সৌদিতে তরুণদের সঙ্গে চিন্তাবিদদের উন্মুক্ত আলোচনার কনফারেন্স
সম্প্রতি সৌদি আরবে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয়। দর্শন বিষয়ক এ কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিল দেশটিতে ক্রিটিকাল থিংকিংয়ের চর্চাকে উৎসাহিত করা। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য দেশটিতে জেল-জরিমানার ঘটনা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। সেখানে এ ধরনের চর্চা শুরু হওয়ায় আশাবাদী অনেকেই।
রিয়াদে অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী এ কনফারেন্সের বক্তাদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত আমেরিকান রাজনৈতিক দার্শনিক মাইকেল স্যান্ডলও। হার্ভার্ডের এ অধ্যাপক আয়োজকদের বলেছিলেন তিনি কোনো বক্তৃতা দিতে চান না, বরং নারীসহ তরুণ সৌদি নাগরিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আগ্রহী তিনি।
আলোচনায় করোনাভাইরাস মহামারির সময় সরকারি প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কারো আত্মীয় হত্যাকারী হলে সে কী করবেন, এমন প্রশ্ন করা হয় তরুণদের। একজন নারী শিক্ষার্থী উত্তর দেন, তার বাবাও যদি অপরাধী হয় তাকে তিনি আইনের হাতে তুলে দেবেন।
স্যান্ডল এরপর শিক্ষার্থীদের প্রাচীন চীনা এক গল্প শোনান। এক শাসক জানতে পারেন তার বাবা ছিলেন খুনী, সেই সঙ্কটের গল্প। রিয়াদে বসে এই গল্পটি হয়তো অনেকেরই বেশ পরিচিত মনে হচ্ছিল। সৌদি সরকার অস্বীকার করলেও বিশ্ববাসীর কাছে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
যে দেশে ধর্ম, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রচলিত মত নিয়ে জনপরিসরে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই, সেখানে এ ধরনের আলোচনা বেশ বিরল।
সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে বেশ কিছু কড়া বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে, সামাজিক পরিবর্তনও লক্ষণীয়।
ভিশন ২০৩০ এর আওতায় দেশটিতে খুলে দেওয়া হয়েছে সিনেমা হল, শুরু হয়েছে কনসার্ট। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে প্রথমবারের মতো নারী-পুরুষ একসঙ্গে কনসার্ট উপভোগের সুযোগ পান। ফরাসি ডিস্কো জকি ডেভিড গুয়েত্তার কনসার্টটিতে মঞ্চের নিচে ছিল সৌদি তরুণ-তরুণীদের ভীড়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জুন থেকে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়। এর আগ পর্যন্ত সৌদি-ই একমাত্র দেশ ছিল যেখানে নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ছিল।
সৌদি নারীদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞাও নেই, প্রায় ৪০ বছর স্টেডিয়ামে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দেশটির নারীরা। নারীদের বিদেশ ভ্রমণেও পুরুষ অভিভাবকের প্রয়োজন নেই।
তবে যুবরাজ সালমানের বিভিন্ন সংস্কার কাজও দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে সামনে রেখেই। ভিন্নমত দমনে দেশটিতে গ্রেপ্তার , নির্যাতন আগের মতোই আছে। গত মাসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্মত্যাগের জন্য এক ইয়েমেনী সাংবাদিককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। লৌজান আল-হাথলোলের মতো নারী অধিকারবাদী কর্মীদের কারাদণ্ডের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
- সূত্র: বিবিসি
