মডার্নার ভ্যাকসিনের এক-চতুর্থাংশ ডোজও কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে

করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন ডোজের অল্প পরিমাণ প্রয়োগেও তা দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জাগ্রত করতে ভূমিকা রাখে।
মডার্নার কোভিড ভ্যাকসিনের মাত্র এক ডোজের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ দুটি ডোজই দীর্ঘমেয়াদে অ্যান্টিবডি তৈরিতে ও ভাইরাস প্রতিরোধী টি-সেল কার্যকর করে। ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রায় ৩ ডজন মানুষের ওপর চালানো গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন স্বল্পতার মধ্যে একটি ডোজের স্বল্প মাত্রায় ব্যবহারের উপযোগিতা নির্দেশ করছে গবেষণাটি।
২০১৬ সাল থেকেই আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় হলুদ জ্বর প্রতিরোধে সফলভাবে এ ধরনের স্বল্প মাত্রায় ভ্যাকসিনের ব্যবহার চলছে। তবে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এখনো এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কোথাও।
ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স টাবাররক এব্যাপারে বলেন, "আমরা এ বছরের জানুয়ারি থেকেই এ পদ্ধতিতে টিকাদান শুরু করলে, অন্তত আরও কোটি কোটি বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যেত,"
সঠিক পরিমাণ ডোজ কতটুকু?
মডার্নার এমআরএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ট্রায়ালে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ২৫, ১০০ বা ২৫০ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভ্যাকসিন ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়, সবচেয়ে কম মাত্রার ভ্যাকসিনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলেও তা কিছুটা স্বল্প মাত্রার ছিল। মাঝারি ডোজের ভ্যাকসিনে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির পাশাপাশি সহনশীল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
একারণেই গণটিকাদানের জন্য ১০০ মাইক্রোগ্রামের ডোজের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা জানান, এই ডোজের অর্ধেক পরিমাণ ডোজও একই মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করতে সক্ষম।
কম মাত্রার ডোজে কেমন সুরক্ষা পাওয়া যায় তা জানতে বিজ্ঞানীরা ট্রায়ালের ৩৫ জন অংশগ্রহণকারীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। তাদের প্রত্যেককে ২৮ দিনের ব্যবধানে ২৫ মাইক্রোগ্রামের টিকা দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ছয় মাস পর, ৩৫ জনের প্রায় প্রত্যেকের দেহেই যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা যায় যা ভাইরাসের দেহ কোষে সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম। ৫ জুলাই প্রকাশিত এক প্রি প্রিন্টে গবেষকরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। তাদের রক্তে ভাইরাস ধ্বংসকারী টি-সেল ও পাওয়া যায়।
কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের দেহে উপস্থিত অ্যান্টিবডি ও টি-সেলের সমপরিমাণ অ্যান্টিবডি টি-সেলের উপস্থিতি দেখা যায় তাদের দেহে।
"এটি বেশ আশাজনক, খুব সহজেই এর মাধ্যমেই দীর্ঘ সময়ের জন্য সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব," বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনলজির (এলজেআই) ইমিউনোলজিস্ট ড্যানিয়েলা ওয়েইসকফ। এই গবেষণাটির সহ-লেখক ছিলেন তিনি। তবে গবেষণাটি এখন পিয়ার রিভিউড নয়।
নেদারল্যান্ডসের রটারডামের এরাসমাস ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল ভাইরোলজিস্ট কোরিন গার্টস ভান কেসেল এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, "এটি সুখবর। কম মাত্রার ডোজে বেশ ভালোভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করা সম্ভব হচ্ছে,"
ড্যানিয়েলা ও তার গবষণার আরেকজন সহ-লেখক শেইন ক্রোটি এ পদ্ধতি প্রয়োগের আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দেন। বেলজিয়ামেই বর্তমানে এ ধরনের একটি গবেষণা চলমান আছে। ফাইজার/বায়োএনটেকের সাধারণ ডোজের চেয়ে কম পরিমাণ ডোজ ব্যবহারের ফলাফল নিরীক্ষা করা হচ্ছে এ গবেষণায়।
তবে এক্ষেত্রে আরও কাল ক্ষেপণ করার বিরোধী ইলিনয়ের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সারাহ কোবে।
"আমাদের এতোদিন অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। মানুষ মারা যাচ্ছে, এর আগের প্রমাণও আছে, যে কারণে প্রাণ বাঁচাতে এভাবে টিকাদান শুরু করতে পারি আমরা," বলেন তিনি।
অল্পও বেশি
স্বল্প মাত্রার ডোজে মাঝারি মানের সুরক্ষা পাওয়া গেলেও, বিশ্বব্যাপী টিকাদানের গতি বাড়াতে সাধারণ ডোজের এক চতুর্থাংশ করে প্রতি ডোজ দেওয়া কার্যকর ভূমিকা রাখবে, বলছেন অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স টাবাররক।
তিনি ও অন্যান্য আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদের প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ কমাতে ও কোভিডজনিত মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে এ ধরনের পদ্ধতি বর্তমান পদ্ধতি থেকে বেশি কার্যকর হবে। তবে এ গবেষণাটিও এখনো পিয়ার রিভিউড নয়।
ভ্যাকসিন নেননি এমন মানুষের জন্য এক বছর পর পূর্ণ মাত্রার ডোজের ভ্যাকসিন পাওয়ার চেয়ে এখনই স্বল্প মাত্রার ডোজ নিয়ে নেওয়া বেশি উপকারী হবে, বলেন টাবাররক।
- সূত্র: নেচার ম্যাগাজিন