Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 09, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 09, 2025
জীবনানন্দ কেন আত্মহত্যা করেননি?

ইজেল

আমীন আল রশীদ
21 October, 2021, 12:50 pm
Last modified: 21 October, 2021, 01:03 pm

Related News

  • শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ; কলকাতা এখন…
  • সৃজনশীল ধান বিজ্ঞান কি খুলে দিচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত?
  • পাওয়া গেল জীবনানন্দের শেষ স্মৃতি, ৭৫ বছর ধরে আগলে রেখেছে চক্রবর্তী পরিবার
  • আমি সেই ট্রামটিকে খুঁজি! আজ জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুদিন
  •  ‘বনলতা সেন’-এর পাণ্ডুলিপি

জীবনানন্দ কেন আত্মহত্যা করেননি?

ডাক্তার অমল দাশকে দেখে ধড়ে প্রাণ এল কবির, ‘কে বুবু? বুবু এসেছিস? বাঁচিয়ে দে...।’ শিশুর মতো অসহায় কণ্ঠ, ‘বুবু, বাঁচিয়ে দে ভাই!’
আমীন আল রশীদ
21 October, 2021, 12:50 pm
Last modified: 21 October, 2021, 01:03 pm

'সন্ধ্যার সময় কলেরা হয়েছে- শেষ রাতে মারা গেছে; কলেরায় এ রকম প্রায়ই হয়ে থাকে।' মানবজীবনের চূড়ান্ত পরিণতি মৃত্যুকেও কী অবলীলায় বলছেন 'প্রায়ই হয়ে থাকে'। 'রক্তমাংসহীন' গল্পে উষা নামের একটি চরিত্রের এই মৃত্যুকে জীবনানন্দ যেভাবে তাঁর স্বভাবসুলভ নির্লিপ্ততায় বর্ণনা করেন, তার পেছনে জীবন সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত বোধ, সমাজ-সংসারে আপাতদৃষ্টে একজন অসফল মানুষ হিসেবে বেদনার ভারও কম দায়ী নয়। যে কারণে ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় কলকাতা শহরের রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ট্রামের মতো একটি অতি ধীরগতির বাহনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হওয়ার আট দিন পরে ২২ অক্টোবর রাতে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে অনেকেই অস্বাভাবিক বলে মনে করেন। সঞ্জয় ভট্টাচার্যসহ তাঁর অনেক সুহৃদও এটা মনে করেন যে জীবনানন্দ আসলে আত্মহত্যাই করেছিলেন। যেহেতু জীবনানন্দের জীবনে রহস্য ও বিভ্রান্তির অন্ত নেই, সে কারণেই বোধ হয় তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য ও ধোঁয়াশা কাটেনি সাত দশকেও। যারা তাঁর মৃত্যুটিকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করেন, তার পক্ষে কিছু যুক্তিও পেশ করা হয়। কিন্তু আসলেই তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পারিপার্শ্বিকতা ও তাঁর জীবনের কিছু ঘটনা আমলে নেওয়া দরকার।

মৃত্যুচিন্তায় আচ্ছন্ন তরুণ

'ক্লান্তির পরে ঘুম- মৃত্যুর মতন শান্তি চাই'...

মৃত্যুর মতন এমন শান্তি আর কে চেয়েছেন? বস্তুত মৃত্যুচিন্তাটা তাঁর মাথার ভেতরে সব সময়ই ছিল। নিছক প্রেমের কবিতার ভেতরেও মৃত্যুপ্রসঙ্গ। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের যৌবনে যখন বাংলার রূপপ্রকৃতি এবং নিরেট প্রেমের কবিতা লিখছেন- সেই বয়সেও একজন মানুষ কী করে এমন মৃত্যুচিন্তায় আচ্ছন্ন থাকতে পারেন- তা ভেবে শিহরিত হতে হয়।

তরুণ বয়সেই কেন জীবনানন্দ মৃত্যুচিন্তায় আচ্ছন্ন হলেন বা প্রশ্নটা আরেকটু ঘুরিয়ে করা যায় যে কেন এই বয়সেই তিনি মৃত্যুর প্রতি আকৃষ্ট হলেন? কবিতার বিষয় হিসেবে মৃত্যু খুবই রহস্যজনক একটা ব্যাপার বলে? পৃথিবীতে মৃত্যুই একমাত্র সর্বজনস্বীকৃত সত্য বলে? মৃত্যুচিন্তার ভেতরে একটা শূন্যতা, একটা হাহাকার আছে বলে এর মধ্য দিয়ে পাঠকের হৃদয়ে দ্রুত নাড়া দেওয়ার জন্য? নাকি ব্যক্তিজীবনের না পাওয়া দুঃখ-বেদনায় ক্লিষ্ট হয়ে?

'ঘুমের মতন মৃত্যু বুকে সকলের;
নক্ষত্রও ঝরে যায় মনের অসুখে'...

কী সেই অসুখ? বলছেন, সেই অসুখের নাম 'বিপন্ন বিস্ময়'। তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'আট বছর আগের একদিন' প্রকাশিত হয় কবিতা পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৪ সংখ্যায়, যখন তাঁর বয়স ৩৮ বছর। ওই বয়সে লিখলেন একজন সংসারী মানুষের আত্মহননের কথা। একজন নিরেট সংসারী মানুষ; যার স্ত্রী সন্তান অর্থবিত্ত সবই আছে কিন্তু তারপরও এক বিপন্ন বিস্ময় তাঁর অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে। মরিবার সাধ হয়। এক গোছা দড়ি হাতে তিনি তখন অশ্বত্থের নিচে গিয়ে দাঁড়ান। ঝুলে পড়েন।
মৃত্যুর ১৬ বছর আগে জীবনানন্দ লিখেছিলেন:

'কলকাতার ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে-
ফুটপাথ ফুটপাথে-
কয়েকটি আদিম সর্পিণী সহোদরার মতো
এই যে ট্রামের লাইন ছড়িয়ে আছে
পায়ের তলে, সমস্ত শরীরের রক্তের এদের
বিষাক্ত স্পর্শ অনুভব করে হাঁটছি আমি।'

এই ট্রামের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে মারা যান জীবনানন্দ দাশ। যে ট্রামের ধাক্কায় তাঁর আগে-পরে এই পৃথিবীতে সম্ভবত আর কারও মৃত্যু হয়নি। ট্রামের মতো একটি অতি ধীর বাহনের ক্যাচারে আটকে তাঁর মৃত্যুর কথা, সেই ট্রামের লাইনের বিষাক্ত স্পর্শ অনুভবের কথা কী করে টের পেলেন, কী করে জানলেন, কী করে বুঝলেন!

'হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন- পথের পাতার মতো,
তুমিও তখন আমার বুকের পরে শুয়ে রবে।'

যে হেমন্তের প্রতি তাঁর আজন্ম পক্ষপাত, সেই হেমন্তেরই এক সন্ধ্যায় ট্রামের ধাক্কায় হাড়গোড় ভাঙল এবং সেই হেমন্তেরই এক হিম হিম রাতে (৫ কার্তিক ১৩৬১) চিরদিনের মতো চোখ বুজলেন। যে ট্রামটি তাঁকে ধাক্কা দিয়েছিল, শোনা যায়, সেই ট্রামটি পরবর্তীকালে এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কী এক রহস্য। কুহক। মায়া!...

পারিবারিক ছবিতে কবি জীবনানন্দ দাশ। ছবি: সংগৃহীত

কী এমন তাড়া ছিল!

'আমি অত তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে
পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেক্ষণ অপেক্ষা করবার অবসর আছে।'

কিন্তু সেই তাড়াতাড়িই তো চলে গেলেন। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে। অথচ তাঁর সমবয়সী কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বেঁচে ছিলেন ৭৭ বছর। ১৯৪২ সালে বাক্রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আরও ৩৪ বছর বেঁচে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে ছিলেন ৮০ বছর। কিন্তু জীবনানন্দ তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চান না বলেও পৃথিবী ছেড়ে বড্ড তাড়াতাড়িই চলে গেলেন।

স্ত্রী লাবণ্য দাশ (মানুষ জীবনানন্দ, পৃষ্ঠা ৩৪) লিখছেন, 'অসুখটা (অ্যানজাইন) হওয়ার ফলে তাঁর (জীবনানন্দ দাশ) ধারণা হয়েছিল যে আমার পৃথিবীর মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। হঠাৎই একদিন সকলকে ফাঁকি দিয়ে আমি চলে যাব। সে জন্য সদাই বলতেন, তুমি রাস্তাঘাটে যত খুশি দৌড়ে বেড়াও- আপত্তি করব না। শুধু গলায় একটা চাকতি ঝুলিয়ে রেখো। আমি যখন চটে গিয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করতাম, তিনি তখন আর একদিক ফিরে আস্তে আস্তে বলতেন- না, চাকতিটা থাকলে মর্গ থেকে চিনে বের করতে সুবিধা হবে। এই আর কি। আজ কেবল মনে হয়- আমাকে মর্গ থেকে আনবার ভয়েই তিনি তাড়াতাড়ি আমার চোখের আড়ালে চলে গেলেন।'

একাকী, অন্যমনস্ক, বিহ্বল

'যেই ঘুম ভাঙে নাকো কোনোদিন ঘুমাতে ঘুমাতে         
সবচেয়ে সুখ আর সবচেয়ে শান্তি আছে তাতে।'

অথবা

'কোথায় রয়েছে মৃত্যু? কোনদিকে? খুঁজি আমি তারে।'

কেন তিনি মৃত্যুকে খোঁজেন? জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বা আত্মহত্যাস্পৃহা? কিছুটা উত্তর দিয়েছেন আহমদ রফিক (জীবনানন্দ দাশের 'মৃত্যুর আগে', পৃষ্ঠা ৪৬), 'সম্ভবত প্রেমের অপূর্ণতা, ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়ায় জীবনের যে গভীর হতাশা-নৈরাশ্য জন্ম নেয়, ব্যথা বেদনা যন্ত্রণার উদ্ভব ঘটে তারই পরিণামে ক্রমান্বয়ে অতল অন্ধকারের মধ্য দিয়ে মৃত্যুচেতনায় উত্তরণ নির্বিকল্প হয়ে ওঠে।' সে কারণে বোধ হয় বলেন: 'এইবার ছুটি পেয়ে ফিরিব না পৃথিবীতে আর।'

শুধু কবিতা নয়, জীবনানন্দের গল্প-উপন্যাসের নায়কগুলোকেও জীবনানন্দের ছায়া বলে মনে হয়। তাঁর বলার ভঙ্গিতে সচেতন পাঠকমাত্রই আবিষ্কার করবেন, এসব গল্প-উপন্যাস মূলত তাঁর আত্মজীবনীরই খসড়া। তাঁর গল্পের নায়কেরা শিক্ষিত, কিন্তু অসফল। সমাজ যাকে শুধু রক্তাক্ত করে। অর্থের টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। সংসারে অশান্তি। বউয়ের সাথে দূরত্ব। নিঃসঙ্গ। সকল লোকের মাঝে বসেও একা। যেন এই মহানগরী তাঁর নিজের নয়। তিনি ক্লান্ত। সংগত কারণেই ভাবেন, মৃত্যুতেই পরিত্রাণ।

বলা হয়, সৃজনশীলতার একটি অন্যতম অন্ধকার দিক হলো আত্মহনন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক শিল্পী, কবি, লেখকের মনোজগতের একটা অন্যতম প্রবণতা হলো বিষণ্নতা এবং অরাজক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়া, যাকে তাঁরা বলেন 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার'। এই বিষণ্নতা ও মনোবৈকল্যের চেহারা যেমন বহুমাত্রিক, তেমনি এর চাপ অনেককেই আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। আর শেষাবধি কারও কারও ক্ষেত্রে এতে নিজেদের সঁপে দেওয়া ছাড়া পথ খোলা থাকে না- অন্তত তাঁদের নিজেদের বিচার-বিবেচনায়।

জীবনের প্রতি পক্ষপাত

'একদিন অন্ধকারে মৃত্যু এসে কথা কবে আমাদের কানে,-
জানি না কি? আজ তবু আসিয়াছি হে জীবন, তোমার আহ্বানে।'

অন্যত্র বলছেন:

'মৃত্যুর শান্তির স্বাদ এইখানে দিতেছে জীবন-
জীবনেরে এইখানে দেখি ভালোবেসে।'

জীবনের প্রতি যাঁর এমন পক্ষপাত; তিনি কী করে আত্মহত্যা করেন?

তাঁর বিখ্যাত ও বহুলপঠিত কবিতা 'আট বছর আগের একদিন'-এর যে গল্প, সমাজ-সংসারে আপাতদৃষ্টে একজন সুখী মানুষও আত্মঘাতী হয়। কেননা, 'অন্নে ক্ষুধা মিটে গেলেও মনের ভিতরের ব্যথার কোনো মীমাংসা নেই' (শতাব্দী)। মৃত্যুর আগমুহূর্তে কিছু প্রশ্নও তিনি স্বগতোক্তির মতো উচ্চারণ করেন-

'অশ্বত্থের শাখা করেনিকি প্রতিবাদ?
জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?...

জীবনের এই স্বাদ- সুপক্ব জবের ঘ্রাণ

হেমন্তের বিকেলের- তোমার অসহ্য বোধ হ'ল।'

এই যে জীবনের এত এত আয়োজন, তিনি নিজেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন এবং বলছেন যে তোমার এই আত্মহননের কোনো হেতু নেই। কিন্তু তারপরও তিনি ঝুলে পড়েন। তিনি মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে চান না। কী এক বিপন্ন বিস্ময় তাঁর 'অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে'। তাঁকে ক্লান্ত করে। সেই ক্লান্তির কাছে তিনি নিজেকে সঁপে দেন। এটা হৃদয় খুঁড়ে একধরনের বেদনা জাগানো। এই দেনাবোধও এক বিস্ময়। বেতের ফলের মতো যে ম্লান চোখ- সেই চোখের কোনে জমে থাকা কিংবা শুকিয়ে যাওয়া এক ফোঁটা অশ্রুর মতো ব্যাখ্যাতীত পরিস্থিতি- বোধ করি তাঁর কাছে হেরে যায় মানুষ।

কলকাতা শহরের রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ট্রাম। ছবি: সংগৃহীত

এই কবিতায় জীবনানন্দ জগৎ-সংসারে আপাতদৃষ্টে একজন সংসারী মানুষের স্বেচ্ছামৃত্যুর পেছনে যে আত্মঘাতি ক্লান্তি বা বিপন্ন বিস্ময়কে দায়ী করেছেন, অনেকেই কবিতার এই চরিত্রটি জীবনানন্দ নিজেই বলে অনুমান করেছেন। বিশেষত ট্রামের মতো একটি অতি ধীর বাহনের ধাক্কায় নিহত হওয়ার পরে সেই অনুমান অধিকতর জোরালো হয়। কিন্তু তারপরও জীবনানন্দের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উপসংহারে পৌঁছানো যায় না। কারণ, জীবদ্দশাতেই এই কবিতাটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক হয়, তার জবাব তিনি নিজেই দিয়েছেন।

পূর্বাশার আষাঢ় ১৩৫৩ সংখ্যায় জীবনানন্দ লেখেন, 'আত্মঘাতি ক্লান্তিকে সমালোচকেরা কবির নিজের ক্লান্তি বলে পাঠ করতে পারেন। কিন্তু এ রকম কাব্যপাঠ সমালোচকদের নির্বচারে আত্মপ্রসাদ আর কিছুই নয়।' কবিতাটি সাবজেকটিভ নয়, বরং ড্রামাটিক রিপ্রেজেনটেশন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। জীবনানন্দ বলছেন, আত্মঘাতী ক্লান্তি এই কবিতার প্রধান আবহাওয়া নয়।

বেঁচে থাকার প্রতি তাঁর যে আকুলতা, সেটি জানা যাচ্ছে কবির স্ত্রী লাবণ্য দাশের (মানুষ জীবনানন্দ, পৃষ্ঠা ৩৬) জবানিতেও : 'পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের আগে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে কবি যে অদ্ভুত মনোবল, অপরিসীম ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন- তা সত্যিই অতুলনীয়।' হাসপাতালের বিছানায় তাঁর শেষ দিনগুলোর যে বিবরণ ভূমেন্দ্র গুহ এবং অন্যরা জানান, তাতেও এই উপসংহারে পৌঁছানো কঠিন যে জীবনানন্দ মরতে চেয়েছিলেন কিংবা তাঁর মৃত্যুটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং আত্মহত্যা।

সুবোধ রায় (জীবনানন্দ স্মৃতি) জানাচ্ছেন, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে জীবনানন্দকে দেখতে আসেন কবির নিকটাত্মীয় স্বনামধন্য চিকিৎসক শ্রী অমল দাশ এবং আরেকজন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ এ কে বসু। ডাক্তার অমল দাশকে দেখে ধড়ে প্রাণ এল কবির, 'কে বুবু? বুবু এসেছিস? বাঁচিয়ে দে...। শিশুর মতো অসহায় কণ্ঠ বুবু, বাঁচিয়ে দে ভাই!' কেউ যদি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে চলন্ত ট্রামের সামনে গিয়ে দাঁড়ান, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তাঁর 'বাঁচিয়ে দে ভাই' বলে আকুতি করার কথা নয়। হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় একবার তিনি রবীন্দ্রসংগীতও শুনতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ শরীরের মুমূর্ষু অবস্থাও তাঁর জীবনের শুভ ও সৌন্দর্যবোধ ম্লান করেনি।

জীবনানন্দের জীবন ও মানুষের প্রতি পক্ষপাতের আরেকটি প্রমাণ 'কমলালেবু' কবিতাটি-যেখানে পুনর্জন্মের প্রসঙ্গটি আছে ভিন্ন আঙ্গিকে:

'একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাবো
আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে

একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।'

একজন মানুষ কমলালেবু হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে চান কেন? মৃত্যুর পরে মানুষ যে ফিরে আসে না, জন্মান্তরবাদ যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়, সে কথা বিজ্ঞানসচেতন কবি জীবনানন্দ নিশ্চয়ই জানতেন। কিন্তু তারপরও তাঁর শঙ্খচিল শালিখ কিংবা কমলালেবু হয়ে ফিরে আসতে চাওয়ার এই ব্যাকুলতা মূলত প্রতীকী। বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা, সেটি বোঝাতেই তিনি পুনর্জন্মে পাখি কিংবা ফল হয়ে ফিরে আসার কথা লিখেছেন। যদিও পুনর্জন্মে তিনি মানুষ হয়ে ফিরে আসতে চাননি কেন, সেটি আরেক রহস্য।  

আকবর আলি খান (চাবিকাঠির খোঁজে, পৃষ্ঠা ৪৯) মনে করেন, 'জীবনানন্দের কবিতায় বৌদ্ধদর্শনের গভীর প্রভাব লক্ষ করা যায়। বৌদ্ধদর্শন অনুসারে, নির্বাণ লাভ না করা পর্যন্ত মানুষকে পূর্বজন্মের পাপের বোঝা বইতে হয়। তাই প্রতিটি জন্মেই দুঃখ হচ্ছে মানুষের নিয়তি। অথচ গাছপালা, লতাপাতা, পশুপাখিকে পূর্বজন্মের পাপের বোঝা বইতে হয় না। পরবর্তী জন্মেও তাদের দুঃখ অনিবার্য নয়। সে কারণেই অর্থাৎ এই দুঃখ ও পাপ থেকে দূরে থাকতেই জীবনানন্দ হয়তো কখনো শঙ্খচিল-শালিখ আবার কখনো কমলালেবু হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে চেয়েছেন।' তবে নিছকই একটি ফল হয়ে নয় বরং তিনি আসতে চেয়েছেন কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষু রোগীর বিছানার কিনারে। অর্থাৎ এই ফিরে আসতে চাওয়ার পেছনেও মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ স্পষ্ট।

মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি যাঁর এমন নির্মোহ টান, এমন আবেগ, সংবেদনশীলতা- সেই মানুষ কী করে আত্মহত্যা করতে পারেন? যে আত্মঘাতী ক্লান্তির কথাও তিনি বলেছেন, যা তাঁর ভেতরে তীব্রভাবেই ছিল, সেই ক্লান্তি কি পৃথিবীর আরও অসংখ্য মানুষের ভেতরে নেই? মাথার ভেতরে কোন এক বোধ কিংবা বিপন্ন বিস্ময় কি আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরেও খেলা করে না? আমাদের ক্লান্ত করে না? কিন্তু তাই বলে আমরা সবাই কি অশ্বত্থের ডালে ঝুলে পড়ি কিংবা ট্রাম অথবা ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিই?

রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের এই গোলচিহ্নিত স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হন কবি। ছবি: সংগৃহীত

ট্রাম কেন? বিষের শিশি কেন নয়?

কথা হচ্ছে, জীবনানন্দ যদি আত্মহত্যাই করতে চাইতেন, তাহলে তাঁর সামনে আরও একাধিক পথ ছিল। যেমন দোকান থেকে একটা বিষের শিশি কিনে এনে ছিপিটা খুলে গিলে ফেললেই হতো। অথবা রাতের আঁধারে একগাছা দড়ি হাতে অশ্বত্থের ডালে গিয়ে ঝুলে পড়া যেত। সেসব করেননি। আবার যদি আত্মহত্যা করতেই হবে, তাহলে আর এই অতি ধীরগতির ট্রাম কেন? একটা দ্রুতগামী ট্রেন কিংবা বাসের সামনে দাঁড়ালেই হতো। অথবা উঁচু কোনো ভবনের ছাদ থেকে নিচে ঝাঁপ দিতে পারতেন। এসবের কিছুই করেননি। বরং তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর আগে-পরে কলকাতা শহরে কেউ আর ট্রামের নিচে পড়ে মারা যায়নি।

তিনি যে আত্মহত্যা করতে চাননি, তার আরেকটি প্রমাণ, সময়। অর্থাৎ যে সময়টায় তিনি দুর্ঘটনায় পতিত হন, সেটি ছিল তাঁর জীবনের তুলনামূলক ভালো সময়। মৃত্যুর এক বছর তিন মাস আগে ১৯৫৩ সালের পয়লা জুলাই  তিনি যোগ দেন হাওড়া গার্লস কলেজে। শুধু তাই নয়, তাঁকে ইংরেজি বিভাগের প্রধানও করা হয়। এমনকি তাঁকে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল করার কথাও বিবেচনা করছিলেন অধ্যক্ষ বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য। জীবনানন্দ সর্বসাকল্যে মাইনে পেতেন দেড় শ টাকা। এর সাথে দৈনিক ভাতা (ডিএ) ৫০ টাকা এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আরও ৫০ টাকা। সর্বমোট আড়াই শ টাকা। এক বছর পরে বেতন ২০ টাকা বাড়লে মোট মাইনে দাঁড়ায় ২৭০ টাকা। কলকাতা শহরের কাছে বলে প্রতিদিনই ল্যান্সডাউন রোডের বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়া-আসা করতেন। অর্থকষ্ট কিছুটা কমায় এবং সহকর্মীদের ভালোবাসায় দীর্ঘদিন যে মানসিক পীড়নে ছিলেন, তা থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি পান। সুতরাং যখন সংসারে স্বচ্ছলতা আসছিল, জীবিকার অনিশ্চয়তা কেটে যাচ্ছিল, সেই সময়ে সংসার থেকে তাঁর পালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। এই সময়ে তাঁর আত্মহত্যা বা স্বেচ্ছামৃত্যুর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটা নিছকই দুর্ঘটনা।
 

Related Topics

টপ নিউজ

জীবনানন্দ দাশ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দিলেন মাস্ক, জানালেন সম্ভাব্য নামও
  • বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব কানাডায় নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত 
  • ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের সময় দেখা করতে চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন টিউলিপ
  • কিরগিজস্তানে ভেঙে ফেলা হলো মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু লেনিন ভাস্কর্য
  • গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ ফিলিস্তিন জলসীমার কাছাকাছি
  • পাকিস্তানের ব্যবহৃত পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র এড়াতে জ্যামিং হতে পারে প্রধান সহায়

Related News

  • শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ; কলকাতা এখন…
  • সৃজনশীল ধান বিজ্ঞান কি খুলে দিচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত?
  • পাওয়া গেল জীবনানন্দের শেষ স্মৃতি, ৭৫ বছর ধরে আগলে রেখেছে চক্রবর্তী পরিবার
  • আমি সেই ট্রামটিকে খুঁজি! আজ জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুদিন
  •  ‘বনলতা সেন’-এর পাণ্ডুলিপি

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দিলেন মাস্ক, জানালেন সম্ভাব্য নামও

2
বাংলাদেশ

বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব কানাডায় নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত 

3
বাংলাদেশ

ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের সময় দেখা করতে চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন টিউলিপ

4
আন্তর্জাতিক

কিরগিজস্তানে ভেঙে ফেলা হলো মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু লেনিন ভাস্কর্য

5
আন্তর্জাতিক

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ ফিলিস্তিন জলসীমার কাছাকাছি

6
আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ব্যবহৃত পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র এড়াতে জ্যামিং হতে পারে প্রধান সহায়

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net