারাপ হয়ে গেল, তখন ও আর বসে বা শুয়ে থাকতে পারত না; সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে হাঁপাত। তাই শেষে ওকে ইথুনইজ করতে আমরা বাধ্য হলাম! 

এবং এসব মৃত্যু আপনজন হারানোর মতোই কষ্টদায়ক। যে একটা প্রাণী পেলেছে, সে জানে বিষয়টা কী; যে পালেনি, তার কাছে বিষয়টা হাস্যকর লাগতে পারে! একটা কুত্তা মারা গেছে বলে আবার কাঁদে! মানুষ খেতে পারে না আর উনি কুত্তা নিয়ে আহাজারি করেন!

এসব তুচ্ছতাচ্ছিল্য আমি গায়ে মাখি না! 'মানুষ খেতে পায় না আর উনি কুত্তা কে খাবার খাওয়ান' বলা লোকেরা জীবনেও অন্য মানুষকে সাহায্য করে না, অন্য প্রাণী তো দূরের কথা! যে দয়ালু, সে সবাইকে দয়া দেখায়।

আমার যত দিন যায়, তত বুঝি প্রতিটা প্রাণীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে। ওরাও সবকিছু নিজের মতো বোঝে এবং আমাদের সবার ভেতর একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে; আমরা কেউ বিচ্ছিন্ন নই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এভাবেই বানিয়েছেন।

Related Topics

টপ নিউজ

প্রাণি / কুকুর / ইজেল / প্রাণিকুল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বরিশাল রুটের বিলাসবহুল বাসে আগুন কেন লাগছে! 
  • ‘আমাদের সমস্যা তো চীন এসে ঠিক করে দেবে না’: বুয়েট শিক্ষকদের ডিজাইনে নিরাপদ অটোরিকশা
  • ‘আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’: দুবাইতে মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে জয়ের অভিযোগের জবাবে গভর্নর
  • ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের
  • ‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর
  • বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

Related News

  • ইরানে কুকুর নিয়ে চলাচলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

Most Read

1
বাংলাদেশ

বরিশাল রুটের বিলাসবহুল বাসে আগুন কেন লাগছে! 

2
ফিচার

‘আমাদের সমস্যা তো চীন এসে ঠিক করে দেবে না’: বুয়েট শিক্ষকদের ডিজাইনে নিরাপদ অটোরিকশা

3
বাংলাদেশ

‘আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’: দুবাইতে মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে জয়ের অভিযোগের জবাবে গভর্নর

4
আন্তর্জাতিক

ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের

5
বাংলাদেশ

‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর

6
বাংলাদেশ

বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net