মিশরের শেষ ফারাও সিজার এবং ক্লিওপেট্রার 'প্রেমের সন্তান'

টলেমি সিজার 'থিওস ফিলোপাতর ফিলোমেতর' – 'টলেমি সিজার, সেই ঈশ্বর যিনি তাঁর পিতা এবং মাতাকে ভালবাসেন' - তিন বছর বয়সে মিশরের রাজা হিসেবে সিংহাসনে উপবিষ্ট হন।সিজারের সিংহাসনে আরোহনের বেশ কয়েক মাস আগেইতার অভিযুক্ত বাবা জুলিয়াস সিজারকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার মা, রাণীসপ্তম ক্লিওপেট্রামিশরের রাণী হিসাবে স্বীয় ক্ষমতা দৃঢ় করার জন্যই তাকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।
তাঁর গ্রীক ডাকনাম 'সিজারিয়ান' বা 'ছোট্ট সিজার'-এর জন্য ইতিহাসে সমধিক পরিচিত, ক্লিওপেট্রার এই পুত্র অল্প সময়ের জন্যই রাজত্ব করেছিলেন; খ্রিস্টপূর্ব ত্রিশ সালে ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যার পরপরই টলেমিকে হত্যার মধ্যে দিয়েই তার শাসনামল শেষ হয়। মাতা এবং পুত্রের এহেন মৃত্যুর ফলেই টলেমিক শাসনের অবসান ঘটেছিল যারা গ্রেট আলেকজান্ডারের সময় থেকে মিশরকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
পারিবারিক কলহ
সিজারিয়ানদের শুরুটা হয়েছিল টলেমি সিজারের দাদা টলেমি দ্বাদশ যখন আঠার বছর বয়সী ক্লিওপেট্রা এবং দশ বছর বয়সী টলেমি ত্রয়োদশকে সহ-উত্তরাধিকারী হিসাবে নামকরণ করেছিলেন। ধার্য্য হয়, তারা একসাথে রোমের অভিভাবকত্বের অধীনে কাজ করবে। প্রবীণ টলেমির শাসনকালে মিশর রোমানদের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছিল বিধায়খ্রিস্টপূর্ব একান্ন সালে টলেমি দ্বাদশ-এর মৃত্যুর পরে রোমানরা ভাবতে শুরু করেছিলেনযে মিশর আসলে কার শাসনে পরিচালিত হবে? টলেমি ত্রয়োদশ এবং তার বোন প্রতীকীভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন, তবে তাদের মধ্যে পারিবারিক বা অন্য কোনও প্রেমাস্পদ সম্পর্ক ছিল না। টলেমিক রাজা ও রানীদের সিংহাসনের আরোহণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়াটা দীর্ঘকালীন পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে পরিগণিত ছিল: সহোদরের বিরুদ্ধে সহোদর বা সন্তানের বিরুদ্ধে পিতামাতা। যাই হোক, টলেমি দ্বাদশ-এর মৃত্যুর দুই বছর পরে, টলেমি ত্রয়োদশের পরামর্শদাতারা তাকেই একমাত্র শাসক বানাতে ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে আন্দোলনের চেষ্টা শুরু করেছিল।
দু'জন মিশরীয় ভাই-বোন যখন তাদের সিংহাসন টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে যুঝমান, তখন রোম স্বীয় ক্ষমতার লড়াইয়ের কেন্দ্রে ছিল। রোমের দুজন দুর্দান্ত সামরিক নায়ক জুলিয়াস সিজার এবং দ্য গ্রেট পম্পেই গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং ঐক্যজোটের সন্ধান করেছিলেন। পম্পেই'র মিশরকে হস্তগত করার দরকার ছিল ফলে বোন ক্লিওপেট্রাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে টলেমি দ্বাদশকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাজধানী থেকে অনেক দূরে নির্বাসনে, ক্লিওপেট্রা তার নিজস্ব কাজকর্মের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনএবং সময় অতিবাহিত করতে লাগলেন।

খ্রিস্টপূর্ব আটচল্লিশ সালে ফার্সালাসের যুদ্ধে, সিজার পম্পেইকে পরাজিত করেছিলেন, পরাজিত পম্পেই আলেকজান্দ্রিয়ায় পালিয়ে যান। ওদিকে, তরুণ টলেমি পম্পেইয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে এবং একই বছরের গোড়ার দিকে তিনি মিশরে গিয়ে জুলিয়াস সিজারের কাছে পম্পেইয়ের খণ্ডিত মস্তক উপস্থাপন করেন। এই কাণ্ডে সিজার দুঃখ পেয়েছিলেন, বিরক্ত হয়েছিলেন: প্রাচীন ইতিহাসবিদ প্লুটার্ক লিখেছিলেন যে কীভাবে সিজার '[যখন] পম্পেইয়ে কাটা মস্তক তাঁর সামনে উপস্থাপিত হলো তখন তিনিভয়াবহভাবে মুষড়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তিনি পম্পেইয়ের নামাঙ্কিত আংটিটি গ্রহণ করেছিলেনএবং তাতে চোখের জল ফেলেছিলেন।'
তরুণ ফারাওয়ের এই স্থূল ভুল গণনা ক্লিওপেট্রা এবং তার বাহিনীর জন্য বড়ো সুযোগ হিসেবে দেখা দেয়। তিনি সিজারের সাথে বৈঠকের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ায় পালিয়ে আসেন এবং যুদ্ধে সিজারের পক্ষাবলম্বন করে তাকে জিতিয়েছিলেন। সিংহাসনের প্রতি ক্লিওপেট্রার দাবিকে সিজার সমর্থন জানান এবং পরাজিত টলেমির সমর্থকদের মধ্যে বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন। এতেটলেমি ত্রয়োদশ মারা যান এবং একুশ বছর বয়সী ক্লিওপেট্রা সপ্তমকে সিংহাসনে বসালেন সিজার। সঙ্গে টলেমি চতুর্দশকে সহ-শাসনে রাখলেন। জোটকে সুসংহত করার লক্ষ্যে, ক্লিওপেট্রা তারচেয়ে ত্রিশ বছরের বড়ো সিজারকে তারই সাথে মিশরে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

রোম ও মিশরের পুত্র
দু'মাস ধ'রে নীল নদের নয়নাভিরাম অববাহিকা এবং ক্লিওপেট্রা নিজে সিজারকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। প্লুটার্ক লিখেছিলেন: "[সিজার] প্রায়শই ভোর পর্যন্ত তাঁর সাথে ভোজসভায় উপস্থিত থাকতেন; তারা নদীপথে একসাথে ইথিওপিয়ার উদ্দেশে ভেসে ভেসে যেতেন।'' সিজার যখন মিশর ছেড়ে যাচ্ছিলেন ক্লিওপেট্রা সেসময় গর্ভবতী। খ্রিস্টপূর্ব সাতচল্লিশ সালেক্লিওপ্রেট্রা একটি ছেলেশিশু জন্ম দেন এবং জুলিয়াস সিজারই এই শিশুর বাবা তাপ্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন। মিশরীয় পুরোহিতরা বলতে শুরু করলেন যে এই শিশু রাজকুমারই ঈশ্বর আমুন-এর প্রতিনিধি, যার বাবা তদানীন্তন সময়েরসবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি জুলিয়াস সিজার।
খ্রিস্টপূর্ব ছেচল্লিশ-এর শেষে ক্লিওপেট্রা সিজারের আমন্ত্রণে রোমে যান, সঙ্গে সিজারিয়ান এবং তার দরবারের সমস্ত আমত্যবর্গদেরও নিয়ে গিয়েছিলেন। প্লুটার্ক লিখেছিলেন যে সিজার "তাকে (ক্লিওপেট্রা) উচ্চ পদবি এবং বহুমূল্য উপহার না দিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় ফিরে আসতে দেবেন না। এমনকি তার ঔরসজাত যে পুত্রসন্তান তাকেও নিজপুত্রের সম্মানে ভূষিত করলেন।" শহরতলির এক ভিলা 'হোর্তি সিজারিস'-এ ক্লিওপেট্রা এবং তার পরিবারকেস্বাগত জানিয়ে সিজার তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানালেন।
অনেক রোমান নাগরিকই সেসময় মন্তব্য করেছিলেন যে শিশুটি দেখতে অবিকল জুলিয়াস সিজারেরই মতো।সিজারের সেনা আধিকারীক মার্ক অ্যান্টনি অন্যান্য পারিষদদের বলেছিলেন যে সিজার তার নিকটতম বন্ধুদের কাছে স্বীকার করেছেন যে সিজারিয়ান সত্য-সত্যই তাঁর পুত্র। যদি ক্লিওপেট্রার দাবি বিশ্বাস করা হয় তবে সিজারিয়ান হলেন সিজারের একমাত্র জীবিত শিশু। পম্পেইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তাঁর কন্যা জুলিয়া খ্রিস্টপূর্ব চুয়ান্ন সালেসন্তান প্রসবকালেমারা যান।

রোমানদের কাছ থেকে শীতল অভ্যর্থনা জোটা সত্ত্বেও জুলিয়াস সিজার রোম ও মিশরের সম্পর্কের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তিনি ভেনাস জেনেট্রিক্সের মন্দিরে ক্লিওপেট্রার একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। সিজার এই যুগটিকে উচ্চাভিলাষী সাম্রাজ্য প্রকল্পের সূচনা হিসাবে দেখেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে তিনি এমনকি আলেকজান্দ্রিয়ায় রাজধানী স্থানান্তর করার বিষয়েও ভেবেছিলেন।
অবশ্য তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় না, কারণ খ্রিস্টপূর্ব চুয়াল্লিশের মার্চ মাসে সিজারকে হত্যা করা হয়। তিনি কখনও সিজারিয়ানকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকার করেননি এবং পরিবর্তে তাঁর ইচ্ছাপত্রে লিখেছিলেন যে প্রপৌত্রঅক্টাভিয়াসই (অক্টাভিয়ান) তাঁর উত্তরাধিকারী। সিজার নিহত হওয়ার সময় ক্লিওপেট্রা এবং সিজারিয়ান রোমে ছিলেন। তাদের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বুঝতে পেরে ক্লিওপেট্রা তৎক্ষণাত মিশরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

সিজার-পরবর্তী জীবন
আলেকজান্দ্রিয়ায় ফিরে আসার পরপরই রানী তার শক্তি একীভূত করতে শুরু করেন। সূত্রগুলি বলছে যে তিনি তাঁর ভাই এবং সহ-শাসক টলেমি চতুর্দশকে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন এবং তারই (টলেমি চতুর্দশ) পুত্রকে নিজের সহকারী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আনুষ্ঠানিকভাবে টলেমি পঞ্চদশ সিজার সিজারিয়ান হিসাবে স্বীকৃত ছিল।
রোমে, মিশরের তরুণ সহ-আধিকারিক হিসেবে নেজেকে পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছিলেন অক্টাভিয়ান। ঠায়-ঠিকুজি গুণে, সময়সীমার হিসেব রেখে, প্রয়াত জুলিয়াস সিজারের ডান-হাত এবং বিশ্বাসঘাতক গিউস ওপিয়াস একটি বই প্রকাশ করেছিলেন যাতে তিনি দাবি করেছিলেন যে সিজারিয়ান মোটেও সিজারের পুত্র নয়। মূলত ক্লিওপেট্রাকে রোমের নতুন শাসকদের সাথে সাবধানে আচরণ করতে হবে এমন সতর্ক বার্তা দেওয়াই ছিল এটির উদ্দেশ্য।
সাইপ্রাসে খ্রিস্টপূর্ব চুয়াল্লিশ সালে সিজারিয়ানদের প্রথম দিককার প্রণীত মুদ্রায় সিজারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।যদিও ছেলেটি তখন নেহায়েত শিশু এবং তাকে তার মায়ের কোলে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই চিত্রিত করা হয়েছিল। অবশ্য পরবর্র্তী সময়ে, নানা শৈল্পিক প্রকাশে ফারাওদেরে ঐতিহ্যবাহী চিত্রের মতোই সিজারিয়ান একজন তরুণ হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, যেমনটি সাধারণত মিশরীয় মাথার পোশাক (নেমেস) এবং কিল্ট (শানডাইট) পরেছিলেন।
সিজারিয়ান-এর অনেক উপস্থাপনায় তাকে মিশরীয় দেবতা হোরাস, আইসিস ও ওসিরিসের পুত্রের সাথে যুক্ত করে। ওসিরিসকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সেট দ্বারা সহিংসভাবে হত্যা করার পরে, আইসিসকে তার পুত্রকে রক্ষা করতে হতো এবং ন্যায়পরায়ণ রাজার মদতাই সিংহাসনে ফিরিয়ে দিতে হতো। ক্লিওপেট্রা সিজারিয়নের পক্ষে সমর্থন জয়ের জন্য এই চিত্রটিকে চৌকসভাবে ব্যবহার করেছিলেন এবং নিজেকে ঐশী মাতৃ-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে পেরেছিলেন।
খ্রিস্টপূর্ব বেয়াল্লিশ সালে মিশরের পূর্ব প্রদেশগুলির দায়িত্বে নিয়ে রোমান বীর হিসাবেমার্ক অ্যান্টনিযখনমিশরে আসেন তখন আরেকবার সিজারিয়ান-এর ভাগ্য পুনরুদ্ধার হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব একচল্লিশ সালে, সহযোদ্ধা অষ্টাভিয়ানকে বাগে আনার একটি উপায় খুঁজছিলেন অ্যান্টনি। এইমর্মে তিনি ক্লিওপেট্রাকে তারসুসে ডেকে পাঠালেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সভাটিকেক্লিওপেট্রা ঠিক ততোটাই গুরুত্ব দিলেন, ততোটাই যত্নের সাথে পরিচালিত করেছিলেন যেমনটি তিনি জুলিয়াস সিজারের সাথে প্রথমবার আলোচনা বসেছিলেন।

তার রাজ্য এবং পুত্র সিজারিয়ানের স্বার্থে তিনি অ্যান্টনিকে একটি দুর্দান্ত নৌভ্রমনে নিয়ে যান এবং তাদেরসম্পর্কটি প্রেমে গড়ায়। এই সম্পর্কটিকে ইতিহাসের অন্যতম প্রগাঢ়সম্পর্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে ইতিহাসবিদ মেরি বেয়ার্ড এ-র আরও ব্যবহারিক দিক তুলে ধরে জানাচ্ছেন, "কাম বা আবেগ এটির একটি উপাদান হতে পারে বটে। তবে তাদের অংশীদারিত্ব আরও কিছু প্রসাশনিক বিষয়ের দ্বারা যুথবদ্ধ ছিল: সামরিক, রাজনৈতিক এবং আর্থিক প্রয়োজন।''
খ্রিস্টপূর্ব একচল্লিশ-চল্লিশের শীতকালটা অ্যান্টনি মিশরেই ক্লিওপেট্রার সঙ্গে কাটালেন। তাদের ঔরসে যমজ সন্তান জন্ম নেয়। জ্যোতিষরা দেবদেবীদের নাম থেকেই ওই শিশু দুটির নাম রাখে: আলেকজান্ডার হেলিওস (সূর্য) এবং ক্লিওপেট্রা সেলিন (চাঁদ)। পরে তাদের ঔরসে টলেমি ফিলাডেলফাস নামে আরও একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এই সময়ে, ক্লিওপেট্রা তার সাম্রাজ্যকে আরও প্রসারিত করে দক্ষিণ সিরিয়া, সাইপ্রাস এবং উত্তর আফ্রিকার সিজারিয়ান অঞ্চলে ছড়িয়ে দেন।
ক্লিওপেট্রার জীবনে সবচেয়ে বড় জাঁকের মুহূর্তটি আসে খ্রিস্টপূর্ব চৌত্রিশ সালে আলেকজান্দ্রিয়া জিমনেসিয়ামে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে, যখন অ্যান্টনি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিশরের রানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন এবং সিজারিয়ানকে 'কিং অফ কিং' উপাধি দিয়েছিলেন। অ্যান্টনি জুলিয়াস সিজারের বৈধ পুত্র হিসাবে সিজারিয়ানকেও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন। অ্যান্টনি তাঁর তিন সন্তানকে ক্লিওপেট্রার সাথে রাজকীয় উপাধি দিয়েছিলেন এবং তার পুত্র আলেকজান্ডার হেলিওসকে রাজ্য উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

অক্টাভিওর জন্য এহেন খবর উসকানি-স্বরূপ ছিল, তিনি ক্লিওপেট্রা এবং অ্যান্টনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। খ্রিস্টপূর্ব একত্রিশ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে তাদের বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন। পরাজিত জুটি পিছু হটে আলেকজান্দ্রিয়ায় ফিরে আসে। ক্লিওপেট্রা সিদ্ধান্ত নেয় যে সিজারিয়ানকে শহর থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়াটাই নিরাপদ। সিজারিয়ান তার গৃহশিক্ষকের সঙ্গে দক্ষিণে যাত্রা করেন, যিনি তাকে নীলনদী ধ'রে খুব দূরের কোপ্ট (কিফ্ট) গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন, গ্রামটি থিবস নগরীর কাছেই। সেখান থেকে কাফেলাগুলি যাত্রা শুরু করে পূর্ব মরুভূমি পেরিয়ে লোহিত সাগরের তীরে বাণিজ্যিক বন্দর বেরেনিসে আসে। সিজারিয়ানের একমাত্র সম্ভাব্য পালানোর পথটি ছিল এই আতিথেয়তাহীন জায়গা জুড়েই। যদি তিনি এই পথটি পাড়ি দিতে সক্ষম হন তবে তিনি মিশর থেকে বের হয়ে আরব বা এমনকি ভারতের দিকে যাত্রা করার সুযোগ পাবেন।
বন্দরের দিকেসম্ভাব্য নির্বাসনের যাওয়ার পথে সিজারিয়ান জানতে পায় যে রোমান সৈন্যরা আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রবেশ করেছে এবং তার মা এবং মার্ক অ্যান্টনি দুজনেই মারা গেছে। এখন যদি সে তার পালানোর পরিকল্পনাটি বজায় রাখে তবে সিজারিয়ানে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রবল, কিন্তু তাঁর গৃহশিক্ষক পরামর্শ দিলেন যে অষ্টাভিয়ান এতিমেদের প্রতি করুণা বোধ করেন অর্থাৎ তিনি কৃপা হবেন।
প্রকৃতপক্ষে, অক্টাভিয়ান যুবক সিজারকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বিবেচনা করেছিলও। কিন্তু তার একজন বিশ্বস্ত অনুচর এই বোঝালেন যে: এমতন ভাবনা অনুপযুক্ত কারণ এতে 'অনেক অনেক সিজার' তৈরি হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। ফলে খ্রিস্টপূর্ব ত্রিশ সালে সিজারিয়ান যখন অক্টাভিয়ার সাথে দেখা করার জন্য আলেকজান্দ্রিয়ায় পৌঁছেছিলেন, তখন তখনই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। আর সেইসাথে রোমান-মিশরীয় ফারাওয়ের স্বপ্ন অদৃশ্য হয়ে যায় এবং মিশরের প্রাচীন টলেমিক রাজ্যের অবসান হয়।