Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 08, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 08, 2025
বলব যা মোর চিত্তে লাগে

ইজেল

সাগুফতা শারমীন তানিয়া
11 January, 2025, 03:30 pm
Last modified: 11 January, 2025, 03:31 pm

Related News

  • আবারও বিলিয়নিয়ার ক্লাবে নাম লেখালেন হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাউলিং
  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • কমনওয়েলথ ছোটগল্প প্রতিযোগিতায় এশিয়া অঞ্চলের বিজয়ী বাংলাদেশের ফারিয়া বাশার
  • লাতিন সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ নোবেলজয়ী মারিও ভার্গাস য়োসা মারা গেছেন
  • বইয়ের ব্যবসায় ফিরে যেভাবে বাজিমাত করল বার্নস অ্যান্ড নোবল

বলব যা মোর চিত্তে লাগে

সাগুফতা শারমীন তানিয়া
11 January, 2025, 03:30 pm
Last modified: 11 January, 2025, 03:31 pm

শিশু কে? নজরুল বলেছেন, বিপুল বিরাট অমৃতের সন্তান। ইউনিসেফ বলে, আঠারো বছর বয়সের ছোট যে কেউ। কিছুদিন আগে একটি মিম দেখে ভারী আনন্দ হয়েছিল, সেখানে হামাগুড়িরত একটি শিশুকে বাড়ির পোষা বেড়াল এসে ফিসফিস করে বলছে, 'চার পায়ে আছিস বেশ আছিস, দুই পায়ে চলতে শুরু করিস না—ওভাবে চলতে শুরু করলেই পড়ালেখা করতে বসিয়ে দেবে (বা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে)।' অন্য কোনো প্রাণীর ইস্কুলে যাবার তাড়া নেই, প্রাণধারণের জন্য যতটুকু শিকারকৌশল শিখবার দরকার হয়, তা ছাড়া তাদের শাবকদের আর কিছু দরকার নেই। বর্ণপরিচয় এবং সাহিত্যও দরকার নেই (যদিও ভাবতে ভালো লাগে হাঁড়িচাচা ন্যায়শাস্ত্র নিয়ে বিস্তর বিতর্ক করে, কাদাখোঁচা সাহিত্য সমালোচনায় পারদর্শী এ কথা রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করেছিলেন)। মানুষের বাচ্চার সেসব দরকার আছে; কারণ, সে চিন্তাশীল প্রাণীর সন্তান। 

এহেন মানুষের বাচ্চাকে সাহিত্য পড়তে হবে কেন? ঠিক যে কারণে বিজ্ঞানের ছাত্রকেও কারিকুলামের অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে সাহিত্য পড়তে হয়, সাহিত্য নইলে সে যথার্থ মানুষ হবে না, সুশিক্ষিত হবে না। মানুষ যদি মানুষ না হয়, তাহলে বাকি পৃথিবীর সাংঘাতিক বিপদ। শিশু-কিশোরকে অল্প বয়সেই সাহিত্যের মাদক পুরিয়া হাতে তুলে দিতে হবে, যেন আনন্দের ঘোর লেগে যায় তার। শিশুর মন অত্যন্ত অরক্ষিত, আঘাত বা আক্রমণের সামনে সে বড় নাজুক। শিশুর বিশ্বাসও গভীরভাবে সরল—বিপুল-প্রশ্নাতীত। মানবজীবন মূলত দুঃখবেদনার, সেই জীবনের ওঠাপড়ায় ছোট্টবেলার আনন্দের অভিজ্ঞান তাকে সতত সাবলীল রাখবে, আশাবাদী রাখবে। তাই শিশু ও কিশোরসাহিত্য অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। আজ নিজের এবং নিজের দশকের ছেলেমেয়েদের সম্মিলিত স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এ নিয়ে লিখব। বর্ণপরিচয় এবং প্রাইমার থেকে শুরু করব না, কারণ সেই বিষয়টি একটি পৃথক রচনার দাবিদার। 

শিশুতোষ ছড়া  

শিশুকে সাহিত্যের প্রথম দুষ্টু-মিষ্টি স্বাদ দেয় এই শিশুতোষ ছড়া, ছড়াগান বা নার্সারি রাইমস। মুখে মুখে চালু ছড়া, যা ১৮২০ সালের দিকে বই আকারে বের হতে শুরু করে। মিশনারি স্কুলে পড়ার সুবাদে আমাদের ইংরেজি শেখাতেন ইংরেজি ভাষাভাষী সন্ন্যাসিনীরা, এ-বি-সি-ডি শিখবার পর শুরু হতো অন্তহীন ছড়ার রাজত্ব। জ্যাক অ্যান্ড জিল। উয়ি উইলি উইংকি। হিকরি ডিকরি ডক। টু লিটল ব্ল্যাকবার্ডস। লিটল জ্যাক হর্নার। ডিং ডং বেল। জর্জি পর্জি। আই হিয়ার থান্ডার। সিম্পল সায়মন। রাইড আ কক-হর্স। 'দেয়ার ওয়াজ অ্যান ওল্ড লেডি হু লিভড ইন আ শু'-তে জুতোবাসিনী বুড়ি এগারোজন ছেলেমেয়েকে খেতে দিত 'ব্রথ' আর ব্রেড (আমরা তো মুখ চাওয়াচাওয়ি করতাম, ব্রথ কী বস্তু!), তারপর বিছানায় যাবার আগে 'শি হুইপড দেম অল সাউন্ডলি'...সে কী! শুতে পাঠাবার আগে বাচ্চাদের আচ্ছামতো বেতিয়ে নিত কেন? 'কাম উইথ মি টু দ্য ক্যান্ডি শপ, হোয়াইল আই বাই আ ললিপপ' ছড়ায় যত মিঠাইয়ের নাম ছিল, কিছুই চিনতাম না। এ ছড়াটা পড়লেই আমার 'আয় রঙ্গ হাটে যাই, ঝালের নাড়ু কিনে খাই' মনে পড়ত। 

আম্মা আর নানির মুখস্থ ছিল যোগীন্দ্রনাথ সরকারের 'হাসিখুশি', কতবার শুনেছি—'দাদখানি চাল মুসুরির ডাল' কিংবা 'হারাধনের দশটি ছেলে'। আমরা বাংলায় যেসব ছড়া পড়তাম আর বলতাম, তার কয়টার অর্থ বুঝি? 'আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি, যদুমাস্টার শ্বশুরবাড়ি' বুঝতাম নাকি? 'আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম' সাজে বুঝতাম নাকি? সত্যজিৎ রায় যখন পথের পাঁচালীর ইন্দির ঠাকরুনের জন্য চুনিবালা দেবীকে নির্বাচন করেন, তখন নাকি তিনি সত্যজিৎ রায়কে এই কবিতার পুরোটা শুনিয়েছিলেন, এটা পড়ে আমি বেশ আত্মতুষ্টিতে ভুগেছিলাম মনে আছে, কারণ সাতবুড়ির এক বুড়ি এই আমিও কবিতাটার পুরোটা জানতাম। আসল কবিতাটা বিশাল, শেষ লাইনগুলো এমন—জোছনাতে ফিনিক ফোটে কদমতলায় কে রে, আমি বটে নন্দ শেখ মাথায় কাপড় দে রে। সে বয়সে প্রচুর ছড়া মুখস্ত করতে করতে আসলে বাক্যবিধি মুখস্থ হয়ে যেত, কি বাংলায় কি ইংরেজিতে। 

এক্কেবারে শিশুতোষ ছড়া থেকে প্রমোশন হলো সুকুমার রায়ে। আবোলতাবোল নয় শুধু, সুকুমার রায় শিখিয়ে দিলেন কাকে বলে 'একুশে আইন', কে 'হুঁকোমুখো হ্যাংলা', কে 'ট্যাঁশগরু' আর কে বাবুরাম সাপুড়ের সাপ, 'ভয় পেওনা' বলাটা কত হাস্যকর, শিশুর রাজনৈতিক পাঠ হয়ে গেল, দেশাত্মবোধ আর জাতীয়তাবাদের প্রথম পাঠও সারা। নিঃসন্দিগ্ধ অভিভাবক জানতেও পেলেন না। প্রত্যেক বাঙালি শিশুর মাথাপিছু ঋণের সঙ্গে রয়েছে সুকুমার রায়ের প্রতি ঋণ, তাঁকে একটি পুরো রচনায় কুলানো যাবে না, তাই এখানে কেবল ছুঁয়ে গেলাম। 

রবীন্দ্রনাথের 'শিশু ভোলানাথ' পাড়ি দিয়ে নজরুলের লিচুচোর- খুকি ও কাঠবেড়ালি পার হয়ে এলাম জসীমউদ্দীনের রাখালি-আসমানী-খোসমানীতে, তারপর সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'একটি মোরগের কাহিনী', 'দেশলাই কাঠি', 'সিঁড়ি', 'কলম, তুমি চেষ্টা কর, দাঁড়াতে পার কি না'তে। 'খাদ্য সমস্যার সমাধান'-এ 'চালও পেলে কুমড়ো পেলে লাভটা হলো বড়' পড়ে প্রথম দিকে হাসতাম, পরে মানুষের হঠকারিতায় বিপন্ন বোধ করতাম। স্কুলের বইয়েও অনেক ছড়া থাকত। আ ন ম বজলুর রশীদের 'আমাদের দেশ তারে কত ভালবাসি, সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি', বন্দে আলী মিয়ার 'আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর', শেখ ফজলল করিমের 'বুটিদার জরিপাড় শ্যাম শাড়ি অঙ্গে, এলোকেশে এলো হেসে শরত এ বঙ্গে'। ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া না দেখিতে গেলেও যেসব অনায়াসে লেখা যায়। কৈশোরে আমাদের ছড়া থেকে ভাবসংকোচ করতে দেয়া হতো, রজনীকান্ত সেনের 'বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই', কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের 'একদা ছিল না জুতা চরণযুগলে' বা 'চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে'। 

রূপকথা 

শিশুকে সাহিত্যের দ্বিতীয় বা যুগ্মভাবে প্রথম স্বাদ দেয় সম্ভবত রূপকথা। হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথা (সম্রাটের নতুন পোশাক, খুদে মৎস্যকুমারী, টিনের সেপাই) কিংবা অস্কার ওয়াইল্ডের রূপকথা (সুখী রাজপুত্র, নাইটিংগেল আর গোলাপ, বেদানামহল, জেলে আর তার আত্মা) আমরা পড়েছি বাংলায়। রূপকথার অনুবাদ করতে এগিয়ে এসেছিলেন রথী-মহারথী-সুখলতা রাও (ব্যাঙ রাজা, নেকড়ে ও ছাগলছানা), সুকুমার রায় (রুশ গল্প অবলম্বনে ওয়াসিলিসা, মাওরি লোকগল্প অবলম্বনে ভাঙা তারা), বুদ্ধদেব বসু (অ্যান্ডারসন এবং ওয়াইল্ডের রূপকথা), লীলা মজুমদার, কবীর চৌধুরী। লিপিকায় রবীন্দ্রনাথের অতুল মধুর কিছু রূপকথার গল্প রয়েছে—পরীর পরিচয়, সুয়োরাণীর সাধ, বিদূষক, ওসব ঠিক শিশুসাহিত্য নয়, কিশোরকে যে সবই বুঝতে হবে, তাতে রবীন্দ্রনাথের আপত্তি ছিল, আভাসেও জ্ঞান পেকে ওঠে, কিশোরমানসে মিষ্টি রং ধরে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বুড়ো আংলা' আর 'ক্ষীরের পুতুল' হাতে পেয়েছিলাম ক্লাস ফোরে। মুনমুন দাশগুপ্তের লেখায় জেনেছি তাঁর 'ক্ষীরের পুতুল'-এর ভিত্তি ছিল রবীন্দ্রপত্নী মৃণালিনী দেবীর রূপকথা খাতার এক গল্প। 'বুড়ো আংলা'র উৎস ছিল সুইডিশ গল্প 'দ্য ওয়ান্ডারফুল অ্যাডভেঞ্চার অব নীলস হলগারসন'। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার নিয়ে এলেন ঠাকুরমার ঝুলি, ঠাকুরদার থলে। রূপকথার প্রাচীন রীতি, মুখের ভাষার সেই ভঙ্গি, অথচ কি সতেজ তার প্রাণরস। জন্মদিনে আমরা প্রায়ই উপহার পেতাম রূপকথার বই, খুলতেই দুই পাশে দুই উড়ন্ত পরী মুখে চোঙ (ফ্যানফেয়ার) হাতে উপস্থিত, তার মাঝখানটিকে আমাদের নাম আর উপহারদাতার নাম লেখা। দক্ষিণারঞ্জনের গল্প থেকে পরে শৈলেন ঘোষ 'অরুণ-বরুণ-কিরণমালা' নাটিকা লিখলেন, সিনেমাও হলো 'সাতভাই চম্পা'। বাংলা রূপকথার প্রসঙ্গ প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সুনির্মল বসুর নাম ছাড়া শেষ হতে পারে না। 

গল্প 

স্বনামধন্য শিশুসাহিত্যিক জুলিয়া ডনাল্ডসন বলেছেন, শ্বাশতকাল ধরে লোকমুখে প্রচারিত গল্পই শিশুসাহিত্যের ভিত্তিভূমি। এক প্রজন্ম হতে আরেক প্রজন্মে এই লোকগল্প প্রবাহিত হয়েছে, এক দেশ থেকে গেছে আরেক দেশে। সমাজে চালু লোককাহিনিকে পুনর্লিখনের কাজটাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। ছোটদের জন্য রামায়ণ-মহাভারতের গল্প সহজ করে লিখেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তাঁর তিনটি বর, সাতমার পালোয়ান, টুনটুনির বইয়ের সেই 'সিংহের মামা আমি নরহরি দাস, পঞ্চাশ বাঘে মোর এক এক গরাস' কে ভুলতে পারে। সেকালের উপেন্দ্রকিশোরীয় বাঘ কুয়োয় পড়তে বাঘের গায়ে তিন শ হাঁড়ি গরম তেল ফেলে বাঘ মেরে ফেলা হতো, একালের শিশুকিশোর এমন হত্যায় আনন্দ বা স্বস্তি কিছুতেই পাবে না। পুরোনো রাইমসের সংস্কার করা হচ্ছে, বোধ হয় পুরোনো গল্পগুলোরও সামান্য সংস্কার করা চাই, ইতিমধ্যে রোয়াল্ড ডলের গল্প সংস্কারের দাবি উঠেছে। সুকুমার রায়ের 'পাগলা দাশু' গ্রন্থের পঁচিশটি গল্প আমরা কতবার পড়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। লীলা মজুমদার ছোটদের পুরাণের গল্প পুনর্লিখন করে শুনিয়েছিলেন। তাঁর পেনেটিতে, চেতলার কাছে, নতুন ছেলে নটবর, ভুতোর ডায়রি, নোটোর দল...কত বলব! কী হিউমার! লীলা মজুমদার বাঘের কাহিনি শোনাবেন, আপনমনে বলে যাচ্ছেন—এখন বাঘের চাষ হয়, আগে সুন্দরবনের দিকটা বাঘে কিলবিল করত। তবু ওখানে গিয়ে কেউ থাকছেন, মাছটাছ ভালো পাওয়া যায় হয়তো, এদিকে যিনি থাকছেন তিনি নিরামিষাশী, তা বাঘ তো আর নিরামিষ খায় না, ফলে সে লোকালয়ে প্রায়ই চলে আসে। 

সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজ পড়েছি একটু বড় হয়ে, ওঁর 'তারিণীখুড়োর কীর্তিকলাপ' ছিল আমার খুব প্রিয়। ছোটবেলায় আমাদের ত্রাতা ছিলেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর নন্টে ফন্টে, বাঁটুল দি গ্রেট পড়ে গড়াগড়ি দিয়ে ছুটির দুপুরে হেসেছি। আমাদের হাসিয়েছে ইফতেখার রসুল জর্জের 'মোল্লা নাসীরুদ্দীনের গল্প', আসাদ চৌধুরীর 'গ্রামবাংলার গল্প', খান মোহম্মদ ফারাবীর 'মামার বিয়ের বরযাত্রী', রাহাত খানের 'দিলুর গল্প'। ইব্রাহীম খাঁ সীরাতুন্নবীর কিছু গল্প সহজ ভাষায় লিখেছিলেন বাচ্চাদের জন্য। 

চীনা ও সোভিয়েত বইপত্র

সত্তর-আশির দশকে নিউমার্কেটে প্রচুর চীনা গল্পের বাংলা বই পাওয়া যেত, পাতা জোড়া ছবি, নিচের দিকে দুই-তিন লাইন করে গল্প। আম্মা কিনে আনত—জীনহুয়া ও ভাল্লুক, মহাবীর ঈ, গুইযৌ গাধার শেষ উপায়, দোয়েলপাখির সেতু। গণচীন তার প্রাচীন আঙরাখা তুলে আমাদের দেখতে দিয়েছিল তার মণিমাণিক্যময় বুক, দেখে বিস্মিত হয়েছি।

সোভিয়েত সাহিত্য ছিল আমাদের প্রধান খাদ্য। রুশদেশের উপকথার মতো রূপকথা, টলস্টয়-গোগোল-পুশকিন-তুর্গেনিভের গল্প, ভেরা পানোভার 'পিতা ও পুত্র' বা আলেক্সান্দর বেলিয়ায়েভের 'উভচর মানুষ'-এর মতো উপন্যাস, পাভেল বাঝোভের 'মালাকাইটের ঝাঁপি'র মতো লোককাহিনির সম্ভার, গালিনা দেমিকিনার ইকোফিকশন, কী না দিয়েছে সেই সোহাগঢালা বাংলায় সোভিয়েত অনুবাদ সাহিত্য। প্রগতি প্রকাশনের শিশুসাহিত্য বিভাগের নাম ছিল রাদুগা, বাংলায় রামধনু। আমাদের শৈশবের আকাশে প্রধান এবং স্থায়ী রামধনু। সোভিয়েত সাহিত্যের মানুষগুলোকে আমরা কেউ দেখিনি, কিন্তু আমরা চিনতাম তাদের পাতে পার্বণের পিঠা-পুলি-সরুচাকলি, আমরা জানতাম রাত-পোহালে-বুদ্ধি-বাড়ে, ঝলমলে বাজ 'ফিনিস্ত'কে চিনতাম, চিনতাম 'বাবাইয়াগা' ভয়াল ডাইনিকে, চিনতাম 'সিভকা বুর্কা যাদুকা লেড়কা'কে, জানতাম রুশিদের ক্ষুধা-আলস্য-দুষ্টুমি-শ্রম-বুদ্ধিহীনতা-রাগ-রক্তপাত আর হতাশাকে। শুধু অনূদিত হয়ে আর কোনো দুই জাতের মানুষ অত কাছাকাছি এসেছে বলে আমি জানি না।  

উপন্যাস 

শিশুর উপন্যাস পড়বার প্রস্তুতি নেই, কাহিনির দীর্ঘসূত্রতা ভালোবাসতে শুরু করলে বুঝতে হবে সে একটু বড় হয়ে উঠেছে। সে বয়সে ভালো লেগেছে খালেদা এদিব চৌধুরীর 'শীতের দিনরাত্রি' আর 'বুবুর জন্য সারা দুপুর', আনোয়ারা সৈয়দ হকের 'ভয়ঙ্কর সেই রাত', আহসান হাবীবের 'রাণীখালের সাঁকো', শওকত ওসমানের 'ওটন সাহেবের বাংলো', আলী ইমামের 'তিতিরমুখীর চৈতা'। আমার শৈশবে মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'দীপু নাম্বার টু' পড়াটা একটা অসামান্য অভিজ্ঞতা, বুলিয়িং-এর পেছনেই কি অসহায় এক শিশুর বাস, দ্বিখণ্ডিত পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুর বাবা আর মায়ের প্রতি কেমন আলাদা টান, আর পানির ট্যাংক বেয়ে উঠবার সেই ভয়ানক দুঃসাহস? শিশুজিভে অন্য স্বাদ এনে দিয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদ, তাঁর 'ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না', 'বুকপকেটে জোনাকিপোকা', 'আব্বুকে মনে পড়ে'। শেখর বসুর 'সাত বিলিতি হেরে গেল' পড়লাম—দিশি নেড়ি কুকুরের কাছে বিলাইতি কুকুরের পরাস্ত হবার উপাখ্যান। শৈলেন ঘোষের 'ভূতের নাম আক্কুশ' পড়ে বুক ঠেলে কান্না উঠল, কার্টুনে মিষ্টি ভূত ক্যাস্পারের জন্য যেমন লাগত। কোন কুক্ষণে আনন্দমেলায় একবার ছাপা হলো শৈলেন ঘোষের উপন্যাস 'তুসি যাদু জানে', খানিকটা জোহানা স্পাইরির 'হাইডি'র আদলে গড়া মেয়েটি, যেমন কথাবার্তায় তেমনি ব্যবহারে, তেমনি লেখাপড়ায়, সব সময় মুখে হাসি—বদরাগী আত্মীয়স্বজনের হৃদয় জয় করতে ওস্তাদ। এবার আম্মা উঠতে বসতে শুরু করল, 'তুসির মতো হতে পারো না?' সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সিরিজ কৈশোরে পড়িনি, পড়েছি বিমল করের কিকিরা। প্রতি শারদীয়ায় কাকাবাবু সিরিজের একেকটি উপন্যাসের জন্য হাপিত্যেস করে থাকতাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশু ঠাকুরকে নিয়ে উপন্যাস 'আঁধার রাতের অতিথি' আর 'জলদস্যু' দারুণ ভালো লেগেছিল আমার। মনোজ বসুর 'খেলাঘর' যদিও বাল্যবিবাহের উপন্যাস, কিন্তু অল্প বয়সে পড়ে বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের পাগলা সাহেবের কবর, গৌরের কবচ, ঝিলের ধারে বাড়ি, ভুতুড়ে ঘড়ি শারদসংখ্যায় বের হওয়া শুরু হলো, আমরা তখন পাগলের মতো মাতালের মতো ওঁর কিশোরসাহিত্যে মেতে থাকতাম। লোকটা বাংলা ভাষায় কিশোর সাহিত্যকে একা হাতে দৈত্যের মতো সামলে রেখেছেন। বলে রাখি, মতি নন্দীর কলাবতী সিরিজও আমার খুব প্রিয় ছিল। 

গ্রেট স্টোরিজ ইন ইজি ইংলিশ সিরিজে পড়েছিলাম সচিত্র জেন অস্টেন এবং ব্রন্টি সিস্টার্স। দ্য রেলওয়ে চিলড্রেন, লিটল উইমেন এসব পড়েছিলাম ইংরেজি লেডিবার্ড প্রকাশন থেকে। রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের 'জাস্ট সো স্টোরিজ' পড়তে পেরেছি আরও বড় বয়সে। শার্লক হোমস যখন পড়ি, তখন আমি কোনোভাবেই কিশোরী নই। লুইস ক্যারল কিংবা রোয়াল্ড ডলও তা-ই। তখন ইংরেজি বই দুর্মূল্য, নিউমার্কেটের গরবিনী জীনাত বুক সাপ্লাই সেসব ছুঁয়ে দেখলেও বিরক্ত হতো। 

অ্যাডভেঞ্চার, অভিযান ও কল্পকাহিনি  

টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার বইগুলো সোনার দামের সমান ছিল তখন, ভাগ্যিস আনন্দমেলায় ছাপা হতো বাংলায়, আনন্দ করে পড়তাম। মার্ক টোয়াইনের 'টম সয়্যার' আর 'হাকলবেরি ফিন' সে সময় টেলিভিশন সিরিজে দেখাত, দেখাত অ্যানা সিওয়েলের 'ব্ল্যাক বিউটি', পড়বার স্বাদ দেখে মিটিয়েছি। লোকে বলত, বাংলা কিশোর সাহিত্যে রোমাঞ্চ-অ্যাডভেঞ্চারের স্থান নেই, কারণ শিশু-কিশোরদের যে জীবন, তার সঙ্গে ও রকম অ্যাডভেঞ্চারের যোগ হতে পারে না। তাই বিভূতিভূষণ চাঁদের পাহাড় গড়েছেন আফ্রিকায়, সুনীল তাই বিশ্বেশ্বর ঠাকুরকে নিয়ে গেছিলেন কয়েক শতাব্দী আগে, বুদ্ধদেব গুহ ঋজুদাকে নিয়ে গেছেন গুগুনোগুম্বোরের দেশে, শাহরিয়ার কবির নিয়ে গেছেন বাভারিয়া বা কার্পেথিয়ানে। এর উত্তর আছে শাহরিয়ার কবিরের 'নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়'-এ, শিংটোলার জমিদারবাড়ি কিংবা লুসাইপাহাড়েও থাকতে পারে কতই অ্যাডভেঞ্চারের উপাদান। বাঘের মন্তর লিখতে বিভূতিভূষণকে বেশি দূর যেতে হয়নি। 

আমাদের ওই মিশনারি স্কুলগুলোতে দ্রুতপঠনের জন্য বরাদ্দ ছিল রবার্ট লুই স্টিভেনসনের 'ট্রেজার আইল্যান্ড' আর 'কিডন্যাপড', জুল ভার্নের 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ', হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের 'কিং সলোমনস মাইনস' আর বাধ্যতামূলক ছিল ব্যালেন্টাইনের 'দ্য কোরাল আইল্যান্ড'। জুল ভার্নের 'টু থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি' দেখেছিলাম মুভি অব দ্য উইকে, সি এস লুইসের 'ক্রনিকল অব নার্নিয়া' দেখেছি। ড্যানিয়েল ডেফোর 'রবিনসন ক্রুসো' আর জ্যাক লন্ডনের 'দ্য সি উলফ' পড়েছি সেবা প্রকাশনীর অনুবাদে। স্কুলের লাইব্রেরিতে এইচ জি ওয়েলসকে পেয়েছি, সচিত্র আলেক্সান্দর দ্যুমার 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স' পড়েছি, 'কাউন্ট অব মন্টেক্রিস্টো' পড়েছি অনুবাদে। স্কুল লাইব্রেরি-বাড়ি-বিটিভি-নিউমার্কেট মিলেঝিলে আমাদের কিছুটা স্বাদ দিয়েছিল বিশ্ব কিশোর সাহিত্যের, সেই ঋণ আমৃত্যু থাকবে। ভাগ্যিস সেই শৈশবে হাতে সর্বনাশা মোবাইল ফোন ছিল না, পড়বার-ভাববার-যাচাই করবার—নিদেনপক্ষে আলাপ করবার বহু মানবিক মুহূর্ত আমরা পেয়েছি। 

টিন এবং ইয়াং-অ্যাডাল্ট অ্যাডভেঞ্চার নভেলের ভেতর বেশ জনপ্রিয় টলকিয়েনের লর্ড অব দ্য রিংস সিরিজ, জে কে রলিংসের হ্যারি পটার, রিক রিওর্ডানের পার্সি জ্যাকসন সিরিজ এবং কেইন ক্রনিকলস, সুজান কলিন্সের হাঙ্গার গেমস, জেমস ড্যাশনারের মেইজ রানার সিরিজ, ভেরোনিকা রথের ডাইভার্জেন্ট ট্রিলজি। 

শিশু-কিশোরদের জন্য সুকুমার রায় বিজ্ঞানবিষয়ক বেশ কিছু রচনা লিখেছিলেন, যেমন তার স্বচ্ছ সুন্দর ভাষা, তেমনি তার হিউমার। বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা বইয়ের বেলায় আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীনের বইগুলো ছিল তুলনাহীন। বাজারে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ খণ্ডের হার্ড কভারের চিলড্রেন্স নলেজ ব্যাংক। বাংলা কল্পবিজ্ঞানে প্রথম লেখাটি সম্ভবত জগদীশচন্দ্র বসুর 'পলাতক তুফান'। সত্যজিতের শঙ্কু সিরিজ উজ্জ্বলতম, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদার অনেক গল্পই এই ঘরানার, যেমন শীর্ষেন্দু বা সুনীলের। আরও আছেন অদ্রীশ বর্ধন, পথিক গুহ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ। 

ভ্রমণসাহিত্য

বাঙালি কোথাও যায় না বলে তার দুর্নাম থাকলেও তার ভ্রমণ সাহিত্য আছে। সুবোধ চক্রবর্তীর 'রম্যাণি বীক্ষ্য' কিশোরপাঠ্য নয়। তবে ননী ভৌমিকের 'চলো সোভিয়েত দেশ বেড়িয়ে আসি', জসীমউদ্দীনের 'চলে মুসাফির', প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'পৃথিবী ছাড়িয়ে', কমলা চক্রবর্তীর 'হিমালয়ের চূড়ায়', যোগীন্দ্রনাথ সরকারের 'বনে-জঙ্গলে' আছে। শামস্ন্নুাহার মাহমুদের ভ্রমণরচনার অংশ আমাদের পাঠ্যবইয়ে ছিল, তার লেশমাত্র আর খুঁজে পেলাম না। অমিয় চক্রবর্তীর 'চলো যাই'-এর অক্সফোর্ড অধ্যায়টুকু ক্লাস সিক্সে আমাদের পাঠ্য ছিল, যেখানে তিনি ভাবছেন এমন যৌবনের রাজ্য—ছাত্রদের শহর যদি ভারতে থাকত! আবার নালন্দা, আবার তক্ষশীলা! 'অক্সফোর্ডে একলা নদীর ধারে চেরি ফুল ঝরানো গাছতলায়, কখনো চেস্টনাট গাছের বৃহৎ পত্রশোভিত হেমন্ত রৌদ্রে বসে প্রবাসী একটি ছাত্র এসব কথা ধ্যান করত। পাশে পড়ে থাকত আধ-খোলা বই, মন কোথায় চলে গেছে।' তাঁর মন যেথায়ই যাক, আমার প্রাক্-কৈশোর মন চলে গেছিল অক্সফোর্ডের অভিমুখে। শব্দের কী ক্ষমতা, কী অলঙ্ঘ্য ডোর। 

অনাধুনিক শিশুসাহিত্য 

শিশুসাহিত্যের দুটি রূপ—একটি অনাধুনিক, আরেকটি আধুনিক। অনাধুনিক শাখায় আছে লৌকিক ছড়া, ছেলেভোলানো ছড়া, মেয়েলি ব্রতকথা, লোকগান, মৌখিক রূপকথা, যা গ্রামবাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির অংশ। রবীন্দ্রনাথ গ্রাম্য ছড়া উদ্ধারের কাজে এগিয়ে এসেছিলেন। দক্ষিণারঞ্জনের ব্রতকথার সংগ্রহ ঠানদিদির থলে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশদ কাজ করেছেন এই ব্রত নিয়ে, মুহম্মদ আয়ুব হোসেন বাংলার ব্রত পার্বণের ছড়া সংগ্রহ করেছেন। সেই যে খেলার সময় বলতাম—'এলোনা বেলোনা কলাপাতা ঝুম', বলতাম—'এক হাত বল্লা বার হাত শিং', সেসব কোথাও থাকা চাই তো। আমাদের শৈশবে গ্রামের মেয়েরা শহরের বাড়িতে স্থায়ী কাজের লোক হিসেবে আসত, তারা সঙ্গে করে নিয়ে আসত অসংখ্য শোলক, আমরা শিশু বয়সে শোলক ভাঙিয়ে ভারি আমোদ পেতাম। জানি না শিশুরা এখন আর কারও কাছ থেকে শোলক শুনতে পায় কি না, কি নগরে কি গ্রামে। 

শিশুসাহিত্যের চর্চা 

আদনান আহমেদ এবং অর্জুনচন্দ্র দেবনাথের গবেষণা থেকে খানিকটা ধার নিচ্ছি এখানে— 

১৮৮৩ সালে প্রমদাচরণ সেনের সম্পাদনায় ছোটদের জন্য ভারতের প্রথম মাসিক পত্রিকা 'সখা' প্রকাশিত হয়, এরপর শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত মুকুল (১৮৯৫), জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বালক (১৮৮৫)। জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, সম্পাদক জ্ঞানদানন্দিনী তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন বালক পত্রিকায় লেখার জন্য, প্রথম সংখ্যার 'বালক'-এ তাঁর পাঁচটি লেখা প্রকাশিত হয়। ছাপা হয় 'দিনের আলো নিবে এল, সুয্যি ডোবে-ডোবে। আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।' উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্দেশ (১৯১৩), সুধীরচন্দ্র সরকারের সম্পাদনায় মৌচাক (১৯২০) ও ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সম্পাদনায় কিশোরপত্র আঙ্গুর (১৯২০) আসে শিশু-কিশোরদের জন্য। ১৯৪১-এ দৈনিক আজাদের পাতায় শিশু-কিশোরদের জন্য খোলা হয় 'মুকুলের মাহফিল'। খগেন্দ্র মিত্রর সম্পাদনায় ছোটদের প্রথম দৈনিক পত্রিকা 'কিশোর' বের হয় ১৯৪৮-এ, দেশবিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় মুকুল ফৌজের মুখপত্র হিসেবে আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় পাক্ষিক 'মুকুল', সাতচল্লিশ-পরবর্তীকালের প্রথম ছোটদের পত্রিকা। ১৯৪৯ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় মঈদ-উর রহমান সম্পাদিত মাসিক 'ঝংকার', বেগম ফওজিয়া সামাদের সম্পাদনায় ঢাকা থেকে মাসিক 'মিনার', ফয়েজ আহমেদের সম্পাদনায় মাসিক 'হুল্লোড়', এপ্রিল-মে, ১৯৫১ সালে তৈয়েবুর রহমানের সম্পাদনায় মাসিক 'সবুজ নিশান', ১৯৫৪ সালে আবদুল ওয়াহেদের সম্পাদনায় মাসিক 'আলাপনী',  ১৯৫৫ সালে সরদার জয়েনউদ্দীন সম্পাদিত পাক্ষিক 'সেতারা' ও পাক্ষিক 'শাহীন', আল কামাল আবদুল ওহাবের সম্পাদনায় ১৯৫৫ সালে মাসিক 'সবুজ সেনা', ১৯৫৫ সালে ঢাকা থেকে জেব-উন নিসা আহমদ সম্পাদিত মাসিক 'খেলাঘর', অধ্যাপক আলমগীর জলিল ও আলাউদ্দিন আল আজাদ সম্পাদিত পাক্ষিক 'কিশলয়', মোসলেম উদ্দিন সম্পাদিত মাসিক 'রংধনু'। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক 'কচি ও কাঁচা' হয়। বাংলা একাডেমি বের করে 'ধানশালিকের দেশ'। এসব পত্রিকার শিশুসাহিত্য উজ্জ্বলতর করেছেন আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন, বন্দে আলী মিয়া, ফয়েজ আহমদ, রোকনুজ্জামান খান, সুফিয়া কামাল, মোহাম্মদ নাসির আলী, হালিমা খাতুন, আবদার রশীদ, জসীমউদ্দীন, আতোয়ার রহমান, কাজী কাদের নওয়াজ, আহসান হাবীব, সানাউল হক, আবদুস সাত্তার, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সরদার জয়েনউদ্দীন, শহীদ সাবের, খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন, তালিম হোসেন প্রমুখ। 

ওপারের 'আনন্দমেলা'য় একদা ছবি আঁকতেন অহিভূষণ মালিক, বিমল দাস, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়; লিখতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, অতুল সুর, শ্রীপান্থ। আঁকতেন এবং লিখতেন সত্যজিৎ রায়। বাংলাদেশে এখলাস উদ্দিন আহম্মদের সম্পাদনায় বের হতো 'টাপুর টুপুর' (১৯৬৬), ছবি আঁকতেন কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, আবুল বারক আলভী। লিখেছেন জসীমউদ্দীন, আবুল ফজল, কাজী মোতাহার হোসেন, অজিত কুমার গুহ, সুকুমার বড়ুয়া, মমতাজউদ্দীন আহমদ, আবদুল কাদির, আনিসুজ্জামান, করুণাময় গোস্বামী, শওকত আলী, নূরুল আনোয়ার, দিলওয়ার, হালিমা খাতুন, সাজেদুল করিম, রনেশ দাশগুপ্ত, মুর্তজা বশীর, বুলবন ওসমান, আবু বকর সিদ্দিক, দ্বিজেন শর্মা, হায়াৎ মামুদ, ফররুখ আহমদ, সিকান্দার আবু জাফর। সৈয়দ শামসুল হক এখানেই লিখেছিলেন ছোটদের জন্য প্রথম ধারাবাহিক উপন্যাস, শামসুর রাহমান লিখেছেন তাঁর স্মৃতিগদ্য 'স্মৃতির শহর'।

প্রচ্ছদ 

বাঙালির ছড়া 'গড়গড়ার মা লো'র সঙ্গে বা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর 'হাট্টিমাটিম টিম'-এর সঙ্গে আজও যে ইলাস্ট্রেশন যায়, তা দেখে যেকোনো বয়স্ক মানুষও ভিরমি খাবে। শিশু সুন্দর ভালোবাসে। ছোটবেলার সোভিয়েত বই আলেক্সান্দর কুপ্রিনের 'হাতি' বইটার রঙিন ছবির কথা মনে করে দেখুন। গালিনা দেমিকিনার বইয়ে সরু কলমে আর জলরঙে আঁকা ছবি মনে করুন। ইয়েভগেনি চারুশিন 'কার কেমন ধারা' বইটি নিজেই অলংকরণ করেছিলেন—ননী ভৌমিক বাংলায় শুনিয়েছিলেন প্রাণীদের গল্প, মনে করুন সেই বইটার কথা। এবার তিন রঙে ছাপানো শিশু একাডেমির বইগুলোর কথা ভেবে দেখুন। কোন দিকে আকর্ষিত হবে শিশু? বলবেন, আমরা গরিব, আমাদের রং নেই। তাহলে সুকুমার রায়ের হাতে করা পাগলা দাশুর শাদাকালো ইলাস্ট্রেশন, বুথসাহেবের বাচ্চাটার সেই মেমসাহেবের কোলে ফেটে পড়া ছবিটা মনে করুন। জসীমউদ্দীনের লোকজ গল্পের সংকলন 'বাঙালির হাসির গল্প' দুই খণ্ডের শাদাকালো ইলাস্ট্রেশন করেছিলেন (সম্ভবত) মুস্তাফা আজিজ, গল্প পড়বার আগে টানটান ইলাস্ট্রেশন দেখলেই হাসি পেত এত জীবন্ত সেসব ছবি। তলস্তয়ের গল্পের পাশাপাশি পাতাজোড়া বিশাল সব পেন্সিল স্কেচ, চারকোলে আঁকা অপূর্ব ছবি, এসেছিল আমাদের কোমল কোমল হাতে। রোয়াল্ড ডলের বইগুলোতে ছবি আঁকেন কুয়েন্টিন ব্লেক, তাঁর ইলাস্ট্রেশন বিয়োগ করলে ডলের বইয়ের অর্ধেক আনন্দ চলে যাবে আমি নিশ্চিত। জুলিয়া ডনাল্ডসনের অপূর্ব শিশুতোষ বইগুলোর পেছনে লেখকের পাশাপাশি রয়েছে ইলাস্ট্রেটরের অবিরাম পরিশ্রম। 

শেষের কথা 

বাংলায় কিশোর সাহিত্যের স্মরণীয় লেখক হেমেন্দ্রকুমার রায় যোগীন্দ্রনাথ শতবার্ষিকীর স্মরণিকায় লিখেছিলেন, 'যাঁরা শিশুসাহিত্য রচনার ভার নেন, তাঁদের অনেকে প্রধানত দুই রকম ভুল করেন। প্রথমত, কেউ উপদেশকের মতো শিশুমহলে গিয়ে কথকতা করতে চান। দ্বিতীয়ত, কেউ মনে করেন, উচ্চতর রচনাপদ্ধতি বা কলাকৌশল ছেড়ে আজেবাজে ছেলেমানুষি করলেই ছোটরা তাঁদের লেখা পছন্দ করবে...তাঁরাও জানেন না, শিশুদের মধ্যে যথেষ্ট কাব্যরসগ্রাহিতা আছে, এবং তারা উপদেশকে ভালবাসে না।' অথচ পৃথিবীর সব দেশেই শিশুরা রূপকথা এবং ফেবলস/নীতিকথামূলক গল্প শোনে, উভয়েই প্রচুর উপদেশ লুকিয়ে আছে। আমাদের শিশুসাহিত্যের গোড়ায় এই দুটি গলদই উপস্থিত—হয় আমরা উপদেশের পাচন গেলাতে চাই, নয় ছেলেখেলা করতে চাই। ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে শিশুগ্রন্থ 'নীতিকথা' এবং ১৮২০ সালে 'হিতোপদেশ' নামের শিশু পুস্তক, আমরা শুরু করেছি সেই পথে, যে পথ থেকে সরে যাবে যেকোনো শিশু, আড়াই শ বছরের বাংলা শিশুসাহিত্যের ইতিহাসে আমরা কতটা সফল? রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—দুধের বদলে পিটুলি গোলা চালিয়ে বয়স্ক লোকের বুদ্ধির পরীক্ষা নেওয়া চলে, সেই ফাঁকি ছেলেপুলেকে দেওয়া চলে না। শিশুসাহিত্য লিখতে হয় অবলীলাক্রমে, অবহেলাক্রমে কিছুতেই এ লেখা হবার নয়। প্রমথ চৌধুরী দেখিয়েছিলেন বাঙালি অভিভাবকের কাছে শৈশব পতিত জমি, যত শিগগিরই আবাদ করা যায় তত সুবর্ণযোগ। আমরা বাইরে থেকে পাকিয়ে জ্যাঠা বানিয়ে তুলি ছেলেমেয়েদের, যারা সাহিত্যের উত্তাপে ভেতর থেকে ভারি সুন্দর ধীরতায় পেকে উঠতে পারত পৃথিবীকে সামনা করবে বলে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৯ হাজার ৬৯৮ শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাদের জীবন গ্রহণের সুন্দর প্রস্তুতি দেওয়ার জন্য আমরা (শিল্পী, সাহিত্যিক, শিশু গবেষক, নীতিনির্ধাsরক, অভিভাবক) কি প্রস্তুত?  

 

Related Topics

টপ নিউজ

সাহিত্য / বই / শিশুসাহিত্য

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?
  • জি-৭ সম্মেলনে মোদিকে আমন্ত্রণ, তোপের মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী
  • গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব কে?
  • বন্ধু থেকে শত্রু: ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের নাটকীয় অবসান
  • শেখ পরিবারের একচ্ছত্র শাসন থেকে দুই ভাইয়ের মনোনয়ন লড়াই: বাগেরহাটের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া
  • রাশিয়ার ‘আন্ডারকভার’ ড্রোন যুদ্ধ: ‘হোম কল’, ছদ্মবেশ—আরও যত কৌশল

Related News

  • আবারও বিলিয়নিয়ার ক্লাবে নাম লেখালেন হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাউলিং
  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • কমনওয়েলথ ছোটগল্প প্রতিযোগিতায় এশিয়া অঞ্চলের বিজয়ী বাংলাদেশের ফারিয়া বাশার
  • লাতিন সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ নোবেলজয়ী মারিও ভার্গাস য়োসা মারা গেছেন
  • বইয়ের ব্যবসায় ফিরে যেভাবে বাজিমাত করল বার্নস অ্যান্ড নোবল

Most Read

1
ফিচার

চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?

2
আন্তর্জাতিক

জি-৭ সম্মেলনে মোদিকে আমন্ত্রণ, তোপের মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী

3
আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব কে?

4
আন্তর্জাতিক

বন্ধু থেকে শত্রু: ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের নাটকীয় অবসান

5
বাংলাদেশ

শেখ পরিবারের একচ্ছত্র শাসন থেকে দুই ভাইয়ের মনোনয়ন লড়াই: বাগেরহাটের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া

6
আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার ‘আন্ডারকভার’ ড্রোন যুদ্ধ: ‘হোম কল’, ছদ্মবেশ—আরও যত কৌশল

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net