Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
June 10, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JUNE 10, 2025
বোটানিক্যাল পোয়েট

ইজেল

আমীন আল রশীদ
12 June, 2021, 12:10 am
Last modified: 12 June, 2021, 01:07 am

Related News

  • ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • কবি দাউদ হায়দার আর নেই
  • যেভাবে হুমকির মুখে থাকা কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী চিনার গাছ সংরক্ষণের লড়াই চলছে
  • চট্টগ্রামে আবৃত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু’, মাঝপথে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ
  • ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ: কবি সোহেল হাসান গালিবকে কারাগারে

বোটানিক্যাল পোয়েট

বাংলার মুখ তিনি দেখেছেন, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যান না; কারণ অন্ধকারে জেগে উঠে তিনি এখানে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখেন ছাতার মতন বড় পাতার নিচে দোয়েল পাখি বসে আছে। এখানে বৃক্ষের পাতা যে প্রকৃতির সন্তান পাখিদের জন্য বিরাট আশ্রয়; বৃষ্টি ও তপ্ত রোদের থেকে গাছের পাতা যে দোয়েল পাখিকে সুরক্ষিত রাখে; সেই চিত্রকল্প তিনি যতটা সাবলীলভাব এঁকেছেন, তা অনন্য।
আমীন আল রশীদ
12 June, 2021, 12:10 am
Last modified: 12 June, 2021, 01:07 am
চালতাফুল

জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতা বা অন্য যেকোনো একটি কাব্যগ্রন্থ হাতে নিয়ে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে যেকোনো একটি পৃষ্ঠা উল্টালে সেই পৃষ্ঠায় যে কবিতাটি পাবেন, সেই কবিতায়ও সম্ভবত কোনো একটি বৃক্ষ, লতাগুল্ম কিংবা কোনো ফল ও ফুলের নাম রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের আর কোনো কবির ক্ষেত্রে এই কথা এতটা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়।

জীবনানন্দ যেখানে যে বৃক্ষ বা লতাগুল্মের নাম ব্যবহার করেছেন, খুব সতর্কভাবে পড়লে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে হবে যে, সেখানে ওই শব্দটিই উপযুক্ত। তিনি যখন লেখেন, 'তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে'—তখন ম্লান চোখ বোঝাতে বেতের ফল ছাড়া আর কোনো ফলই এখানে প্রাসঙ্গিক মনে হয় না। তার মানে তিনি না বুঝে বা তার মুখস্ত ছিলো বলে ইচ্ছেমতো কিংবা বিনা যুক্তিতে অথবা শুধুই ছন্দ ও তালের বিবেচনায় বৃক্ষলতাগুল্মের কথা লিখেছেন, বিষয়টি এমন নয়। তিনি যেখানে জারুলের কথা লিখেছেন, পড়ে দেখুন সেখানে হিজল বললে সেটি ঠিক দাঁড়ায় না। যেখানে তিনি চালতা ফুলের কথা লিখেছেন, সেখানে জবা বললে অর্থের হয়তো হেরফের হয় না, কিন্তু নিবিড় পাঠকের মনেই হবে যে, এখানে চালতাফুলই যুৎসই। এটিই জীবনানন্দের শক্তি। প্রকৃতিকে তিনি যে হৃদয়ের অন্তঃস্থল দিয়ে উপলব্ধি করেছেন এবং সেখানে আবেগের সাথে তাঁর যে উদ্ভিদবিজ্ঞানচিন্তাও প্রবল ছিলো, এটিই সত্য। সুতরাং, তাকে প্রকৃতির কবি, রূপসী বাংলার কবি, নির্জনতার কবি, আত্মঘাতী ক্লান্তি ও বিপন্ন বিস্ময়ের কবি, মৃত্যুচিন্তা ও বিচ্ছিন্নতাবোধের কবি অথবা শুদ্ধতম কবি—যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তিনি আসলে বোটানিক্যাল পোয়েট বা উদ্ভিদবিদ্যারও কবি।

জীবনানন্দ দাশ

বুদ্ধদেব বসুর ভাষায়, 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'তে জীবনানন্দ নিজেকে 'প্রকৃতির কবি' হিসেবে প্রমাণ করেছেন (কালের পুতুল, কলকাতা নিউ এজ পাবলিকেশন্স, ১৯৫৯, পৃষ্ঠা ২৭)। 

বুদ্ধদেব মনে করেন, এক হিসেবে সকল কবিই প্রকৃতির কবি। কিন্তু সকল কবিকেই ওই আখ্যা দেয়া যায় না। কারণ সকলের পক্ষে প্রকৃতি একমাত্র কিংবা প্রধান  বিষয় নয়। অনেক কবির পক্ষে প্রকৃতি মানবজীবনের নানা অভিজ্ঞতার পটভূমিকা; অনেকের পক্ষে ইন্দ্রিয়ের বিলাস, আবার কারো-কারো পক্ষে আমাদের মনের অবস্থার প্রতিরূপমাত্র। প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে অনুভব না করেন এমন কোনো কবি নেই; কিন্তু সমগ্র জীবনকে প্রকৃতির ভিতর দিয়েই গ্রহণ ও প্রকাশ করেন এমন কবির সংখ্যা অল্প। তাঁরাই বিশেষভাবে প্রকৃতির কবি। মূলত জীবনানন্দের অনেক প্রেমের কবিতাও প্রকৃতির কবিতা। সুতরাং যেসব যুক্তিতে বুদ্ধদেব তাঁকে 'প্রকৃতির কবি' বলে অভিহিত করেছিলেন, সেটি খুবই যৌক্তিক।

জীবনানন্দের কবিতায় বিষয় হিসেবে প্রেম-বিচ্ছেদ-সংসারের টানাটানি বা রিরংসার বাইরে বিশাল জায়গাজুড়ে বাংলার বৃক্ষ ও লতাগুল্মের প্রতি পক্ষপাতের পেছনে রয়েছে তার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং পারিবারিক পরিবেশের দারুণ প্রভাব। সুতরাং, এই বোটানিক্যাল পোয়েটের বৃক্ষপ্রেম সম্পর্কে আলোচনার আগে আমাদের নজর দিতে হয় তার শৈশব-কৈশরের পারিবারিক পরিবেশ এবং যে বরিশাল শহরে তার বেড়ে ওঠা—সেই শহরের দিকে।

আকন্দ
  

আজকের বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিভাগীয় শহর। এই শহরের উত্তরপশ্চিম দিকে কালিবাড়ি রোডের ভাড়াবাড়িতে জন্মের পরে কাছেই বগুড়া রোডে পারিবারিক বাসগৃহ সর্বানন্দ ভবনে বেড়ে ওঠেন বরিশাল শহরের তৎকালীন বনেদী পরিবারের এই ব্রাহ্মসন্তান। এখনও এই শহরটি দেশের অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে আলাদা। এই শহরের ভেতরে এখনও অজস্র পুকুর, চারপাশে বিশালাকায় বৃক্ষরাজি। বিশেষ করে বরিশাল লঞ্চঘাটে নেমে ক্লাব রোড ধরে শহরের দিকে যেতে থাকলে এর শান্ত নিবিড় পরিবেশ, গাছের ঘন ছায়ায় মন ভালো হয়ে যাবে।

বরিশালের যে বাড়িতে তিনি বেড়ে উঠেছেন এবং জীবনের একটি বড় সময় কাটিয়েছেন, সেই বাড়ির আঙিনায় তিনি ফুলের বাগান করেছিলেন। নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন গোলাপসহ নানা ফুলের গাছ। স্মৃতিকথায় ছোট ভাই অশোকানন্দ দাশ (আমার দাদা জীবনানন্দ দাশ, হাওড়া গার্লস কলেজ পত্রিকা, ১৯৫৫) লিখেছেন, বোধ হয় স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়বার সময় অথবা কলেজের প্রথম বৎসর তিনি কিছু টাকা জমিয়ে কলকাতার এক নার্সারি থেকে ফুলের চারা আনিয়েছিলেন। নিজের পড়ার ঘরের ঠিক সামনে কতকটা জায়গা ঘিরে ফুলের বাগান তৈরি হয়েছিল। জুঁই, চামেলি, গন্ধরাজ, কাঁঠালিচাঁপা, রঙ্গন, নীলজবা, হাস্নাহেনা, কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে কয়েকটি উৎকৃষ্ট গোলাপের গাছও সেখানে ছিল। তাঁর বাগানের 'পলনিরণ' গোলাপ ফুল বরিশালে প্রশিদ্ধি লাভ করেছিল। কারণ অত বড় গোলাপ ফুল জন্মানো সহজ ছিল না। 

জারুল

সম্ভবত বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এমন কোনো গাছপালা বা তরুলতা নেই, যা জীবনানন্দ তার কবিতায় ব্যবহার করেননি। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তিনি যে না বুঝে না চিনে এসব গাছ ও লতাপাতার ব্যবহার করেছেন তা নয়; বরং বাক্য গঠন ও শব্দ চয়নে এটা স্পষ্ট যে, তিনি এসব চিনতেন এবং এর গুণাগুন সম্পর্কেও জানতেন। এসব গাছের সঙ্গে তাঁর আশৈশব সখ্য ছিলো। বটের ঝুরি, অশ্বত্থের ডাল কিংবা হিজলের ক্লান্ত পাতা ও ডালের গুঞ্জরন যে ভিন্ন ভিন্ন দ্যোতনার সৃষ্টি করে, সেটি খুব স্পষ্টভাবেই বিধৃত তার বর্ণনায়।

জীবনানন্দ তার কবিতা, গল্প, উপন্যাসে গাছপালার এত বেশি ব্যবহার করেছেন যে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে গিয়ে একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সেই প্রয়াসে ইতি টেনেছি। সুতরাং তার সবগুলো কাব্যগ্রন্থ বা গল্প-উপন্যাস নয়, বরং আমরা যদি শুধু তার 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থের দিকে তাকাই (এ কারণে তাকাতে চাই যে, এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বাংলার রূপ ও প্রকৃতির জন্য নিবেদিত এবং যেখানে মৃত্যুর পরেও তার ফিরে আসার আকুতি), তাহলে দেখব এই কাব্যগ্রন্থের পরতে পরতে গাছপালার প্রসঙ্গ। 

এই কাব্যগ্রন্থে তিনি যেসব গাছের নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলো হচ্ছে অর্জুন, অশ্বত্থ, আম, কদম, করমচা, কামরাঙা, কুল, কাঁঠাল, গাব, চন্দন, চালতা,  জাম, জামরুল, জারুল, জিউলি, ডুমুর, তমাল, তাল, তেঁতুল, দারুচিনি, নারকেল, নিম, পলাশ, পামগাছ, বট, বাবলা, বুনোচালতা, মাদার, লিচু, শিমুল, শুপুরি, সজিনা, সুন্দরী ও হিজল। 'রূপসী বাংলা'য় তিনি যেসব লতাগুল্ম, ফুল ও শাকের নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলো হচ্ছে অপরাজিতা, আকন্দ, আনারস, আলোকলতা, অ্যাশশ্যাওড়া, করবি, কলমি, কাশ, কাঠমল্লিকা, কাঁঠালিচাঁপা, ক্ষীরুই, খড়, গোলপাতা, ঘাস, চিনেবাদাম, ঢেঁকিশাক, দ্রোণফুল, বঁইচি, বাসক, চাঁপা, থোড়, ধুন্দুল, নলখাগড়া, নাটাফল, নোনা (আতাফল), পাট, ফণীমনসা, বাঁশ, বাসক, বেগুন, বেত, ভাঁট, ভেরেন্ডা, মধুকূপী ঘাস, মৌরী, লালশাক, লেবু, শটি, শর, শসা, শিউলি, শেফালি, শেয়ালকাঁটা, শ্যাওলা, হেলেঞ্চা। ধানের মধ্যে উল্লেখ করেছেন বালাম ধান, রূপশালী ধান, শালিধান ও বাসমতির নাম।

ভাঁটা

রূপসী বাংলায় উল্লিখিত গাছপালা, তৃণলতা ও ফুল-ফলের একটি অ্যালবাম (জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার পুষ্প-বৃক্ষ, অনিন্দ্য প্রকাশ, ২০১৩) প্রকাশ করেছেন প্রকৃতিবিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, উত্তর প্রজন্ম হয়তো বাংলার বিলুপ্ত কোনো ফুল পাখি বা তৃণগুল্মের সন্ধান পাবে জীবনানন্দের রচনা থেকে। ব্যাপকতার দিক থেকে তিনি অন্যতম কবি যিনি প্রকৃতির উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গগুলো গভীর অনুভব থেকে বহুমাত্রিকতায় তুলে এনেছেন। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এসব উপাদানের এমন যথাযথ ব্যবহার বাংলা সাহিত্যে বিরল। মোকারম হোসেনের ভাষায়, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা আসলে তাঁর সমগ্র কবিকৃতির মুখচ্ছবি। যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় তার আত্মপরিচয়ের শিকড়কাহিনী। জন্মমাটির প্রতি ভালোবাসার এক মহৎ সংগীত এখানে উচ্ছ্বসিত। মধূকুপী ঘাস, কাঁঠাল, অশ্বত্থ প্রভৃতির পাশাপাশি নাটা, পানের বন, ধান, লেবুর শাখা, ঘাস এনেছে শ্যামলী বাংলার অনুষঙ্গ। একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থে বিশাল উদ্ভিদ জগতের এমন উদ্ভাস রীতিমতো বিস্ময়কর। এই অ্যালবামের কাজ করতে গিয়ে মোকারম হোসেন যে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন তা হলো, জীবনানন্দের ব্যবহৃত কতগুলো নাম নিয়ে তিনি বিভ্রান্তিতে পড়েন। যেমন যে ফুলকে তিনি 'করবি' বলেছেন, আদতে সেটি 'কলকে' ফুল। আবার কবিতায় উল্লিখিত 'চিনিচাঁপা' নামে কোনো বৃক্ষের খোঁজ পাওয়া যায় না।  তবে চিনিচাঁপা নামের এক প্রজাতির কলা আছে। একইভাবে 'ক্ষীরুই;-এর কথা বলা যায়। এটি উদ্ভিদবিজ্ঞানে প্রচলিত কোনো বৃক্ষ নয়। তবে 'ক্ষিরি' বা 'খিরনি' আছে।

বিশ্বজিৎ ঘোষ (কালি ও কলম, অক্টোবর ২০১৭) লিখছেন, জীবনানন্দের কবিতায় যে-প্রকৃতি, 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থে পাওয়া যায় বাংলার যে-রূপ–এই প্রকৃতি এই বঙ্গশোভা একান্তভাবেই স্বপ্ন স্মৃতি ও শ্রুতির বাংলাদেশ। বাংলার অবারিত প্রকৃতি, বাংলার গাছপালা, লতা-গুল্ম, বাংলার নদ-নদী কবির চেতনায় সঞ্চার করেছে জেগে ওঠার অনেকান্ত সাহস। প্রথম পর্বে জীবনানন্দ বাংলার প্রকৃতিতে দেখেছেন নষ্ট শসা, পঁচা চালকুমড়া আর মরা হেমন্তে মৃত শেফালীর শ্মশান–পরিণতিতে তিনিই লিখেছেন: 

'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর।'

বুনোচালতা

তিনি বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন:

'সেখানে সবুজ ডাঙা ভ'রে আছে মধূকুপী ঘাসে অবিরল;
সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল'।

বস্তুত আমাদের চেনা পৃথিবীর, চেনা প্রকৃতির ভেতরে দৃশ্যমান সকল গাছপালা-তরুলতা-ফল-ফুল ও গুল্মের; এমনকি দ্রোণফুল, বঁইচি, ভাঁট, ভেরেন্ডা, শেয়ালকাঁটার মতো কম পরিচিত, বিশেষ করে শহুরে মানুষদের কাছে, সেইসব গাছেরও সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিলো এবং সেসব তিনি কবিতায় ব্যবহার করেছেন যৌক্তিকভাবে তথা নন্দনতাত্ত্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ করেই। বলা যায়, বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা ছিলো বলেই, প্রকৃতির প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ প্রেম ছিলো বলেই বঁইচির বনে জোনাকির রূপ দেখে কাতর হয়েছিলেন বা হতে পেরেছিলেন।

কলমি

বাংলার প্রকৃতি, বিশেষ করে এর গাছপালা ও লতাগুল্মের প্রতি জীবনানন্দের যে তীব্র অনুরাগ, কখনো-সখনো সেটি হাহাকারেও রূপ নিয়েছে। যেমন 'রূপসী বাংলা'র প্রথম পঙক্তিতেই বলছেন: 'আমি চলে যাব বলে চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে'। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে পৃথিবীতে কী হবে না হবে, তার সেই ভাবনার ভেতরেও বাংলার গাছপালা ও ফুল। তিনি লিখেছেন চালতাফুল। এই ফুলটির সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে তারা জানেন এর বিস্ময়কর রূপ। এখানে তিনি কোনো বিদেশি বা বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত ফুলের নামও লিখতে পারতেন। কিন্তু তিনি খুব সচেতনভাবেই চালতার মতো এমন একটা ফুলের কথা লিখেছেন, প্রথমত যেটি এক অপার সৌন্দর্যের খনি, দ্বিতীয়ত এটি বাংলার প্রকৃতিতে অতি পরিচিত—যে বাংলায় তিনি ফিরে আসতে চেয়েছেন মৃত্যুর পরেও। মৃত্যুর ঘুমে যখন তিনি শুয়ে থাকবেন বলে ভাবছেন, তখনও সেখানে অন্ধকারে নক্ষত্রের নিচে কাঁঠালের ছায়া তাঁর বুকের উপরে এসে পড়ছে। তিনি ভাবছেন তার শ্মশানচিতা বাংলার ঘাসে ভরে আছে। তিনি বাসকের গন্ধ পান। অর্থাৎ জীবনমৃত্যু এবং মৃত্যুপরবর্তী ফিরে আসা তথা পুনর্জন্মের প্রসঙ্গেও বারবার এই বাংলার গাছের প্রসঙ্গই বলে দেয় যে, আম-জাম-কাঁঠাল-হিজলদের প্রতি তিনি কী ভীষণরকম মোহাবিষ্ট ছিলেন।

জীবদ্দশায় তিনি এই বাংলা ছেড়ে যেতে চাননি কোথাও। কেন যেতে চাননি সেই ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন:

'তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও—
আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব;
দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে।'

তার মানে একটি গাছের পাতার ঝরে যাওয়ার দৃশ্য দেখার জন্যই তিনি এই বাংলায় থেকে যেতে রাজি। প্রকৃতি ও বৃক্ষের প্রতি কী ভীষণ পক্ষপাত! প্রশ্ন হলো, কাঁঠালপাতা ঝরে যাওয়ার দৃশ্যটি কী এমন স্বর্গীয়? প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কাঁঠালপাতা ঝরে পড়ে। আমাদের চোখে কি তার সেই ঝরে পড়া ভিন্ন কোনো আবেদন সৃষ্টি করে? হয়তো করে না বলেই আমরা জীবনানন্দ নই।

অনেক গাছপালা ও লতাগুল্মের কথা তিনি লিখলেও বট, অশ্বত্থ, হিজল, কাঁঠাল ও জারুলের প্রতি তাঁর পক্ষপাত যেন একটু বেশি। যে কারণে এই গাছগুলোর নাম তিনি বহুবার বহু প্রসঙ্গে বহু অর্থে ব্যবহার করেছেন। 'রূপসী বাংলা'র একটি পঙক্তি:

'অশ্বত্থে সন্ধ্যার হাওয়া যখন লেগেছে নীল বাংলার বনে
মাঠে মাঠে ফিরি একা : মনে হয় বাংলার জীবনে সংকট
শেষ হয়ে গেছে আজ—চেয়ে দেখ কত শত শতাব্দীর বট
হাজার সবুজ পাতা লাল ফল বুকে লয়ে শাখার ব্যঞ্জনে
আকাঙ্ক্ষার গান গায়-অশ্বত্থেরও কী যেন কামনা জাগে মনে।'

ভেরেন্ডা

এখানে তিনি বট ও অশ্বত্থকে ইতিহাসের সাক্ষী মানেন। অশ্বত্থকে তিনি মনসর্বস্ব প্রাণীতে পরিণত করেন। কিন্তু এইসব গাছের ব্যবহার কখনো অতিরিঞ্জিতও মনে হয় না। বরং এইসব গাছের প্রসঙ্গ তিনি যখন বলছেন, তখন পাঠকের মনের ভেতরে যে দোলা যে অনুরণন তৈরি হয়, তাতে মনে হবে এইসব বাক্যের ভেতরে এইসব গাছের প্রসঙ্গ যথেষ্ট যৌক্তিক। যেমন কোনো এক শঙ্খবালিকার ধূসর রূপের কথা যখন তাঁর মনে হয়, তিনি মনে করতে পারেন এই আম জামের ছায়াতেই তিনি একদিন তাকে দেখেছিলেন:   

'দেখিবে কখন কারা এসে আমকাঠে
সাজায়ে রেখেছে চিতাঃ বাংলার শ্রাবণের বিস্মিত আকাশ
চেয়ে রবে; ভিজে পেঁচা শান্তস্নিগ্ধ চোখ মেলে কদমের বনে।'

একটি কবিতায় বলছেন, 'হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা।' হিজল গাছের সঙ্গে যার পরিচয় আছে, তিনি জানেন হিজলের পাতার ফাঁক দিয়ে যখন আলো এসে পড়ে, তখন সেটি আসলে একরকম জানালার মতোই মনে হয়। সেখানে আলোর সাথে বুলবুলির খেলা দেখতে হলে যে দুর্দান্ত ক্যামেরার লেন্স থাকতে হয়, সেটি জীবনানন্দের চোখে ছিলো। তিনি শব্দ দিয়ে বাংলার রূপ প্রকৃতির যে ছবি এঁকেছেন, তা বিশ্বখ্যাত যেকোনো আলোকচিত্রীর জন্যই ঈর্ষণীয়। ভাবা যায় না, তিনি যদি এই সময়ে পৃথিবীতে থাকতেন এবং যদি তার একটি অত্যাধুনিক ক্যামেরা আর সাথে একটি উন্নত লেন্স থাকতো, প্রকৃতির কী ভয়াবহ সুন্দর ছবিগুলোই না তিনি তুলে ফেলতেন। কারণ তাঁর মতো করে এমন নিবিড়ভাবে বাংলার বৃক্ষ-লতা-গুল্ম-নদী ও ঘাসের সৌন্দর্য কে পাঠ করেছেন! তাঁর মতো কে আর শুধুই শব্দ দিয়ে প্রকৃতির ঘ্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন পাঠকের নাকে! 'নরম জামের মতো চুল'—এমন বিস্ময়কর চিত্রকল্প কে এঁকেছন!

হিজল

বাংলার মুখ তিনি দেখেছেন, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যান না; কারণ অন্ধকারে জেগে উঠে তিনি এখানে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখেন ছাতার মতন বড় পাতার নিচে দোয়েল পাখি বসে আছে। এখানে বৃক্ষের পাতা যে প্রকৃতির সন্তান পাখিদের জন্য বিরাট আশ্রয়; বৃষ্টি ও তপ্ত রোদের থেকে গাছের পাতা যে দোয়েল পাখিকে সুরক্ষিত রাখে; সেই চিত্রকল্প তিনি যতটা সাবলীলভাব এঁকেছেন, তা অনন্য। তিনি বাংলার মুখ দেখেছেন বলে পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যান না, কারণ তিনি চারিদিকে দেখেন পল্লবের স্তূপ যেখানে জাম বট কাঁঠাল হিজল অশ্বত্থরা চুপ করে থাকে। যেন তার সাথে নিঃশব্দে কথা বলে। যেন এইসব বৃক্ষের ভাষা তিনি বোঝেন। সজিনার ডালে পেঁচার ক্রন্দনের যে হাহাকার, সেটি জীবনানন্দ ছাড়া আর কে শুনেছেন? যিনি চলে যেতে চেয়েছেন শুকনো পাতা-ছাওয়া ঘাসে—জামরুল হিজলের বনে; তলতা বাঁশের ছিপ হাতে যেখানে জামের গভীর ডাল-ছাওয়া শান্ত নীল জলে রুপালি মাছ খেলা করে। তিনি দেখেন সেই কিশোরীকে দুপুরের অবসরে যে এসেছে জামরুল লিচু আহরণে। তার পিছু নিলে দেখা যাবে সে আকন্দ বা করবির বনে ভোমরা ভয়ে ভীরু। তিনি জানেন পৃথিবীর সব ঘুঘু হিজলের বনেই ডাকে। তিনি সেই ডাক শোনেন।  তিনি এইসব ভালোবাসেন। জীবনের পথে ঘুরে এইসব ভালোবেসে তার হৃদয় আকুল। তিনি দেখেন ভিজে চালে কদমের পাতা ঝরা। যেখানে—

'শালিখ বসে থাকে মুহূর্ত সময়।
মলিন শাড়ির ঘ্রাণ ধূপ হাতে দুয়ারে দাঁড়ায়। 
মৃদু আরও মৃদু হয়ে জ্যোৎস্নায় বাতাসে হারায়।'

Related Topics

জীবনানন্দ দাশ / জীবনানন্দ / কবিতা / কবি / গাছ / গাছপালা / বৃক্ষ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর
  • মেইতেই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর উত্তাল মণিপুর, ইন্টারনেট বন্ধ-কারফিউ জারি
  • করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ
  • মোদির পক্ষে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে কাজের অভিযোগে মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি
  • বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল
  • কলকাতায় নিহত সাবেক এমপি আনারের বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ায়

Related News

  • ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • কবি দাউদ হায়দার আর নেই
  • যেভাবে হুমকির মুখে থাকা কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী চিনার গাছ সংরক্ষণের লড়াই চলছে
  • চট্টগ্রামে আবৃত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু’, মাঝপথে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ
  • ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ: কবি সোহেল হাসান গালিবকে কারাগারে

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর

2
আন্তর্জাতিক

মেইতেই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর উত্তাল মণিপুর, ইন্টারনেট বন্ধ-কারফিউ জারি

3
বাংলাদেশ

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ

4
আন্তর্জাতিক

মোদির পক্ষে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে কাজের অভিযোগে মার্কিন সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি

5
বাংলাদেশ

বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

6
বাংলাদেশ

কলকাতায় নিহত সাবেক এমপি আনারের বিলাসবহুল গাড়ির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ায়

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net