বিতর্কিত নোবেল পুরস্কার: সুলুক সন্ধান

নোবেল পুরস্কারের পাট মাত্র কদিন আগেই চুকে গেছে। বেখাপ্পা সময় দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী, লেখক, অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ব জুড়ে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, টেলিফোনে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারটি পাওয়ার কথা জানতে পেরেছেন তারা।
১৯০১ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, মারি কুরি, নেলসন মান্দেলা, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটির মতো সবার পরিচিত মানুষগুলো এবং প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৯৫৪ মনীষি ও প্রতিষ্ঠান নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ এক বিরাট ইতিহাস। নানা নাটকীয়তা আর অসন্তোষে আকীর্ণ থাকার পক্ষে যথেষ্ট দীর্ঘই বলতে হবে।
তো নোবেল পুরস্কার কিভাবে দেওয়া হয়, আর কিভাবে এটি অতীত আমল থেকেই বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তারই সুলুক সন্ধান করা হয়েছে এখানে।
নোবেল পুরস্কার নিয়ে কেন এতো হৈচৈ?
আর দশটা পুরস্কারের চেয়ে নোবেল পুরস্কার বিরাট কিছু হওয়ার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে সত্যি বলতে কি কেউই একমত নন। এক শো বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি চালু থাকা একটা কারণ হতে পারে--কিংবা খোদ পুরস্কারের পরিমাণ বিশাল বলে--মোটামুটি ১ মিলিয়ন ডলার।
এই পুরস্কারের পেছনের কথা কমবেশি সবারই জানা। আলফ্রেড নোবেল নামে একজন সুইডিশ রসায়নবিদ এবং প্রকৌশলী ডিনামাইট আবিষ্কার করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যান। ১৮৯৬ সালে মৃত্যুর আগে একটা অদ্ভুত কাজ করে যান তিনি। বিশ্বের যেকোনও জায়গায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে পুরস্কৃত করার জন্যে ২৬০ মিলিয়ন ডলার দান করেন তিনি। এভাবেই জন্ম নোবেল পুরস্কারের।
কিভাবে বিজয়ী নির্বাচিত হন?
পাঁচটি ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শারীরতত্ত্ব কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শান্তি। (১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুবাদে সূচিত অর্থনীতি শাস্ত্রের জন্যে দেওয়া পুরস্কার সে-অর্থে নোবেল পুরস্কার না হলেও আলফ্রেড নোবেলের সম্মানার্থেই দেওয়া হয়।)
নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের অবশ্যই জীবিত হতে হবে। তিনজনের বেশি লোক এই পুরস্কারের অংশীদার হতে পারবেন না। তবে ব্যক্তিবিশেষের পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নেই। যেকোনো প্রতিষ্ঠানও এই পুরস্কার পেতে পারে, যেমন জাতি সংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং বাংলাদেশের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ গ্রামীণ ব্যাংক এই পুরস্কার পেয়েছে।
নোবেল কমিটি প্রতি বছর কয়েক হাজার ব্যক্তিকে বিজয়ী মনোনয়নের জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। এসংক্রান্ত নথিপত্র ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন থাকে, এরপর অবমুক্ত করা হয়। তার মানে নোবেল প্রাইজ নোমিনেশন আর্কাইভসে খোঁজ চালিয়ে গোটা ইতিহাস জুড়ে কে কাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন জানা সম্ভব। যেমন, প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন ডেলানো রুজভেল্ট নিজে যেমন মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তেমনি অন্যকেও মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তিনি এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্ডেল হাল একই বছর পরস্পরকে মনোনয়ন দেন। রুজভেল্ট আদৌ পুরস্কার পাননি, কিন্তু হাল ১৯৪৫ সালে জাতি সংঘ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দেওয়ার কারণে শান্তি পুরস্কার পান।
তাহলে এই সিদ্ধান্ত আসে কোত্থেকে? পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য এবং অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্যে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি নিজস্ব সদস্যদের নিয়েই বিভিন্ন কমিটি গঠন করে। কারোলিন্সকাইন্সটিটুটেট নামে একটি সুইডিশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শারীরতত্ত্ব এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বেলায় এই কাজটি করে থাকে। এসব কমিটির সদস্যপদের মেয়াদ তিন বছর।
হর বছর বিভিন্ন কমিটি গোপনীয়তা বজায় রেখে উপযুক্ত ব্যক্তিদের সম্ভাব্য লেখকদের মনোনয়ন দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। সাধারণত একাডেমি বা খোদ ইন্সটিটিউটে সদস্য, সংশ্লিষ্ট নোবেল কমিটির সদস্য, অতীতে নির্দিষ্ট বিষয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং নরওয়ের স্থায়ী প্রফেসরবৃন্দ, অন্যান্য বিদ্যাপীঠের বিভাগীয় প্রধান, বিজ্ঞানী বা বিভিন্ন লেখক-সমিতির সভাপতিদের নিয়ে কমিটি করা হয়।
নরওয়েজীয় সংসদ নিয়োজিত নরওয়েজিয় নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কারের ব্যাপারটা তদারক করে। এখানে মনোনয়নদানকারীকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন হয় না, বরং তাকে কমিটির সদস্য বা পরামর্শক, অতীতের নোবেল বিজয়ী, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিয়োজিত ব্যক্তি (সমাজ বিজ্ঞান, শান্তি বিষয়ে গবেষণা, ইত্যাদি), জাতীয় রাজনীতিক কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য হতে হবে।
পুরস্কারের উপর নির্ভর করে মনোনয়নদাতা একটি ফরম পূরণ বা চিঠি লিখে পাঠাতে পারেন। নিজেকে কেউ মনোনয়ন দিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রায়শ পরামর্শকদের সহায়তায় বিজয়ীকে ভোট দিয়ে থাকেন কিংবা বৃহত্তর সভায় সুপারিশ পেশ করেন। সব সিদ্ধান্তই চূড়ান্তভাবে নেওয়া হয়।
বিজয়ীরা আসলে কী পান?
পুরস্কার বিজয়ীরা স্টকহোমে শাদা টাই পরে এক জাঁকালো অনুষ্ঠানে যোগ দেন, সুইডিশ রাজপরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দৃষ্টিনন্দন ডিপ্লোমা, একটা ভারী সোনার মেডাল এবং পুরস্কারের অর্থ মূল্য নিশ্চিতকারী একটি চিঠি হাতে পান। এবার মোট পুরস্কারের পরিমাণ ছিল ১০.০০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা। এই অর্থ সর্বোচ্চ তিনজনের ভেতর ভাগ করে দেওয়া সম্ভব ছিল। মূল অনুষ্ঠান শেষে জাঁকাল ভোজের আয়োজন চলে। তবে একটা ব্যতিক্রম রয়েছে। অসলোতে ভিন্ন একটি অনুষ্ঠান মারফত নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। আলফ্রেড নোবেল বিশেষ কোনো পুরস্কার কেন সুইডিশরা দেবে, আবার বিশেষ একটি পুরস্কার নরওয়েজিয়রা দেবে, সে ব্যাখ্যা দেননি।

নোবেল নিয়ে সেরা বিতর্ক কোনগুলো?
নোবেল সাহিত্য পুরস্কারটি প্রায়ই বিতর্ক জন্ম দেয়। যেমন, ভ্লাদিমির নবোকভ এবং জেমস জয়েসের মতো বহু ব্যাপক সমাদৃত লেখক এই পুরস্কার পাননি, কিন্তু এখন বিস্মৃত অনেক লেখকই পেয়েছেন।
বিশেষত বিজ্ঞানের মতো প্রচুর সহযোগিতার দাবি রাখে, এমন ক্ষেত্রে তিনজনের বেশি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বেলায় নিষেধাজ্ঞা ভালো বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই নিয়মের কারণে কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রেডিনামিক্সে অবদানের জন্যে ফ্রিম্যান ডাইসনসহ পুরস্কার বঞ্চিত ব্যক্তিদের ভালো একটা ফর্দ আছে পদার্থবিদ মার্ক জ্যাকসনের কাছে।

নোবেল পুরস্কার যেহেতু ভ্রান্তিময় মানুষের কাজ, তাই এটা ইউরোপ কেন্দ্রিকতা, লৈঙ্গিক বৈষম্য জাতীয় অভিযোগের মুখে পড়েছে। যেমন ধরা যাক, ১৯৬৭ সালে পদার্থবিদ্যার গবেষক জসেলিন বেল তার উপাত্তে এক বিচিত্র প্যাটার্ন লক্ষ করেন. সেটাই ছিল পালসার নক্ষত্র আবিষ্কারের প্রথম ঘটনা। কিন্তু তিনি পুরস্কার পাননি। তার বদলে ১৯৭৪ সালে তারই উপদেষ্টা অ্যান্টনি হিউইশ 'পালসার আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকার জন্যে পদার্থবিদ্যায়' নোবেল পুরস্কার পান। সতীর্থ মহাকাশচারী মার্টিন রাইলের সাথে এই পুরস্কার ভাগাভাগি করেন তিনি।
সম্ভবত নোবেল শান্তি পুরস্কারই সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়ে আছে। সেটা কেবল মহাত্মা গান্ধী পুরস্কারটি না পাওয়ার কারণে নয়।
নোবেল শান্তি পুরস্কার কেন বরাবর বিতর্কিত?
নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘিরে সবসময়ই বিতর্ক রয়েছে। অংশত এটি রাজনৈতিক পুরস্কার হওয়া একটি কারণ। আরও বড় কথা হলো, রাজনীতিকদের ভেতর কেউ কেউ বিশেষ শান্তি প্রক্রিয়ার সুবাদে পুরস্কার পান বটে, কিন্তু পরে তারাই বিরোধে জড়িয়ে পড়েন কিংবা অতীতে সংঘাতে লিপ্ত থাকার নজীর দেখা যায়।
২০০৯ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর নীতি বিষয়ক কলামিস্ট র্যান্ডি কোহেন 'অতীতের পুরস্কার বিজয়ী বারবার পুরস্কারের মূল্যবোধের বিপরীত কাজে জড়িয়ে পড়লে পুরস্কার প্রত্যাহার করা উচিত' বলে মত দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট টেডি রুজভেল্ট, হেনরি কিসিঞ্জারসহ বেশ কয়েকজন অনুপযুক্ত বিজয়ীর নাম উল্লেখ করেন তিনি। নোবল পুরস্কারের নিয়ম মোতাবেক পুরস্কার প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
তর্কসাপেক্ষে ২০০৯ সালে 'আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং বিভিন্ন দেশের ভেতর সহযোগিতা সংহতকরণে প্রয়াসের' কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রেসিডেন্ট ওবামাই সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি। ওবামা তখনও তার প্রথম মেয়াদের পয়লা বছর পার করছিলেন। সেই সময় অনেকেই এটি অসময়ে দেওয়া পুরস্কার বলে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তাছাড়া, তখন থেকেই তিনি বেশ কিছু বোমাবর্ষণ এবং ড্রোন অভিযানে জড়িত ছিলেন।
বিতর্কের ভিন্ন চেহারায় তিনজন শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পুরস্কার পাওয়ার পর স্বদেশে আটক হয়েছেন। এতে পুরস্কারটি রীতিমতো রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা হলেন: ২০১০ সালে চীনা মানবাধিকার কর্মী লিউ জিয়বো, ১৯৯১ সালে বার্মিজ রাজনীতিক অঙ সান সুকি এবং ১৯৩৫ সালে জার্মান সাংবাদিক ও শান্তিবাদী কার্ল ফন অসিটস্কি।
রোহিঙ্গা গণহত্যায় সমর্থন ও ভূমিকার জন্য সু চি'র নোবেল পুরস্কারও কেড়ে নেওয়ার দাবী উঠে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

মৃতরা পুরস্কার পাবেন?
না। ১৯৭৪ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নিয়ম বদলানোয় মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার অবকাশ নেই। বিশেষ করে প্রায়শই কোনো একজন ব্যক্তির কাজের নোবেল পুরস্কার লাভের মতো তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রযেছে কিনা জানতে কয়েক দশক লেগে যায়, আর তাই এই নিয়ম ভীষণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এটা আবার বিব্রতকর অবস্থাও সৃষ্টি করতে পারে। ২০১১ সালে নোবেল ফাউন্ডেশনের পর্ষদ শারীরতত্ত্ব বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে রাল্ফে স্টাইনমানকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। কিন্তু পর্ জানা যায় মাত্র তিনদিন আগ্ইে তিনি মারা গেছেন।
কয়েক দশক আগেই একটি নতুন ধরনের ইমিউন সিস্টেম সেল, ডেনড্রিটিক সেল, আবিষ্কারের জন্যে স্টাইনমানের এই পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তিনি নিজের উপর ডেনড্রিটিক থেরাপি প্রয়োগের চেষ্টা চালান, এবং এভাবে প্রায় চার বছর আয়ু বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে মনে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবর পাওয়ার মতো দীর্ঘায়ূ পাননি তিনি।
অবশ্য, পর্ষদ তাসত্ত্বেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্তে তার মৃত্যুর খবর অজ্ঞাত থাকার যুক্তিতে তাকেই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
প্রসঙ্গত, প্রায়ই চার বছর আগেই মারা যাওয়ায় ১৯৬২ সালে শারীরতত্ত্ব বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের তালিকা থেকে ডিএনএ-র কাঠামোর যৌথ অবিষ্কারক রোজালিন ফ্র্যাঙ্কলিনের নাম বাদ পড়ার দাবী করা হয়। কিন্তু এটা সেঅর্থে ঠিক না। সেই সময় আসলে মরণোত্তর পুরস্কার না দেওয়ার নিয়মটি চালু হয়নি। যদিও মৃত্যুর পর পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপারটা ব্যতিক্রমীভাবেই বিরল। সম্প্রতি অবমুক্ত একটি দলিলে দেখা গেছে, ফ্র্যাঙ্কলিন আদৌ মনোনয়নই পাননি। তার বদলে ফ্রান্সিস ক্রিক, জেমস ওয়াটসন এবং মরিস উইলকিন্স পুরস্কার পেয়েছেন।
গণিত বিষয়ে নোবেল পুরস্কার নেই কেন? কিংবা শিল্পকলায়? অথবা সঙ্গীতে?
পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার নিয়ে নোবেলের সূচনা হয়েছিল: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শারীরতত্ত্ব বা চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শান্তি। এরপর ১৯৬৮ সালে সুইডেন সেন্ট্রাল ব্যাংক অর্থনীতির ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়ার লক্ষ্যে অনুদান দেয়, এটা সেঅর্থে নোবেল পুরস্কোর নয়, বরং 'আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে অর্থনীতিতে স্ভরিজেসরিক্সব্যাংক পুরস্কার।'

নোবেল পর্ষদের নতুন কোনও বিষয় যোগ করার আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইট বারবার বলে এসেছে যে পর্ষদ 'নতুন সংযোজনে অনুমতি' না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এজন্যেই পরিবেশ বিজ্ঞান, প্রকৌশল, শিল্পকলা, গণিত, কিংবা সত্যি বলতে আরও অনেক বিষয়ে নোবেল পুরস্কারের অস্তিত্ব নেই। আলফ্রেড নোবেলের স্ত্রীর জনৈক প্রতিভাধর গণিতজ্ঞের সঙ্গে প্রেম ছিল বলে গণিত বিষয়ে নোবেল পুরস্কার নেই, এমন একটা একটা গল্প অনেক দিন ধরে চালু রয়েছে। তবে এই কাহিনী ভিত্তিহীন বলেই মনে হয়--তার একটা কারণ নোবেল বিয়েই করেননি।

কারা নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন? কেন?
এই ব্যাপারটা অবশ্য খুব বেশি ঘটে না। তবে যখন ঘটে, বেশ নাটকীয় হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৬৪ সালে জাঁ-পল সার্ত্রেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি জাঁ-পল সার্ত্রে। তিনি বলেন, লেখকদের কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হওয়া ঠিক না। কথাটা তিনি অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন। এমনকি ফরাসী ফরেন লিজিয়ন অভ অনারের সদস্যপদও ফিরিয়ে দেন তিনি।
হেনরি কিসিঞ্জার এবং ভিয়েতনামী রাজনীতিক ও আলোচক লে দিউথোকে ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরতি স্থাপনের জন্যে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু থো 'শান্তি স্থাপিত হয়নি' বলে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে অন্য চারজন পুরস্কার বিজয়ীকে তাদের সরকার পুরস্কার প্রত্যাখ্যানে বাধ্য করে। ১৯৩০-র দশকে হিটলার তিনজন জার্মানকে পুরস্কার গ্রহণ করতে দেননি: ভিটামিন নিয়ে কাজ করার জন্যে রসায়নবিদ রিচার্ড কাহন, সেক্স হরমোন নিয়ে কাজ করার জন্যে রসায়নবিদ অ্যাডল্ফ বাটেননানডট, এবং প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারক গারহার্ড ডোমাগক।
এবং ডক্টর জিভাগোর (সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে থেকে এটি প্রকাশ করতে হয়েছিল) রচয়িতা রাশিয়ান লেখক বরিস পাস্তারনাক গোড়াতে ১৯৫৮ সালে সাহিত্যে পুরস্কার গ্রহণ করলেও সোভিয়েত সরকারের চাপে সেটি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন।