সৌদি কর্মকর্তার হাজার কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় তহবিল আত্মসাৎ! শিশু সন্তান ও ভাই গ্রেফতার

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধত্বন কর্মকর্তা এবং তার অধীনে কাজ করা একদল ব্যক্তি দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ১১শ' কোটি ডলার জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে ওই সৌদি কর্মকর্তা কানাডায় পলাতক রয়েছেন।
কানাডায় স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থাকা ওই কর্মকর্তার নাম সাদ আল-জাবরি। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গঠিত সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে সাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
প্রতিবেদনটি জানায়, নিজ ব্যবস্থাপনায় থাকা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দমন তহবিল থেকে পালানোর আগে ১৭ বছর ধরে নিজেকে, পরিবারের সদস্যদের এবং পরিচিতজনদের বোনাস দিয়েছেন সাদ আল-জাবরি। এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের নথিপত্র দেখে এবং পলাতক ওই কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত হয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটি।
তাদের অনুসন্ধানে অর্থ পাচারের বিষয়টিও উঠে আসে। কর্পোরেট নথিপত্রে দেখা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তহবিলটির অর্থ পাচারের জন্য টেকনোলজি কন্ট্রোল কো. নামের একটি কোম্পানিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে এ কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন; সাদের ভাই, ভাতিজা এবং দু'জন ঘনিষ্ঠ সহযোগী। খবর আল আরাবিয়ার।
সৌদি তদন্তকারীরা অর্থ পাচারের এমন একটি অস্বাভাবিক লেনদেনের ঘটনা আবিষ্কার করেন। জানা গেছে, তহবিলটি থেকে নিরাপদ টেলিফোন লাইন প্রতি ১১ হাজার এবং মুঠোফোন প্রতি দুই হাজার ডলার মূল্য পরিশোধ করা হয় টেকনোলজি কন্ট্রোল নামের কোম্পানিটিকে। অথচ, সরবরাহ পাওয়ার পরই নিম্নমানের কারণে এসব সরঞ্জাম বাতিল ঘোষণা করা হয়। এগুলোর বাজারমূল্যও পাঁচশ' মার্কিন ডলারের বেশি ছিল না।
মার্কিন দৈনিকটিকে সৌদি কর্মকর্তারা জানান, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতি দমন অভিযানের আওতায় এখন আল-জাবরিকে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে। এ দুর্নীতির সঙ্গে বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং রাজ-পরিবারের সদস্যও জড়িত, বলে দাবি করেন তারা।
তবে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্ষমতায় নিজের অবস্থান সুসংহত করতেই দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অবতারণা করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ পরিবারের অন্য প্রভাবশালী যুবরাজদের দুর্বল করে চলেছেন।
তবে সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আল-জাবরির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার দুই শিশু সন্তান এবং ভাইকে আটক করেছে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী। যদিও, সৌদি আরবের সংবাদপত্র ওই সময় আল- জাবরির সন্তানেরা প্রাপ্তবয়স্ক বলে দাবি করেছিল।
এব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য শাখা পরিচালক মাইকেল পেজ বলেন, ''বর্তমান নেতৃত্বকে খুশি করতে প্রাক্তন কর্মকর্তার বাড়িতে হানা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সৌদি প্রশাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন নীচতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।''
''অনেকেই বলেন বর্তমান সৌদি নেতৃত্ব নাকি সংস্কারপন্থী। কিন্তু, কীভাবে এটা মেনে নেওয়া যায়, যখন তারা প্রাক্তন কর্মকর্তাদের শিশু সন্তানদের গ্রেপ্তার এবং জেরা করে!''যোগ করেন তিনি।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স কিছু সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মনে করেন, আল-জাবরির কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আছে। এসব নথিপত্র মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরোধী যুবরাজদের হাতে গেলে, তারা সৌদি আরবের পরবর্তী শাসক হওয়ার সুযোগ পাবে। বিশেষ করে, নথিগুলো এতই সংবেদনশীল যে, তা যুবরাজ মোহাম্মদ এবং তার পিতা বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের অবস্থান দুর্বল করে দিতে পারে।
আলোচিত নথির মধ্যে সৌদি আরবের প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফের বৈদেশিক সম্পদের হিসাবও রয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
আল-জাবরিকে গ্রেপ্তার চেষ্টার পেছনে সেটাও হতে পারে আরেক কারণ। ২০১৭ সালেও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স বা পরবর্তী শাসকের পদটি ছিল মোহাম্মদ বিন নায়েফের দখলে। ২০১৭ সালের জুনে ভাই নায়েফকে সরিয়ে পদটি নিজ ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেন সৌদি বাদশাহ।
এর আগে চলতি বছরের মার্চেই প্রাক্তন ক্রাউন প্রিন্স নায়েফকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমান শাসকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দায়ে অচিরেই তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে, বলেও ইতোপূর্বে প্রকাশিত একাধিক সংবাদ সূত্রে জানা গেছে।