বিশ্বব্যাপী তৃতীয় সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ আপনি যা মনে করেন- তা নয়!

ব্যাক্টেরিয়ার মতো জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রতিরোধকে এতদিন ভবিষ্যতের একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শীর্ষ জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে এখনই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সেটি।
গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যমতে, মহামারি হানা দেওয়ার আগের বছর ২০১৯ সালেই ৪৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে। যা ওই বছর বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে।
ব্যাকটেরিয়ার প্রতিষেধক নিশ্চিতভাবেই সভ্যতার ইতিহাসে বড় আবিষ্কার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্যাক্টেরিয়ার অণুজীবগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, জৈবিকভাবে পরিবেশের সাথে পরিবর্তিত হওয়ার অণুজীবগুলোর অসাধারণ সক্ষমতা রয়েছে।
১৯২৮ সালে প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং। তাই এখন সামান্য কাটাছেঁড়া বা গনোরিয়ায় মৃত্যু থেকে আমরা সুরক্ষিত। অথচ অতীতে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিতো সামান্যতম সংক্রমণ। পরবর্তী দশকগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আরও কোটি কোটি জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু, এর অতি-ব্যবহারই নতুন সমস্যারও জন্ম দিয়েছে।
যেমন একাধিকবার একই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়ার অণুজীবগুলো আরও দ্রুত সেটির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং তখন সংক্রমণের মাত্রা অধিক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ব্যাকটেরিয়ার অণুজীবগুলো যদি অ্যান্টিবায়োটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হয়, তখন এটি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে আরও গভীরভাবে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। গবেষকেরা আশঙ্কা করছেন প্রতিবছর বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ জীবন হারাতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে।
গবেষকরা ২০৪টি দেশের ২৩টি ভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া (ই. কোলি, এস. নিউমোনিয়া এবং এস. অরিয়াস সহ) এবং ৮৮টি জীবাণু ও এদের প্রতিরোধ ওষুধের সংমিশ্রণে তথ্যটি বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষণাটিতে ৪৭১ মিলিয়ন সংক্রমণের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এসব তথ্য সে সময় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের মাত্রা অনুমান করার জন্য পরিসংখ্যানগত মডেল তৈরিতে ব্যবহার করেছিলেন।
২০১৯ সালের রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে ওষুধের প্রভাব সহনশীল ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মৃত্যু হয়েছিল সরাসরি জীবাণুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো। আর তাতে পুরো বিশ্বের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা এটিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখছেন এবং এটি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে - জনসচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, অ্যান্টিবায়োটিকের আরও যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার, পরিষ্কার পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধক টিকা উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোকে সুপারিশ করেছেন।
- সূত্র: সায়েন্স এলার্ট